রান্নাঘরের টাইলসের সজ্জা

 

রান্নাঘর – সমগ্র বাড়ির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কিন্তু অনেকেই ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে রান্নাঘর সাজিয়ে তোলার বিষয়ে সেভাবে তেমন আগ্রহ দেখান না। কারণ হিসাবে বলা যায়, কোনো বাড়ির রান্নাঘরে যেহেতু অতিথি সমাগম হয় না এবং রান্নার দায়িত্বে যিনি বা যাঁরা রয়েছেন তাঁরা ব্যতীত আর কারুর আনাগোনা থাকে না সেইজন্য এটি প্রায়শই অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকে। তার তুলনায় বাড়ির বসার ঘরটি, বারান্দা বাগান, খাওয়ার ঘর এসব স্থান সকলে পরিপাটি করে রাখে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই, যে স্থানে আমাদের পেটপুজোর বন্দোবস্ত হচ্ছে সেটি সুন্দরভাবে নির্মিত এবং সাজানো গোছানো হওয়া অবশ্যপ্রয়োজনীয়। বাড়ির অন্যান্য ঘর পরিপাটি ও সুন্দর হলে তার যেমন আমাদের মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব থাকে, ঠিক সেরকম রান্নাঘরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

রান্নাঘরকে সাজাতে গেলে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। এখানে অন্ততপক্ষে একটি জানলা থাকা আবশ্যিক, যদিও সব রান্নাঘরেই সাধারণত থাকে। কিন্তু একেবারে উপরের দিকে, ছাদের কাছে পায়রার খোপের মতো ছোট্ট একটা জানলা থাকবে এমনটা কাম্য নয়। কিচেন চিমনি থাকলে তো খুবই ভালো। তা যদি না থাকে এবং রান্নাঘরের জানলাও যদি ছোটো হয় তাহলে রান্নার সমস্ত ধোঁয়া রান্নাঘরকে গুমোট করে রাখবে। সেক্ষেত্রে যথাযথ মাপের একখানি জানলা থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।

নিজের তৈরি বাড়ির রান্নাঘর হলে তো কথাই নেই, ছোটো বড়ো সুবিধামত আয়তনে বানিয়ে ফেলা যায়। তবে বর্তমানে ফ্ল্যাটবাড়ির আধিক্যের কারণে রান্নাঘরের আয়তন সেভাবে বড়ো নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে মশলাপাতি ও বাসনকোসন রাখার জন্য ক্যাবিনেটের ব্যবস্থা অত্যন্ত সুবিধাজনক। আর মডিউলার কিচেন হলে তো কথাই নেই।

এবার মূল বিষয়ে আসা যাক। প্রাথমিকভাবে শুধু সাজিয়ে তোলাই নয়, রান্নাঘরের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দর করে রান্নাঘর সাজিয়ে সেটির খেয়াল না রাখায় যদি এদিক ওদিক তেলচিটে হয়ে থাকে তাহলে দেখতে মোটেও ভালো লাগে না, বরং রান্নাঘরের শোভার প্রায় সবটাই বিফলে যায়। সেক্ষেত্রে টাইলস খুবই সুবিধাজনক। বিভিন্ন রঙের টাইলস হোক বা তার উপর নকশা আঁকা, এতে রান্নাঘরের শোভা যেমন বৃদ্ধি পায়, ঠিক তেমন অন্যান্যভাবেও সুবিধা করে। যেমন, রান্নাঘরের গ্যাস ওভেনের একেবারে সামনের এবং আশেপাশের দেওয়াল টাইলস দিয়ে মুড়ে দিলে রান্না করতে গিয়ে যা কিছু তেলমশলা ছিটকে সেখানে লাগে, সেসব অতি সহজেই পরিষ্কার করে ফেলা যায়। তবে তেলমশলার ছিটে লাগলে, দাগ এড়ানোর জন্য সেটি অবিলম্বে মুছে ফেলা উচিত। 

এছাড়া টাইলসের অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে। এগুলি টেকসই এবং শক্ত হয়, সাথে জল প্রতিরোধী। কটু গন্ধ এবং ব্যাকটেরিয়ার সমস্যা থাকে না। টাইলস সহজেই দাগ প্রতিরোধ করতে পারে। শুধু নিশ্চিত করতে হবে যে সেগুলি সঠিকভাবে সিল করা হয়েছে কিনা। বর্তমানে রান্নাঘরের টাইলসের জন্য হরেকরকম ডিজাইনের মধ্যে থেকে পছন্দ অনুসারে প্যাটার্নে ইনস্টল করা যায় এবং সাজানো যায়। প্রচুর রঙ, আকার এবং স্টাইল পাওয়া যায় যা আপনার রান্নাঘরকে আরও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে পারে।

 শুধুমাত্র ডিজাইনই নয়, টাইলসেরও নানারকম প্রকারভেদ রয়েছে।

 

সিরামিক – 

এই ধরণের টাইলস মাটির তৈরি হয় যা নন-চীনামাটির বাসন নামেও পরিচিত।এটি আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। কারণ এটি টেকসই, মোটামুটি উচ্চশক্তি রয়েছে এবং এর মূল্যও সাধারণ মানুষের আয়ত্বের মধ্যে। সিরামিক টাইলস চকচকে। এটি ইনস্টল করা সহজ। চকচকে প্রকৃতির কারণে এর পৃষ্ঠ জলের ছিটে প্রতিরোধ করে। অন্যান্য সুবিধাগুলি হলো পরিবেশগত বন্ধুত্ব, ইউভি প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং সহজেই ক্ষতিগ্রস্থ টাইলটিকে নতুন করে নিজের সাথে প্রতিস্থাপনের ক্ষমতা রাখে।

 

চীনামাটি – 

 


এই ধরণের টাইলস বালি এবং মাটির মিশ্রণে নির্মিত। তীব্র তাপ এবং চাপের পরিস্থিতিতে তৈরি হওয়ার কারণে এগুলি সিরামিক টাইলসের তুলনায় শক্ত এবং ঘন। এগুলি কম ছিদ্রযুক্ত হয়। চরম আর্দ্রতা এবং তাপ ও কঠিন জলবায়ু পরিস্থিতি সহ্য করতে পারে। চীনামাটির টাইলস জল-প্রতিরোধী, তবে এর ইনস্টলেশনের সময় উচ্চ দক্ষতার কারিগরের প্রয়োজন পড়ে।

 

স্টোন টাইলস – 



গ্রানাইট এবং মার্বেলের মতো প্রাকৃতিক পাথর দিয়ে তৈরি। অন্যান্য টাইলসের তুলনায় এটি সর্বাধিক ব্যয়বহুল বিকল্প। এই টাইলস অত্যন্ত ছিদ্রযুক্ত এবং এটিকে কার্যকরভাবে সীলমোহর করতে হয়। এছাড়াও প্রতি দুই-তিন বছরে সীলমোহর প্রয়োজন।

 


এছাড়াও অনেক রকমের টাইলস রয়েছে। লিনোলিয়াম, টেক্সচার্ড ইত্যাদি। নিজেদের পছন্দ, প্রয়োজন এবং খরচের কথা মাথায় রেখে সঠিক টাইলস নির্বাচন করতে হবে। তবে এইসব টাইলস যে শুধুমাত্র রান্নাঘরের দেওয়ালের জন্য, তা কিন্তু নয়। রান্নাঘরের মেঝের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন :

 

  • টালির পৃষ্ঠ পরিষ্কার করার জন্য প্রতিদিন মেঝে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করার পর একটি স্যাঁতসেঁতে কাপড় দিয়ে মুছতে হবে। যেকোনো ধাতুর ব্যবহার, যেমন মেটাল স্ক্রাবার, এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়। কারণ এটি উপরের স্তরের ক্ষতি করতে পারে।
  • মেঝের ক্ষেত্রে রুক্ষ পৃষ্ঠ হওয়া সবচেয়ে ভাল যাতে মেঝে খুব পিছলে না যায়।
  • টেক্সচার্ড মেঝে কম পিচ্ছিল হয়। কিন্তু এর সমস্যা হলো এই টাইলসের খাঁজগুলিতে ময়লা জমে থাকে। এই কারণে এগুলি পরিষ্কার করা কঠিন হতে পারে।
  • তবে যেকোনো জিনিসেরই সুবিধা ও অসুবিধা দু'টো দিক রয়েছে। সবকিছু মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে বিচার বিবেচনা ও আলোচনার মাধ্যমে বেছে নিন রান্নাঘরের জন্য উপযুক্ত টাইলস। রান্নাঘরের শোভাবৃদ্ধির সঙ্গে দেখবেন রান্নার হাত আরও খুলে গেছে। মন ভালো থাকলেই সব ভালো।

কলমে - গীতশ্রী ঘোষাল

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন