শীতকাল মানেই প্রকৃতি হাত উপুর করে আমাদেরকে বিবিধ শাক সব্জির মালঞ্চ সাজিয়ে দেয়. কড়াইশটি, পালংশাক থেকে শুরু করে নতুন আলু প্রত্যেকেই একে অপরের পরিপুরক হিসেবে ধরা দেয়।স্বাদে গন্ধে বর্নে শুধু নয় পুষ্টিগুনেও এরা প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল আর আ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।আজ সেরকমই চেনা পরিচিত কিছু শীতকালিন সব্জিদিয়ে অন্যরকম কিছু রান্না নিয়ে এসেছি। আশাকরি সকলের খেতে ও খাওয়াতে ভালোই লাগবে।
১.কড়াইশুটির ঘুগনি
- কড়াইশুঁটি – ২৫০ গ্রাম
- আদাবাটা – ১ চামচ
- হিং – ১/২ চামচ
- কাঁচালঙ্কা বাঁটা – ১ চামচ
- ভাজা মশালা – ২ চামচ (গোটা লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ, গোলমরিচ, গোটা জিরে, ধনে,শুকনো লঙ্কা - হাল্কা করে ভেজে মিক্সিতে গুঁড়ো করে নিতে হবে)
- জিরে গুঁড়ো – ১ চামচ
- ধনে গুঁড়ো – ১ চামচ
- হলুদ – পরিমাণ মত
- লবন – পরিমাণ মত
- সর্ষে তেল – পরিমাণ মত
- শুকনো লঙ্কা – ২ টি
- গোটা জিরে – ১/২ চামচ
- চিনি – ১ চামচ
- কড়াইশুঁটি গুলো ধুয়ে ৫ মিনিট একটা সস্ প্যানে জল দিয়ে হাল্কা ভাপিয়ে নিতে হবে।
- কড়াইশুঁটি গুলো এমনভাবে ভাপাতে হবে যাতে ওগুলো না গলে নরম হয়ে যায়। প্রয়োজনে নুন ও খাওয়ার সোডা মিশিয়ে ঢাকা চাপা দিয়ে ভাপাতে হবে।
- ভাপানো হয়ে গেলে ঝুড়িতে জল ঝড়িয়ে রাখতে হবে।
- এরপর কড়াইতে তেল দিয়ে হিং দিয়ে গরম করতে হবে। তেল গরম হয়ে এলে গোটা জিরে আর গোটা শুকনো লঙ্কা ফোড়ণ দিতে হবে।
- কড়াইশুঁটি গুলো দিয়ে আদাবাটা আর কাঁচালঙ্কাবাটা যোগ করে ভালো করে কষাতে হবে। একে একে সামান্য হলুদ, জিরেগুঁড়ো আর ধনেগুঁড়ো দিতে হবে।
- সামান্য জল দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নামানোর আগে ভাজামশালা যোগ করে কিছুক্ষণ ঢাকা চাপা দিয়ে অল্প আঁচে ফুটিয়ে নুন মিষ্টি দিয়ে মাখামাখা অবস্থায় নামিয়ে নিতে হবে।
২.কড়াইশুটির বরফি
উপকরণঃ
- কড়াইশুটি – ২৫০ গ্রাম
- আদাবাটা – ১ চামচ
- হিং – ১/৪ চামচ
- কাঁচালঙ্কা বাটা – ১ চামচ
- ভাজা মশালা – ৩ চামচ
- ছোলার ডাল – ১০০ গ্রাম
- মটর ডাল – ৫০ গ্রাম
- জিরে গুঁড়ো – ১ চামচ
- ধনের গুঁড়ো – ১ চামচ
- হলুদ – পরিমাণ মত
- গরম মশলা গুঁড়ো – ১ চামচ
- টম্যাটো পিউরি – ৫০ মিলি
- লবন – পরিমাণ মত
- সর্ষের তেল– পরিমাণ মত
- চিনি – পরিমাণ মত
- গোটা জিরে – ১/২ চামচ
- কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো – ১/২ চামচ
প্রণালীঃ
- কড়াইশুঁটিগুলো ধুয়ে মিক্সিতে মিহি করে বেটে নিতে হবে।
- ৩:১ অনুপাতে মটর ডাল আর ছোলার ডাল আগের দিন রাতে ভিজিয়ে বেটে নিতে হবে।
- ডাল বাটার মিশ্রণ আর কড়াইশুঁটি বাটা সবশেষে একবার একসাথে মিক্সিতে বেটে নিতে হবে।
- এরপর একটা পাত্রে মিশ্রণটা দিয়ে একে একে হিং, ভাজামশলা, আদাবাটা আর কাঁচালঙ্কা বাটা দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে।
- একটা টিফিন বাটিতে তেল ব্রাশ করে মিশ্রণটা ঢেলে ঢাকা বন্ধ করতে হবে।
- একটা কুকারে সামান্য জল দিয়ে heat stand এর ওপর টিফিন বাক্সটা বসিয়ে high flame এ ৫-৬ টা সিটি দিয়ে দিতে হবে।
- ঠান্ডা হলে টিফিন বাক্সটা খুলে কঠিন হয়ে যাওয়া মিশ্রণটাকে ছুড়ি দিয়ে কেটে বের করতে হবে।
- একটা প্লেটে রেখে ছুড়ি দিয়ে পিস পিস করে বরফির আকারে কেটে নিতে হবে।
- কড়াইতে তেল দিয়ে হিং ও গোটা জিরে ফোড়ণ দিতে হবে।টম্যাটো পিউরিটা দিয়ে দিতে হবে।আদাবাটা যোগ করে ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে।
- অল্প জল যোগ করে হলুদ, লঙ্কাগুঁড়ো, জিরেগুঁড়ো আর ধনেগুঁড়ো, নুন, মিষ্টি যোগ করে কিছুক্ষণ ঢাকা চাপা দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে।
- তেল ছাড়তে শুরু করলে গরম মশলাগুঁড়ো ছড়িয়ে বরফিগুলো গ্রেভির মধ্যে দিয়ে এপাশ-ওপাশ নাড়িয়ে অল্প আঁচে ঢাকা চাপা দিয়ে ২ মিনিট রেখে দিতে হবে.
- সবশেষে মাখামাখা অবস্থায়
নামিয়ে নিতে হবে।এই পদটি পোলাও বা নানের পরিবেশন
করতে হবে।
৩.কড়াইশুটির ধোসা
উপকরণঃ
- কড়াইশুঁটি
– ২৫০ গ্রাম
- আদাবাটা – ১ চামচ
- হিং – ১/৪ চামচ
- ভাজা মশালা – ২ চামচ ( গোটা লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ, গোলমরিচ, গোটা জিরে, ধনে, ১ টা গোটা শুকনোলঙ্কা হাল্কা করে ভেজে মিক্সিতে বেঁটে নিতে হবে)
- লবন – পরিমাণ মত
- চিনি – পরিমাণ মত
- সাদা তেল – পরিমাণ মত
- গোটা জিরে – ১ চামচ
- সুজি- ১০০ গ্রাম
- টকদই – ১০০ গ্রাম
- আমচুর পাউডার – ২ চামচ
- খাওয়ার সোডা – ১/৪ চামচ
- আটা – ৫০ গ্রাম
প্রণালীঃ
- মিক্সিতে ১ কাপ সুজি মিহি করে বেটে নিতে হবে।
- ৩/৪ কাপ টকদই আর ২ টেবিল চামচ আটা আর ২ টেবিল চামচ জল সুজিতে মিশিয়ে আবার একবার ব্লেন্ড করে নিতে হবে।৩০ মিনিট মিশ্রণটা রেখে দিতে হবে
- কড়াইশুঁটি ধুয়ে মিক্সিতে বেটে নিতে হবে।কড়াইতে তেল দিয়ে হিং এবং গোটা জিরে ফোড়ণ দিতে হবে।
- এরপর কড়াইশুঁটি বাটা দিয়ে ক্রমাগত নেড়ে যেতে হবে যতক্ষন কড়াইয়ের গা থেকে না ছেড়ে আসে।নুন, মিষ্টি আর ভাজা মশলা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়তে হবে।
- সবশেষে অল্প ময়দা মিশিয়ে নামিয়ে ঠান্ডা করতে হবে।৩০ মিনিট হলে পরে মিশ্রণটাতে নুন,আমচুর পাউডার আর ১/২ চামচ খাওয়ার সোডা মিশিয়ে নিতে হবে।
- সামান্য জল যোগ করে মিশ্রনের গাঢ়ত্ব ঠিক করে নিতে হবে যাতে বেশী ঘনও না হয় আবার বেশী পাতলাও না হয়।
- একটা তাওয়া নিয়ে একটু গরম করে তাতে খুব সামান্য তেল ব্রাশ করে নিতে হবে।মাঝারি আঁচে মিশ্রণটা গোল হাতা দিয়ে তুলে তাওয়াটাতে গোল করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
- চামচ দিয়ে কড়াইশুঁটির পুরটা ভরে দিয়ে ভাঁজ করে দিতে হবে।
- এই পদটি বলা যায় বাংলা আর দক্ষিণ ভারতের একটি ফিউসন রান্না। জলখাবারে কড়াইশুঁটির কচুরির দক্ষিণী সংস্করণ হল কড়াইশুঁটির ধোসা।
৪.সবুজ আলুরদম
উপকরণঃ
- ছোটো সাইজের নতুন আলু – ৫০০ গ্রাম
- হিং – ১/৪ চামচ
- ভাজা মশালা – ২ চামচ
- লবন – পরিমাণ মত
- চিনি - পরিমাণ মত
- সাদা তেল - পরিমাণ মত
- গোটা জিরে – ১/২ চামচ
- ধনেপাতা = ৫০ গ্রাম
- ক্যাপসিকাম – ১ টি
- আমচুর পাউডার – ২ চামচ
- লেবুর রস – ২/৩ চামচ
- জিরে গুঁড়ো – ১ চামচ
- ধনে গুঁড়ো – ১ চামচ
- গোলমরিচ গুঁড়ো – ১ চামচ
- রসুন কুচি – ১ চামচ
- কাঁচালঙ্কা – ২/৩ টি
প্রণালীঃ
- মিক্সিতে ধনেপাতা, ক্যাপসিকাম, কাচালঙ্কা, রসুন কুচি, ভাজামশলা, নুন, চিনি, আমচুর পাউডার একসাথে করে বেটে নিতে হবে।
- আগে থেকে সিদ্ধ করে রাখা গোটা গোটা খোসা ছাড়ানো আলু গুলো নুন, গোল মরিচের গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো আর ধনে গুঁড়ো
মাখিয়ে ডুবো তেলে ভেজে নিতে হবে।
- কড়াই এ তেল দিয়ে হিং আর গোটা জিরে ফোড়ন দিতে হবে।এরপর তেল গরম হলে ধনেপাতা বাটা দিয়ে দিয়ে কষাতে হবে।
- অল্প কষিয়ে জিরেগুঁড়ো আর ধনেগুঁড়ো দিয়ে খানিকক্ষণ
কষিয়ে নিতে হবে।নুন মিষ্টি যোগ করতে হবে।
- সবশেষে ভেজে রাখা সিদ্ধ আলু দিয়ে হাল্কা হাতে নাড়াচাড়া এমনভাবে করতে হবে যাতে সব আলুগুলোর গায়ে মশলা লেগে যায় আবার আলুর টুকরো ভেঙেও না যায়।
- শেষে কয়েক মিনিট ঢাকা চাপা দিয়ে অল্প আঁচে রেখে লেবুর রস যোগ করে নামিয়ে নিতে হবে।
- লুচি দিয়ে তো অবশ্যই কড়াইশুটির কচুরির যোগ্য দোসরও হতে পারে এই সবুজ
আলুরদম।
উপকরণঃ
- পালংশাক – ৫০০ গ্রাম
- হিং – ১/৪ চামচ
- আদাবাটা – ১ চামচ
- ভাজা মশালা - ২ চামচ
- লবন – পরিমাণ মত
- চিনি – পরিমাণ মত
- সর্ষের তেল – পরিমাণ মত
- গোটা জিরে – ১/২ চামচ
- ধনেপাতা – ৫০ গ্রাম
- ক্যাপসিকাম – ১ টি বড় মাপের
- হলুদ – পরিমাণ মত
- জিরে গুঁড়ো – ১ চামচ
- ধনে গুঁড়ো – ১ চামচ
- গোলমরিচ গুঁড়ো – ১/২ চামচ
- গরমমসলা গুঁড়ো – ১ চামচ
- কাঁচালঙ্কা – ২ টি
- গাজর – ৫০ গ্রাম
- বিনস্ – ৫০ গ্রাম
- আলু – ২০০ গ্রাম
- ফুলকপি – ২০০ গ্রাম
- ঘী – পরিমাণ মত
- কাসৌরী মেথি – ১ চামচ
প্রণালীঃ
- মিক্সিতে পালংশাক, সামান্য ধনেপাতা, ক্যাপসিকাম, কাঁচালঙ্কা, ভাজামশলা, নুন, চিনি একসাথে করে বেটে নিতে হবে।
- গাজর, বিনস্, আলু আর ফুলকপি আগে থাকতে ছোটো ছোটো করে কেটে হাল্কা ভাপিয়ে রাখতে হবে।
- এরপর কড়াইতে তেল দিয়ে হিং আর গোটা জিরে ফোড়ন দিতে হবে। আগে থাকতে ভাপিয়ে রাখা সব্জি গুলো ছাড়তে হবে।
- আদাবাটা দিয়ে ভালো করে কষাতে
হবে। এইসময় একে একে হলুদ, জিরেগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, গোলমরিচ গুঁড়ো
যোগ করতে হবে। সামান্য জল যোগ করে কষিয়ে নিতে হবে।
- পালংশাক বাটা মিশিয়ে দিয়ে দিতে হবে। খুব ভালো করে কষিয়ে নুন মিষ্টি আর গরমশলা যোগ করে অল্প আঁচে কষিয়ে ঢাকাচাপা দিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে হবে।
- এরমধ্যে একটা প্যান নিয়ে তাতে ঘী আর কাসৌরী মেথি দিয়ে গরম করে সব্জিটাতে ঢেলে ঢাকা দিয়ে দিতে হবে।
- ৫ মিনিট পর মাখামাখা করে সব্জি নামিয়ে নিতে হবে।
- এই পদটি রাতের খাবারে রুমালী রুটি বা পরোটার সাথে পরিবেশন করা যায়।
কলমে - সুতপা সেন ঘোষ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন