মালিশ
করার পূর্বে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। তাঁর অনুমতিক্রমে মালিশ করা
উচিত।
তেল মালিশের উপকারিতাঃ
- শিশুদের ভালো ঘুম আসার জন্য মালিশ একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে। ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে শিশুর শরীরে মালিশ করা হলে তাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে মেলাটোনিন হরমোন উৎপন্ন হয়, যার ফলে ভালো ঘুম হয়।
- মালিশের ফলে শিশুদের শরীরে শক্তি উৎপন্নকারী অক্সিটক্সিন হরমোন উৎপন্ন হয়।ফলে তাদের শরীরে ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এছাড়া, সঠিক মালিশ শিশুদের মাংসপেশীকে আরাম দিতেও ভীষণ সাহায্য করে।
- বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে, মালিশের ফলে শিশুদের যে স্পর্শ অনুভুত হয়, তা তাদের মানসিক এবং সামাজিক বিকাশে প্রভাব ফেলে।
- শিশুদের মালিশ করলে স্নায়ুতন্ত্র উদ্দীপিত হয়। এর ফলে মাংসপেশী মজবুত হয় ও তাতে সমন্বয় বজায় থাকে।
- শিশুকে সঠিকভাবে মালিশ করলে তাদের পাচন ও হজম ক্ষমতা বাড়ে এবং রক্ত সঞ্চালন খুব ভালো ভাবে হয়। এছাড়া শ্বাস প্রশ্বাস নিতেও তাদের সুবিধা হয়। মালিশের ফলে শরীরে গ্যাস কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যের কোনও অসুবিধেও হয় না।
- কোনও প্রকার ঝাঁজালো তেল যেমন সর্ষে তেল বা বাজারজাত গন্ধ তেল যথা লালতেল প্রভৃতি ব্যবহার না করাই উচিত।
- সর্ষেতেল ব্যবহার করলেও তা ভালো করে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে ব্যবহার করলে অসুবিধা হয় না।
- ভালো মানের অলিভ তেল ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
- সর্ষের তেলে কয়েক কোয়া রসুন ও এক চামচ কালো জিরে ভালো করে ফুটিয়ে, ছেঁকে নিয়ে ব্যবহার করা যায়।
- গরমের সময় স্নান করার আগে বিশুদ্ধ নারকোল তেল অল্প গরম করে মালিশ করা যায়।
- তিলের তেল দিয়েও শিশুর মালিশ করা যায়। তবে তেলের ক্ষেত্রে তা যেন বিশুদ্ধ মানের হয় তা খেয়াল রাখা উচিত।
মালিশের পদ্ধতিঃ
- শিশুকে প্রথমে আলতো করে শুইয়ে নিতে হবে। মাথাটা একদিকে কাত করে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ওর পেটে বা হাতে যেন চাপ না লাগে।
- যিনি মালিশ করবেন তাঁর হাতের নখ যেন পরিষ্কার করে কাটা থাকে। নাহলে শিশুর গায়ে নখ লেগে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। হাত ভালো করে ধুয়ে তারপর মালিশ করতে হবে।
- শুরুতে পায়ের তলা ও হাতের চেটো তেল মালিশ করতে হবে। এরপর ক্রমান্বয়ে হাত, পা ও মাথায় আলতো হাতে মালিশ করতে হবে।
- আলতো হাতে মালিশ করতে করতে কপাল থেকে ধীরে ধীরে ঘাড় অবধি নামতে হবে। আঙুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কাঁধ থেকে হাতের আঙুল অবধি মালিশ করে যেতে হবে।সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে শিশু-শরীরে যেন চাপ না লাগে।
- পেটে আলতো হাতে গোলাকারভাবে মালিশ করতে হবে। তবে মাত্র এক মিনিটের জন্য। পেটে মালিশ করার সময় আঙুলের ডগার সাহায্য নিতে হবে। এতে চাপ কম পড়বে।
- আলতো হাতে শিশুকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে কোমর, পীঠ, পায়ের পিছনের অংশ, নিতম্ব মালিশ করতে হবে।
- কম ওজনযুক্ত শিশুর ক্ষেত্রে মালিশ না করাই উচিত। এতে শিশুর খতির সম্ভাবনা থাকে।
যদি মালিশ করার পর শরীরে কোনও রকম প্রতিক্রিয়া যেমন সর্দি, কাশি, গায়ে
ফুসকুড়ি জাতীয় র্যাশ প্রভৃতি দেখা যায়, তাহলে
তৎক্ষণাৎ মালিশ বন্ধ করে দেওয়া উচিত এবং যথাশীঘ্র চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এছাড়া যদি কোনও তেল
ব্যবহারের ফলে শিশুর শরীরে কোনও রকম দাগ তৈরি হচ্ছে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ওই তেল ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে।এছাড়া জ্বর হলে কিংবা কোনও কারণে শিশুর শরীর অসুস্থ থাকলে
মালিশ করা উচিত নয়।
সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রার মালিশ
একজন শিশুকে আরাম প্রদান করতে পারে। কিন্তু তা অবশ্যই অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা হওয়া
উচিত এবং শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে করা উচিত।মালিশে যদি শিশুর শারীরিক বিকাশ ঘটে,
শিশু আরাম বোধ করে তাহলে যতদিন সম্ভব মালিশ করা যেতে পারে। সুস্থ শরীর সুস্থ মনের বিকাশের
সহায়ক হয়। প্রতিটি শিশুর ভবিষ্যৎ সুন্দর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের জন্য সঠিক ও উপযুক্ত
ব্যবস্থা গ্রহন করা আমাদের সবার পক্ষেই মঙ্গলজনক।
কলমে - পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন