মধুমিতা ভট্টাচার্য
সকাল থেকে রিয়ানবাবুর
মেজাজ বড়োই খাট্টা
মা বললেন, ‘চুউউপ..., নইলে মাথায় পড়বে গাঁট্টা!”
বললে রিয়ান, “করব আমি ভীষণ রকম আড়ি
যতক্ষণ না দিচ্ছ আমায় একটা খেলনা গাড়ি,
কিম্বা দিও স্পাইডারম্যান,
ডাইনোসর বা বেলুন
কুং-ফু রোবট? আরও ভাল, সেটাও বলে দিলুম।
নইলে একটা এরোপ্পেলেন,
ডানায় রঙিন লাইট
ব্যাটারিটা লাগিয়ে দিলেই করবে দারুণ ফাইট!
খেলনা পছন্দ করেনা
এমন শিশু খুঁজে পাওয়া যাবে না!তাই সদ্যোজাত শিশু
থেকে শুরু করে কিশোর বয়সীদের জন্যও খেলনা একটি অনিবার্য উপহার হিসাবে গণ্য করা হয়।
তবে প্রতিটি শিশুর নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী কিছু
পছন্দের খেলনা থাকে, কেউ গাড়ি নিয়ে খেলতে পছন্দ করে, কেউবা পুতুল।যদিও সাধারণত মনে করা
হয় একটি খেলনা একটি শিশুর মন ভোলাতেই ব্যবহার করা হয় কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দাবি অনেকটাই অন্যরকম। বাচ্চা ভোলানো খেলনাই
কিন্তু শিশু-শিক্ষার ভিত তৈরি করে। বাচ্চার মেধা এবং মনন প্রখর করতে সাহায্য করে। বাচ্চার সামগ্রিক বিকাশ এই
খেলনা ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না কিছুতেই।বাচ্চার জন্য খেলনা নেওয়ার আগে,
একটু যাচাই করে এবং মাথা খাটিয়ে খেলনা
কিনলে, শিশু সত্যিই খেলতে খেলতে
জ্ঞান অর্জন করে, বাইরের পরিবেশের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত হয়ে যায় এবং তার বিচারবুদ্ধিরও বিকাশ
ঘটে। বাচ্চার শিক্ষায় তাই খেলনা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সঠিক সময়ে সঠিক খেলনা শিশুদের মানসিক ও
শারীরিক বিকাশে সাহায্য করে।জন্ম নেওয়ার
কিছুদিন পর একটি শিশুকে ঝুনঝুনি,
কাঠের চুসি,নরম
পুতুল প্রভৃতি দেওয়া হয়।শিশুটির দোলনার উপর রঙিন কাগজ,
প্লাস্টিকের খেলনা ঝোলানো থাকে।খুব ছোট বয়সে শিশুটি খেলনার প্রকৃতি
বোঝে না। উজ্জ্বল রঙিন বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয় বলে খেলনার রঙও তেমনই নির্বাচন করা
হয়।বা আওয়াজে প্রতিক্রিয়া দিতে পারে ব’লে আওয়াজ যুক্ত খেলনা নির্বাচন
করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে একটু বড় হলে বিভিন্ন রকমের নরম বল,
রঙিন ব্লক,খেলনার মাটি দিয়ে শিশুরা খেলে।
মাটি দিয়ে খেলার উপকারিতাঃ
অনেকে মনে করে মাটিতে খেলা খারাপ। সেটা নয়। মাটিতেও খেলা
উচিত। বর্তমানে দূষিত মাটির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার জন্য বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। কিন্তু যে মাটিতে রাসায়নিক দূষিত
বস্তু তেমন মেশেনি সেই মাটি শিশুদের জন্য উপকার।
শিশুরা মাটি দিয়ে বিভিন্ন আকৃতি তৈরি করে।ইদানিং প্রাকৃতিক মাটির পরিবর্তে শিশুদের স্বাস্থ্যের উপযোগী
মাটি বা পলিমার ক্লে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়।খুব সহজে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর সংমিশ্রনে
বাড়িতেও এই ধরণের ক্লে বানিয়ে নেওয়া যায়। ফলে কোনো বিশক্রিয়া হবার সম্ভাবনা থাকেনা।
এই মাটি বিভিন্ন উজ্জ্বল বর্ণের হওয়ায় এবং খুব নরম হওয়ায় একজন শিশু সহজেই আকৃষ্ট হয়
ও এই দিয়ে নিজের খুশি মত খেলনা বানাতে সক্ষম হয়। এই মাটির ব্যবহারে
-
- শিশুর হাত ও পেশীর সমন্বয় দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
- নতুন আকার আকৃতি তৈরির মাধ্যমে কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটে।
- নতুন খেলনা নির্মাণের ফলে শিশুটির নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।
এছাড়াও অনুভব ক্ষমতার বিকাশ ঘটে। নরম গঠনের জন্য শিশুদের এই খেলনাগুলি খুব পছন্দের। তারা
মনে করে,
এই নরম খেলনাগুলি ওদের মতোই কেউ! বড়রা যেমন শিশুদের যত্ন
করে,
শিশুরাও তেমনি এদের যত্ন করে।
যেকোন ধরনের পুতুল বা
অন্যান্য খেলনাঃ রান্নাবাটি,
পুতুলের সংসার সাজানো প্রভৃতি ঘরোয়া খেলা খেললে শিশুদের সামাজিক সংযোগ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বড়দের মতোই তারা বাজার
করে,
রান্না করে, সংসার সামলানো প্রভৃতি
বিষয়ে জানতে চেষ্টা করে।বড়দের অনুকরণে নিজেদের মধ্যে কথার আদান
– প্রদানের ফলে একে অপরের সাথে কথা বলে নিজেদের ভাষার বিকাশও ঘটিয়ে
থাকে। সামাজিকতা বোধও এই ধরণের খেলার মাধ্যমে তৈরি হয়।
যেকোনো রকমের পুতুলের সাথে শিশুরা একা একা অনেক কথা বলে।
এটা কোনো মানসিক রোগ নয়। এটি খুবই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রাথমিকভাবে এইভাবে
কথা বলতে বলতে শিশুদের ভাষার বিকাশ হয়। ছোট্টবেলায় শিশুরা পুতুলকে নিজের বন্ধু
রূপে কল্পনা করে। বড় হলে যখন বুঝতে পারে এটি জড় বস্তু তখন আর সেই পুতুলের সাথে কথা
বলে না। কিন্তু প্রাথমিকভাবে এটি শিশুদের জন্য উপকারী।
রঙ দিয়ে খেলা, রঙ মেলানোঃ দুই - আড়াই বছর বয়স থেকেই রঙ চিনতে,
রঙ মেলানো শেখাতে হবে। ফলে, শিশুটি রঙ চিনতে শিখবে। রঙ সম্পর্কে ধারণা হবে। রঙ মেলানোর ফলে শিশুটির মধ্যে
সৃজনশীলতা প্রকাশ পাবে।
পশু, পাখি ও মানুষের ছোট ছোট আকৃতির খেলনাঃ এইসব খেলনা খেলার ফলে শিশুটি পশু,
পাখি ও মানুষের আকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে। এরপর যখন সে
বাস্তবে তাদের দেখবে তখন সহজেই তাদের নাম বলে দিতে পারবে।
পাজল
গেমসের জন্য খেলনা : পাজল সমাধান করলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে।এই খেলনার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে যুক্তি, যুক্তির ব্যবহার,
সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বুদ্ধির ব্যবহার প্রভৃতি বোধ তৈরি হয়।
যানবাহনের খেলনাঃ
বিভিন্ন রকমের যানবাহন সম্পর্কে
ধারণা হবে।অনেক শিশু গাড়ি খুলে দেখবার চেষ্টা করে ভেতরে কী আছে! অভিভাবকরা অনেক
সময় পয়সা নষ্ট হচ্ছে বলে রাগারাগি করেন। কিন্তু ভেবে দেখার বিষয় এইরকম করার ফলে
শিশুর উপকার হয়। এতে শিশুটির বৌদ্ধিক বিকাশ হয়।
ক্রিকেট,
ফুটবল,
প্রভৃতি বাইরের
খেলার জন্য উপযুক্ত
সরঞ্জাম দেওয়াঃশুধুমাত্র ঘরের মধ্যে খেললেই হবে না বাইরে খেলাও খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে
খেলার মধ্যে ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাটমিন্টন,টেনিস প্রভৃতি খেলার জন্য উপযুক্ত সরঞ্জাম কিনে দেওয়া
দরকার।এছাড়াও অনেক বাইরের খেলার জন্য বিশেষ সরঞ্জাম না হলেও চলে। কিছু নিয়ম মেনে
খেললেও হবে। মূল কথা শারীরিক কসরত করা দরকার। আর নিয়মনীতি থাকার জন্য শিশুদের
মধ্যে অনুশাসন মেনে চলার স্বভাব তৈরি হয়।
সতর্কতাঃ বাজারে এমন সব খেলনা পাওয়া যার রঙ শিশুর জন্য ক্ষতিকর। তাই খেলনা কেনার সময় অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে।রঙিন খেলনার ক্ষেত্রে যেন তার থেকে বিষক্রিয়া না হয় বা পাতলা ভঙ্গুর জাতীয় খেলনা ভেঙ্গে যাতে শিশুর ক্ষতি না হয় বা ক্ষুদ্রাকৃতি খেলনার অংশ যেন কোনও ভাবেই শিশুর মুখে-নাকে ঢুকে প্রাণ সংশয়ের কারন না ঘটে সেদিকে নজর রাখা একান্তই জরুরী। অনেক সময় খেলনার কিছু অংশ থেকে শিশুর অ্যালার্জি হতে পারে। সেদিকেও নজর রাখা দরকার। এই ধরণের খেলনা শিশুকে না দেওয়াই উচিত।
কলমে - স্বর্ণলতা দেবী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন