অতৃপ্তি

 


ঠাস্!

ইশা দেবী হকচকিয়ে উঠলেন। 

'মামণি'! ( রূপান চিৎকার করে উঠল ) 

'বলছি তো, না! তুই ঐ পুলিশে চাকরি করা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবি না। আমরা ঐসব মেয়েকে বাড়ির বউ হিসাবে মানতে পারব না। এই আমার শেষ কথা!

'মামণি আমি আর খাব না। বাপি আমায় শুধু শুধু মারল। তুমি কিছু বলছ না কেন?' 

ছেলের কথা শুনে ইশা দেবী একটু ধাতস্থ হয়ে বললেন, ' ঠিক আছে, উঠে যা। ' তারপর রূপানের বাপিকে বললেন, ' এত বড় ছেলের গায়ে হাত তুললে? আমি জানি আমাদের ছেলের শিক্ষা ভালো। ও বড়দের অসম্মান করতে জানে না। তাও মানুষের মন। কখন কী হয়ে যায়! তুমি মুখে বলছ ঐটাই অনেক।

'অ‍্যাই তুমি বেশি বকবে না বুঝলে? তোমার জন‍্যই ছেলেটা বিগড়েছে। বেকার ছেলে। ভালো করে রোজগার করে নি এখনও, আবার চাকরি করা বউ আনছে! হু! তখন দেখবে ছেলেটাকে চাকরের মতো খাটাবে। আমি খাওয়াতে পারব না। তোমার রাজপুত্তরকে বলে দাও।

ইশা দেবী কী আর বলবেন! এখন বোঝানো বৃথা! একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে গেলেন। 

ইশা দেবীর নিজের কথা মনে পড়ে গেল। ৬০ বছর বয়স হতে চলল তাঁর। গ্রামের মেয়ে। বহু কষ্টে স্নাতক পাশ করেছেন। বাবা কলেজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন শহরের ভালো চাকরি করা ছেলের সাথে। ইশা দেবীর বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। ভাবতেন চাকরি করবেন। বাবা বুঝিয়েছিল, শহরের ছেলে। আধুনিক মন হবে। নিশ্চয়ই তোকে আরও পড়াশোনা করাবে। চাকরিও করতে দেবে। গ্রাম থেকে যাতায়াতের কত অসুবিধা। 

ইশা দেবী'র বাবার কথা মনে ধরল। বিয়েতে মত দিলেন। বিয়ের আগে বি.এড-এর ফর্ম তুলে রাখলেন। তারপর বিয়ে হল। যা স্বপ্ন দেখেছিলেন তা সব মাটিতে মিশে গেল। স্বামী, শ্বশুর সাফ জানিয়ে দিলেন, 'চাকরি করা চলবে না। বাড়ির বউ আবার চাকরি করবে কী'! যত রাগ গিয়ে পড়ল বাবার উপর! রাগে-দুঃখে-অপমানে বি.এড-এর ফর্ম, কিছু সার্টিফিকেট বাবার সামনে জ্বালিয়ে দিলেন! বাপের বাড়ি যাওয়াও প্রায় ছেড়ে দিলেন। তখনই ঠিক করেছিলেন, মেয়ে হলে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে বিয়ে দেবেন। আর ছেলে হলে তার বউ যদি চাকরি করতে চায় তবে তাকে চাকরি করতে দেবেন।  আজ সেই দিন চলে এসেছে! লড়াইটা নিজের স্বামীর সাথেই। সেইদিন হেরে গিয়েছিলেন, কিন্তু আজ তিনি জিতবেন! এত দিনের অতৃপ্ততা আজ দূর করবেন! নিজের স্বপ্ন পূর্ণ না হলেও নিজের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেনই! 

'কে বলবে এই মেয়ে পুলিশে চাকরি করে! স্বভাবটি কত মিষ্টি! ইশা তোর বউ বেশ ভালো হয়েছে রে!' ভাবনা দত্ত বললেন। আরও অনেকেই বউমা কৌশানীর খুব প্রশংসা করল। ইশা দেবী মনে মনে খুব খুশি হলেন। আজ আর মনে কোনও অতৃপ্ততা নেই, বরং তা তৃপ্ততায় পরিণত হয়েছে! বড্ড শান্তি!  

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন