অযাচিত প্রেম - রেজাউল করিম রোমেল

 


বেশিদিন আগের কথা নয়, চার পাঁচ বছর হবে। তখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। সেসময় একটা মেয়ের সাথে আমার প্রায়ই কথা হত। মেয়েটার বয়স কতই বা হবে, ষোল কি সতেরো মেয়েটার গায়ের রঙ ছিল শ্যামলা। না ঠিক শ্যামলা নয়, তার গায়ের রঙ ছিল কালো। কোঁকড়া কোঁকড়া চুল। মেয়েটি যখন আমার সাথে কথা বলতো তখন বেশিরভাগ সময় আমার চোখ তার দাঁতের দিকে চলে যেত। চোখে থাকত সবসময় হাই পাওয়ারের চশমা। আমার সাথে দেখা হলে হেসে হেসে কথা বলতো, আমি পাত্তাই দিতাম না। আমার আবার গায়ে পড়া মেয়ে একদম ভাল লাগে না। আমি কখনো সেধে সেধে কথা বলতে যানি। ও- আমার সাথে সেধে সেধে কথা বলতে আসতো। দেখা হলেই "ভাইয়া কেমন আছেন?" কথাটি বলার পর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো। তারপর আমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলতাম। আমাদের ভেতরে অবশ্য পড়াশোনার বিষয় নিয়েই বেশি কথা হত। বাড়ির সবাই কেমন আছে, মা কেমন আছে, তুমি কেমন আছ। আমি আবার মাঝে মাঝে বলতাম অংক, ইংরেজি বুঝতে কোনো সমস্যা হলে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি দেখিয়ে দেব।

 

মেয়েটা ছিল অনেক লম্বা। মাঝে মাঝে আমি চুপিচুপি ওর পাশে গিয়ে মাপ দিতাম। কিন্তু দেখতাম যে না মেয়েটা আমার চেয়ে লম্বা নয়। তবে হাই-হিল পলে নিশ্চিত আমার চেয়ে লম্বা দেখাবে। মেয়েটাকে আমার তেমন একটা ভাল লাগতো না। এমনিতে দেখতে-টেতে সেরকম একটা ভাল না, তারপরে আবার গায়ে পড়া মেয়ে। এসব মেয়ে আমার আবার একদম ভাল লাগে না। মেয়েটা এস.এস.সি-তে গোল্ডেন প্লাস পেয়েছিল। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়তো। হঠাৎ একদিন শুনি সুমির বিয়ে।

 

হ্যাঁ, মেয়েটির নাম সুমি।ছেলের বাড়ি বরিশাল, সরকারি চাকরি করে। ছেলেপক্ষ অনেক বড়লোক। দেখতে এসে বিয়ে হয়ে গেছে, পরে অনুষ্ঠান করে বউ তুলে নিয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
তারপর একদিন দেখি সুমি খুব সেজেগুজে কোথায় যেন যাচ্ছে। সাথে কোট-টাই পরা সুদর্শন একটা ছেলে। যাওয়ার পথে আমার সাথে দেখা হল। সুমি আমাকে দেখেই জিঞ্জেস করল-“ভাল আছেন ভাইয়া?"
আমি ইতস্তত বোধ করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম-“হ্যাঁ হ্যাঁ তো.. তো.. তোমরা কোথায় যাচ্ছো?"
মার্কেটিং করতে যাচ্ছি ভাইয়া। কিছু কেনাকাটা করবো। ও আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়নি।”
সুদর্শন ছেলেটি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো- হ্যালো, আমি নাহিদ হাসান।”
আমি বললাম- "হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সুজয়।”
আমি কোনোভাবেই মাথা উঁচু করে তাদের সাথে কথা বলতে পারছিলাম না। চোখ উঠিয়ে তাদের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। আমি কোনো কথা বললাম না। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
সুদর্শন ছেলেটি সুমিকে বললো- সুমি, চলো আমরা যাই। দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
সুমি বললো- "খোদা হাফেজ ভাইয়া।”


সেদিনই ছিল সুমির সাথে আমার শেষ কথা। তারপর বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে, কিন্তু কোনো কথা হয়নি। এখনও দেখা হয়, কিন্তু কথা হয় না। সেই স্মৃতিময় দিনগুলো আমি এখনো ভুলতে পারিনি। সেই অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা। আমি আজও ভুলতে পারি না। আমার অনেক বন্ধু আছে, বান্ধবীও আছে। তাছাড়া অনেক মেয়ের সাথেই আমার কম বেশি ভাল সম্পর্ক। কিন্তু কোনো মেয়েই সুমির মতো করে আমার মনে দাগ কাটে না, নাড়া দেয় না। কারণ সে ছিল আমার অযাচিত প্রেম।



চিত্র সৌজন্যঃ আন্তরজাল থেকে সংগৃহীত 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন