অতীত তমসায় আচ্ছন্ন বর্তমান - সূর্যতামসী



 বই – সূর্যতামসী

লেখক – কৌশিক মজুমদার

প্রকাশক – বুকফার্ম

প্রকাশকাল – জুন ২০২০

পৃষ্ঠা – ২৩২ 

প্রচ্ছদ – কামিল দাস

অলংকরণ – গৌতম কর্মকার


চরিত্রঃ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, গণপতি চক্রবর্তী, তারিণীচরণ রায়, তুর্বসু রায়, সাইগারসন, বড়লাট ল্যান্সডাউন প্রমুখ প্রধান চরিত্র এবং এছাড়াও আছে আরও অনেক ধরণের চরিত্র। 

“ প্রিয়নাথের শেষ হাড়

মুরের কাব্যগাথা,

গণপতির ভুতের বাক্স

তারিণীর ছেঁড়া খাতা

                  তুর্বসু জানে। “

 

তুর্বসু?  সে কি জানে বা আদৌ কিছু কি জানে? সত্যিটা জানতে হলে কৌশিক মজুমদার রচিত “সূর্যতামসী” বইয়ে সন্ধান করতে হবে। ১৮৯২ সালের ডিসেম্বর কলকাতার চীনা পাড়ায় এক অদ্ভুত ধরণের মৃতদেহ পাওয়া যায়। রক্তশূন্য সেই দেহে চীনা গুপ্ত সমিতির এক বিশেষ চিহ্ন আঁকা ছিল। এই ঘটনায় নিযুক্ত হন পুলিশ বিভাগের নিজস্ব গোয়েন্দা দপ্তরে কর্মরত প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়। কয়েকদিনের মধ্যেই করিন্থিয়ান হলে এক ইউরোপীয় জাদুকরের জাদুর খেলা চলাকালীন ঘটে যায় অনভিপ্রেত ঘটনা - আবিষ্কৃত হয় দুটি মৃতদেহ।প্রিয়নাথের সাথে রহস্যভেদে জড়িয়ে পড়েন তারিণীচরণ ও গণপতি। তাঁদের আলাপ হয় এক অদ্ভুত মানুষ সাইগারসনের সঙ্গে। ছোট ছোট সূত্র ধরে খুলতে থাকে রোমহর্ষক ঘটনার পরম্পরা।


সাল ২০১৮। চন্দননগরবাসী এক ব্যক্তি দেবাশিস খুন হয়ে যায়।প্রায় একশ বছর আগে ঘটে যাওয়া চীনা গুপ্তপদ্ধতিতে  হত্যা করা মৃতদেহটির সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় এই ঘটনার নৃশংসতায়। এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে তুর্বসু রায়। ঘটনাচক্রে তুর্বসু ও তারিণীচরণ দুজনেই গোয়েন্দা এবং রক্তের সম্পর্কে যুক্ত।একশ বছরের ব্যবধানে দুই পৃথক সময়সারনীতে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের মধ্যে কি সত্যিই কোনও সম্পর্ক আছে? নাকি পুরোটাই কাকতলীয়? রহস্য উন্মোচনের জন্য পড়তে হবে বইটি।


গোয়েন্দা কাহিনীর পাঠকদের জন্য উৎকৃষ্ট উপাদান এই বই। কাহিনীর এক বড় অংশ জুড়ে আছে উনিশ শতকের কলিকাতা, যাদুবিদ্যা, ভয়ংকর ষড়যন্ত্র, একদল উন্মাদ, ফ্রিম্যাসনের গুপ্ত সমিতি আর বেশ কিছু নৃশংস হত্যাকান্ড। সাথে একশ বছরের পরের বর্তমান কালের চন্দননগরে অনুরূপ হত্যা গুপ্তধনের আভাস

এই বই কিন্তু শুধুমাত্র গোয়েন্দা উপন্যাস নয়। ব্রিটিশ কলকাতার যথাযথ চিত্র বর্ণনা হোক বা ডালাণ্ডা হাউসের ( পূর্বভারতে ব্রিটিশ শাসনে শুধুমাত্র নেটিভদের জন্য নির্মিত মানসিক রুগীদের হাসপাতাল) ইতিহাস – অত্যন্ত সুচারুভাবে বর্ণিত হয়েছে। চন্দননগর ও চুঁচুড়ার নামকরণ বৃত্তান্ত, ফ্রিম্যাসন গুপ্তসমিতি, জাদুবিদ্যার বিভিন্নদিক পাঠকমনে অনুসন্ধিৎসা জাগরুক করে। তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ ও রুদ্ধশ্বাস ঘটনা প্রবাহকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে বইয়ের অলংকরণগুলি। শেষ পৃষ্ঠা অবধি একটানা পড়ার পর পাঠককুল এসে দাঁড়াবেন অজস্র সংশয়ের সামনে। উপন্যাসের শেষে পরবর্তী খণ্ডের আভাস রয়ে যাবে। “রহস্য যেন হইয়াও হইল না শেষ … “

পুনশ্চঃ ( কাহিনীর পরবর্তী অংশ “নিবারসপ্তক” পরবর্তী সংখ্যায়…. )

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন