প্রচ্ছদকাহিনী - বঙ্গদেশের পৌষপার্বণের কথা-কাহিনী

 


শীতের মিঠে রোদ গায়ে জড়িয়ে, গুড় মোয়ার গন্ধ মেখে হাজির হয় বাঙালির শীতকালীন বিশেষ উৎসব পৌষপার্বণ। বাংলা বছরের পৌষ মাসের শেষের দিনে পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। আয়োজন করা হয় নানা রকমের আনন্দানুষ্ঠানের, সঙ্গে থাকে ঘুড়ি ওড়ানো এবং অবশ্যই থাকতে হবে পুলিপিঠে। ভোজনরসিক বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতিতে পিঠে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বাঙালির কাছে বড়ো আপন হয়ে ধরা দেয়। সেই প্রসঙ্গেই সর্বজয়া পত্রিকার এবারের প্রচ্ছদকাহিনীর বিষয়বস্তু হলো পুলিপিঠে।

পিঠে বা পিঠা শব্দটি এসেছে সংস্কৃত পিষ্টক শব্দ থেকে। এই পিষ্টক আবার এসেছে 'পিষ্' ক্রিয়ামূলে তৈরি হওয়া শব্দ ‘পিষ্ট' থেকে। পিষ্ট অর্থ চূর্ণিত, মর্দিত, দলিত। পুলি শব্দটি এসেছে পোলিকা থেকে। বঙ্গীয় শব্দকোষ বইতে হরিচরণ বন্দোপাধ্যায় লিখেছেন, পিঠা হলো চাল গুঁড়া, ডাল বাটা, গুড়, নারিকেল ইত্যাদির মিশ্রণে তৈরি মিষ্টান্নবিশেষ। বাঙালিদের প্রধান খাদ্যশস্য ধান। এই ধান থেকে চাল এবং সেই চালের গুঁড়ো পিঠে তৈরির মুখ্য উপাদান।

পুলিপিঠে বাঙালির অত্যন্ত পছন্দের হলেও বাঙালি খাদ্য সংস্কৃতিতে সারা বছর এটির প্রচলন তেমনভাবে নেই বললেই চলে। পৌষ সংক্রান্তিতে পিঠে বানানোর একটি নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। সেই কারণটি বাঙালির কৃষিসংস্কৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। 'সংক্রান্তি’ কথাটির অর্থ গমন করা। নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশ করাকে সংক্রান্তি বলা হয়। শুভ কাজগুলি এদিন থেকেই শুরু হয়ে থাকে। নতুন ফসল তোলার উৎসবই মকর সংক্রান্তি। এই দিনে দক্ষিণায়ণ শেষে সূর্যের উত্তরায়ণ পালিত হয় এবং নতুন ফসল নিজেদের আরাধ্য দেবতাকে নিবেদন করার পর শুরু হয় পিঠে তৈরির আয়োজন। মূলত পৌষ মাস শেষ হওয়ার পর থেকে গোটা মাঘ মাস ধরে জমিয়ে পিঠে ভক্ষণ চলে। কখনও কখনও ফাল্গুন মাসেও খাওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু তার পরে পিঠের আর তেমনভাবে স্বাদ পাওয়া যায় না। নতুন ধান থেকে তৈরি চালে যে সুঘ্রাণ আর আর্দ্রতা থাকে, পিঠে বানানোর জন্য চালের গুঁড়ো তৈরিতে আদর্শ সেই চাল। ধান যত পুরোনো হতে থাকে ততই সে আর্দ্রতা হারাতে থাকে। ফলস্বরূপ সেই চাল গুঁড়ো করে সেটি থেকে তৈরি পিঠে পূর্বের মতো আর সুস্বাদু থাকে না।

ভারত উপমহাদেশীয় সভ্যতার অন্তর্গত বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতিতে পিঠে যে কবে থেকে এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে তার নির্দিষ্ট কোনো লিখিত বিবরণ নেই৷ বহুযুগ পূর্বে আর্যরা যখন চাল এবং বিভিন্ন ধরণের শস্যের গুঁড়ো পাথরে কুটতে শুরু করেছিল, তখন থেকেই বলা যায় পিঠে তৈরির সম্ভাবনা উঁকি দিতে আরম্ভ করেছে। বৈদিক যুগেও পিঠের উল্লেখ পাওয়া যায়। তখন যজ্ঞে যব ব্যবহার করা হতো। যব দিয়ে প্রস্তুত হতো এক রকমের পিঠে, তার নাম পুরোডাশ। ইষ্টিযাগের সময় প্রথমে অগ্নিকে ও পরে অগ্নি ও সোম উভয়কেই একত্রে এই পুরোডাশ উৎসর্গ করা হতো। যব অথবা ভুষিহীন চালকে কুলোতে ঝেঁড়ে তারপর শিলে পিষে গুঁড়ো করা হতো। তারপর 'মদন্তী' নামক তামার পাত্রে সেই গুঁড়ো ভিজিয়ে পিন্ড তৈরী করা হতো। তারপর 'কপাল' নামক ছোটো ছোটো চারকোণা মাটির খোলা যজ্ঞের বা গার্হপত্যের অগ্নিতে গরম করে পিন্ডগুলিকে তাতে সেঁকা হতো। সেঁকা হয়ে গেলে পুরোডাশগুলিতে ঘী মাখিয়ে যজ্ঞবেদিতে রেখে দেওয়া হতো ও নির্দিষ্ট সময়ে তা আহুতি দেওয়া হতো। কতকগুলি নির্দিষ্ট মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে পুরোডাশ তৈরী ও আহুতি দেওয়া হতো। ইষ্টিযাগ সঞ্চালনকারী প্রধান ঋত্বিক(এঁকে বলা হতো অধ্বর্য্যু) স্বহস্তে পুরোডাশ তৈরী করে আহুতিপ্রদান করতেন। প্রথমে অগ্নির জন্য এইরকম যথাক্রমে আটটি(অষ্টকপাল পুরোডাশ) এবং পরে অগ্নি-সোমকে মিলিত ভাবে এগারোটি(একাদশকপাল পুরোডাশ) উৎসর্গ করার প্রথা ছিল। এই পিঠেকে অত্যন্ত পবিত্র বলে গণ্য করা হয়ে থাকতো। মহাভারতেও পুরোডাশ পিঠের কথা উল্লিখিত হয়েছে। কর্ণ অঙ্গরাজ্যের রাজা হিসাবে অভিষিক্ত হলে ভীম তাঁকে বলেছিলেন, "কুকুর যজ্ঞের পুরোডাশ খেতে পারে না, তুমিও অঙ্গরাজ্য ভোগ করতে পারো না।" আবার বক রাক্ষসকে বধের প্রাক্কালে ভীমসেন পায়েস, অন্ন ও পিঠে পেট ভরে ভােজন করেছিলেন। তারপর বক রাক্ষসকে বধ করেছিলেন।

এছাড়াও বিভিন্ন প্রচলিত কাহিনী, লোকগাথা, প্রাচীন বইপত্রে পিঠের কথা উদ্ধৃত হয়েছে। সংস্কৃত সাহিত্যে "পিষ্টক" শব্দটির উল্লেখ মেলে। সেই সূত্রে বলা যেতে পারে ভারতীয় উপমহাদেশে পিঠে খাওয়ার প্রচলন অনেকটাই প্রাচীন। বাংলা ভাষায় লেখা কৃত্তিবাসী রামায়ণ থেকে শুরু করে মধ্যযুগের অন্নদামঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চৈতন্যচরিতামৃত ইত্যাদি কাব্যে পিঠের জনপ্রিয়তা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। কৃত্তিবাসী রামায়ণে জনক ভূপতি কন্যার বিবাহানুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য আয়োজিত আহার্যে "পরমান্ন পিষ্টকাদি"র উল্লেখ মেলে।

মঙ্গলকাব্যের প্রসঙ্গে বলা যায়, পঞ্চদশ শতকের শেষ ভাগে বিজয়গুপ্ত রচিত মনসামঙ্গল কাব্যে বণিকসুন্দরী কর্তৃক সম্পন্ন রন্ধনকার্যের মধ্যে নানাবিধ পিঠে অন্তর্গত ছিল। কবি লিখেছিলেন

"খির খিড়িয়া রান্ধে দুগ্ধের পঞ্চ পিঠা,

গুড় চিনি দিয়া রান্ধে খাইতে লাগে মিঠা।"

 ১৫৭৫ সালে মনসামঙ্গল কাব্যে দ্বিজ বংশীদাসের লেখাতে পিঠের প্রসঙ্গ উল্লিখিত ছিল। সনকার রান্না করা বিভিন্ন সুস্বাদু পদের মধ্যে পিঠেও ছিল অন্তর্ভুক্ত — 

"কত যত ব্যঞ্জন যে নাহি লেখা জোখা

পরমান্ন পিষ্টক যে রান্ধিছে সনকা

ঘৃত পোয়া চন্দ্রকাইট আর দুগ্ধপুলি

আইল বড়া ভাজিলেক ঘৃতের মিশালিক

জাতি পুলি ক্ষীর পুলি চিতলোটি আর

মনোহরা রান্ধিলেক অনেক প্রকার।"

রাঢ়দেশের কবি কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম তাঁর চন্ডীমঙ্গল কাব্যে লিখেছেন, "নির্মাণ করিতো পিঠা বিশা দরে কিনে আটা, খন্ড কিনে বিশা সাত আট।" তাঁর গ্রন্থে খুল্লনা চণ্ডীদেবীর আশীর্বাদ লাভ করে স্বামীর তৃপ্তির উদ্দেশ্যে সর্বমঙ্গলা স্মরণ করে যা যা রেঁধেছিল তার মধ্যে পিঠের উল্লেখ আছে — 

"কলা বড়া মুগ সাউলি ক্ষীরমোন্না ক্ষীর পুলি

নানা পিঠা রান্ধে অবশেষে।"

অষ্টাদশ শতকে ঘনরাম রচিত ধর্মমঙ্গল কাব্যগ্রন্থে কবি সম্মানের সঙ্গে বারবনিতাদের রন্ধন পারদর্শিতার সুদীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছেন। বারবনিতা বলে কবি তাদের অপাংক্তেয় করে রাখেননি। সেখানে নিরামিষ ও আমিষ নানাবিধ ব্যঞ্জনের শেষে তাদের দ্বারা প্রস্তুত পিঠেপুলির বিষয়ে জানা যায়। সারাদিনের শ্রমে দুধ জ্বাল দিয়ে তারা বানিয়েছে ক্ষীর। সেই ক্ষীর, ছানা, ননীর পুর প্রবেশ করেছে সেইসব পিঠের গর্ভে। —

"সঁঝাল বক্কাল কত মিছরি মিশাইয়া

দুগ্ধ মারি ক্ষীর করি রাখে জুড়াইয়া

উড়ি চেলে গুঁড়ি কুটি সাজাইল পিঠা

ক্ষীর খন্ড ছানা ননী পুর দিয়া মিঠা।"

ভারতচন্দ্র তাঁর অন্নদামঙ্গল কাব্যে উল্লেখ করেছেন, ভবানন্দ মজুমদারের স্ত্রী পদ্মমুখী দেবী অন্নদার পুজো উপলক্ষ্যে ব্রাহ্মণভোজনের জন্য রেঁধেছেন পিঠে — 

"অম্বল রান্ধিয়া রামা আরম্ভিলা পিঠা

বড়া হল আশিকা পিযুষী পুরি পুলি।"

 এছাড়াও শ্রীচৈতন্যের জীবনীকার জয়ানন্দের "চৈতন্যমঙ্গল"-এ পিঠেপুলির কথা রয়েছে। নিমাইয়ের সঙ্গে লক্ষ্মীপ্রিয়ার বিবাহের পর প্রথমদিন হেঁসেলে নববধূ প্রবেশ করেছিলেন রান্না করতে। শ্বশুরবাড়িতে লক্ষ্মীপ্রিয়ার রান্না করা প্রথম পদ ছিল পিঠে। কবি লিখেছেন — 

"পঞ্চাশ ব্যঞ্জন অন্ন রান্ধিল কৌতুকে

পিষ্টক পায়স অন্ন রান্ধিল একে একে।" 


বিভিন্ন জীবনীকার দ্বারা রচিত শ্রীচৈতন্যের জীবনী গ্রন্থে বারংবার লক্ষ্য করা যায় মহাপ্রভুর জন্য তাঁর ভক্তবৃন্দ যা-ই রান্না করুক না কেন, তার মধ্যে পিঠেপুলি আবশ্যক। কেশব ভারতীর নিকট সন্ন্যাস গ্রহণের শেষে শ্রীচৈতন্য ঈশ্বরপ্রেমে বিহবল অবস্থায় তিনদিন অনাহারে ছিলেন। গঙ্গা পার হয়ে তিনি শান্তিপুরে অদ্বৈতভবনে এলে সেখানে উপবাস ভঙ্গের সময় তাঁর ভক্তরা যে নানাবিধ নিরামিষ ব্যঞ্জন প্রস্তুত করেছিল, সেসবের মধ্যে ছিল 

"মুদগ বড়া মাস বড়া কলা বড়া মিষ্ট

ক্ষীর পুলি নারিকেল পুলি পিঠা ইষ্ট।" 

শুধুমাত্র প্রাচীন কাব্যগ্রন্থই নয়, "নক্সী কাঁথার মাঠ" কবিতায় পল্লীকবি জসীমউদ্দীন বাঙালি মেয়েদের দশটি আঙুলের শিল্পকৌশলকে সমুজ্জ্বলভাবে তুলে ধরেছেন — 

"তাহার মতন চেতন সেওই/ কে কাটিতে পারে

নী করা পাকান পিঠায়/ সবাই তারে হারে।"

 সকলের প্রিয় কবিগুরুও পিঠেপুলির একজন বিশিষ্ট ভক্ত ছিলেন। পিঠেপুলি খেতে বেশ ভালোবাসতেন তিনি। এই প্রসঙ্গে একটি মজার ঘটনার কথা বলা যাক। শান্তিনিকেতনের এক ভদ্রমহিলা একদিন পিঠে তৈরি করে কবিকে পাঠিয়ে দিলেন। কয়েকদিন পরে তিনি কবিকে জিজ্ঞাসা করলেন — "গুরুদেব, সেদিন যে পিঠে দিয়েছিলুম তা কেমন খেলেন?" কবির সরস জবাব — 

"লোহা কঠিন, পাথর কঠিন আর কঠিন ইস্টক

তার অধিক কঠিন কন্যে তোমার হাতের পিষ্টক।"

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত অতীব ভোজনরসিক। শোনা যায়, পৌষপার্বণের দিনে তাঁর বাড়ি অতিথি সমাগমে পূর্ণ হয়ে থাকতো। তাঁর লেখা "পৌষপার্বণ" কবিতায় তিনি লিখেছেন — 

"আলু তিল গুড় ক্ষীর নারিকেল আর

গড়িতেছে পিঠে পুলি অশেষ প্রকার

বাড়ি বাড়ি নিমন্ত্রণ,কুটুমের মেলা

হায় হায় দেশাচার, ধন্য তোর খেলা।"

সেসব পিঠেও ছিল বহু প্রকারের। গুপ্ত কবি দিয়েছেন তার সরস বর্ণনা — 

"এই মুগের ভাজা পুলি মুগ্ধ করে মুখ

বাসি খাও, ভাজা খাও, কত তার সুখ।" 

কবি আরও লেখেন — 

"তাজা তাজা ভাজা পুলি, ভেজে ভেজে তোলে

সারি সারি হাঁড়ি হাঁড়ি কাঁড়ি করে তোলে

কেহ বা পিটুলি মাখে কেহ কাঁই গোলে।"



পৌষ সংক্রান্তির পুণ্যতিথি উপলক্ষে সাগরসঙ্গমে পুণ্যার্থিদের ভীড়

পৌষ সংক্রান্তিতে পিঠেপুলি উৎসব ছাড়াও আরেকটি উল্লেখযোগ্য উৎসব হলো গঙ্গাসাগর মেলা। মকর সংক্রান্তির পুণ্য তিথিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় জমে সাগরদ্বীপে। গঙ্গার মর্ত্যে আসা ও সগর রাজার পুত্রদের জীবনদানের লোকগাথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই তীর্থভূমি। কপিল মুনির আশ্রমটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও পরবর্তীকালে গড়ে ওঠা কপিল মুনির মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে ভক্ত সমাগম হয়। মকর সংক্রান্তির ইতিহাস অনুযায়ী পৌষ বা মকর সংক্রান্তিতে সূর্য ধনু রাশি থেকে মকরে সঞ্চারিত হয়, তাই এর নাম ‘মকর সংক্রান্তি’। একে ‘উত্তরায়ণ সংক্রান্তি’-ও বলা হয়ে থাকে, কারণ এই দিন থেকে সূর্য উত্তরায়ণের দিকে যাত্রা শুরু করে। এই সংক্রান্তির ব্রহ্মমুহূর্তে যমুনা নদীতে মকর-স্নান করলে আয়ুবৃদ্ধি হবে — এই বিশ্বাসে মাতা যশোমতী বালক কৃষ্ণকে স্নান করাতে নিয়ে যান।

 

কেন্দুলী গ্রামের রাধাবিনোদ মন্দির; এই মন্দির কেন্দ্র করেই বিখ্যাত জয়দেব-কেন্দুলীর মেলা বসে

আরেকটি যে মেলার কথা না বললেই নয় তা হলো জয়দেব মেলা বা জয়দেব-কেন্দুলি মেলা। বীরভূম-বর্ধমান জেলার সীমান্ত বরাবর বয়ে চলা অজয় নদের ধারে কেন্দুলি গ্রাম। এখানেই ছিল রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেবের নিবাস। রাধাগোবিন্দের মন্দির সহ কেন্দুলিতে জয়দেবের স্মৃতিধন্য বহু দ্রষ্টব্য থাকলেও কেন্দুলির সব চেয়ে বড় পরিচয় পৌষ সংক্রান্তির মেলা যাকে কেন্দ্র করে কেন্দুলির কথা আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়েছে। প্রাচীনত্ব ও জনপ্রিয়তার নিরিখে এই মেলা আজ দেশের অন্যতম প্রধান মেলা হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন পুণ্যস্নানের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী মেলা শুরু করা হয়ে থাকে। কেন্দুলি মেলা মূলত পণ্ডিত জয়দেবের স্মৃতি তর্পণ উদ্দেশ্যে উদযাপিত হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় দিন গোনেন বাউলপ্রেমী মানুষজন।

নানারকম মেলা ছাড়াও পৌষ সংক্রান্তির দিন বাস্তুপুজোরও প্রচলন আছে। শঙ্খপাল, বঙ্কপাল, ক্ষেত্রপাল, নাগপালের ধ্যান করে বাস্তুর ধ্যান ও মানসোপচারে পূজা করা হয়। বাড়ির উঠোনে তুলসী মণ্ডপে আয়োজিত হয় এই পুজো। ঝিকা গাছের ডাল কেটে এনে তার তলায় পুজো হয়। এই পুজোর প্রধান অঙ্গ চরু রান্না। চরু রান্না করা হয় পাটশলমির আগুনে, নতুন মাটির হাঁড়িতে দুধ-চাল-বাতাসা ফুটিয়ে।

বাস্তুপুজো ছাড়াও গ্রামবাংলার অনেক স্থানে উঠোনে মড়াই-এর পাশে ‘উঠোন লক্ষ্মী’র পুজো হয়, কোথাও আবার হয় ‘পৌষলক্ষ্মী’র পুজো। বাড়ির উঠোন গোবরজল দিয়ে নিকিয়ে শুচি-স্নিগ্ধ করে ‘পৌষ তোলা’র চার-পাঁচ গুচ্ছ ধানগাছ সাদরে গৃহস্থ বাড়িতে এনে উঠোনে রাখা হয়। গোটা উঠোন জুড়ে থাকে আলপনার নান্দনিকতা। আঁকা হয় মা লক্ষ্মীর নানান গয়না, গরু, লাঙল, জোয়াল, মই ইত্যাদি চাষের নানা উপকরণ এবং মা লক্ষ্মীর পা। এই চরণচিহ্নে পা ফেলেই যেন ঘরে মা লক্ষ্মীর আগমন ঘটবে।


আসামের ভোগালি বিহু উদযাপন

শুধু বাংলাতেই নয়, আসামেও পালিত হয় মকর সংক্রান্তি। সেখানে এটি 'ভোগালি বিহু' উৎসব নামে পরিচিত। 'ভোগালি' শব্দের অর্থ হল ভোজন। এই সময় আসামেও নতুন ধান ওঠে, আর এই উৎসবের খাওয়া-দাওয়া একটা বড় ব্যাপার। তার সঙ্গে মিল রেখেই এই নামকরণ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো এখানেও নতুন চালের পিঠে তৈরি করা হয়।


পাঞ্জাবে লোহরি উদযাপন

পাঞ্জাবে এইদিন পালিত হয় লোহরি বা মাঘি। এই দিন ভোরে কাঠকুটো জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে সেই আগুনে পুরনো বাতিল জিনিসপত্র আহুতি দেওয়া হয়। স্নান করে দ্বীপ জ্বালিয়ে ভগবানের আরাধনা করা হয়। গুজরাটে এই উৎসব মূলত সূর্যদেবের আরাধনা, যার নাম উত্তরায়ণ। মানুষ ঘুড়িকে প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করে সূর্যদেবতার কাছে নিজেদের আকুতি পৌঁছে দেয়। গুজরাটে ‘উত্তরায়ণ’ উপলক্ষে দু’দিন ছুটি থাকে। রাজ্যের বিভিন্ন শহরে আন্তর্জাতিক ঘুড়ি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

এইদিন তামিলনাড়ুতে আয়োজিত হয় পোঙ্গল। ‘পোঙ্গল’ মানে উৎসব। অবশ্য ‘পোঙ্গল’ শব্দের যথাযথ অর্থ হল ‘প্রাচুর্য’ বা ‘উপচে পড়া’। পোঙ্গল উৎসবেও সূর্যের আরাধনা করা হয়। কৃষিকাজে শক্তি সরবরাহ করেন সূর্যদেব। তাই তাঁর আরাধনা করা হয়। ‘পোঙ্গল’ একটি খাওয়ার পদেরও নাম। চাল, মুগ ডাল, দুধ, ছোট এলাচ, কিসমিস, তালের গুড় দিয়ে তৈরি মিষ্টি পদ। সুসজ্জিত রঙিন মাটির পাত্রে সূর্যালোকে খোলা উঠোনে ‘পোঙ্গল’ তৈরি করে সূর্যকে নিবেদন করে ওই দিন খাওয়া হয়।

বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশে দিনটি খিচড়ি নামে পরিচিত। এসব জায়গার কোনও কোনও এলাকায় তিল, গুড় এবং দুধের মিষ্টান্নের পাশাপাশি চাল, ডাল এবং মরসুমি সবজি দিয়ে তৈরি হয় খিচুড়ি। দিল্লী ও হরিয়ানায় পালিত হয় সিধা। এই দিনে দেশি ঘি দিয়ে মিষ্টি প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া খাওয়া হয় হালুয়া ও ক্ষীর। পরস্পরকে উপহার দেওয়ারও রীতি রয়েছে, একে 'মানানা' বলে। উৎসবের দিন লোকসংগীত গাওয়া হয়ে থাকে। এরই পাশাপাশি উত্তর ভারতের অন্যান্য অঞ্চল, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, অন্ধ্র, তেলঙ্গানা এবং কেরালায় মকর সংক্রান্তি নামটি প্রচলিত। সাথে রয়েছে মধ্যপ্রদেশে সুকরাত এবং অন্ধ্রপ্রদেশে মুক্কুনুমা। এছাড়াও বাংলাদেশে পালন করা হয় সাকরাইন, নেপালে মাঘে, তাইল্যান্ডে এই উৎসবের নাম সোংক্রান, কাম্বোডিয়ায় মোহা সোংক্রান, মায়ানমারে থিংইয়ান এবং লাওস-এ পি মা লো।

পিঠেপুলি প্রসঙ্গে আবার ফেরত আসা যাক। শুধুমাত্র পুরানকাব্য বা মঙ্গলকাব্যই নয়, পিঠের প্রসঙ্গে আছে ছোটদের প্রিয় "ঠাকুরমার ঝুলি"তেও। "ঠাকুরমার ঝুলি"র ‘কাঁকণমালা, কাঞ্চনমালা’ গল্পে রয়েছে ‘পিট-কুড়ুলির ব্রত’-র কথা, রাজ্যে পিঠে বিলোনোর অনুষ্ঠান। রাণীকে চালের গুঁড়ো দিয়ে উঠোনে আলপনা এঁকে পিঁড়ে সাজিয়ে দিতে হয়। দাসীরা পিঠের জোগাড় করে। রাণীরূপী দাসী তৈরি করে আস্কে পিঠে, চাস্কে পিঠে আর ঘাস্কে পিঠে। দাসী বানায় চন্দ্রপুলি, মোহনবাঁশী, ক্ষীরমুরলী, চন্দনপাতা। দাসী চালের গুঁড়োয় খানিকটা জল মিশিয়ে ছোটো একটা কাপড় ভিজিয়ে পদ্ম আঁকল, পদ্ম-লতার পাশে সোনার সাত কলস আঁকল। কলসের উপর চূড়া, দু'দিকে ধানের ছড়া, ময়ূর, পুতুল, মা লক্ষ্মীর চরণচিহ্ন।

পিঠের বিভিন্নতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পুরুলিয়ার পিঠে। সেখানে টুসু পরবে কুরমি উপজাতির কাছে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৌষমাসের শেষের চারদিন এখানে পিঠে বানানো হয়ে থাকে। সেই দিনগুলো চাঁউড়ি, বাঁউড়ি, মকর এবং আখান নামে পরিচিত। চাঁউড়ির দিনে বাড়ির মহিলারা গোবর মাটি দিয়ে ঘর পরিষ্কার করে চালের গুঁড়ো প্রস্তুত করেন। বাঁউড়ির দিনে অর্ধচন্দ্রাকৃতি, ত্রিকোণাকৃতি, চতুষ্কোণাকৃতি পিঠে তৈরি করে তার মধ্যে তিল, চাঁছি, নারকেল অথবা মিষ্টি পুর দিয়ে ভর্তি করা হয়। স্থানীয়রা এই পিঠেকে বলে গড়গ্যইড়া পিঠা, কখনও বা উথি পিঠা কিংবা পুর পিঠা।

 

বেনি পিঠে 

পিঠে বানানোর প্রক্রিয়াটি পরিশ্রমসাধ্য হলেও সেসবের স্বাদও অনন্যসাধারণ। আগেকার দিনে মা-ঠাকুমারা শিলনোড়াতে চাল গুঁড়িয়ে সেই চালগুঁড়ো গরম জল দিয়ে মেখে তার ভিতরে নারকোলের বা ক্ষীরের পুর দিয়ে পিঠের আকার দিয়ে রাখতেন। তারপর কাঠের উনুনে জল গরম করে তার মধ্যে সেই রেখে দেওয়া পিঠেপুলি কাপড়ের পুঁটুলি করে ছেড়ে দিতেন। আবার সড়ার মধ্যে পিঠের মিশ্রণ দিয়ে আগুনের ভাপে তৈরি করা হত পিঠে। এই পিঠে খাওয়া হতো নলেনগুড় বা ঝোলাগুড়ের সঙ্গে। সেসব পিঠে ছিল হরেক রকমের — পোড়া পিঠে, পুর পিঠে, ভাপা পিঠে, পাটিসাপটা, সরাই পিঠে, পুলি পিঠে, গোকুল পিঠে, পুলি, ক্ষীর পুলি, আরো কতো কী

এইসব পিঠের নামকরণের পিছনে রয়েছে নানাবিধ কারণ। যেমন ধরা যাক ভাপা পিঠে। চালের গুঁড়ো, নারকেল ও খেজুরের গুড় দিয়ে বানানো হয় ভাপা পিঠে। গোল আকারের এই পিঠে পাতলা কাপড় দিয়ে মুড়ে ঢাকনা দেওয়া হাঁড়ির মধ্যেকার ফুটন্ত জলে ভাপ দিয়ে তৈরি করা হয় বলেই এর নাম ভাপা পিঠে।

ঠিক তেমনভাবে গুড় গোলানো চালের আটা তেলে ছেড়ে দিয়ে যে পিঠে প্রস্তুত করা হয় তার নাম তেল পিঠে। চালের গুঁড়ো সেদ্ধ করে আটার মতো মেখে বিনুনির আকারে গড়ে বানানো পিঠেকে বলে বেনি পিঠে। ঝিনুক পিঠে হয় ঝিনুকের মতো দেখতে।

 গোলাপ পিঠে 

আরেক ধরণের পিঠের নাম গোলাপ পিঠে। গোলাপের মতো দেখতে বলে এমন নাম। ময়দা, ছানা, খোয়া ক্ষীর, নলেন গুড় গোলাপি পিঠে বানানোর অন্যতম উপকরণ। বর্তমান যুগে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই পিঠে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। 

নকশি পিঠে 

অন্যতম অভিনব পিঠে হলো নকশি পিঠে। এই পিঠের গায়ে বিভিন্ন ধরণের নকশা আঁকা হয় অথবা ছাঁচে ফেলে পিঠেকে নানারকম নকশার আদলে তৈরি করা হয় বলেই এমন নাম। নকশি পিঠে তৈরির জন্য প্রথমে আতপ চালের গুঁড়ো বা আটা সেদ্ধ করে মণ্ড তৈরি করা হয়। এই মণ্ড বেলে মোটা রুটির মতো তৈরি করে তার ওপর ছাঁচ দিয়ে কলকা, ফুল, লতাপাতা, মাছ, পাখি, তারা, চাঁদ ইত্যাদির নকশা আঁকা হয়। ছাঁচগুলো সাধারণত মাটি, পাথর, কাঠ বা ধাতু দিয়ে তৈরি। এসব ছাঁচের ভেতর দিকে নকশা আঁকা থাকে। নকশা অনুযায়ী পিঠের নামও ভিন্ন — কাজললতা, শঙ্খলতা, পানপাতা, হিজলপাতা, ভেটফুল, উড়িফুল, পদ্মদীঘি, চান্দা মাছ, জোড়া ময়ূর, কদম ফুল ইত্যাদি।

নকশি পিঠের উদ্ভব আখ্যানটি বেশ আকর্ষণীয়। বহুকাল আগের কথা। নরসিংদীর মেঘনা পাড়ের এক গ্রামে আলপনা আঁকা হত চালের গুঁড়ো দিয়ে। তা দেখেই ১৩ বছরের একটি মেয়ে চালের গুঁড়ো সেদ্ধ করে সেই সেদ্ধ মন্ড হাত দিয়ে চেপে রুটির মত করে খেজুর গাছের কাঁটা দিয়ে সুন্দর নকশা তৈরী করে। মেয়েটির বানানো সেই নকশা দেখে তার মা ও ঠাকুমাসহ বাড়ীর সকল সদস্যরা অবাক হয়ে যায়। রোদে শুকিয়ে রাখার পর গ্রামের সবাই দেখতে আসে সেই নকশা। তারপর অনেক চেষ্টা, ভুল ত্রুটি ও পরীক্ষানিরীক্ষা করে নকশা রুটিটা ডুবো তেলে ভেজে তুলে আবার নলেনগুড়ের মধ্যে ডুবিয়ে তুলে নেওয়া হয়। তারপর থেকেই নকশা করা এই পিঠে নকশি পিঠে নামে পরিচিতি লাভ করে।

বর্তমান যুগে পিঠেপুলি বানানোর জন্য নানারকম কাঠামো ও ছাঁচের ব্যবহার করা হয়। চালের গুঁড়ো কিনতেও পাওয়া যায় দোকানে। কিন্তু আগেকার দিনে সমস্তটাই বানানো হতো নিজেদের হাতে করে। সেই প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণের উদ্দেশ্যে বহরমপুরের কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির সদস্যা সুপ্রিয়া রায় বলেন, “রাজবাড়ির অন্দরমহল আর আশপাশের পাড়া-প্রতিবেশীদের রান্নাঘর থেকে মকর সংক্রান্তির দিন আসত পিঠেপুলির সুবাস।” পৌষের শেষে নতুন তোলা ধান ও চালের গন্ধ ভরিয়ে রাখত চতুর্দিক। সুপ্রিয়াদেবীর মনে পড়ে, ঘন জ্বাল দেওয়া দুধের গন্ধ পিঠে খাওয়ার ইচ্ছেটা আরও বাড়িয়ে দিত। পিঠে বানানোর বিশেষজ্ঞ ছিলেন কয়েকজন। তাঁদের কদর বেড়ে যেত এই সময়ে।”

অধিকাংশ মানুষের মনেই এই ধারণা আছে যে পিঠে তৈরি করা একমাত্র বাড়ির মেয়েদের কাজ। তা কিন্তু নয়। অনেক সময়ে পুরুষেরাও হাত লাগাতেন পিঠে প্রস্তুত করতে। কান্দির জেমো রাজবাড়ির ফুল তরফের বর্তমান বংশধর কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ রায় বলেন, বাজারসৌ-এর জমিদার ব্রাহ্মণ অজিত দুবে নিজে হাতে পিঠে ও পুলি বানাতেন। অপূর্ব ছিল তার স্বাদ। শান্তি পাঠকের হাতে গড়া পিঠেতে আমাদের রাজবাড়ির ভোগশালা ভরে থাকত।” জঙ্গিপুরের জমিদার সিংহবাড়ির পুত্রবধূ অলোকদেবী বলেন, দুধ, নারকেল আর চালের গুঁড়ো এই তিন দিয়ে যে কত কী করা যায়, তা জানতেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা। আমি কিছুটা শিখেছিলাম। আনন্দের কথা, এখনও কিন্তু তার কদর কমেনি।”

নদিয়ায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পরিবার হেমন্ত ও শীতে প্রচুর উৎসবের আয়োজন করত। বর্তমান রাজবধূ অমৃতা রায়ের কথায়, মকর সংক্রান্তি ছিল আমাদের পরিবারের অন্যতম প্রধান উৎসব। আমার শ্বাশুড়ি মা জ্যোতিমর্য়ী দেবীর আমল পর্যন্ত সেই জাঁকজমক বজায় ছিল। সংক্রান্তির আগের দিন সকাল থেকে তাঁর তদারকিতেই তৈরি হত রকমারি পিঠে। সংক্রান্তির ভোরে গঙ্গায় স্নান সেরে তিনি প্রথমে গৃহদেবতাকে পিঠে-পুলি উৎসর্গ করতেন। তার পরে আত্মীয়-পরিজনদের বাড়ি-বাড়ি পাঠাতেন। সে দিন যে কোনও কাজ নিয়ে রাজবাড়িতে আসা কাউকে পিঠে-পুলি না খাইয়ে ছাড়া হত না।”

বর্তমানে বহু দোকানের শো-কেসে রসগোল্লা, পান্তুয়া, সন্দেশ, চমচমকে পিছনে সরিয়ে সামনে চলে এসেছে দুধপুলি, গোকুল পিঠে, পালো পিঠে, সরা পিঠে, চুষি পিঠে থেকে শুরু করে মালাই-পুর ভরা ছানার পাটিসাপটা, মুগ ডাল ও চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি ভাজা পিঠে। রয়েছে মালপোয়াও। এরকমই এক মিষ্টির দোকানের মালিকের কথায়, “ক্রেতাদের কাছ থেকে পিঠে গড়ার প্রস্তাব পেয়ে গত কয়েক বছর ধরে পিঠে বানানো শুরু করেছি।”

বর্তমান যুগের ব্যস্ততার কারণে অধিকাংশ বাড়িতেই আর সেভাবে পিঠে তৈরি করা হয়ে ওঠে না। কিন্তু ভোজনরসিক বাঙালিকে থামাবে কে! পিঠেপুলির দুর্দান্ত স্বাদ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখা তার কাছে এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। আর সেকারণেই রমরমিয়ে চলতে থাকুক শহরের আনাচে-কানাচে মিষ্টির দোকানগুলোয় রমরমিয়ে পিঠে প্রস্তুতি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আস্বাদন পাক সকলের প্রিয় "পিষ্টক"এর।

______________________


কলমে - তমালিকা ঘোষাল ব্যানার্জী



তথ্যসূত্র :

১। পিঠার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে পুরুলিয়া! কেন আজও জনপ্রিয়? 

২। কিভাবে বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হলো পিঠে পুলি উৎসব! রইল অজানা ইতিহাস  

৩। পিঠে- উইকিপিডিয়া 

৪। Poush Parbon The month of pithe puli 

৫। Poush Parbon and Pitha PuliCelebrating Harvesting festival of Bengal in India 

৬। পৌষ সংক্রান্তি- উইকিপিডিয়া

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন