বই – মায়াবিনীর ম্যানিকুইন
লেখক – দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়
প্রকাশকাল – সেপ্টেম্বর ২০১৭,
প্রকাশক – দ্য কাফে টেবল
প্রচ্ছদ – একতা ভট্টাচার্য
এক রাতে খালের ধারে ঝোপের মধ্যে মগরাহাটের প্রতিভাবান কণ্ঠশিল্পী বা কণ্ঠীশিল্পী শম্পাকে নৃশংসভাবে খুন করে ফেলে রাখা হল।যার নাকি অসাধারণ গলা নকল করার ক্ষমতা ছিল। খুনের আগের দিনই তার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল তার প্রেমিক পলাশের এবং সেই ঝগড়ার সাক্ষী শম্পার ভাই। সুতরাং স্বাভাবিক নিয়মেই খুনের দায় পলাশের ঘাড়ে গিয়েই পরবে- এই ভেবে পলাশ গ্রাম ছেড়ে পালায়। অবসরপ্রাপ্ত সি বি আই অফিসার কিংশুক রায়, যিনি এখনও জটিল কিছু রহস্যের মিমাংসা করে গোয়েন্দা দফতরকে সাহায্য করেন। বেশ কয়েক বছর আগে এক তদন্তের জন্য কিংশুক মগরাহাটে গেছিলেন। তখন পলাশের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। সেইসূত্র ধরেই পলাশ তাঁর কলকাতার বাড়ীতে এসে উপস্থিত হয় এবং সাহায্য চায়। প্রাথমিকভাবে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিংশুক কৌতূহলী হয়ে একটু খোঁজ নিতে শুরু করেন এবং বেশ কিছু গোলমালের ঘটনার সম্পর্কে জানতে পারেন। জানতে পারেন অজানা কোনও এক লোকের কাছ থেকে অযাচিতভাবে শম্পা এমন কিছু কাজের সন্ধান পেয়েছিল যে ট্রেনে গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। এই অন্য কাজ করে শম্পা হিসাব বহির্ভূতভাবে অনেক টাকা রোজগার করতে শুরু করে। কী এমন কাজ পেয়েছিল সে, যাতে ঘর বন্ধ করে রিহার্সাল দিতে হয়, অথচ যার চাপে সংসারের আর সবার সঙ্গে তার সম্পর্ক ক্রমেই শুকিয়ে আসছিল? তাকে নতুন কাজ দিয়েছিল যে লোকটি, তার আসল পরিচয় কী?কেনই বা শম্পা নিজের ফোন থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য গোপন করতে চেয়েছিল?কি সেই নেপথ্য কাহিনী যা জুড়ে গেছে শম্পার মৃত্যুর সাথে?
এই সমস্ত কিছু নিয়েই এই রহস্য কাহিনী। ম্যানিকুইন কাকে বলে? অভিধান মতে পোশাক বিক্রেতাদের পোশাক প্রদর্শনের নিমিত্ত
ব্যবহৃত পুতুলকে ম্যানিকুইন বলে। কিন্তু এই নকল পুতুলের পরিবর্তে যদি মানুষকে ব্যবহার
করা হয় তাহলে তাঁকেও কি ম্যানিকুইন বলা যায় না? আর যদি পোশাকের পরিবর্তে এই ম্যানিকুইন
কোনো মানুষের পরিবর্তে অন্য কোনও মানুষের ভেক ধারণকারি হন তাহলে?
এই গল্প সেই রকমই এক ধাঁধাঁর উত্তর খুঁজে বেরোনোর গল্প। দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের
লেখা "মায়াবিনীর ম্যানিকুইন" বইয়ের কাহিনীও আবর্তিত হয়েছে এই ভাবেই।বাকিটা পাঠক নিজেরাই
পড়ে নেবেন।
এবার আসি বইয়ের বিষয়ে। লেখক গল্পের গতি ও ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য সম্পূর্ণ
গল্পকে ছোট ছোট অধ্যায়ে ভাগ করে নিয়েছেন। এক ঘটনা থেকে অন্য ঘটনায় চলে গেলেও তাই পাঠকের
অসুবিধা হয়নি গল্প প্রবাহ বুঝতে।
ইদানিংকালের বেশ কিছু রহস্য বইয়ের মত অযথা অকারণ বর্ণনা দিয়ে পাতা ভরে কাহিনীর
দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করেন নি।ফলে বইয়ের মূল্যও অবাঞ্ছিতভাবে হাতের নাগালের বাইরে বেড়িয়ে
যায়নি। লেখককে ধন্যবাদ যে পাঠককে একটি বাস্তবানুগ পরিচ্ছন্ন সহজ
সাবলীল ভাষায় লেখা রহস্য উপন্যাস উপহার দেওয়ার জন্য।
গল্পের সাথে বছর কয়েক আগে ভারতে ঘটে যাওয়া এক তথাকথিত মাতাজির আশ্চর্য মিল পাঠক
খুঁজে পাবেন। সাথে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের অর্থনীতি, রাজনীতি, ও সমাজে বিরাট গুরুত্ব অধিকার করে থাকা বেশ কিছু নামী
প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন লেখক, পাঠককূল
সহজেই চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করতে সক্ষম হবেন এই আশায়।সমাজের
নিম্নস্তরের দৃষ্টির অন্তরালে থাকা এক চরিত্রকে নিয়ে রচনা করেছেন গভীর এক রহস্যোপন্যাস।
বইয়ের প্রচ্ছদ শিল্পীকে পৃথকভাবে বাহবা দিতে হয় দুটি কারণে। এক বইয়ের নামে হিন্দি
অক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে অবাঙালি যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিয়েছেন। দুই প্রচ্ছদের নীলচে কালো
ধোঁয়াশা রঙের ব্যবহারে মায়াময়তা ফুটিয়ে তুলেছেন
অনবদ্যভাবে।
কলমে - পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন