জলকাদার প্যাচপ্যাচানিতে বর্ষাকাল কিছুটা বিরক্তিকর
লাগলেও তার আবার অন্যরকম একটা ভালোলাগাও রয়েছে। ছুটির দিনে জানলা দিয়ে বৃষ্টি দেখা, দুপুরে
খাওয়ার পাতে গরম গরম খিচুড়ি ও ইলিশমাছ ভাজা আর পেটপুজোর পর ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ার
মধ্যে জমিয়ে লম্বা একটা ঘুম – বর্ষাকাল যে খুব খারাপ তাও কিন্তু নয়।
এহেন বর্ষাকালের অন্যতম সমস্যা হলো চুল নিয়ে। এই সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি চুল পড়া এবং চুল সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। চুল পড়ার সঙ্গে খুসকি, ঘামাচি, স্ক্যাল্পে ইনফেকশানসহ বিভিন্ন সমস্যা লেগেই থাকে। কারণ হিসাবে বলা যায়, বর্ষাকালে আবহাওয়া গুমোট থাকায় চুলের গোড়া ঘেমে যায় এবং এই ঘাম থেকে খুশকি ও চুল ঝরা শুরু হয়। এছাড়াও এই সময়ে বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতার থাকার জন্য চুল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে আবার অন্য সমস্যা। সর্দিকাশি, জ্বর, ঠান্ডা লেগে যাওয়া তো আছেই। বৃষ্টির জলে চুলেরও কম ক্ষতি হয় না। বৃষ্টির জল আমরা খালি চোখে পরিষ্কার দেখলেও এর মধ্যে নানারকম অ্যাসিড উপাদান ও প্রচুর দূষিত পদার্থ থাকে যা আমাদের স্ক্যাল্পে চুলকানিসহ খুশকির সৃষ্টি করে। তাই বৃষ্টির জলে চুল ভিজলে সঙ্গে সঙ্গে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলাই সর্বোত্তম।
বর্ষাকালে চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখার জন্য যা যা মনে রাখতে হবে :
- বর্ষাকালে চুলে বেশি ময়লা হওয়ার প্রবণতা থাকে। এই ময়লা থেকেই খুশকি এবং অন্যান্য স্ক্যাল্প সমস্যা দেখা দেয়। স্ক্যাল্পের তেল চুলের গোড়া নরম করে দেয়, এর ফলে চুল পড়ে যাওয়ার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। সেই কারণে সপ্তাহে কমপক্ষে তিনবার শ্যাম্পু করা উচিত। মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করাই শ্রেয়। নিয়মিত না হলেও মাঝেমধ্যে ক্ল্যারিফায়িং শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো।
- শ্যাম্পু করার পর ভাল একটি কন্ডিশনার ব্যবহার করা আবশ্যিক। স্ক্যাল্প এড়িয়ে চুলের দৈর্ঘ্যের মাঝামাঝি অংশ থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত কন্ডিশনার লাগাতে হবে। তবে অতিরিক্ত কন্ডিশনার লাগানো ঠিক নয়। প্রয়োজন না হলে অতিরিক্ত হেয়ার প্রোডাক্টও এই সময়ে ব্যবহার না করাই ভালো। এতে স্ক্যাল্পে build up হয়।
- স্নানের পর চুল শুকানোর জন্য ফ্যানের বাতাসের বিকল্প নেই। চুল শুকানোর পর তবেই তা বাঁধা উচিত, নয়তো স্ক্যাল্প ভিজে থাকার জন্য ছত্রাক বাসা বাঁধতে পারে। এগুলোই মাথার ত্বকে চুলের গোড়ায় ইনফেকশন, খুশকি, চুল পড়াসহ নানা ধরনের ছত্রাকের আক্রমণ-সংক্রান্ত সমস্যা হওয়ার প্রধান কারণ।
- প্রাকৃতিকভাবে স্ক্যাল্প তৈলাক্ত থাকার কারণে চুলে অতিরিক্ত তেল বা আলাদা কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। অতিরিক্ত তেল ও ময়েশ্চারাইজার খুশকির সৃষ্টি করে। প্রয়োজনের অয়েল ম্যাসাজ করে সারারাত রেখে পরেরদিন সকালে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলা যেতে পারে।
- শুধুমাত্র বর্ষাকাল নয়, সারাবছরই চুল আঁচড়ানোর জন্য প্রশস্ত দাঁতযুক্ত চিরুনির ব্যবহার সর্বোত্তম। এটি চুল পড়া কমিয়ে সহজেই চুলের জট ছাড়াতে সাহায্য করে। তবে চুল ভেজা অবস্থায় আঁচড়ানো একেবারেই উচিত নয়। ভেজা চুল সবচেয়ে দুর্বল এবং ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকে। চিরুনি বাছাই করার সময় খেয়াল রাখতে হবে সেটি যেন নন সিনথেটিক হয়। কাঠের চিরুনি সবথেকে ভালো।
- বর্ষাকালে চুল বাঁধার সময় অধিক যত্নশীল হতে হবে। ভেজা চুল বাঁধা একেবারেই অনুচিত, নয়তো স্ক্যাল্পে ছত্রাকের সমস্যা দেখা দেবে। গোড়া শক্ত করে চুল না বেঁধে আলগা একটা বিনুনিই যথেষ্ট। বর্ষাকালে আর্দ্রতার কারণে এবং স্ক্যাল্পে তেল নিঃসরণের ফলে চুলের গোড়া এমনিতেই সেভাবে শক্তপোক্ত থাকে না। এর উপর আবার শক্ত করে বাঁধলে চুল গোড়া থেকে উঠে আসে।
- বাইরে থেকে যতোই যত্ন নেওয়া হোক না কেন, সঠিক পরিমাণে খাওয়াদাওয়া না করলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হবে না। সেই কারণে বর্ষায় চুলের যত্নের একটি অংশ হিসেবে মাছ, মাংস, ডিম, সবুজ শাকসবজি, ফল, বাদাম ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্যান্য ঋতুতে দিনে যে সংখ্যক চুল পড়ে, বর্ষাকালে চুল পড়ে তার দ্বিগুণ। অ্যালার্জি-জাতীয় সমস্যা যেমন খুশকি এসময়ে বেড়ে যায় এবং চুলের উজ্জ্বলতা হ্রাস পায়। বর্ষাকালে মাথার ত্বক তৈলাক্ত থাকায় চুল ঠিকমতো শুকাতে পারে না, তাই চুলের গোড়া নরম হয়ে থাকে। চুলের সঠিক যত্নের অভাবে আমরা নিজেরাই এই সমস্যাগুলো আরও বেশি করে বাড়িয়ে ফেলি। তাই চুলের প্রতি এসময়ে আমাদের বেশি যত্নশীল হতে হবে। তবে ব্যাকটেরিয়া-সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
কলমে - তমালিকা ঘোষাল ব্যানার্জী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন