গত মাসে আমরা শিশুর আহারে ঘরোয়া উপায়ে সেরেল্যাক বানানোর প্রনালী জানিয়েছি।আজ সেরেল্যাক কিভাবে স্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর করা যায়, যাতে শিশুর খাবার খেতে আপত্তি না করে তার কিছু রেসিপি জানাবো।
খুব
ছোট বয়স থেকেই শিশুদের খাবার নিয়ে পছন্দ অপছন্দ তৈরি হয়ে যায়। কিছু শিশু মিষ্টি পছন্দ
করে, আবার কিছু শিশু নোনতা।সেরেল্যাকের নিজস্ব স্বাদ যেহেতু খুব সুস্বাদু নয়, তাই এর
মধ্যে অতিরিক্ত স্বাদ যুক্ত করে একে অনায়াসেই শিশুর মনের মত করে তোলা যায়।তাই শিশুর
পছন্দ অনুযায়ী মিষ্টি বা নোনতা সেরেল্যাক তৈরি করে খাওয়ালে শিশুর খাবারে আগ্রহ বৃদ্ধি
পাবে। ফলে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য দুইই যথাযোগ্যভাবে বজায় থাকবে।
সাধারণত
৬ মাস বয়েসের পর থেকে শক্ত খাবার শুরু হতেই মায়েরা সেরেল্যাকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
সহজে উপলব্ধ হওয়ার সাথে সাথে এই খাবার বানানোও খুব সহজ হয়। দিনে ২ থেকে ৩ বার সেরেল্যাক
খাওয়ানো স্বাস্থ্যকর। বয়সানুপাতে উপকরনের পরিমাণ কম বেশী করতে হবে।
কিছু
মিষ্টি স্বাদ বিশিষ্ট সেরেল্যাকের পদ
১)
আপেল সেরেল্যাকঃ
সেরেল্যাক
– ৩ চামচ
আপেল
সেদ্ধ – ৪ চামচ
প্রনালীঃ-
গরম
দুধে সেরেল্যাক দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তারমধ্যে আপেল সেদ্ধ মিশিয়ে দিতে হবে।যদি
একটু বেশি মিষ্টি স্বাদ দিতে হয় তাহলে ১ চামচ মধু মিশিয়ে দিত হবে।
২)
কলা সেরেল্যাকঃ
সেরেল্যাক
– ৩ চামচ
কলা
– ১ টি
প্রণালীঃ-
গরম দুধে সেরেল্যাক দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তারমধ্যে আপেল সেদ্ধ মিশিয়ে দিতে হবে।কলা
ভালো ভাবে চটকে মিহি করে নিতে হবে। সেরেল্যাকের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।
৩) আম সেরেল্যাকঃ
সেরেল্যাক
– ৩ চামচ
আম
– ৫/৬ চামচ
প্রণালীঃ-
গরম দুধে সেরেল্যাক দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তারমধ্যে আপেল সেদ্ধ মিশিয়ে দিতে হবে।আমের
খোসা ছাড়িয়ে ভালো ভাবে চটকে মিহি করে নিতে হবে।প্রয়োজনে আম মিক্সিতে বেটে মিহি ক্কাথ
সেরেল্যাকের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।
৪) স্ট্রবেরি সেরেল্যাকঃ
সেরেল্যাক
– ৩ চামচ
স্ট্রবেরি – ৮/১০ টি
প্রণালীঃ
গরম দুধে সেরেল্যাক দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তারমধ্যে আপেল সেদ্ধ মিশিয়ে দিতে হবে। স্ট্রবেরি মিক্সিতে
বেটে মিহি ক্কাথ সেরেল্যাকের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।
৫)
সবেদা সেরেল্যাকঃ
সেরেল্যাক
– ৩ চামচ
সবেদা
– ১ টি
প্রণালীঃ
গরম দুধে সেরেল্যাক দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তারমধ্যে আপেল সেদ্ধ মিশিয়ে দিতে হবে।সবেদা মিক্সিতে বেটে মিহি ক্কাথ সেরেল্যাকের সঙ্গে
মিশিয়ে দিতে হবে।
৬)
বাদাম কিশমিশের সেরেল্যাকঃ
সেরেল্যাক
– ৩ চামচ
কাজু
/ আমন্ড বাদাম – ১০ টি (২ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে)
কিশমিশ
– ৬/৭ টি (২ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে)
মধু
– ১ চামচ
প্রণালীঃ
গরম দুধে সেরেল্যাক দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তারমধ্যে আপেল সেদ্ধ মিশিয়ে দিতে হবে।বাদাম
ও কিশমিশ মিক্সিতে বেটে মিহি ক্কাথ সেরেল্যাকের সঙ্গে
মিশিয়ে দিতে হবে।মধু মিশিয়ে মিষ্টি স্বাদ যুক্ত করতে হবে।
৭)
বিট গাজর সেরেল্যাকঃ
সেরেল্যাক
– ৩ চামচ
গাজর
ও বিট সেদ্ধ – ৩ চামচ
মধু
– ২ চামচ
প্রণালীঃ গরম দুধে সেরেল্যাক দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তারমধ্যে আপেল সেদ্ধ মিশিয়ে দিতে হবে। সেদ্ধ গাজর ও বিট মিক্সিতে বেটে মিহি ক্কাথ সেরেল্যাকের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।মধু মিশিয়ে মিষ্টি স্বাদ যুক্ত করতে হবে।
৮)
চিঁড়ের সেরেল্যাকঃ
চিঁড়ে
– ৪ চামচ
দুধ
– ১ কাপ
ফল
– যেকোনো ফল মিহি করে বেটে নেওয়া।
মধু
– ২ চামচ
প্রণালীঃ
চিঁড়ে শুকনো কড়াইতে ভেজে নিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে। বা ভালো করে ধুয়ে জলে ভিজিয়ে নরম
করে নিতে হবে।ফুটন্ত দুধে চিঁড়ে গুঁড়ো বা ভেজানো চিঁড়ের মিহি ক্কাথের সাথে ফল ও মধু
মিশিয়ে নিতে হবে।
৯)
চাল ডালের সেরেল্যাকঃ
চাল
– ২ চামচ
মুগডাল
– ৩ চামচ
কাজু
বাদাম – ৫/৬ টি ( জলে ভিজিয়ে বাটা)
দুধ
– ১কাপ
মধু
– ২ চামচ
প্রণালীঃ
চাল ও ডাল শুকনো কড়াইতে ভেজে নিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে। দুধ ভালো করে ফুটলে তার মধ্যে
চাল,ডালের গুঁড়ো এবং কাজুবাদাম বাটা মিশিয়ে নিতে হবে। মধু দিয়ে অল্প গরম সেরেল্যাক
খাওয়াতে হবে।
১০)
মিশ্রিত ফলের সেরেল্যাকঃ
সেরেল্যাকঃ
৩ চামচ
ফল
– কলা, আম, লিচু, পাকা পেঁপে প্রভৃতি একসাথে বেটে ৪/৫ চামচ।
প্রণালীঃ
গরম দুধে সেরেল্যাক দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে সেরেল্যাক তৈরি হলে, ফল
বাটা সেরেল্যাকের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।
কিছু নোনতা স্বাদ বিশিষ্ট সেরেল্যাকের পদ
১)
ডাল দিয়ে সেরেল্যাকঃ
সেরেল্যাক
– ৩ চামচ
ডাল
– মুগ/মুসুর/অরহর ডাল সেদ্ধ করা
আধা
বাটি।
প্রণালীঃ গরম জলে সেরেল্যাক দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তারমধ্যে সেদ্ধ ডাল মিশিয়ে দিতে হবে। ১ বছরের পর থেকে এর মধ্যে এক চিমটি নুন যোগ করা যায়। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য সেদ্ধ ডালের পরিবর্তে রান্না করা ডাল মিশিয়েও ব্যবহার করা যাবে।
২)
সব্জী দিয়ে সেরেল্যাকঃ
সেরেল্যাক
– ৩ চামচ
সব্জী
– পছন্দ মত সব্জী সেদ্ধ আধা বাটি।
প্রণালীঃ
গরম জলে সেরেল্যাক দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। সব্জী যেমন গাজর, বিট, বিনস, কড়াইশুঁটি,
কাঁচা পেঁপে প্রভৃতি অল্প অল্প পরিমানে নিয়ে সেদ্ধ করে মিহি করে বেটে নিতে হবে। সেরেল্যাকের
সাথে এই মিশ্রণ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
৩)
আলু সেরেল্যাকঃ
সেরেল্যাক
– ৩ চামচ
আলু
সেদ্ধ – অর্ধেক আলু ।
প্রণালীঃ
গরম জলে সেরেল্যাক দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে আলু সেদ্ধ মিহি করে চটকে
মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
৪) মাছ দিয়ে সেরেল্যাকঃ ( ১ বছরের পর)
সেরেল্যাক
– ৫ চামচ
মাছ
– জিওল মাছ ( শিঙি, মাগুর, গুলে, জ্যান্ত পোনা প্রভৃতি) ।
প্রণালীঃ
গরম জলে সেরেল্যাক দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে।মাছ সেদ্ধ করে কাঁটা ভালোভাবে বেছে
নিয়ে চটকে মিহি করে এর সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
৫)
মাংস দিয়ে সেরেল্যাকঃ ( ১ বছরের পর)
সেরেল্যাক
- ৫ চামচ
মুরগীর
মাংস - ২৫০ গ্রাম।
নুন
– ১ চিমটে
হলুদ
– ১ চিমটে
আদা
বাটা – আধা চামচ
প্রণালীঃ
টাটকা হাড় সমেত মুরগীর মাংস খুব ভালো করে ধুয়ে পরিস্কার করে নিতে হবে। জলে অল্প নুন,
হলুদ ও আদাবাটা মিশিয়ে মাংস অনেকক্ষণ ধরে সেদ্ধ করে নিতে হবে। গরম জলে সেরেল্যাক দিয়ে
ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে।এর মধ্যে মাংস সেদ্ধ করা জল মিশিয়ে দিতে হবে।
কলমে - পা র মি তা ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন