নবাব সিরাজ উদ-দৌলা আপন খালা ঘসেটি বেগমের ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি
গুপ্তচর মারফত জেনেও গা করেন নি; কারণ চৌকস সেনাপতিগণ থাকতে বৃটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া
কোম্পানির প্রহরীদের ভয় পাবার কিছু নেই! তাছাড়া প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খান
পবিত্র কোরআন হাতে নিয়ে শপথ নেওয়ায় তাঁকে নিয়ে আশঙ্কার আর কিছু ছিলো না। তাঁর
বিশ্বাস ছিলো ইংরেজগণ পরাজিত হবেই এবং ওদের ঝেঁটিয়ে এদেশ থেকে বিদায় করে দেবেন।
তবু কেন জানি অস্থিরতা যাচ্ছিলো না। তিনি পায়চারি করতে থাকেন তাঁবুতে; তখন এক দূত
এসে প্রথম দুঃসংবাদটা দিলো। কলিকাতা থেকে মুর্শিদাবাদের পথে হুগলী, কাটোয়ার
দুর্গ, অগ্রদ্বীপ ও পলাশীতে নবাবের সৈন্য থাকা সত্ত্বেও তারা কেউ ইংরেজদের পথ রোধ
করেনি। মীরজাফর, ইয়ার লুৎফ খান ও রায় দুর্লভ যুদ্ধক্ষেত্রে নিস্পৃহভাবে
দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণ পরে আরেকজন দূত এসে জানিয়ে যায় যে, যুদ্ধ করতে করতে
সেনাপতি মীরমদন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন, হয়তো বা ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন! সেনাপতি
মোহনলাল, নবে সিং হাজারী ও বাহাদুর খান যুদ্ধ করে যাচ্ছেন, তবে কতক্ষণ টিকতে
পারবেন বলা মুস্কিল।
লুৎফুন্নেসা উদ্বিগ্নচিত্তে ক্যাম্পখাটে বসে নবাবের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি
ভগ্ন কণ্ঠে বলেন, সিরাজ, আমাদের রাজধানীতে চলে যাওয়া উচিত।
নবাব সিরাজ উদ-দৌলা যেন আঁধারে আলোর ছটা দেখতে পেলেন এমনভাব নিয়ে স্ত্রীর
দিকে তাকিয়ে বলেন, হ্যাঁ লুৎফা! আমাকে এক্ষুণি মুর্শীাদাবাদে ফিরে যেতে হবে।
রাজধানীতে থেকে সৈন্য সংগ্রহ করে ফের ইংরেজ সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে!
গোলাম হোসেন!
গোলাম হোসেন তাঁবুর বাইরে অপেক্ষা করছিলো। দ্রুত তাঁবুতে ঢুকে কুর্ণিশ করে
বলেন,হুকুম করুন আলীজাঁ!
মুর্শিদাবাদ যাবার ব্যবস্থা করো! গোপনে যেতে হবে!
গোলাম হোসেন বলেন, আমাদের ভগবানগোলা যেতে হবে আলীজাঁ। সেখান থেকে নৌকায় করে
মুর্শিদাবাদ যেতে হবে।
নবাব সিরাজ উদ-দৌলা লুৎফুন্নেসা ও গোলাম হোসেনকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন
রাস্তায়। ঘোড়ার গাড়ি তথা টাঙ্গা ছুটে চলছে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বের হয়ে
ভগবানগোলায় পৌঁছে যান; লক্ষ্য রাজধানী মুর্শিদাবাদ। ঘাটে নৌকা ভিড়ে আছে। লুৎফা ও
গোলাম হোসেন নৌকায় উঠে ঢুকে যান ছই-এর ভেতরে। নবাব সিরাজ নৌকায় উঠতে যাবেন তখন
তাঁর বাম পায়ের জুতো কাদায় আটকে যায়। তিনি ঘুরে জুতো পরতে গিয়ে উপরে ফরাসি সেনাপতি
সিনফ্রেঁ-কে দেখে বিস্মিত হন। অনেক অসম্পূর্ণ প্রশ্ন একের একের আসতে থাকে নবাবের
মনে কোনো উত্তর ছাড়াই। তিনি ছুটে যাওয়া জুতো না পরেই তাকিয়ে থাকেন সিনফ্রেঁ'র
দিকে। সিনফ্রেঁ'র মুখে বিষন্নতার পরিবর্তে হাস্যোজ্জল দেখে বিস্ময়ের মাত্রা বাড়ে
বৈ কমে না নবাবের।
সিনফ্রেঁ কুর্ণিশ করে উপর থেকে আস্তেধীরে নিচে নেমে নবাবের মুখোমুখি
দাঁড়িয়ে ফের কুর্ণিশ করেন।
নবাব সিরাজ উদ-দৌলা বলেন, তুমিও বিশ্বাসঘাতক! আমাকে ধরে নিয়ে যেতে এসেছো?
ফের কুর্ণিশ করে সিনফ্রেঁ বলেন, আপনাকে আমি নিয়া যাইতেই আসিয়াছি আলীজা!।
আমাকে ছেড়ে দাও ফরাসি সেনাপতি। আমি মুর্শিদাবাদে গিয়ে লুৎফাসহ স্রেফ গায়েব
হয়ে যাবো!
আপনাকে সসম্মানে পলাশীর আম্রকাননে ফিরাইয়া নিয়া যাইতে আসিয়াছি আমি আলীজাঁ!
বুঝলাম না সিনফ্রেঁ।
আপনি চলিয়া আসার পরে যুদ্ধের মোড় যায় ঘুরিয়া আলীজাঁ। আমরা জয় পাইতে শুরু
করি। অবশেষে আমরা পলাশীর যুদ্ধ জয়লাভ করিয়াছি আলীজাঁ। অবিলম্বে রাজবন্দিদের বিচার
শুরু করিতে হইবে। বিলম্ব হইলে বৈশ্বিক তদবির শুরু হইতে পারে আলীজাঁ!
নবাবকে নৌকায় উঠতে না দেখে লুৎফা বেরিয়ে আসেন ছই-এর বাইরে। ফরাসি সেনাপতি
সিনফ্রেঁকে দেখে অজানা আশঙ্কায় আঁতকে উঠেন। তিনি কিছু বলতে গিয়ে স্রেফ বোবা হয়ে
যান।
তখন খুশিতে গদগদ নবাব সিরাজ উদ-দৌলা পেছনে তাকিয়ে স্ত্রীকে দেখতে পেয়ে
বলেন, বাংলার আকাশে দূর্যোগের আঁধার আর নেই লুৎফা। সেনাপতি সিনফ্রেঁ যুদ্ধজয়ের
খবর নিয়ে এসেছেন। আমাদের এখনই পলাশী যেতে হবে।
মুর্শিদাবাদ যাওয়া হলো না বাংলা বিহার উড়িস্যার মহান অধিপতি নবাব সিরাজ
উদ-দৌলার। ফিরে চললেন পলাশীর দিকে, পলাশীর আম্রকাননের দিকে। ছুটছে টাঙ্গা। রাস্তার
দুই পাশে সমবেশ হাজারো জনতার হাততালির সাথে জয়ধ্বনি চলছে। সামনে ছুটছে ফরাসী
সেনাপতি সিনফ্রেঁ'র টগবগে ঘোড়া। খুব ভালো লাগছে নবাবের। নবাব অত্যন্ত খুশি হলেও
ভেতরে ভাবনা একটাই, কিভাবে এই অসম্ভবটা সম্ভব হলো?
দশ মিনিটে নবাব মনসুর-উল-মুলক সিরাজউদ্দৌলা শাহ কুলী খান মির্জা মোহাম্মদ
হয়বত জঙ্গ বাহাদুর পৌঁছে যান পলাশীর আম্রকাননে। সেখানে জয়োল্লাস চলছে তখন।
মীরমদন, মোহনলাল, নবে সিং হাজারী, বাহাদুর খান সহ অন্যান্য যোদ্ধাগণ
নবাবকে কুর্ণিশ করে তরবারি উঁচিয়ে সারি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। উল্টোদিকে মীরজাফর,
মীরণ, ইয়ার লুৎফ খান,জগৎ শেঠ ও রায় দুর্লভ দুই হাত পিছমোড়া বাঁধা অবস্থায় মাথা
নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। আর বৃটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান এডওয়ার্ড ক্লাইভ
রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন অদূরে মাঠে। আম্রকাননে পাখির কূজন বার্তা ছড়াচ্ছে
বিজয়ের।
নবাব সিরাজ টাঙ্গা থেকে নামতে উদ্যত হলে সেনাপতি সিনফ্রেঁ বলেন, আপনার
নামিবার প্রয়োজন নাই আলীজাঁ। এই টাঙ্গাই আপনার সিংহাসন এবং যুদ্ধের ময়দানের এই
অংশটুকু রাজদরবার। আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করিতে পারেন আলীজাঁ!
নবাব সিরাজ উদ-দৌলা টাঙ্গায় একটু ঝাকিয়ে বসে স্ত্রী লুৎফুন্নেসাকে একবার
দেখে তাকান যুদ্ধবন্দীদের দিকে। তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, বাংলা বিহার উড়িষ্যার
বীর সেনাপতিগণ, আমি আপনাদের এই বীরত্বগাঁথা কোনোদিন ভুলবো না। প্রধান সেনাপতি
মীরজাফর আলী খানের বিশ্বাসঘাতকতা সত্বেও আপনাদের জীবনত্যাগ লড়াইয়ে আজকের এই
ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আমার পরম আত্মীয় খালা ঘসেটি বেগমকে দেখছি
না। উনি কি পালিয়ে গেছেন সেনাপতি মোহনলাল?
মোহনলাল কুর্ণিশ করে বলেন, উনি খুব চিৎকার করছিলেন, তাই মুখে কাপড় গুঁজে
হাত-পা বেঁধে তাঁবুতে ফেলে রাখা হয়েছে আলীজাঁ। ওনাকে কি এখানে নিয়ে আসবো আলীজাঁ?
না! বিচার শুরুর আগে জানতে চাই হেরে যাওয়া যুদ্ধ কিভাবে জয় অর্জিত হলো।
সেনাপতি মীরমদন তুমি প্রথমে বলো।
সেনাপতি মীরমদন কুর্ণিশ করে যা বলেন তা এমন:
বেলা আটটার সময় হঠাৎ মীরমদন ইংরেজ বাহিনীকে আক্রমণ করেন। তাঁর প্রবল
আক্রমণে টিকতে না পেরে ক্লাইভ সেনাবাহিনী নিয়ে আমবাগানে আশ্রয় নেন। ক্লাইভ
কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন। মীরমদন ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকেন। কিন্তু মীরজাফর,
ইয়ার লুৎফ খান ও রায় দুর্লভ যেখানে সৈন্যসহ নিস্পৃহভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
দুপুরের দিকে হঠাৎ বৃষ্টি নামে। সাহসী মীরমদন ও মোহনলাল বৃষ্টির মধ্যেই ইংরেজদের
সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গোলার আঘাতে মীর মদন
মারাত্মকভাবে আহত হন। ওদিকে নবে সিং হাজারী ও বাহাদুর খান যুদ্ধ চালিয়ে যেতে
থাকেন। মীরমদন একটু সুস্থতা অনুভব করলে চুপিচুপি গিয়ে মীরজাফর ও অন্যান্যদের বন্দি
করে সৈনিকদের কমান্ড নিজ হাতে নিয়ে নেন। সাথে সাথে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায় এবং বৃটিশ
ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সৈনিকরা পিছু হটতে থাকে।
মীরমদন থেমে ফরাসি সেনাপতি সিনেফ্রেঁর দিকে তাকালে সিনেফ্রেঁ কুর্ণিশ করে
বলেন, বাকিটা আমি বলছি আলীজাঁ-
এডওয়ার্ড ক্লাইভ ভেবেছিলেন পলাশীর যুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত; কারণ নবাবের প্রধান
সেনাপতিসহ কতক বিশ্বাসঘাতক আছে তার সাথে। ব্যাপারটা সিনফ্রেঁ টের পেয়ে নতুন
পরিকল্পনা করেন। বৃটেন-ফ্রান্স পরস্পর চিরশত্রু তখনো। বৃটেনকে কখনোই বিজয়ী হতে
দেওয়া যাবে না! নিজ পরিকল্পনা মোতাবেক একটু পিছিয়ে বৃটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির
সৈন্যদের পেছন থেকে আক্রমণ করেন সিনেফ্রেঁ। এটা প্রত্যাশা করেনি এডওয়ার্ড ক্লাইভ।
সেকারণে সহজেই ক্লাইভকে পরাজিত করে ফেলেন সিনেফ্রেঁ।
নবাব সিরাজ উদ-দৌলা দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকেন। হাততালি থামিয়ে আকাশের
দিকে তাকিয়ে বলেন, নানা-শা, আশা করি বেহেস্ত থেকে সবকিছু দেখতে পাচ্ছেন আপনি। আজ
এই পলাশীর আম্রকাননে বাংলার আকাশ থেকে দূর্যোগ চলে গেলো। প্রধান সেনাপতি মীরজাফর
আলী খানের চরম বিশ্বাসঘাতকতা সত্ত্বেও আমার সৈন্যবাহিনী বিজয়ী হয়েছে। নানা-শা,
আপনি এটাও দেখেছেন যে আপনার মেয়ে মানে আমার খালা ঘসেটি বেগম এই ষড়যন্ত্রে সামিল
ছিলেন। এই বিশ্বাসঘাতকদের এমন সাজা দেবো যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর বিশ্বাসঘাতকতা করবে
না। আমি আপনার দোয়া চাই নানা-শা।
নবাব সিরাজ সিংহাসনে বসে বলেন, আমি এখন সাজা শোনাবো, কঠিন সাজা! বৃটিশ
ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির নেতা এডওয়ার্ড ক্লাইভকে কামানের তোপের সাথে বেঁধে উড়িয়ে
দেওয়া হোক! কোম্পানির সৈন্যদের পায়ে শিকল বেঁধে কয়লার খনিতে কাজে লাগিয়ে দেয়া
হোক! মীরজাফর আলী খান ব্যতিত ইয়ার লুৎফ খান, রায় দুর্লভ, জগৎ শেঠসহ সকল
বিশ্বাসঘাতককে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হোক!
এবার ওর শাস্তি ঘোষণা করা হবে বুঝতে পেরে করজোড়ে নবাবের সামনে এসে মীরজাফর
বলেন, আমাকে এবার মাফ করে দিন আলীজাঁ! আমি আর আপনার কথার অবাধ্য হবো না!
নবাব সিরাজ উদ-দৌলা ঘৃণায় অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, এঁকে শূলে চড়ানো হোক
সেনাপতি সিনেফ্রেঁ! প্রথমে ক্লাইভের সাজা বাস্তবায়ন করা হোক!
জ্বী আলীজাঁ!
সেনাপতি সিনফ্রেঁ দৃঢ় পদে এগিয়ে যান ক্লাইভের দিকে। মোহনলালের ইশারা পেয়ে
দুইজন সৈনিক ছুটে যান একটি কামান আনতে। একটা কামান টেনে এনে টাঙ্গার সামনে স্থাপন
করে একটি গোলা ঢুকানো হয় ভেতরে। ক্লাইভকে কামানের পাশে আনার পরে হাত-পা বেঁধে
কামানের নলের মাথায় বেঁধে দেয়া হয়।
কামানের নলের মাথায় ঝুলে থেকে নিস্ফল হাত-পা ছোড়ার চেষ্টা করতে থাকেন
এডওয়ার্ড ক্লাইভ। সলতেয় ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন। সলতে পুড়ে কামানের গায়ে লাগার সাথে
সাথে সবাই কানে আঙ্গুল দিলেও নবাব থাকেন নির্বিকার। কামানের গোলা ক্লাইভকে নিয়ে
যেতে থাকে শূন্যে।
তখন গোলাম হোসেন কয়েকজনের ঘাড়ে করে একটা শূল নিয়ে আসেন আম্রকাননে। কয়েকজন
সৈন্য মিলে শূলটাকে ওখানে স্থাপন করা হয়। এবার মীরজাফরকে শূলে চড়ানের পালা। ওর
হাত-পা বেঁধে একটি হাতে তৈরি কপিকলে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। মীরজাফর উঠে যাচ্ছেন উপরে।
ওঁকে উপরে তুলে ছেড়ে দেওয়া হয় শূলের তীক্ষ্ণ প্রান্তে। সাথে সাথে কুমড়োর মতো শূলে
বিদ্ধ হয়ে মীরজাফরের শরীরে নেমে আসে গোড়ায়।
ওদিকে উমিচাঁদ, জগৎ শেঠদের জ্যান্ত কবর দেবার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। টানা
কবর খোঁড়া হয়ে গেলে সবাইকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয় কবরে। এরপর মাটিচাপা। শেষ
বিশ্বাসঘাতকদের পর্ব।
তৃপ্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে নবাব সিরাজ উদ-দৌলা এবার বলেন, এবার খালা ঘসেটি
বেগমের পালা! ওকে হীরাঝিলে ডুবিয়ে মারা হোক!
তখন মুখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় ঘসেটি বেগম দৌড়ে আসতে থাকেন নবাবের দিকে এক তাঁবুর
ভেতর থেকে। ওঁকে আটকাতে চাইলে নবাব হাত তুলে ওদের থামিয়ে দেন। ঘসেটি বেগম নবাবের
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কিছু বলতে চেষ্টা করেন; কিন্তু মুখ বাঁধা থাকায় তাঁর কথা বোঝা
যায় না।
নবাব সিরাজ ঘৃণাভরা স্বরে বলেন, আপনি কী বলতে চান তা আমি জানি। আমি আপনার বিশ্বাসঘাতকতার
জন্য যে সাজা শুনিয়েছি, তা-ই চূড়ান্ত! সেনাপতি মোহনলাল, আমার খালার সাজা
বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেওয়া হোক!
একবার স্বস্তির দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নবাব সিরাজ বলেন, এবার রাজধানী
মুর্শিদাবাদে যাওয়ার আয়োজন করো! বিজয়ের শোভাযাত্রা হবে আমাদের মুর্শাদাবাদে প্রত্যাবর্তন।
স্ত্রী লুৎফুন্নেসাকে নিয়ে হাতির পিঠে সওয়ার হয়েছেন বাংলা বিহার উড়িষ্যার
মহান অধিপতি মনসুর-উল-মুলক সিরাজউদ্দৌলা শাহ কুলী খান মির্জা মোহাম্মদ হয়বত জঙ্গ
বাহাদুর। সেনাপতিগণ ঘোড়ায় সওয়ার। পেছনে পদাতিক বাহিনী। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা
জুড়ে চলছে বিজয়োল্লাস। নবাবের বহরের পেছনে বাজছে বাদ্য। নবাব সিরাজ মুর্শিদাবাদ
এসে পৌঁছান।
পরদিন রাজদরবারে পলাশী জয়ের উপর আলোচনা শুরু হয়। সবাই নবাবের প্রশংসায়
পঞ্চমুখ।
এবার নবাবের পালা বলার। নবাব সিরাজ উদ-দৌলা অতিদীর্ঘ বক্তৃতা দেবার পরে
ফরাসি সেনাপতি সিনেফ্রেঁর দিকে তাকিয়ে বলেন, আজ এই মুহূর্তে ফরাসি সেনাপতি
সিনফ্রেঁকে প্রধান সেনাপতির নিয়োগ দেওয়া হলো।
দরবারে উপস্থিত সবাই হাততালি দিতে থাকেন এবং সিনফ্রেঁ কোমরে ঝুলানো তলোয়ার
খাপ থেকে অর্ধেক বের করে ফের ঢুকিয়ে কুর্ণিশ করেন।
নবাব সিরাজ হাত তুলে হাততালি থামিয়ে প্রত্যেকটি শব্দে জোর দিয়ে বলেন, আমি
দিল্লির সম্রাট হতে চাই। প্রধান সেনাপতি সিনফ্রেঁ, আপনি ব্যবস্থা করুন!
চিত্র সৌজন্যঃ আন্তরজাল থেকে সংগৃহীত
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন