শিশুর বিকাশে মনোযোগের ভূমিকা

পরীক্ষাতে নম্বর কম পেলে আমাদের শুনতে হয়, কী রে মন দিয়ে পড়িস নি নিশ্চয়ই? অনেক সময় ভেবে পেতাম না মন দিয়ে কেমন করে পড়ব? পড়েছি তো! তাও নম্বর কম পেলাম কী করে বুঝতে পারছি না!

পরীক্ষায় নম্বর পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র মনোযোগ দিয়ে পড়লেই হয় না, তার জন্য আর অনেক কিছু নির্ভর করে। যাক গে, আমরা পরে এই নিয়ে আলোচনা করব। আজ মনোযোগ কী, কেমন করে মনোযোগ কাজ করে, মনোযোগ নষ্ট কেন হয় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করব।

মনোযোগঃ

মনোযোগ = মনঃ + যোগ

আগে মনোযোগকে একটি মানসিক শক্তি বা ক্ষমতা বলে মনে করা হত। বতর্মানে মনোযোগকে মানসিক প্রক্রিয়া1 বলে মনে করা হয়। মনোবিজ্ঞানীগণ মনোযোগ শব্দটিকে বিশেষ্য হিসাবে বিবেচনা না করে 'মনোযোগ দান' ক্রিয়া হিসাবে বিবেচনা করতে বলেন।

মনোযোগের সংজ্ঞাঃ

টিচেনার (Titchner) এর মতে, " চেতনার যে পর্যায়ে আমরা বস্তু সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভ করি তাই মনোযোগ।"

খ্যাত মনোবিদ ম্যাডুগাল ( Mac Duggal ) বলেছেন, "Attention is merely conation considered from the point of view of its effects, on cognitive process." অর্থাৎ, যে মানসিক সক্রিয়তা জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তাকে মনোযোগ বলে।

মনোবিদ ডামভিল (Dumville) বলেছেন, "Attention is the concentration of consciousness upon one subject rather than upon another." অর্থাৎ, অন্য কোনো বিষয়ের পরিবর্তে কোনো একটি বিষয়ে চেতনার কেন্দ্রীকরণকে মনোযোগ বলে।

সার্বিকভাবে মনোবিদগণ মনোযোগের সংজ্ঞা নির্ধারণে যে বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়েছেন সেগুলিকে একত্রিত করে মনোবিদ H L Roediger বলেছেন, "মনোযোগ হল প্রত্যক্ষণকে2 কেন্দ্রীভূত করার প্রক্রিয়া, যার ফলে সীমিত সংখ্যক  উদ্দীপকের3 প্রতি অতিরিক্ত সচেতনতা জাগ্রত হয়। "

 মনোযোগের শ্রেণীভাগঃ

মনোযোগ প্রক্রিয়াকে মনোবিদগণ তার প্রক্রিয়ার স্বরূপ অনুসারে কয়েকটি শ্রেণীভাগ করেছেন। যথা -

ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি অনুসারে।

মনোযোগের তীব্রতা ও স্থায়িত্বের প্রকৃতি অনুসারে।

বিষয়বস্তুর স্বরূপ অনুসারে।

বিষয়বস্তুর আকর্ষণীয়তার উপর নির্ভর করে।

বিশ্লেষণাত্মক মনোযোগ ( খন্ড খন্ড অংশকে চিনে সম্পূর্ণ বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হওয়া)।

সংশ্লেষণাত্মক মনোযোগ ( সামগ্রিক রূপের প্রতি মনোযোগ দেওয়া)।

তাত্ত্বিক মনোযোগ।

ব্যহারিক মনোযোগ।

মনোযোগের বৈশিষ্ট্যঃ

মনোযোগ একটি উদ্দেশ্যমূলক প্রক্রিয়া। কোনো বস্তুর সম্পর্কে সুস্পষ্ট, স্বচ্ছ জ্ঞান আহরণের জন্য আমাদের চেতনা উদ্দীপিত হয়। এর ফলে সেই বস্তুটি সম্পর্কে আমরা সুনির্দিষ্ট জ্ঞান লাভ করি।

"মনোযোগ সচল তাই এটি অনুসন্ধানী"- মনোবিদ উডওয়ার্থ।

 বস্তুর মধ্যে নতুনত্ব থাকলে মনযোগ বেশি আকৃষ্ট হয়।

 মনোযোগ অস্থির ও দ্রুত এক বস্তু থেকে অন্য  বস্তুতে সঞ্চারিত হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে প্রায় ২ সেকেন্ড সময় মনোযোগ স্থির থাকে।

 সব মানুষের ক্ষেত্রে মনোযোগের পরিসর সমান হয় না, ব্যক্তিভেদে পার্থক্য দেখা যায়। সাধারণত ৪ থেকে ৫ এককের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

 মনোযোগের সময় ব্যক্তির দেহের কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন - চোখ, কান, ঘাড় মনোযোগের বস্তুটির দিকে নিয়ে যায়। আবার হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, নাড়ির গতির পরিবর্তন হয়।

 মনোবিদ উডওয়ার্থ বলেছেন, "মনোযোগ হল নির্বাচন। "  আমরা সারাদিন অনেক কিছুই দেখি ও শুনি, সেইসব আমাদের চেতনাতে স্থান পায়। বলা যায় আমাদের চেতনার ক্ষেত্র বিস্তৃত ও বহু উদ্দীপকে ( Stimulating ) পূর্ণ থাকে। আমরা যে-কোনো একটি উদ্দীপক নির্বাচন ( Selection ) করে চেতনার কেন্দ্রে স্থাপন করি।

 মনোবিদ স্টাউট বলেছেন, "মনোযোগের মধ্যে পরিত্যাগ ও নির্বাচন দু'টি প্রক্রিয়াই বতর্মান।" অর্থাৎ, মনোযোগ দ্বিমুখী প্রক্রিয়া। আমরা যে বিষয়টির প্রতি বেশি মনোযোগ দিই সেটি নির্বাচন করে গ্রহণ করি এবং যেটির প্রতি মনোযোগ দিই না সেটি ছেড়ে দিই মানে পরিত্যাগ করি।

 মনোযোগের প্রকৃতিঃ

মনোযোগ প্রকৃতিই হল কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হওয়া। একে কেন্দ্রানুগ প্রক্রিয়া বলে।

টিচেনার এর মতে, মনোযোগের দু'টি স্তর, কেন্দ্রীয় ও প্রান্তীয় চেতনার স্তর। যখন কোনো উদ্দীপক (বস্তু) আমাদের চেতনার কেন্দ্রীয় স্তরে প্রবেশ করে তখন আমরা তার প্রতি মনোযোগী হই। অন্যদিকে উদ্দীপক (বস্তু) যখন প্রান্তীয় চেতনার স্তরে থাকে তখন আমরা বস্তুকে প্রত্যক্ষ করি না, কিন্তু উদ্দীপক (বস্তু) সম্পর্কে নিরপেক্ষও থাকি না। যদি চেষ্টা করা যায় তবে প্রান্তীয় স্তরের উদ্দীপক (বস্তু) আমরা চেতন4 স্তরে নিয়ে এসে প্রত্যক্ষ করতে পারি। অর্থাৎ, গভীর মনোযোগ দিতে পারি।

মনোযোগের পরিসর  (Span of Attention)ঃ

একজন ব্যক্তি কোন বিশেষ মুহূর্তে যতগুলি একই শ্রেণীর বিষয়বস্তুকে চেতনার কেন্দ্রস্থলে উপস্থাপিত করতে পারে, তাকেই বলা হয় মনোযোগের পরিসর (Span of Attention)।      

সাধারণত দেখা গেছে একজন ব্যক্তি ৪ (চার) – ৫ (পাঁচ) একক বস্তুর প্রতি মনোযোগ দিতে পারে।

মনোযোগের পরিসর ব্যক্তিভেদে পার্থক্য দেখা যায়। এমনকি বিভিন্ন সময়ে একই ব্যক্তির মধ্যে মনোযোগের পরিসর বিভিন্ন হতে দেখা গেছে।

ট্যাচিস্ট্রোস্কোপ ( Tachistroscope ) যন্ত্রের সাহায্যে মনোযোগের পরিসরের পরীক্ষা :

১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে হ্যামিলটন মনোযোগের পরিসরের উপর সর্বপ্রথম পরীক্ষা করেন।

বর্তমানে ট্যাচিস্ট্রোস্কোপ ( Tachistroscope )  নামক যন্ত্রের সাহায্যে দর্শনজাত মনোযোগের পরিসর পরিমাপ করা হয়। একটি কাঠের স্ক্রিন থাকে, যার মাঝামাঝি জানালার মতো একটি গর্ত থাকে। কার্ডে লিখিত সংখ্যার অক্ষর লিখিত বা মুদ্রিত থাকে, যা যন্ত্রে প্রবেশ করানো হয়। প্রথমে বলা জানালা দিয়ে সংখ্যা বা অক্ষর দেখা যায়। উপর-নীচ করা যায় এমন একটি সাটারের সাহায্যে মুহূর্তে ( প্রায় ১/১০ সেকেন্ড ), সংখ্যা বা অক্ষর জানালার সামনে রাখা হয়। ওই মুহূর্ত সময় ( প্রায় ১/১০ সেকেন্ড ) জানালার মধ্য দিয়ে কার্ডে লিখিত বা মুদ্রিত সংখ্যা বা অক্ষরগুলি দেখে ব্যক্তি লিখে রাখে। যতগুলি সংখ্যা বা অক্ষর ব্যক্তি সঠিক ভাবে লিখতে সক্ষম হয়েছে তাই হল ব্যক্তির দর্শনজাত মনোযোগের পরিসর।

মনোযোগের সঞ্চালনঃ

কোনো বস্তু বা ঘটনার প্রতি মনোযোগ আরোপকালে দেখা যায় যে, দীর্ঘ সময়ের জন্য ধারাবাহিকভাবে সমমাত্রায় মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব নয়।

মনোযোগ সঞ্চালনের কারণ হল চেতনার বিভাজন।

'মাসন ডিস্ক' ( Masson's Disc ) যন্ত্রের সাহায্যে মনোযোগের সঞ্চালনের উপর পরীক্ষা :

১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে মনোবিদ Urbantschitsch সর্বপ্রথম মনোযোগের সঞ্চালনের উপর পরীক্ষা করেন।

সম্প্রতি মনোবিজ্ঞানের পরীক্ষাগারে 'মাসন ডিস্ক' নামক যন্ত্রের সাহায্যে মনোযোগ সঞ্চালনের উপর পরীক্ষা করা হয়। এটি একটি গোল চাকতি বা ডিস্ক। এর একটি ব্যাসার্ধ বরাবর চারটি বা পাঁচটি ঘূর্ণায়মান কালির বিন্দু থাকে।  ডিক্সটি যখন বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র বা হাতের সাহায্যে ঘোরানো হয় তখন ব্যক্তির কাছে 4-5 টি  ঘূর্ণায়মান বৃত্ত বলে মনে হয়। এই অবস্থায় ব্যক্তিকে যে কোনো একটি ঘূর্ণায়মান বৃত্তের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। যখন বৃত্তটি সে দেখবে তখন পূর্বনির্দিষ্ট বোতাম টিপে বা আঙ্গুল তুলে জানিয়ে দেবে এবং যখন বৃত্তটি অন্তর্হিত হবে তখন বোতাম ছেড়ে দেবে বা আঙ্গুল নামিয়ে দেবে। আবার যখন বৃত্তটি দেখা যাবে বোতাম টিপবে বা আঙ্গুল তুলবে।

এইভাবেই কয়েকবার করলে দেখা যায়, মনোযোগ দেওয়া সত্বেও কখনো-কখনো বৃত্তটি দেখা যাচ্ছে আবার কখনো-কখনো বৃত্তটি দেখা যাচ্ছে না। ধারাবাহিক ভাবে মনোযোগ দিয়েও ধরে রাখা যাচ্ছে না।

সোর্স : মাসন ডিস্ক অঙ্কন, বর্ণনা করা হয়েছে এবং ব্যবহার করা হয়েছে Pace (১৮৯৩) এর দ্বারা

মনোযোগ বিভাজনঃ  

একই সময় একের বেশি উদ্দীপকের প্রতি মনোযোগ দেওয়াকে মনোযোগের বিভাজন বলে।

 যেমন - একজন শিক্ষার্থী একই সময় পড়ছে ও গান শুনছে।

 অবশ্য এই নিয়ে মনোবিদের মধ্যে মতের পার্থক্য আছে। কেউ কেউ বলেন, একজন ব্যক্তি একই সময় দু'টি বস্তুর প্রতি মনোযোগ দিতে পারে। আবার কেউ কেউ বলেন এমনটা নয়। একই সময় দু'টি বস্তুর প্রতি মনোযোগ দেওয়া  অসম্ভব ব্যপার।

 ব্যাখ্যাঃ

(১) কোনো ব্যক্তির মনোযোগ সঞ্চালন এত দ্রুত হয় যেন মনে হয় একই সময়ে একাধিক উদ্দীপকের প্রতি ব্যক্তি মনোযোগ দিচ্ছেন।

২) আবার অনেকে বলেন দু'টি উদ্দীপক হলেও ব্যক্তি একটির প্রতি মনোযোগ দেন। অপরটি এত সোজা বা ব্যক্তি এত দক্ষ যে, সেই বিষয়ের প্রতি ব্যক্তির মনোযোগ দান প্রয়োজন হয় না, অভ্যাসবশত হয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে গণিতজ্ঞ শকুন্তলা দেবীর কথা অনেকে বলেন।

মনোযোগে বাধাঃ

 মনোযোগের বিঘ্ন সৃষ্টিকে মনোযোগের বাধা বলা হয়।

 এটি দুই ভাগে বিভক্ত। যথা -

 বাহ্যিক (External)

 আভ্যন্তরীণ ( Internal )

রোগ-অসুখ, ক্লান্তি, একঘেয়েমি, প্রেরণার অভাব, উচ্চশব্দ, আলোর অভাব, বসার জায়গার অভাব প্রভৃতি হল বাধার কারণ।

 

বেশি বাধা সৃষ্টি করে, রোগ, ক্লান্তি, ইচ্ছার অভাব।

 

 উচ্চশব্দ, ঠিক আলো না পেলেও মানুষ অন্য উপায় বের করে নিয়ে কাজে মন দিতে পারে। কিন্তু ভিতর থেকে যদি সমস্যা হয় তবে সেটা বেশি ক্ষতিকর।

 মনোযোগের নির্ধারকঃ

 মনোযোগের নির্ধারককে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -

  বস্তুগত নির্ধারক

ব্যক্তিগত নির্ধারক

দৈহিক নির্ধারক

 শিশুর মনোযোগ আকর্ষণ সৃষ্টিতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়িত্ব :

কোনো কিছু শেখার জন্য মনোযোগের গুরুত্ব অপরিসীম। এইজন্য অভিভাবক ও শিক্ষক উভয়ের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ।

সব মানুষ সমান নয়। সবার মানসিকতা আলাদা। আমরা অনেক সময় শ্রেণীতে কিছু বিশেষ শিক্ষকের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়ে পড়ি। তাঁর ব্যক্তিত্ব, গলার স্বর, তীব্রতা, পড়ানোর কৌশল আমাদের বেশি আকর্ষণ করে। তখন সেই বিষয়টি আমরা বেশি করে গুরুত্ব দিই। এটা মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব।

শিক্ষার্থী শ্রেণীতে যাতে মনোযোগী হতে পারে সেইজন্য শিক্ষকদের ও অভিভাবকদের কিছু কৌশল প্রয়োগ করতে হবে।

বিষয়বস্তুর স্পষ্ট উপস্থাপন করতে হবে। কারণ, মিনমিন করে পড়ালে শিক্ষার্থী অমনযোগী হয়ে পড়ে। তাদের স্পষ্টতা পছন্দ।

আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গির কৌশল। কারণ, এটা মানুষকে সহজাত স্বভাব। ব্যক্তির সুন্দর কথা বলার কৌশলের প্রতি মানুষ সহজেই আকৃষ্ট হয়।

বোর্ডে কাজ, শিখন সহায়ককারী উপকরণ ( চার্ট, আঁকা, মডেল প্রভৃতি ) এর সঠিকভাবে ব্যহার। কারণ, এইগুলো মনোযোগ আকর্ষণে সাহায্য করে।

একঘেয়েমি, নির্যাস পাঠ, এইসব করলে শিক্ষার্থীর মনোযোগ কমে যায়।

নতুন নতুন পড়ানোর কৌশল, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে সহায়তা করে।

এতসব সত্ত্বেও শিক্ষার্থী অমনযোগী হতে পারে। তখন শিক্ষক ও অভিভাবক শিক্ষার্থীর প্রকৃত অসুবিধা বোঝার চেষ্টা করবেন। শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বুঝে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আরও কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালোঃ

  “অমনোযোগ মনোযোগ শূন্যতা নয়, বিষয়ান্তরে মনোযোগ”

'মনোযোগ' কথাটির বিপরীত শব্দ হল 'অমনোযোগ'। 'অমনোযোগ' শব্দের অর্থ মনোযোগহীনতা নয়। কারণ কোন বিশেষ বিষয়বস্তুর প্রতি মনোযোগ নেই বলে, শিক্ষার্থীর মনোযোগ প্রক্রিয়াহীন একথা বলা যায় না। সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, যে শিক্ষার্থী বিশেষ মুহূর্তে শিক্ষকের বক্তব্যের প্রতি মনযোগী নয়, ঠিক সেই মুহূর্তে সে অন্য বিষয়বস্তুর প্রতি মনোযোগ দিয়েছে। সুতরাং, অমনোযোগ মনোযোগ শূন্যতা নয়, অন্য বিষয়ের প্রতি মনোযোগ।

পাঠ্যের চেয়ে সিনেমার গল্প মনে রাখা

আমরা দেখতাম শ্রেণীতে কিছু শিক্ষার্থী থাকে যারা পড়া ধরলে বলতে পারত না, কিন্তু সিনেমার গল্প হুবহু গড়গড় করে বলে দিত। তাহলে বলতে হবে তাদের মনে রাখার ভালো ক্ষমতা আছে। শুধুমাত্র পড়ার মধ্যে আকর্ষণ খুঁজে পায়নি বলেই পড়া বলতে পারত না।

এইজন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। ভিডিও - অডিওয়ের মাধ্যমে তাদের পড়ার প্রতি মনোযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সাথে সুন্দর করে বিষয়টি বুঝিয়ে দিতে হবে। যাতে ওরা পড়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়।

১. স্মৃতি, আবেগ, উপলব্ধি, কল্পনা, চিন্তাভাবনা এবং যুক্তি - এইগুলি হল সাধারণ মানসিক প্রক্রিয়া। সাধারণত মানুষের মন স্থির হয়ে থাকতে পারে না, সবসময়ই কিছু না কিছু ভাবতে থাকে, অর্থাৎ সক্রিয় থাকে। সেই ন্য ঐসব মানসিক প্রক্রিয়াগুলি প্রাসঙ্গিকভাবেই মানুষের দৈনন্দিন জীবন প্রবাহকে নিয়ত প্রভাবিত করে।

২. প্রত্যক্ষণ : অর্থপূর্ণ ধারণা বা অভিজ্ঞতা লাভ।

 ইংরেজি প্রতিশব্দ Perception, শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ (Perceptio, Percipio) থেকে।

উদ্দীপক দ্বারা সৃষ্ট উদ্দীপনা জ্ঞানেন্দ্রিয় থেকে অন্তর্বাহী সংজ্ঞাবহ স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছলে, আমাদের মধ্যে এক বিশেষ ধরনের সংবেদনের সৃষ্টি হয়। সেই সংবেদন যখন একটি নির্দিষ্ট অর্থ তুলে ধরে, তখন হয় প্রত্যক্ষণ। সংক্ষেপে বলা যায়, অর্থপূর্ণ সংবেদনই হল প্রত্যক্ষপ। যেমন, 'আলো' দেখা সংবেদন কিন্তু আলোর উৎস, প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান হল প্রত্যক্ষণ।

প্রকৃতপক্ষে 'প্রত্যক্ষণ' একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি উদ্দীপনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় এবং সংবেদনের অর্থবহ রূপ নিয়ে শেষ হয়। এটি সংবেদন ও পূর্ব অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ।

৩. উদ্দীপক -  উত্তেজনা সৃষ্টি করে এমন।

৪. চেতনা ( চিত্‌+অন+আ ) - চৈতন্য, সংজ্ঞা, হুঁশ অনুভূতি।

_______________________


কলমে -  স্ব র্ণ ল তা  দে বী  

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ড. দেবাশীষ পাল, ইন্টারনেট, উকিপিডিয়া

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন