ডাকাতরাজা - ডাকাত নাকি রাজা

 


বই – ডাকাত রাজা

লেখক – দেবারতি মুখোপাধ্যায়

পৃষ্ঠা সংখ্যা - ২৪৯

প্রকাশকাল – অগাস্ট ২০২১

প্রকাশক – পত্রভারতী

অলংকরণ ও প্রচ্ছদ – রঞ্জন দত্ত


মল্লরাজা বীরহাম্বীর ঃ ডাকাত নাকি রাজা

দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের “ডাকাতরাজা” উপন্যাসটি ইতিহাস ও লেখকের কল্পনার সার্থক রূপায়ন – কোনও ঐতিহাসিক উপন্যাস নয়। বাংলার নিজস্ব কৃষ্টির ধারক ও বাহক বিষ্ণুপুর তথা মল্লভুমের রাজপরিবার ও তার দীর্ঘ প্রায় হাজার বছরের শাসনকাল সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য বা গ্রন্থ উপলব্ধ নয়। তাই সেদিক থেকে এই গ্রন্থ এক বিস্মৃতপ্রায় রাজবংশ ও তার উজ্জ্বল এক অধ্যায়ের মনগ্রাহী দর্পণ।

উপন্যাসে বর্ণিত সময়কালঃ

সময়টা ষষ্ঠদশ শতক। দিল্লীর সিংহাসনে মোঘল সম্রাট আকবর। সুবা বাংলার শাসনভার সুলেমান করনাণীর হাতে। এই করনাণীর জামাতা মহম্মদ ফার্মূলী হয়ে উঠেছে হিন্দুধর্মের ত্রাস “কালাপাহাড়”। আর সেই সময় মল্লভুমের শাসনভার ন্যস্ত ধাড়ীমল্লের সুযোগ্য পুত্র বীরহাম্বীরের উপর।

উপন্যাসের চরিত্র সমূহঃ

বীরহাম্বীর, শ্রীনিবাস আচার্য, রাজীবলোচন, মহারানী শিরোমণি, মনোহরা, মেনকা, পাবন, রঘুনাথ, শীতল, কেশব ছড়াকার ও আরও অনেকে। প্রতিটি চরিত্র নিজস্ব সত্ত্বায় উজ্জ্বল। একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাহিনীর গতিকে যেমন এগিয়ে নিয়ে গেছে, তেমনি প্রত্যেকের পরিণতিও রচিত হয়েছে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্যভাবে। বিষ্ণুপুরের মাটিতে শ্রীনিবাস আচার্যের পদার্পণ, পুঁথি অপহরণের কাহিনী এবং তৎসঙ্গে মল্লভূমের সাথে ওনার একাত্ম হয়ে ওঠার কাহিনী এই বইয়ের সম্পদ। কৃষ্ণপ্রেমের সাথে সাথে ওনার দর্শন, রণনীতি, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা বারবার যেন মৌর্য যুগের চাণক্যকেই মনে করিয়ে দেয়।

কাহিনীবিন্যাসঃ 

বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের ওপর লিখিত সম্ভবত প্রথম বাংলা উপন্যাস! উপন্যাসের সময় শুরু প্রায় আড়াই বছর আগে।বাংলার বুকে প্রায় এক হাজার বছর রাজত্ব করে গিয়েছে একটাই রাজবংশ, অথচ বিষ্ণুপুরের সেই মল্লরাজারা যেন বড় উপেক্ষিত, বড় অবহেলিত! শশাঙ্ক, বল্লাল সেন, লক্ষ্মণ সেন কিংবা প্রতাপাদিত্যদের ভিড়ে ইতিহাসের বইতে ঠাঁই মেলে না মল্লরাজাদের। অথচ তাঁদের রাজ্যশাসন, প্রজাবাৎসল্য, সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা গর্বিত করতে পারে যে কোন বাঙালিকে! 'ডাকাতরাজা' শেষ উনপঞ্চাশতম মল্লরাজ বীরসিংহের জীবনের উপরেই পুরোপুরি আধারিত।মূল কাহিনী এখানে বীরহাম্বীরের রাজত্বকালে ভয়ঙ্কর কালাপাহাড়ের বিষ্ণুপুর আক্রমণের পরিকল্পনা ও মহারাজ কর্তৃক সেই আক্রমণ প্রতিহত করে বিষ্ণুপুর তথা মল্লভুমকে সুরক্ষিত রাখা। মূল কাহিনীর সঙ্গে আনুষঙ্গ হিসাবে যুক্ত হয়েছে আরো অনেক ঘটনা। মল্লরাজবংশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মৃন্ময়ী হাম্বীরকে স্বপ্নদর্শনে তাঁকে লুটপাট বন্ধ করার আদেশ দেওয়ার পর, শেষবারের মত রাজাদেশে যে ডাকাতি হয় তার পরিণাম কোনও জাগতিক ঐশ্বর্য ছিল না – ছিল বহু মূল্যবান পুঁথি। এই ঘটনার সূত্র ধরে বীরহাম্বীরের জীবনে প্রবেশ ঘটে বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারক শ্রীনিবাস আচার্যর। পরবর্তী সময়ে যে বীর হাম্বীরকে আমরা সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে পাই, তাঁর আসল রূপকার এই শ্রীনিবাস আচার্য। হিন্দু ব্রাহ্মণ রাজীবলোচন কিভাবে পরিস্থিতির প্রভাবে দুর্দমনীয় কালাপাহাড় হয়ে হয়ে ওঠেন – তাঁর প্রতি ঘটা অত্যাচার ও নিষ্ঠুরতা দু'টোই আমাদের ছুঁয়ে যায়। তৎকালীন প্রেক্ষাপটে অনাথ ও শূদ্র পবনের সাথে রাজপুত্র রঘুনাথের বন্ধুত্ব ও নির্ভরতা এক দৃষ্টান্ত তৈরি করে। আবার শীতল ও মনোরমার ভালোবাসার মিষ্টি মুহূর্তরা মুগ্ধ করে।

যেখানে আজও বহু পরিবারে কন্যা জন্মালে মানুষ দুঃখ পায়, সেখানে রাণী শিরোমণির কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে যে আনন্দোৎসবের আদেশ দেওয়া হয়েছিল, যুগবিচারে তা সত্যিই অবাক করে। জ্ঞাতিবিরোধ, ভাতৃপ্রেম, ব্যর্থ প্রেম, অন্ধ প্রতিহিংসা, অনুতাপ, স্বজনবিয়োগ প্রভৃতি বিভিন্ন অনুভূতি / আবেগ ঘটে চলা নানা ঘটনায় ফুটে উঠেছে। ঐতিহাসিক “দলমাদল” কামানের প্রসঙ্গ যেমন আছে, তেমনি বাংলার নিজস্ব “দশাবতার” খেলার উল্লেখও আছে।

ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী প্রাণঘাতী যুদ্ধের শেষে শ্রীনিবাস আচার্যর জাদুস্পর্শে দুই রাজপুরুষ তাঁদের আগ্রাসন ত্যাগ করে পরিণত হলেন সিদ্ধপুরুষে। কালান্তক যুদ্ধের পরে সমতা বহমান ধারায় পবন ও মনোরমার সংসারে বড় হয়ে উঠল মল্লরাজবংশের সন্তান মধুসূদন সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিচয়ে।সময় লিখে চলল অনন্য এক ইতিহাস …  

 লেখক পরিচিতিঃ


দেবারতি মুখোপাধ্যায়

দেবারতি মুখোপাধ্যায় এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যের একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় সাহিত্যিক। শুধু সাহিত্যিক নন, তিনি যুবসমাজের কাছে ইন্সপিরেশন, লক্ষ লক্ষ তরুণ তরুণীর কাছে আইকন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ভেরিফায়েড একাউন্টে ফলোয়ারের সংখ্যা আড়াই লক্ষেরও বেশি।

তাঁর উপন্যাস ও অন্যান্য লেখা ক্রিটিকাল ও কমার্শিয়াল দু’রকম দিকেই ভীষণভাবে আলোচিত। তাঁর প্রায় প্রতিটি বই-ই বেস্টসেলার। কলকাতা বইমেলায় তাঁর অটোগ্রাফ নিতে পড়ে দীর্ঘ লাইন।

তাঁর পেশাগত জীবনও সমান চিত্তাকর্ষক। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের উচ্চপদস্থ চাকরির পর তিনি এখন WBCS অফিসার। তিনি অত্যন্ত সুবক্তা, ইউটিউবে তাঁর মোটিভেশনাল স্পীচ বিপুল জনপ্রিয়। বেলুড়মঠেও তিনি নিয়মিত আমন্ত্রিত হন একমাত্র মহিলা স্পীকার হিসেবে। ন্যাশনাল এডুকেশন ব্র‍্যান্ড Unacademy -র তিনি বেঙ্গল জোনের ব্র‍্যান্ড অ্যামবাসাডর। সাহিত্য আকাদেমিতে আমন্ত্রিত হন গল্পপাঠের অনুষ্ঠানে।ভারত, বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্বে তাঁর পাঠক রয়েছে। পেয়েছেন একাধিক সাহিত্যসম্মান। তাঁর উপন্যাস নারাচ -এর ইংরেজি স্বত্ব অধিগ্রহণ করেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পাবলিশার Harper Collins. এত বড় চুক্তি গত কুড়ি বছরে বাংলা থেকে হয়নি। নারাচ তাঁরা ছড়িয়ে দেবেন গোটা পৃথিবীতে।দেবারতির অডিও স্টোরির স্বত্বধারী সুইডিশ কোম্পানি স্টোরিটেল। 

( তথ্য সংগ্রহঃ https://www.goodreads.com)


কলমে - চৈ তি  মৈ ত্র 


 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন