উদ্ধার - সোমলতা

 


পরমা এরপর আমাদের সমাজে আর মুখ দেখানো যাবে না গো! 

কেন? আবার কেউ কিছু বলেছে রূপসার বিয়ে নিয়ে?” 

না মানে দেখো যেটা সত্যি সেটা বললাম। মেয়ে উদ্ধার না হলে যে বড় পাপ লাগে! সমাজ কী বলবে? মরে গিয়েও তো শান্তি নেই! তাছাড়া আমি তো বেকার বাবা নই। যথেষ্ট মোটা মাইনে পাই, তাও মেয়েটা উদ্ধার হচ্ছে না! লোকে বলবে না? বাপে চাকরি করে তাও একমাত্র মেয়েকে উদ্ধার করতে পারল না! এই মুখ নিয়ে কোথায় যাই!

আহ্! তুমি থামো দেকি! চেষ্টা তো করছি না কী? ওর কপালে না থাকলে কী করব? তাছাড়া এখন যা যুগ তেমন ভালো ছেলে পাওয়াও তো মুশকিল! মেয়ে আমাদের মন্দ না কী? ও নিজের পড়াশুনা, কাজ নিয়েই তো থাকে! এখন অনলাইনে লেখালেখির কাজও শুরু করেছে। বাইরে গিয়ে নেচে তো বেড়াচ্ছে না! যা হোক করে জ্বালা ঘুচিয়ে দিয়ে দিলেই হবে?তুমি বল?” 

না মানে তুমি ঠিকই বলেছ। দেখি কতটা কী করতে পারি! ভগবানের উপর বিশ্বাস আছে!নিশ্চয়ই ভালোই করবেন।” 

রিং…..রিং….রিং 

বাবা তোমাকে কুচ্চি কাকু ফোন করেছে। 

দে দেখি, কী বলছে শুনি। যদি কিছু সন্ধান দিতে পারে! – “হ‍্যালো! বলকিছু খবর পেলি?”  

দেখছি তো দাদা। তেমন ভালো কই পাচ্ছি গো! শোনো না দাদা?”

হ‍্যাঁ বল। 

অন‍্য একটা দরকার আছে। আমার ১০,০০০ হাজার টাকা লাগবে। খুব দরকার। 

ঠিক আছে দিচ্ছি। তবে তুই একটু সন্ধান কর ভাই। মেয়েটাকে 'উদ্ধার' করতেই হবে!

শৈবাল, কুচ্চি কাকুকে অনলাইনে ১০,০০০ টাকা দিয়ে দে বাবা। ওর খুব দরকার বলছে। 

হু! করে দিচ্ছি। মনে মনে গজগজ করতে করতে শৈবাল বলে চলেছে, “ঐ করে যাও! সবাইকে দান করেই বেড়াও! আর আমরা একটু বেশি খরচা করলেই বলো, 'টাকা নেই! নিজের পায়ে দাঁড়া! আমার টাকা দিয়ে ফুটানি একদম করতে দেব না!সব যে তোমার টাকা মারার চেষ্টা করে তুমি বোঝো না! হু! 

টিং টং…. টিং টং…...

কে?” 

 পোস্ট অফিস থেকে চিঠি এসেছে। 

দাঁড়াও যাচ্ছি।

রূপসা, মা দেখ দেখি কার চিঠি?” 

যা মা। 

রূপসা চিঠিটা নিয়ে কেঁদে ফেলে। মুখ দিয়ে একটা শব্দ বের হয়, ' মা গো আজ আমি সত্যিই উদ্ধার হয়েছি গো!

মানে?”

আমি ভালো চাকরি পেয়ে গেছি মা। তোমাদের আমার জন‍্য আর চিন্তা করতে হবে না! আমি নিজের জন‍্য দু'মুঠো অন্নের জোগাড় করতে পেরেছি গো! আমি উদ্ধার হয়েছি! উদ্ধার হয়েছি!

_____________


কলমে - সো ম ল তা



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন