পছন্দের রং করিয়েছেন ঘরের দেওয়ালে। সবকিছুই ঠিক আছে, মনের মতো। কিন্তু তাও যেন কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, মনে হচ্ছে কী যেন একটা নেই।
আমরা সাধারণত ঘরের চারটি দেওয়াল একই রঙে রাঙাই অথবা তিনটি দেওয়ালের রঙ একই রেখে চতুর্থটিতে ভিন্ন রঙ করে থাকি, আরেকটি উপায় হলো বিপরীত দেওয়ালে একই রঙ। কেউ কেউ আবার নানারকম ডিজাইন বা কারুকার্যে ভরিয়ে তোলেন সেগুলি। আপনিও সেভাবে সাজাতে চাইলে অত্যন্ত সহজে ঝামেলামুক্ত ভাবে এবং কম খরচের মধ্যেই সেটি করতে পারবেন। কিন্তু কীভাবে?
বেছে নিতে পারেন আপনার প্রিয় কিছু শিল্পকর্ম বা প্রিন্ট করা কিছু ছবি বা আপনার ও আপনার পরিবারের ছবি অথবা রঙ তুলির সাহায্যে ঘরের দেওয়ালকে ক্যানভাসের রূপ দিতে পারেন। ঘরের একটি দেওয়াল রঙ করে সেখানে উজ্জ্বল কোন ওয়ালপেপার লাগলেই আপনার ঘরটি হয়ে উঠবে অসামান্য। এরকমই দেওয়াল সজ্জার আরো কিছু উপায় বিবৃত করা হলো যা পরিশ্রমসাধ্য একেবারেই নয়।
পছন্দের ছবি বাছুন :
নিজের ছবি তুলতে কার না ভালো লাগে! অনেকে আবার প্রকৃতির ছবি তুলতেও ভীষণভাবে পছন্দ করেন। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত, বাড়ির বাগানের গোলাপ, গাছের ডালে বসা নীল পাখিটা, হলুদ সবুজ প্রজাপতি সবকিছুর ছবিই তাঁরা মুঠোফোনের ক্যামেরাবন্দী করে রাখেন। এরকমই কিছু প্রিয় ফটো জুড়ে তা থেকে বানিয়ে ফেলুন একটা ফটো কোলাজ। আপনার পছন্দের মুহূর্তগুলির স্মৃতিচারণ করে আগলে রাখার সর্বাধিক সহজ উপায় হল সেইসব ছবি দিয়ে দেওয়াল সাজিয়ে ফেলা।
কাপড়ের টুকরো ফ্রেম করান :
বহুমূল্য কোনো সিল্কের কাপড়ের টুকরো পড়ে আছে? অথবা এমনও হয়, পুরোনো বেনারসি দিয়ে সালোয়ার কামিজ বা লেহেঙ্গা বানিয়েছেন, কিছুটা কাপড় অব্যবহৃত রয়েছে। এবার সেই কাপড়টা কে কাজে লাগানোর সময় এসে গেছে। বিভিন্ন আকৃতিতে কেটে বা অনেকরকমের কাপড় আলাদা আলাদা করে ফ্রেম করে ফেলুন। একটু দূরত্ব রেখে লাগিয়ে ফেলুন দেওয়ালে। মুহূর্তের মধ্যে ঘরের শোভা বৃদ্ধি পাবে।
দেওয়াল সাজাতে ঝুড়ি ও হাতপাখা :
রকমারি ঝুড়ি কেনা তো একেবারেই পরিশ্রমের ব্যাপার নয়। কোনো মেলায় বা দোকানে সহজেই পেয়ে যাবেন। এবার সেই ঝুড়িগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে ফেলুন দেওয়াল জুড়ে। ঝুড়ির বদলে ফ্রিল দেওয়া হাতপাখা দিয়েও দেওয়াল সাজানো যায়।
মাস্কিং টেপের বাহার :
নিয়মিত আঁকা আঁকি করেন? তাহলে তো ঘরে মাস্কিং টেপ থাকবেই। এবার ক্যানভাসের উপর এই টেপ আপনার পছন্দের প্যাটার্নে আটকে ফেলুন। প্রতি দু'টি টেপের মাঝখানে রাখুন নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা। টেপ আটকানো সম্পূর্ণ হলে সমগ্র ক্যানভাস রাঙিয়ে দিন। রঙ শুকিয়ে গেলে সাবধানে টেপগুলি তুলে ফেলুন। এবার ক্যানভাসটিকে সাজিয়ে রাখুন দেওয়ালে। অতিথি অভ্যাগতদের মন কাড়বেই।
ফ্রেমের ভেতর নকশী কাঁথা :
নকশী কাঁথার বাহার নিয়ে তো আলাদা করে কিছু বলার নেই। সেই নকশী কাঁথা অথবা রঙিন সুতোয় নকশা করা কোনো কাপড় ফ্রেম করে আটকে দিন দেওয়ালে। সহজ এবং অভিনব।
শিশু সাহিত্যিক সুকুমার
রায়ের "হ য ব র ল" গল্পে শ্রীমান কাক্কেশ্বর কুচকুচের একটি উক্তি ছিল —
"হাতে রইলো পেনসিল"। অবশ্যই, আপনিও
পেনসিল তুলে নিন হাতে। রংবাহারি পেনসিল দিয়ে সাজিয়ে ফেলুন দেওয়াল। দেওয়ালের
রঙের সঙ্গে কন্ট্রাস্টে রঙের পেনসিল বাছবেন।
পছন্দের কাপড় যেভাবে ফ্রেম করতে বলেছিলাম, একইভাবে একটি কাঠের পাটাতনের উপর কাপড়টি ভালোভাবে আটকে নিয়ে কাপড়ের প্রান্তগুলি পাটাতনের পেছনে আটকে দিন যায় সামনে থেকে দেখলে বোঝা না যায়। এবার কাপড় সমেত পাটাতনটিকে সাজিয়ে ফেলুন দেওয়ালে। একটা ক্লাসি লুক আসবে।
দেওয়ালে প্রকৃতির ছোঁয়া :
বিভিন্ন গাছের পাতা সংগ্রহ করুন। এবার সেটিকে ক্যানভাসের উপর এমনভাবে আটকান যাতে সহজে তুলে ফেলা যায়। সমগ্র ক্যানভাসের উপর পছন্দের রঙ স্প্রে করুন বা তুলি দিয়ে রঙ করে ফেলুন। রঙ করা সম্পূর্ণ হলে সেই পাতাটিকে ক্যানভাসের উপর থেকে তুলে নিন। রঙ শুকিয়ে গেলে ফ্রেম করে দেওয়ালে আটকান।
দেওয়াল সাজাতে ফাঁকা বাক্স :
অনেকসময় কিছু কিছু জিনিস
কিনলে সেগুলো রঙিন বাক্সের মধ্যে করে দেওয়া হয়। সেই বাক্সগুলো কী করেন? ফেলে দেন? সেইসব
বাক্স দিয়েই কিন্তু দিব্যি আপনার দেওয়াল সেজে উঠবে। কিছুই নয়, বাক্সের বাইরের রঙের সঙ্গে মানানসই রঙ স্প্রে
করে দিন বাক্সের ভেতরেও। দেওয়ালে আটকে দিন এরকমই হরেক রঙের বাক্স। আর অবশ্যই সেসব
বাক্সের মধ্যে হালকা কোনো জিনিস রাখবেন।
আপনি চাইলেন ঘরের মধ্যে
একদিকের একরঙা দেওয়াল জুড়ে লাল রঙের কলকা তুলতে বা নীল রঙের ফুলের বাহার। তার
জন্য দরকার প্যাটার্নড রোলারের। এই রোলারে হ্যান্ডেলের সঙ্গে একসাথে দু'খানি রোলার লাগানো থাকে। একটি রোলার মসৃণ এবং
অপরটি ছাঁচওয়ালা, সেই ছাঁচে বিভিন্ন নকশা
করা থাকে। দু'টি রোলার থাকে পরস্পরের
সংস্পর্শে। মসৃণ রোলারটিতে রঙ লাগিয়ে সমগ্র রোলার যখন দেওয়ালে রোল করা হয়, মসৃণ রোলার থেকে ছাঁচওয়ালা রোলারের ছাঁচে রঙ
লেগে যায় আর এভাবেই দেওয়ালে ফুটে ওঠে চোখজুড়ানো নকশা।
হাতে তুলে নিন রঙ ও তুলি, মনের বহিঃপ্রকাশ করে ফেলুন আপনার ঘরের দেওয়ালে। ঘর ছোট হলে একটি দেওয়ালের কিছুটা অংশে করুন ওয়াল পেইন্টিং। ছোট ঘরের পুরো দেওয়াল পেইন্ট না করে বিশেষ কিছু জায়গা যেমন সুইচ বোর্ডের উপরে বা নীচে, দরজা বা জানালার পাশে পেইন্ট করুন। বড় ঘর হলে একটি দেওয়ালের সমগ্রটা জুড়ে আপনার তুলির টান দিতে পারেন, অথবা বিপরীত দেওয়ালে।
এবার আসা যাক দেওয়ালের আঁকার জন্য রঙ নির্বাচন প্রসঙ্গে। অ্যাক্রিলিক রঙ এক্ষেত্রে যথাযথ। অ্যাক্রিলিক রঙ হয় উজ্জ্বল, স্পষ্ট এবং ভালো মানের অ্যাক্রিলিক রঙ জলরোধক ও আলোরোধকও হয় অর্থাৎ মলিন হয়ে যায় না। এই রঙ যেহেতু দ্রুত শুকিয়ে যায়, তাই আপনি একাধিক স্তরবিশিষ্ট কোনো ছবি আঁকলে প্রথম স্তরের রঙটি শুকিয়ে গেলে দ্রুতই পরের স্তরে আঁকার কাজ শুরু করতে পারবেন।
তবে দেওয়ালে আঁকার আগে কয়েকটি কথা মনে রাখতে হবে। আপনার ঘরের দেওয়াল যেন হয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তার উপর কোনো ধুলোবালি, তেলের দাগ থাকলে চলবে না। নয়তো আঁকার সময় সেসবের সংস্পর্শে রঙ এলে আপনার আঁকা ছবিটি আশানুরূপ নাও হতে পারে। নতুন রঙ করা দেওয়াল হলে তো নিশ্চিন্তে স্বচ্ছন্দে আঁকতে পারেন। কিন্তু দেওয়ালের রঙ অনেকদিন আগে করা থাকলে আগে সেটি পরিষ্কার করে তারপর ওয়াল পেইন্টিং শুরু করুন। দেওয়ালে ময়লা বা দাগ পড়লে লিকুইড ডিটারজেন্ট মেশানো জলকে ফোম বা সুতির কাপড় ভিজিয়ে দেওয়াল মুছে নিন।
তাহলে দেওয়াল সজ্জার ব্যাপারে অনেককিছুই জেনে গেলেন। এবার পরিকল্পনা করে ফেলুন যে আপনার বাড়ির প্রত্যেকটি ঘরের দেওয়াল কীভাবে সাজিয়ে ফেলবেন। আপনার শৈল্পিক মানসিকতার ও অভিনবত্বের প্রকাশ, কাজকর্মের সুচারুতা, ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া সবকিছু মিলিয়ে আপনার ঘরটি হয়ে উঠবে অনবদ্য।
কলমে - ত মা লি কা ঘো ষা ল ব্যা না র্জী
( চিত্র সৌজন্যঃ আর্য্যামা দাস)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন