বেশ কয়েকদিন ধরে সুমির তলপেটটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠছে। মাকে এসব কথা বললে তার কপালে আর তেঁতুলের আচার জুটবে না অথবা বিল্টু , মনুর সাথে আর তাকে খেলতে পাঠাবে না। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মকে কেউ খন্ডন করতে পারে না। সেদিন বিকেলে খেলতে গিয়ে হঠাৎ সুমি লক্ষ্য করল তার শরীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে উষ্ণ রক্তের স্রোত। ভয়ে দৌড়তে দৌড়তে সে বাড়ি চলে এল।মা। তার অবস্থা দেখে তার হাতটা শক্ত করে ধরে বাথরুমের কাছে নিয়ে গিয়ে তার হাতে একটা কাপড় গুঁজে দিয়ে বলল – “ এটা ব্যবহার করবি আর এইসব নিয়ে কারোর সাথে আলোচনা করবি না। এগুলো সব মেয়েলি ব্যাপার।“ ঠাকুমা তার পুজোর ঘরে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিল , এমনকি পুজোর নাড়ু – মোয়া তার ভাগ্যে জুটল না। কাকিমা তাকে আচারের বয়ামে হাত দেওয়ার জন্য বকা দিয়ে গেল। মা তাকে আর খেলতে পাঠাল না। পাঁচদিন মেয়েটা ভয়ে কুঁকড়ে ঘরের এক কোণে পড়ে থাকল। জীবনের এই আকস্মিক পরিবর্তনকে মানিয়ে নেওয়া- তার এতটুকু বয়সে খুবই কঠিন কাজ। সুমি হয়ত একা নয় ; কমবেশি সব মেয়েরাই প্রথম ঋতুস্রাবের সময় এমন ঘটনার সম্মুখীন হয়ে থাকে।
এই ঋতুস্রাব কী ?
একটি নির্দিষ্ট বয়সে উপনীত হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় অন্তর মহিলাদের যোনি থেকে যে রক্ত ও স্রাব নিঃসৃত হয় তাকে ঋতুস্রাব বলে। আদ্যঋতু বা menarche হল ঋতুস্রাবের সূচনালগ্ন। ১০ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে এই ঋতুস্রাবের সূচনা হয় এবং ৪০-৪৫ বছরের মধ্যে এই ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। এই ঘটনাকে বলে মেনোপোজ বা ঋতুজরা ।
কেন হয় ঋতুস্রাব ?
হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঋতুস্রাবের সূচনা হয়। হরমোন হল রাসায়নিক বার্তাবাহক। জরায়ু
থেকে নিঃসৃত প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে জরায়ুর অন্তঃস্তরে থাকা
এন্ড্রোমেট্রিয়াম স্তর আরো পুরু এবং রক্তবাহী নালি ও গ্রন্থি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। জরায়ুর
এই প্রকার পরিবর্তন হয় নিষিক্ত ডিম্বাণুকে জরায়ুর অভ্যন্তরে স্থান প্রদান করে
দেওয়ার জন্য ও বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করার জন্য। কিন্তু
ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে অর্থাৎ গর্ভসঞ্চার না হলে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা
কমে যায়। এরফলে জরায়ু নিষিক্ত ডিম্বাণুর জন্য সৃষ্ট এন্ড্রোমেট্রিয়াম স্তরকে ত্যাগ করে দেয় এবং
সেটি ঋতুস্রাব রূপে আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এভাবে গড়ে ২৮ দিন অন্তর এই
চক্রের পুনরাবৃত্তি ঘটে।
ঋতুস্রাবে বিশেষ গন্ধ থাকে কেন ?
ঋতুস্রাবের সময় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম গন্ধ পাওয়া যায়। যোনির স্বাভাবিক pH হল ৩.৮ – ৪.৫ -এর মধ্যে। রক্ত , বীর্য এবং প্রস্রাবের উপস্থিতির ফলে pH পরিবর্তন হয় এবং বিভিন্ন রকম গন্ধ সৃষ্টি হয়। কখনো সেটা ধাতব গন্ধ , কখনো বা পচা , আবার কখনো মিষ্টি গন্ধ। প্রতিটি গন্ধের পিছনে রয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট কারণ –
- ধাতব গন্ধ – কয়েন বা যেকোন ধাতব জিনিসের মতো গন্ধ দেখা যায় এক্ষেত্রে। এটি আসলে হয় রক্তে আয়রন বা লোহা উপস্থিতির জন্য এবং এটি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে রজঃস্রাব বন্ধ হওয়ার পরও এটি দেখা গেলে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া দরকার।
- পচা গন্ধ – রজঃস্রাবের সাথে ব্যাকটেরিয়া মিশে যাওয়ায় এইপ্রকার গন্ধ সৃষ্টি হয়। বহুক্ষণ স্যানিটারি প্যাড বা টেম্পুন ব্যবহার করলে সেটিতে ব্যাকটেরিয়ার আবির্ভাব হয় এবং ব্যাকটেরিয়া রজঃস্রাবের সাথে মিশে পচাগন্ধ সৃষ্টি করে।
- আঁশটে গন্ধ – যদি রজঃস্রাবের সময় তীব্র আঁশটে গন্ধ নির্গত হয় , তবে সেটা কোন শারিরীক সমস্যাকে নির্দেশ করে । ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস (Bacterial Vaginosis) সংক্রমণের জন্য এই প্রকার গন্ধ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis ) একটি প্রোটোজোয়া ঘটিত ইনফেকশনের কারণে এটি হতে পারে। এই গন্ধের সাথে যদি যোনিতে প্রদাহ , জ্বালা, চুলকানি ও ঋতুস্রাবের পাশাপাশি স্রাব নিঃসৃত হয়। তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ।
ঋতুস্রাবের সময় সম্মুখীন হওয়া সমস্যা :
- ঋতুস্রাব একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হলেও, এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেক আনুষাঙ্গিক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা।
- জমাটবদ্ধ ঋতুস্রাব – বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব তরল অবস্থায় শরীর থেকে নির্গত হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব জেলির মতো জমাটবদ্ধ অবস্থায় শরীর থেকে নির্গত হতে দেখা যায়। এটি একটি অতি স্বাভাবিক ঘটনা এবং এক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই। প্রভূত পরিমাণে ঋতুস্রাব হলে জরায়ুর মুখে বা যোনির কাছে এটি অনেকক্ষণ সঞ্চিত থাকার ফলে এটি জমাটবদ্ধ হয়ে যায়। শরীরের কোন অংশে কেটে গেলে বা আঘাত লাগলে যেমন কিছুদিন পর রক্ত জমাটবদ্ধ হয়ে যায় , তেমনি এক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। ঋতুস্রাবে ছোট ছোট জেলির মতো পিন্ডের উপস্থিতি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে পিন্ডের আকার খুব বড়ো হলে এবং তার সাথে পেটে ও কোমরে প্রচন্ড ব্যথা থাকলে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া দরকার। জরায়ুর মুখে সমস্যা থাকলে বা uterine polyps (জরায়ুর পলিপ ) থাকলে বা এন্ড্রোমেট্রিওসিস ( এক্ষেত্রে টিস্যু জরায়ুর অভ্যন্তরে থাকার পরিবর্তে জরায়ুর বাইরে থাকে) থাকলে এই সমস্যাটি হতে দেখা যায়।
- তলপেট ও কোমরে ব্যথা – রজঃস্রাবের ২-৩ দিন আগে এবং রজঃস্রাব চলাকালীন প্রথম দু-তিন দিন তলপেটে ও কোমরে ব্যথা হয়। রজঃস্রাবের সময় জরায়ু সংকোচিত ও প্রসারিত হয়ে এন্ড্রোমেট্রিয়াম স্তর ত্যাগ করে দেয় । এই সংকোচন ও প্রসারণের জন্য ব্যথা অনুভূত হয়। Prostaglandin হরমোন এই ব্যথার জন্য দায়ী। তবে ব্যথা বেশি হলে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া জরুরী। এই সমস্যাটিকে ডিসমেনোরিয়া (Dysmenorrhea) বলে। তবে ঋতুস্রাবের হালকা ব্যথা কমানোর জন্য আদা দেওয়া চা , গরম জলের সেঁক ও গরম তেল মালিশ কার্যকরী হতে পারে।
- মানসিক অবস্থার অবনতি – ঋতুস্রাব চলাকালে মানসিক অবস্থা কখনোই ভালো থাকে না। হঠাৎ করে রেগে যাওয়া , ছোট ঘটনাতে দুঃখ পাওয়া অথবা হতাশ হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ইস্ট্রোজেন হরমোন হ্রাস পাওয়ার ফলে সেরোটোনিন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এই সমস্যাগুলো দেখা যায়। কিন্তু নিকট মানুষের সান্নিধ্য ও ভালোবাসা , পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম , কফি জাতীয় পানীয় কম খাওয়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চললে এই সমস্যা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
ঋতুস্রাব
ও কিছু ভ্রান্ত ধারণা :
ঋতুস্রাব নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু ভ্রান্ত ধারণা আজও রয়ে গেছে । যেমন –
ঋতুস্রাব অশুদ্ধ
প্রতি ঋতুস্রাবের সময় একজন মহিলার দেহ থেকে দুই থেকে তিন টেবিল চামচ রক্ত নিঃসৃত হয়। ঋতুস্রাবকালে এন্ড্রোমেট্রিয়াম স্তর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং এরফলে তৎসংলগ্ন রক্তবাহী নালী থেকে রক্ত নিঃসৃত হয়। তবে ঋতুস্রাবের মূল উপাদান কখনো শুধু রক্ত নয়। ঋতুস্রাবের উপাদানগুলি হল – এন্ড্রোমেট্রিয়াম রস ও মিউকাস , রক্ত নালিকার অংশবিশেষ , অনিষিক্ত ডিম্বাণু এবং রক্ত যেটি যেকোন স্বাভাবিক ধমনিতে বহমান রক্তের মতোই পরিশুদ্ধ।
ঋতুস্রাবের সময় ব্যায়াম , দৌড় ঝাঁপ , যোগাভ্যাস করা উচিৎ নয়
ঋতুস্রাবের সময় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা কম থাকায় ক্লান্তি ও দূর্বলভাব থাকে। কিন্তু সেটার জন্য ব্যায়াম বা যোগাভ্যাস বন্ধ করা কখনোই উচিৎ নয়। কারণ ব্যায়াম বা যোগাভ্যাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে এন্ড্রোফিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এন্ড্রোফিন প্রাকৃতিক বেদনানাশক। তাই এন্ড্রোফিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ঋতুস্রাবের বেদনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাছাড়া মানসিক প্রশান্তিও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
ঋতুস্রাবের সময় রান্নাঘরে যাওয়া উচিৎ নয়
এখনো অনেকের মনে এই ধারণা আছে যে – ঋতুস্রাবের সময় রান্নাঘরে যাওয়া উচিৎ নয়। প্রাচীনকালে ঋতুস্রাবকে অশুদ্ধ মনে করা হত। এইজন্য ঋতুস্রাব চলাকালে নারীদের নানাবিধ বিধিনিষেধ মেনে চলতে হত। তাছাড়া ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের নানারকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সেই কারণে মহিলাদের বিশ্রামের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এই নিয়মটি শুরু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানকালে কেউ যদি স্বেচ্ছায় ঋতুস্রাব চলাকালীন রান্নাঘরে যেতে চায় সেটা কখনোই অনুচিত নয়।
ঋতুস্রাব চলাকালে সহবাসের ফলে গর্ভসঞ্চার হয় না
ঋতুস্রাব সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণাগুলির মধ্যে এটি হল অন্যতম। কারণ স্বাভাবিক ধারণা অনুযায়ী এটি মনে হতে পারে যে- ঋতুস্রাবের সময় ডিম্বাণু নিঃসরণ হয় না। এর ফলে গর্ভবতী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু একটি ঋতুচক্র সম্পূর্ণ হতে সময় লাগে গড়ে ২৮ দিন। এই চক্রের শুরু হয় ঋতুস্রাবের মাধ্যমে এবং ১৪ তম দিন ( ১১ ,১২ , ১৩ তম দিনও হতে পারে) থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ শুরু হয়। একটি ডিম্বাণুর গড় আয়ু ২৪ ঘন্টা , কিন্তু একটি শুক্রাণু নারী শরীরের অভ্যন্তরে ৭২ ঘন্টা বেঁচে থাকতে পারে। সব নারীর ঋতুচক্রের সময়কাল সমান নয়। এরফলে কোন নারীর ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে ডিম্বাণু নিঃসরণ শুরু হয়ে গেলে এবং সেইসময় ডিম্বাণুটি শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ঋতুস্রাব চলাকালে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কম কিন্তু সেটি কখনোই শূন্য নয়।
দই, তেঁতুল অথবা টকজাতীয় খাবার ঋতুস্রাবে ব্যাঘাত ঘটায়
কোন খাবার কখনোই ঋতুস্রাবে ব্যাঘাত ঘটায় না। তবে অনেকের ক্ষেত্রে
ঋতুস্রাবের সময় অম্বল বা হজমের সমস্যা দেখা যায়। টকজাতীয় খাবার খেলে যেহেতু হজমের সমস্যা আরো
বৃদ্ধি পেতে পারে , তাই এইসময় তেল মশলা বিহীন হালকা খাবার
গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ঋতুস্রাব সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি :
- ঋতুস্রাবের সময় কতগুলি জরুরী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একান্ত প্রয়োজনীয়। এর ফলে শুধু শারীরিক নয় , মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে।
- ৪-৬ ঘন্টার বেশি স্যানিটারি প্যাড বা টেম্পুন বা মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা উচিৎ নয়। কারণ ঋতুস্রাবের সময় বহুক্ষণ কোন প্যাড বা অনান্য জিনিস ব্যবহার করলে সেটিতে ঋতুস্রাব ও ঘাম জমে ব্যকটেরিয়ার জন্ম হয়। এই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে বিভিন্ন রকম সংক্রমণ হতে পারে।
- ঋতুস্রাবের ফলে যোনি থেকে নিঃসৃত রক্ত হল ব্যাকটেরিয়ার আঁতুরঘর। তাই ঋতুস্রাব চলাকালে যোনি ও সংলগ্ন অংশ দিনে দু’বার পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
- সাবান বা অনান্য সুগন্ধি দ্রব্য কখনোই যোনি ও তার সংলগ্ন অংশে ব্যবহার করা উচিৎ নয়। কারণ যোনির একটি নির্দিষ্ট pH ( অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের মাত্রা) রয়েছে এবং সাবান ব্যবহারের ফলে এই স্বাভাবিক pH বিনষ্ট হয়ে যায়। এরফলে জ্বালা , প্রদাহ ও চুলকানি দেখা দেয়। তাই এক্ষেত্রে সাধারণ জল অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে হালকাভাবে পরিষ্কার করাই যথোপযুক্ত ।
- যোনি ও সংলগ্ন অংশ সবসময় সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে (মলদ্বারের দিকে) পরিষ্কার করা উচিৎ। এরফলে মলদ্বারে থাকা জীবাণু ও মলের অবশিষ্টাংশ যোনি সন্নিকটে আসে না এবং সংক্রমণের সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
- এইসময় হালকা সুতির কাপড় পরিধান করাই শ্রেয়। হালকা সুতির কাপড়ের মধ্যে দিয়ে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে ও ঘাম সহজেই সুতির কাপড়ের দ্বারা শোষিত হয়ে যায়। এরফলে ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনা এখনও সমাজে ব্রাত্য হয়ে রয়েছে। এর ফলে বহু মেয়ে তাদের ঋতুস্রাব চলাকালীন সমস্যা নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলোচনা করতে পারে না। সঠিক সচেতনতা ও আর্থিক সচ্ছলতার অভাবে অনেক মহিলা ঋতুস্রাবের সময় কাপড়, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। এমনকি লোকলজ্জার খাতিরে ঋতুস্রাবের সময় ব্যবহৃত কাপড়কে ভালো করে ধুয়ে শুকনো করতে পারে না। এরফলে বহু মহিলা নানারকম শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়।
যেকোন
শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মতো ঋতুস্রাবও একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই
“মেয়েলি ব্যাপার” বলে এটিকে নিষিদ্ধ আলোচনার ঘেরাটোপে
রাখা সম্পূর্ণরূপে অনুচিত। শুধু শিক্ষা দ্বারা নারী ক্ষমতায়ন সম্ভব
নয়। নারী ক্ষমতায়নের জন্য প্রাথমিক স্তরে মহিলাদেরকে তাদের শারীরিক ও মানসিক
সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার পরিসর প্রস্তুত করে দিতে হবে আর ঋতুস্রাব নারীস্বাস্থ্যের
একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই ঋতুস্রাবের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে নারীদের
মধ্যে যত দ্রুত সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে , তত দ্রুত ‘নারী ক্ষমতায়নের' রথ অগ্রসর হবে।
কলমে - সুকৃতি দাস
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন