
সত্যজিৎ রায়
আজ ২রা মে, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ১০১ তম জন্মবার্ষিকী। এই উপলক্ষ্যে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে তাঁর শিল্পকলা নিয়ে লিখিত অসাধারণ একটি বইয়ের বিষয়ে সবাইকে জানাতে ইচ্ছা করল।
লেখক - দেবাশীষ দেব
প্রকাশনী - সিগনেট প্রেস
প্রকাশকাল - নভেম্বর ২০১৪
প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জা - সুনীল শীল ও প্রসূন কুমার সাহু
পৃষ্ঠা - ৩২২
বই বা পত্র-পত্রিকার প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে ইলাস্ট্রেশন, ক্যালিগ্রাফি, এমনকী নিজের সিনেমার প্রয়োজনে আঁকা পোস্টার, টাইটেল কার্ড, লোগো ইত্যাদি অজস্র ডিজাইন সংক্রান্ত কাজ যে তাঁর সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রীতিমতো আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠেছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এইসব কাজের মূল আর্টওয়ার্ক তো দূরের কথা বহু ক্ষেত্রে ছাপা কপিও বর্তমানে দুর্লভ।
তারই মধ্যে বিভিন্ন বইপত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সত্যজিতের গ্রাফিক্স শিল্পের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য নিদর্শনকে বেছে নিয়ে এই বইয়ে সাজানো হয়েছে চারটি পর্বে। সেই সঙ্গে একের পর এক বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার মধ্যে দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে এদের পটভূমি ও গুণগত বৈশিষ্ট্যগুলিকে। সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত বই-এর প্রচ্ছদ, সন্দেশের ইলাস্ট্রেশন, এক্ষণ-এর লেটারিং কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেমার প্রেস অ্যাড কোন অর্থে আশ্চর্য ব্যতিক্রমী এক সৃজনশীলতার ফসল লেখক তারই আলোচনা করেছেন এই বইয়ে। এই বইয়ের চারটি পর্ব হল - প্রচ্ছদ, অলংকরণ, অক্ষরশিল্প এবং সিনেমার নেপথ্যে।
প্রথম থেকেই কমার্শিয়াল আর্টের প্রতি আগ্রহী সত্যজিৎ কতকটা মায়ের ইচ্ছায় শান্তিনিকেতনের কলাভবনে ভর্তি হয়েছিলেন, যদিও সেখানে শেখানো হতো ফাইন আর্ট । তবে সত্যজিৎ মনে-মনে ভেবে রেখেছিলেন যে কলাভবনে ভারতবর্ষের শিল্পকলা সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করে সেটাই তাঁর কাজে লাগাবেন । এবং সেই ভাবনা অনুসারেই চার বছরের কোর্স শেষ না করে মাত্র আড়াই বছরের মাথায় সত্যজিৎ ড্রপ-আউট করে ফিরে আসেন বাড়িতে কারণ তাঁর মনে হয়েছিল প্রয়োজনীয় যা কিছু শেখার তিনি শিখে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই । এবং সেই শিক্ষাকে কাজে লাগানোর প্রথম সুযোগ আসে সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত বইয়ের প্রচ্ছদ এবং ইলাস্ট্রেশন করতে গিয়ে ।
সত্যজিৎ রায়ের জীবনের প্রথম প্রকাশিত ডিজাইন করা প্রচ্ছদ ছিল তার বাবা সুকুমার রায়ের লেখা "পাগলা দাশু" বইয়ের প্রচ্ছদ।সত্যজিৎ রায় পরবর্তী পর্যায়ে এঁকেছেন অসংখ্য প্রচ্ছদ। সেই সমস্ত প্রচ্ছদ সৃষ্টির নেপথ্যের চিন্তা ভাবনা কি ছিল বা তিনি কোন বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রচ্ছদগুলি আঁকতেন সেইসমস্ত বিষয়ের খুঁটিনাটি বইয়ের এই পর্বে বর্ণনা করা আছে।

কর্ভাস গল্পে জাদুকর আর্গাসের কোটের রঙ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফিকে সবুজ রং ব্যবহার করে অন্ধকার ঘরে নিয়নের আলোর সাইকেডেলিক এফেক্টকে বুঝিয়েছেন সত্যজিৎ ।রঙিন ইলাস্ট্রেশনের প্রথম সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন আনন্দমেলা পত্রিকাতে এবং যেহেতু এতে প্রফেসর শঙ্কুর গল্প ছাপা হতো, তাই শঙ্কুর অনেক গল্পের ইলাস্ট্রেশনে রঙের ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে সত্যজিৎকে ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন