ত্বকের ধরণ অনুযায়ী শীতকালের বিশেষ বিশেষ ফেসপ্যাক

 

শীতে শুষ্কতার কারণে ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ ও নির্জীব। এই রুক্ষতা থেকে রেহাই পেতে ত্বকের প্রয়োজন বিশেষ পরিচর্যার। এই পরিচর্যাই রাখবে আপনার মুখমন্ডলকে কোমল ও মসৃণ। সেই প্রসঙ্গে রইলো ঘরোয়া কিছু ফেসপ্যাকের বিবরণী যা অত্যন্ত সহজেই আপনি বানিয়ে ফেলতে পারবেন।

তবে তার আগে একটা কথা মনে রাখা দরকার, সব প্যাক কিন্তু সকলের জন্য নয়। ত্বকের রকমফের অনুযায়ী ফেসপ্যাক নির্বাচন করতে হবে। সেই কারণে প্রথমে যে জেনে নেওয়া যাক ত্বকের ধরণগুলি।

আমাদের ত্বক সাধারণত চার প্রকারের হয়ে থাকে — শুষ্ক ত্বক, তৈলাক্ত ত্বক, স্বাভাবিক ত্বক, মিশ্র ত্বক।

শুষ্ক ত্বক : অপেক্ষাকৃত পাতলা হয় এই ত্বক, সজীবতা দ্রুত হারিয়ে যায়। ফলস্বরূপ কম বয়সে বলিরেখার মুখোমুখি হতে হয়। বেশি শুষ্ক হয়ে গেলে ত্বক ফেটে যায় এবং শরীরে সাদা সাদা খড়িফোটা দাগ দেখা যায়।

তৈলাক্ত ত্বক : এই ত্বক অপেক্ষাকৃত পুরু হয়। তৈলগ্রন্থি বেশি সক্রিয় থাকার ফলে ত্বকের লোমকূপের ছিদ্র অপেক্ষাকৃত বেশি বড় হয়ে যায় এবং সেই কারণে ব্রণ, ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডসের প্রকোপ পরিলক্ষিত হয়। ব্রণর সমস্যা থাকলেও তৈলাক্ত ত্বকের সুবিধা হলো বেশি বয়স পর্যন্ত ত্বক সজীব থাকে এবং বলিরেখাও পড়ে যৎসামান্য।

স্বাভাবিক ত্বক : এই ধরণের ত্বকে থাকে হালকা তৈলাক্ত ভাব। স্বাভাবিক ত্বকের নাক বা কপালের অংশে বেশ চকচকে ভাব থাকে, কিন্তু গলা ও দু'চোখের কোলের অংশ কম চকচকে হয়।

মিশ্র ত্বক : শুষ্ক ও তৈলাক্ত ত্বকের সমন্বয় হলো মিশ্র ত্বক। এই ধরণের ত্বকে কপাল, নাক ও চিবুকের অংশ তৈলাক্ত হয় এবং গলার অংশ হয় শুষ্ক।

ত্বকের রকমফের নিয়ে আলোচনা তো করা হয়েই গেলো। এবার রইলো ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ফেসপ্যাকের বিবরণ।

১) শুষ্ক ত্বকের ফেসপ্যাক :

 


অ্যালোভেরা এবং বাদাম তেল :

উপকরণ : ৮-১০ ফোঁটা বাদাম তেল এবং এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল।

পদ্ধতি : উপাদানদু'টি একত্রে মিশিয়ে হাতের তালুতে ঘষে নিন। এরপর পুরো মিশ্রণটিকে আপনার চেহারা ও ত্বকে একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে মেখে নিন এবং হালকা হাতে ম্যাসাজ করতে থাকুন। এমনটা করবেন অন্তত ১৫ মিনিট। এরপর সারারাত মিশ্রণটিকে আপনার ত্বকে রেখেই ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলুন। অনেক কোমল এবং সজীব ত্বক পাবেন।

 


মধু, হলুদ ও গ্লিসারিনের প্যাক :

উপকরণ : এক টেবিল চামচ মধু, আধ চা চামচ হলুদগুঁড়ো, আধ চা চামচ গ্লিসারিন।

পদ্ধতি : উপাদানগুলি একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে মুখ, গলা ও ঘাড়ের ত্বকে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।


দুধ ও কলার প্যাক

উপকরণ : ১টি কলা, ১ টেবিল চামচ দুধ।

পদ্ধতি : সম্পূর্ণ কলাটি একটি বাটিতে নিয়ে চটকে নিন। এর সাথে দুধ মেশান। তারপর মিশ্রণটি ত্বকে মাখুন। ২০ মিনিট রেখে গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এর ব্যবহারে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে আগের থেকে আরও সজীব।

২) তৈলাক্ত ত্বকের ফেসপ্যাক :

মুসুর ডাল ও মধুর প্যাক :

উপকরণ : ৪ চা চামচ মুসুর ডাল, ২ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ দুধ।

পদ্ধতি : জলের মধ্যে ডাল বেশ খানিকক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর মিহি করে বেটে নিন। ডালবাটার সঙ্গে মধু ও দুধ মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে কটন বলের সাহায্যে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর ভালো করে ধুয়ে তুলে ফেলুন।


শশা ও পাতিলেবুর প্যাক :

উপকরণ : ২ চা চামচ মুলতানি মাটি, ২ চা চামচ শশার রস, আধ চা চামচ পাতিলেবুর রস।

পদ্ধতি : সবগুলি উপাদান ভালো করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। শুকনো শুকনো লাগলে সামান্য জল মেশান। তারপর এটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর প্রথমে ঈষদুষ্ণ জলে এবং পরে ঠান্ডা জলে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

গাজর ও মধু :

উপকরণ : ১টা গাজর, ১ টেবিল চামচ মধু।

পদ্ধতি : গাজরটির পেস্ট বানিয়ে নিয়ে তার সাথে মধু মিশিয়ে নিন। তারপর এটিকে ভাল করে চটকে মিশ্রণ তৈরি করুন। মুখে ২০ মিনিট মিশ্রণটি রেখে ধুয়ে ফেলুন।

৩) স্বাভাবিক ও মিশ্র ত্বকের ফেসপ্যাক :


দুধের সর ও মধুর প্যাক :

উপকরণ : ১ টেবিল চামচ দুধের মালাই, ১ টেবিল চামচ মধু।

পদ্ধতি : দুধের সর বা মালাই নিজেই একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজিং ক্রীম যা আর্দ্রতার উত্তম যোগানদাতা। ত্বককে নমনীয় এবং কোমল করতে খুবই কার্যকর দুধের মালাই। পাশাপাশি মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল ধর্ম। এই প্যাকটি তৈরি করতে একটি বাটিতে দুধের মালাই এবং মধু নিয়ে ভাল করে মেশান। মিশ্রণটিকে আপনার ত্বক ও চেহারার ওপর মেখে ২০ মিনিট রাখার পর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

 


গাজর ও অলিভ অয়েলের প্যাক :

উপকরণ : ২ চা চামচ অলিভ অয়েল, ২ চা চামচ মধু, ৩ চা চামচ গাজর বাটা, আধ চা চামচ পাকা পাতিলেবুর রস, আধ চা চামচ বাদাম তেল।

পদ্ধতি : টাটকা কচি গাজর মিক্সিতে পেস্ট করে নিয়ে তার মধ্যে বাকি উপকরণগুলি ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার সমগ্র মিশ্রণটা মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর হালকা গরম জলে ও পরে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।


মধু ও মুলতানি মাটির প্যাক :

উপকরণ : ২ চা চামচ মধু, ৩ চা চামচ মুলতানি মাটি, ৩ চা চামচ গোলাপ জল।

পদ্ধতি : উপকরণগুলি ভালো করে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর পরিষ্কার করে নিন।

উপরোক্ত ফেসপ্যাকগুলি বানানো সহজ এবং উপকরণগুলিও সহজলভ্য। ফেসপ্যাক ব্যবহারের পরে আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী অবশ্যই ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। সঙ্গে প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম, নিয়মিত শরীরচর্চা অথবা যোগাভ্যাস এবং মনের ভেতর থেকে খুশি থাকা। তাহলেই শীতের রুক্ষতার মধ্যেও আপনি রয়ে যাবেন কুসুম কোমল।

 

কলমে - শু ভ্রা  ব্যা না র্জী 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন