সুখীদের ভ্যালেন্টাইন


 
তোর কাছে ভালোবাসা দিবস হলেও আমার লালপিপঁড়ে কামড় দিবস” বাপরে বাপ! কী কামড়ই না খাইছিলাম। হাবু তার স্ত্রীকে বলল।

 ঐদিন আসলেই ভালোবাসা দিবস ছিল। তোমাকে কইছিলাম ঘরের পিছনে আইসা আস্তে ডাক দিও। তুমি বোকার মত খাড়াইয়া থাকলে পিঁপড়া তো কামড়াবেই” গোলাপী উত্তর দেয়।

 নে, আর দেরি করিস না। চল মেলায় যাই। দেখতো কত ট্যাক্যা আছে”

মোট ৫২৭ টাকা, মাত্র এই টাকা নিয়া মেলা নিতে চাচ্ছ? কাইল কিন্তু ঋণের কিস্তি আছে” 

 

 হাবু রিক্সা চালাচ্ছে, সীটে বসে ওর স্ত্রী গোলাপী। হঠাৎ গোলাপী বলে উঠে “রিক্সা দ্যাও! আমি চালাই! তুমি সীটে বস।

বিয়ের আগে লাল পিঁপড়ে দিয়ে মার দিছিস, আজকে আবার পাবলিক দিয়া মার দিবি” হাবু উত্তর দেয়। 

আচ্ছা এখন না হয় বিকাল, রাতে ফেরার সময় কইলাম আমি চালাব, কেউ দেখতে পাবে না” 

আচ্ছা, দেব। দেখব কেমন রিক্সা চালাতে পারিস”

গোলাপী বলে, “শোন, মেলায় যা খাব দুইজন ভাগ করে সমান করে খাব”

ঠিক আছে” হাবু উত্তর দেয়।

 

 ম্যাডাম এটা অরিজিনাল জামদানী শাড়ী, দুই হাজার টাকায় দেয়া যাবে না” আট হাজার টাকাই পড়বে” মেলা স্টলের সেলসম্যান বিনীত উত্তর দেয়। 

 গোলাপী দুই হাজার টাকায় দরদাম করতেই থাকে। হাবু গোলাপীর হাত ধরে টেনে নিয়ে বলে,

 চল অন্য দোকানে যাই। বলেই ওরা একটি চায়ের দোকানে এসে বসে। কী সাহস! তোরে যদি শাড়ী দিয়ে দিত? টাকা দিতিস ক্যমনে?” 

 একটু মজা করলাম! গোলাপী উত্তর দেয়! চা চলে আসে। 

 চা  ঠান্ডা করে খা” “গতবার চা খাইতে মুখ পুড়ে ফেলছিলি, মনে নাই

 একদিন মুখ পুড়েছে, তাই নিয়া খোঁটা দ্যাও!“ 

 তুই কপি খাবি?” 

পাতা কপি না ফুল কপি? গোলাপী বলে।

 শুনে দোকারদার হেসে উঠে। বলে “ভাবী এই কফি চায়ের মত”গোলাপী খুব লজ্জা পায়। 

 চা খাওয়া শেষে হাবু একটা সিগারেট কিনে পরম সুখে টানতে থাকে।সিগারেট অর্ধেক শেষ হতেই গোলাপী বলে উঠে “দ্যও, এবার আমি খাই!” 

 তুই সিগারেট খাবি? পাগল হইছিস? আমারে মেলার মধ্যে মার খাওয়াবি?”

 এত তাড়াতাড়ী ভুইল্যা গ্যাল্যা? কথা ছিল যা খাব দুইজন ভাগকরে সমান করে খাব“ ।হাবু দ্রুত সিগারেট ফেলে দেয়। 

বেশ রাত হয়ে গেছে। ওরা দুজন মেলা থেকে ফিরছে। নির্জন রাস্তায় আসতেই হাবু বলে “ভালো করে চাদর গায়ে জড়িয়ে চুল ঢেকে নে। কেউ যেন চিনতে না পারে” দেখি কেমন রিক্সা চালাতে পারিস!

ঠিক আছে” বলেই গোলাপী রিক্সা চালাতে থাকে, হাবু সীটে বসে। 

গোলাপীর খুবই কষ্ট হচ্ছে দেখে হাবু বলে “তুই নাম! আমি চালাই” 

হঠাৎ হুড়মুড় করে একজন রিক্সার সামনে গিয়ে দাড়াঁয়। “আধা ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, মেলার জন্য কোন রিক্সা নাই“! বলেই রিক্সায় উঠে পড়ে। 

এটা রিজার্ভ রিক্সা। উঠবেন না। হাবু বাঁধা দেয়! 

চুপ কর! এক থাপ্পরে গাল ফাটিয়ে দেব। তুই আমারে চিনিস? লোকটি বলে। 

হাবুর খুবই ইচ্ছে হচ্ছে রিক্সাটা নিজে চালাতে! কিন্তু বউ অন্য লোকের পাশে বসে যাবে…. তাও আবার ভালোবাসা দিবসে? ভাবতেই কষ্ট লাগে। 

রাত অনেক হয়ে গেছে। ওরা খেয়ে দেয়ে গল্প করছে। হঠাৎ বাক্স হতে গোলাপী কানের দুল বের করে হাবুর হাতে দিয়ে বলে “রিক্সা চালাতে এত কষ্ট আগে জানতাম না। এইটা বিক্রয় করে ব্যটারী রিক্সা বানাও। 

 

না থাক! তুই শাড়ীটা খুব পছন্দ করছিলি! তোর হাত ধরে কথা দিলাম, আজ থেকে বিড়ি/সিগারেট খাওয়া বাদ। প্রতিদিন ২০ টাকা করে জমিয়ে তোকে শাড়িটা কিনে দেব। 

গভীর ভালোবাসায় দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে, একটু পরেই লক্ষ্য করে দু’জনের চোখ দিয়েই অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।

 

কলমে - হাদী উল ইসলাম

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন