সেলুলয়েডের সাতকাহন - ইন্দু

 

 

সিরিজ রিভিউ : ইন্দু

হইচই প্ল্যাটফর্মে বেশ কয়েকটি নতুন সিরিজের মধ্যে সম্প্রতি দেখে ফেললাম "ইন্দু"। বিবাহানুষ্ঠানের পটভূমিকায় নির্মিত সিরিজটির মধ্যে রয়েছে রহস্যের ছোঁয়া। সমগ্র পাঠকদের সামনে "ইন্দু"র সারসংক্ষেপ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

নাম শুনে আশা করি বুঝতেই পারছেন, এই কাহিনীর মুখ্য চরিত্র ইন্দ্রানী ওরফে ইন্দু নামের একটি মেয়ে। তার বিয়ের দিনের সকাল থেকে কাহিনীর শুরু। ইন্দুর বিবাহ নিয়ে বেশ খানিকটা জটিলতা রয়েছে আর সেকারণেই এই ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতাও কিছুটা তিক্ত, সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি।

কাহিনীর শুরুতেই চমক। বিয়ের দিন সকালে পাত্রপক্ষের বাড়ি থেকে গায়ে হলুদের তত্ত্ব আসে। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে তত্ত্বের সবকিছুই সুন্দর, যথাযথ। কিন্তু ইন্দু চমকে ওঠে যখন সে তার বাবার ঘরের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে শুনতে পায় বাবার সঙ্গে তাদের রান্নার ঠাকুরের কথাবার্তা। তত্ত্বে পাঠানো মাছের পেটটি কেটে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে সেলাই করে পাঠানো হয়েছে আর সেলাই খুলে মাছের পেটের ভেতর পাওয়া গেছে একখানি পাতা। ইন্দু খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে সেটি যে সে পাতা নয়, ধুতরো পাতা। ইন্দুর মনে প্রশ্ন জাগে, এই বিয়ে করতে কী তাকে কেউ নিষেধ করতে চাইছে, নাকি এটি কোনো এক প্রকারের হুমকি!

বিবাহ বাসরের রাতে নিজের ঘরের জানলা দিয়ে ইন্দুর চোখে পড়ে এক নারীমূর্তির ছায়া, অদ্ভুতভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাইরে অনুসন্ধান করতে গিয়ে তার পায়ের তলায় ফুটে যায় পেরেকের মতো বড়ো একটি সূঁচ, বেশ মোটা। ইন্দুর সন্দেহ জাগে সেই ছায়াটি তার বোনের নয়তো! বোনের সঙ্গে ইন্দুর সেভাবে কোনো সদ্ভাব নেই, তার কারণ ইন্দুর বোন নিজেই। আগেরবার ইন্দুর বিয়ের দিন তার বোন দিদির উপর ঈর্ষান্বিত হয়ে দিদির হবু স্বামীর সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে নিজেই বিয়ে করে নেয় এবং এটাই কারণ যে বিয়ের অভিজ্ঞতা ইন্দুর কাছে অনেকটাই তিক্ত। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সেই নারীমূর্তিটি তার বোন নয়। তাহলে কে হতে পারে!

বিয়ের পরের দিন সকালে পিতৃগৃহ থেকে স্বামীগৃহে যাত্রা করে ইন্দু। গৃহপ্রবেশের সময় দুধে আলতায় পা দিয়ে আর্তনাদ করে ওঠে সে। দুধটি বেশ গরম। শুধু তাই নয়, দুধটি কেটে গিয়েছে। পরে দেখা যায়, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে লেবুর রস যোগ করেছিল ওর মধ্যে যাতে দুধটি কেটে যায়। শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশ করতেই ইন্দু বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় যখন তার মানসিক ভারসাম্যহীন বড়ো ননদ নিজের ঘরের জানলা থেকে তার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে ওঠে, "এই ভালো মেয়ে, এখান থেকে পালাও।" পালাবে কেন! কী রহস্য লুকিয়ে আছে ইন্দুর শ্বশুরবাড়িতে!

যতো সময় যায়, রহস্য আরো ঘনীভূত হতে থাকে। বৌভাতের রাতে ইন্দু জানতে পারে তার দেওর বিবাহিত এবং তার স্ত্রীকে কোনো কারণে এই বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। সকলের ধারণা, বিয়ের যাবতীয় গন্ডগোল সেই মেয়েটিই বাধাচ্ছে। ইন্দু শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের কাছে তার ছোট জায়ের সম্পর্কে জানতে চায়। কিন্তু সবাই তাকে এড়িয়ে যায়, একমাত্র বাড়ির পরিচারিকা ছাড়া। পরিচারিকার দেওয়া তথ্য এবং নিজের চেষ্টায় ইন্দু তার ছোট জায়ের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করে। তার বাপেরবাড়ি অবধিও পৌঁছায়, কিন্তু কারুর সঙ্গে দেখা হয় না। অগত্যা শ্বশুরবাড়িতেই ফিরে আসতে হয় তাকে।

বাড়িতে প্রবেশ করতে গিয়ে ইন্দু চমকে ওঠে। পুলিশের আগমন ঘটেছে এবং তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ইন্দুর ছোট জা গত রাত্রে আত্মহত্যা করেছে। একের পর এক পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। অনেক অজানা ও গূঢ় তথ্য সামনে আসে। দর্শকরা উপলব্ধি করে ইন্দুর স্বামীর অতীতও রহস্যে আবৃত।

ইন্দু নিজের অনুসন্ধান ছাড়ে না। এরকম সময়ে তার সঙ্গে দেখা হয় এক রহস্যময়ী নারী চরিত্রের। সেই মেয়েটিকে অনুসরণ করে ইন্দু পৌঁছায় একটি লেডিস হোস্টেলে যেখানে তার ছোট জা কয়েকমাস যাবৎ বসবাস করছিল। বিস্ময়ের শেষ থাকে না যখন জানতে পারে লেডিস হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া থেকে তার জায়ের সমস্ত খরচ বহন করছিল ইন্দুর ছোট দেওর নিজেই।

ইন্দু বুঝতে পারে না কোনটা সত্যি। শ্বশুরবাড়িতে থাকাকালীন সে দেখেছে স্ত্রীর প্রতি তার দেওর কতোখানি ক্ষুব্ধ, কতোখানি বিরক্ত। আবার এখানে এসে স্বামী স্ত্রীর মধ্যবর্তী অন্য সমীকরণই প্রকাশ পাচ্ছে। শ্বশুরবাড়িতে ফিরে গিয়ে ইন্দু শুরু করে নিজস্ব ভঙ্গিমায় জিজ্ঞাসাবাদ।

মোটের উপর বলতে গেলে, সাহানা দত্তর লেখা রহস্যরোমাঞ্চ কাহিনীটিকে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ সিরিজের রূপ দিতে গিয়ে পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল সফলই হয়েছেন। পর্বের পর পর্ব নতুন চমক, কাহিনীতে নতুন মোড়। অভিনয় প্রসঙ্গে বললে দু'একজন ব্যতীত সিরিজের প্রত্যেকের অভিনয় যথাযথ। ইন্দু চরিত্রে ইশা সাহা, ইন্দুর দেওর সুজাতর চরিত্রে সুহত্র মুখোপাধ্যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন বড়ো ননদের চরিত্রে পায়েল দে সত্যিই অনবদ্য। আর ইন্দুর ছোট জা?? সিরিজের ফাঁকফোকরে তাকেও কিন্তু দেখা গেছে। সকলের অতি পরিচিত মুখ। তিনি হলেন.....

নাহ্ থাক। সিরিজটি দেখতে দেখতে তাঁকে নাহয় আপনারাই খুঁজে নিন। কোনো ভুলত্রুটি যে একেবারেই নেই তা বলা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ, ইন্দুর এবং তার স্বামীর অতীতের ব্যাপারে দু'পক্ষেরই কেউ কিছু জানে না। এমনকি বিয়ের আগে কোনো খোঁজখবরও নেওয়া হয়নি যা বাস্তবচিত্রের সঙ্গে খাপ খায় না। তবে যেকোনো সৃষ্টিতে সৌন্দর্য্য ও মাধুর্যের সঙ্গে সামান্য ভুলভ্রান্তি থাকতেই পারে। সেটুকু মার্জনা করাই যায়। সেই কারণে বলবো সিরিজটি দেখে ফেলুন এবং যাবতীয় ভুলভ্রান্তির হিসেবনিকেষ পাশে সরিয়ে রেখে কাহিনীটি উপভোগ করুন। সিরিজ শেষে Season 2 এর জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করতেই হবে।

_______________



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন