বেশ পুরোনো চলচ্চিত্র, সত্য ঘটনা অবলম্বনে। কী দেখবো, কী দেখবো করে দেখেই ফেললাম শেষ অবধি। দেখার পর এটাই মনে হচ্ছিল, ভাগ্যিস দেখলাম!!
আমেরিকান পটভূমিতে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি। একজন সাংবাদিকের হঠাৎ করেই স্ত্রী-বিয়োগ হয়। ছ'মাসের মধ্যে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে গোটা পরিবার, যদিও বাইরে থেকে সকলেই নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করে যায়। সেই সাংবাদিক এক কিশোর ছেলে আর একটি ছোট্ট মেয়ের বাবা, অফিস আর সংসার সামলে হিমশিম অবস্থা। তার সঙ্গে রয়েছে স্ত্রীকে হারানোর মানসিক যন্ত্রণাও।
তাঁর ছেলেটি খুব সুন্দর আঁকতে পারে। দিন যত অতিক্রান্ত হয়, বাবা বুঝতে পারেন তাঁর ছেলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে, সমস্ত অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে তার আঁকা চিত্রগুলিতে। সাথে পিতা ও পুত্রের মধ্যে মানসিক দূরত্বও তৈরি হয়ে যায়।সন্তানদের মানসিক অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে তিনি একটি চিড়িয়াখানা কিনে ফেলেন। সেটি বহুদিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকলেও অনেক পশুপাখির আশ্রয়স্থল সেটি। তাদের দেখভাল করার জন্য অত্যন্ত যত্নশীল কয়েকজন বনবিভাগের কর্মীও আছেন সেখানে। তাঁদের সকলেরই আকাঙ্ক্ষা, চিড়িয়াখানাটি পুনরায় উন্মুক্ত হোক।
মুশকিলটা বাঁধে এখানেই। চিড়িয়াখানা খুলবো বললেই তো আর খোলা যায় না। তাকে যেতে হবে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সেটি আবার চালু করার উপযুক্ত কিনা। অনেককিছু মেরামতির প্রয়োজন, তার সাথেই প্রয়োজন বিশাল অঙ্কের টাকার। হাতে সময় বিশেষ নেই, নয়তো চিরকালের মতো বন্ধ হয়ে যাবে সেই চিড়িয়াখানা। শেষ পর্যন্ত সেটি রক্ষা পাবে কি? তার সাথেই বাবা ও ছেলের মধ্যেকার মানসিক ব্যবধানও কি কমে আসবে?
আপনাদের মধ্যে অধিকাংশই হয়তো দেখে ফেলেছেন সিনেমাটি। না দেখে থাকলে দেখে ফেলার অবশ্যই পরামর্শ দেবো। আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, এতো ভালো একখানা চলচ্চিত্র এতোদিন দেখলাম না কেমন করে! দেখা সম্পূর্ণ করার পর মনের মধ্যে একটা ইতিবাচক অনুভূতি আসবে, ভীষণ ভালো লাগবে মন।
চলচ্চিত্র এবং মূলচিত্র:
যে সত্য ঘটনা অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছিল, তার সঙ্গে অল্প কিছু হেরফের আছে। তবে তা সিনেমার স্বার্থে এবং মুখ্য যে ভদ্রলোকের পরিবার নিয়ে সিনেমাটি, তাঁর অনুমতি নিয়েই সেটুকু পরিবর্তন করা হয়েছে। সিনেমায় আমেরিকান পটভূমি দেখানো হয়েছে, আসল ঘটনাটি ইংল্যান্ডে। সিনেমায় ভদ্রলোকের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর চিড়িয়াখানাটি কেনা হয়, বাস্তবে সেই চিড়িয়াখানা কিনে সেখানে বসবাস শুরু করার পর তাঁর স্ত্রী মারা যান।
এতো ভালো একখানি সিনেমার স্বার্থে এটুকু পার্থক্য তো মেনে নেওয়াই যায়। গল্পের বাঁধন, প্রত্যেকের অভিনয় মুগ্ধ করে রাখবে আপনাকে। চলচ্চিত্রটি দেখা সম্পূর্ণ করার পর আপনার মনে হবে, নাহ্ সময়টা বেশ ভালোই কাটলো!
কলমে - বি নো দি নী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন