বন্ধু

রোজকার মত আজও রাত্রিবেলায় টিনের ঘরটায় এসে জড়ো হয়েছে ছোট ছেলেগুলো। ওদের সবারই বয়স দশ থেকে পনেরো বছরের মধ্যে। সারাদিন ট্রেনে বাসে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায় ওরা। তারপর দিনের শেষে সবাই আসে নিতাইয়ের কাছে- এই ঘরটাতে। নিতাই ওদের ট্রেনিং দিয়ে পকেট কাটতে শিখিয়েছে। রাত্রে ছেলেগুলো তাদের সারাদিনের রোজগার নিতাইয়ের হাতে তুলে দেয়।

আজ ওদের মধ্যে বুবুনের জন্মদিন। নিতাই একটু হেসে বলল-"এই শোন, আজকে সবাই নিজের রোজগার থেকে পাঁচ টাকা বুবুনকে দিবি। এটা ওর জন্মদিনের বকশিশ। কি রে বুবুন,  খুশি তো?"

হালকা হেসে মাথা নাড়ল বুবুন। সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে একটু হাসাহাসি করল। বুবুন দেখল ঘণ্টা তবে বেশ বিরক্ত হয়েছে। ঘণ্টা ওদের সবার মধ্যে পকেট মারায় ওস্তাদ। বুবুন জানে ঘণ্টা কেন বিরক্ত। ঘণ্টার বিরক্ত হওয়ার কারণটা বুঝতে পেরে বুবুন অন্যদিকে মুখ ফেরায়।

একে একে সবাইকে ডাকছে নিতাই।  সবাই আসছে-প্রথমে পাঁচ টাকা দিচ্ছে বুবুন কে আর তারপর, বাকিটা তুলে দিচ্ছে নিতাইয়ের হাতে। শেষে নিতাই  ঘণ্টাকে ডাকল-  

-"এই যে আমার শচীন তেন্দুলকার। আজ কত কামালে?"

ঘণ্টা চুপ করে থাকে। গলা ঝাঁঝিয়ে ওঠে নিতাই।

-"কি রে!? চুপ করে আছিস যে?"

-"আজ হাতে কিচ্ছু আসেনি নিতাই দা। সত্যি বলছি..."

-"আচ্ছা! তাই না কি? এদিকে আয় তুই।"

জামার আস্তিনটা গুটিয়ে টেবিলের পাশ থেকে শক্ত লাঠিটা বের করল নিতাই।

ঘণ্টা এগিয়ে আসে। ঘণ্টার চুলটা নিজের হাতের মুঠোয় নিতাই ধরতে যাবে, ঠিক সেই সময় বুবুন চেঁচিয়ে উঠে বলল  

-"ঘণ্টাকে মেরো না নিতাই দা। ওকে ছেড়ে দাও। আমার বকশিস  চাই না। এই নাও আমার বকশিসের টাকা। এটা ঘণ্টার তরফ থেকে।"

কলমে -  নী লে শ  চ ক্র ব র্তী

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন