ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপাচার - প্রথম পর্ব


দাগ-ছোপহীন সুন্দর ঝকঝকে ত্বক কে না চায়! প্রত্যেকেরই আকাঙ্ক্ষা থাকে ত্বক হবে টানটান, বলিরেখার আঁচ পড়বে না তাতে। তবে তার জন্য ত্বকের নিয়মিত যত্ন নেওয়া জরুরী। এ বিষয়ে আমরা পূর্বেই নানা বিষয়ের উপর আলোচনা করেছি। আজ জেনে নেওয়া যাক অতি সাধারণ ও সহজলভ্য ঘরোয়া উপাচার দ্বারা ত্বককে কিভাবে রাখা যেতে পারে কোমল ও মসৃণ।

মুসুর ডাল :

ত্বকের পরিচর্যায় মুসুর ডালের ব্যবহার হয়ে আসছে পুরাতন কাল থেকে, আর এই জিনিসটি সকলের ঘরেই থাকে। মুসুর ডাল আপনার ত্বকের যত্নের জন্য হয়ে উঠতে পারে অত্যন্ত উপযোগী। 

  • অত্যন্ত সহজ পদ্ধতিতে বানানো এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। মুসুর ডাল সারারাত দুধের মধ্যে ভিজিয়ে রেখে পরেরদিন সকালে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগাতে হবে, শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। 
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর আরেকটি পদ্ধতি হলো, সারারাত ডালটি ভিজিয়ে রেখে এর পেস্টের সঙ্গে এক চামচ কাঁচা দুধ এবং পরিমাণমত আমন্ড অয়েল মিশিয়ে নিতে হবে, তারপর মিশ্রণটিকে ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে অন্তত ১৫-২০ মিনিট পর উষ্ণ গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • মুখ পরিষ্কার করার জন্য এক চামচ মুসুর ডাল বাটার সঙ্গে দুই চামচ দুধ, অল্প পরিমাণ হলুদ এবং তিন ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে এবার এই মিশ্রণটি সারা মুখে লাগিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে কিছুক্ষণ পর মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
  • ত্বক সতেজ রাখতে টক দই, মধু ও মুসুর ডাল বাটা দিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে নিতে হবে। এবার এটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
  • বলিরেখা দূর করার জন্য কাঁচা হলুদ, মুসুর ডাল বাটা ও দুধের সর মিশিয়ে একটি প্যাক বানাতে হবে এবং মুখে ও গলায় লাগিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। উপকার পাওয়ার জন্য এটি নিয়মিত প্রয়োগ করতে হবে।
  • মুসুর ডাল বাটা, হলুদ ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত ত্বকে লাগালে রোদে পোড়া ভাব কমে যাবে।
  • দুই টেবিল চামচ মুসুর ডাল বাটার সাথে চার পাঁচ চা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে। এটি ব্রণ হওয়ার প্রবণতা দূর করে।
  • আমাদের মধ্যে অধিকাংশেরই ধারণা মুসুর ডাল শুধু মুখমণ্ডলের পরিচর্যাতেই ব্যবহৃত হয়, তা কিন্তু নয়। পায়ের পাতা বা আঙুলের কালচে দাগ, হাঁটু ও পায়ের গোড়ালির রুক্ষভাব দূর করতে মুসুর ডাল বাটা, হলুদ বাটা ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ওই স্থানগুলিতে লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • দাগ ছোপ দূর করতে আধ চা-চামচ মুসুর ডালবাটা ও বেসনের সঙ্গে ডিমের কুসুম ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে। পুরো মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে দুয়ে ফেলতে হবে।

মধু:

ত্বকের যত্নে আরেকটি জনপ্রিয় উপাদান হলো মধু। গরম দুধের সঙ্গে অথবা লেবুর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়াই হোক অথবা ত্বকচর্চা, মধুর ব্যবহার সর্বত্র। দেখে নেওয়া যাক এটি কিভাবে হয়ে উঠতে পারে রূপরুটিনের অপরিহার্য অঙ্গ।

  • ত্বকের কালচে দাগ দূর করতে মধু ও দুধের মিশ্রণ অত্যন্ত উপযোগী। মধু ও দুধের মিশ্রণ মুখসহ গলায়, হাতে ও পায়ে লাগিয়ে রেখে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে মধু একাই যথেষ্ট। এক চা চামচ মধু সরাসরি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • ত্বকের বলিরেখা দূর করার জন্য একটি ডিম ফেটিয়ে নিয়ে তার সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে অবশ্যই মিলবে সুফল।
  • ত্বকের বলিরেখা দূরীকরণের আরেকখানি পদ্ধতি রয়েছে। এক টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ মিল্ক ক্রিম একসঙ্গে মিশিয়ে ১৫ মিনিট ত্বকে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • ত্বক কোমল করতে মধু ও দই একত্রে ভালো ফল দেয়। দই ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মুখমণ্ডলে এবং হাতে ও পায়ে লাগিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে স্ক্রাবিং অত্যন্ত জরুরী। স্ক্রাব না করলে মৃত কোষ ত্বকের উপর জমে থাকে যার ফলে যেকোনো উপাদান যা ত্বকের উপর লাগানো হয় তা ত্বকের ভেতর অবধি পৌঁছোতে পারে না। মধু ব্যবহার করেই স্ক্রাবিং করা যেতে পারে। এক টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ চিনি মিশিয়ে ১০ মিনিট মুখে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।

দুধের সর :

ত্বক পরিচর্যায় দুধের সর ব্যবহারের প্রচলনও বেশ পুরনো। ত্বকের জন্য এটির গুণাগুণ অনেক। দুধের সর ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, ত্বককে উজ্জ্বল করে, স্কিন টোন উন্নত করে, ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়ায়। এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন পদ্ধতিতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • রোদে পোড়া ভাব দূর করতে দুই চামচ দুধের সরের সঙ্গে এক চামচ বেসন মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেটি সারা মুখে লাগিয়ে বৃত্তাকারে অন্তত পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। দশ মিনিট অপেক্ষা করার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে তিনবার এটি করা যেতে পারে।
  • ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষার্থে দুধের সর অত্যন্ত উপযোগী। এটি হল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার যা ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এক চামচ দুধের সরের সঙ্গে সম পরিমাণ মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে পনেরো কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দুইবার এটি করা যায়।
  • ব্রণ কমাতেও দুধের সর সমানভাবে কার্যকরী। দুই চামচ দুধের সরের সঙ্গে এক চামচ মধু এবং অল্প পরিমাণে গরম জল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে সেটি মুখে এবং গলায় লাগিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। এরপর মুখটা ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • ত্বক কোমল রাখতে এক চামচ দুধের সরের সঙ্গে সম পরিমাণে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি পেস্ট মুখে লাগিয়ে অন্ততপক্ষে কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

তাহলে দেখা গেল অত্যন্ত সাধারণ ও সহজলভ্য কিছু ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে কিভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়। পরবর্তীতে থাকবে এই বিষয়ের উপরেই দ্বিতীয় তথা অন্তিম পর্ব যেখানে এরকমই আরো কিছু ঘরোয়া উপাদানের ব্যাপারে উল্লেখ থাকবে।

 

 তমালিকা ঘোষাল ব্যানার্জী

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন