গর্ভাবস্থায় থাইরয়েডের প্রভাব

 



থাইরয়েড গ্রন্থি আমাদের গলার মধ্যে অবস্থিত একটি প্রজাপতি আকারের ক্ষুদ্র গ্রন্থি। এর থেকে নিঃসৃত হয় থাইরয়েড হরমোন থাইরয়েড হরমোন আমাদের শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের দ্বারা শক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং থাইরয়েড হরমোন প্রতিটি অঙ্গের ক্রিয়াকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে, এমনকি হৃদস্পন্দনকেও  এটি নিয়ন্ত্রণ করে

যদি এই থাইরয়েড গ্রন্থি অত্যধিক হারে থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করে, তখন তাকে হাইপারথাইরয়ডিসম বলে।এই অবস্থায় শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপের গতি অত্যধিক হারে বেড়ে যায় আবার যদি থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ কমে হয়, তখন তাকে হাইপোথাইরডিসম বলে। এই অবস্থায় শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপের গতি অত্যধিক হারে কমে যায়

গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোনের গুরুত্ব

বাচ্চার মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র তৈরি করতে থাইরয়েড হরমোনের গুরুত্ব অপরিসীমগর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস শিশু মায়ের শরীর থেকে আগত থাইরয়েড হরমোনের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল থাকে। এই হরমোন শিশুর দেহে প্রবেশ করে অমরা বা প্লাসেন্টার মাধ্যমে ১২তম সপ্তাহে শিশুর থাইরয়েড গ্রন্থি নিজে থেকে কাজ করতে শুরু করে তবে আঠারো থেকে কুড়ি সপ্তাহের আগে এটি সম্পূর্ণরূপে থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করতে সমর্থ হয় না

গর্ভাবস্থায় হিউম্যান ক্রনিক গোনাডোট্রপিন এবং ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে যায় তাছাড়া গর্ভাবস্থায় সাধারণত থাইরয়েড গ্রন্থি একটু বেড়ে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় থাইরয়েডের সমস্যা নিরূপণ করা খুবই কষ্টকর



গর্ভাবস্থায় হাইপারথাইরয়ডিসেমের প্রভাব

হাইপারথাইরয়ডিসমকে যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়। তবে গর্ভবতী মায়ের দেহে নানারকম প্রতিক্রিয়া দেখা যায়-

প্রিক্ল্যামপসিয়া- এই অবস্থায় রক্তচাপ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থার কুড়ি সপ্তাহ পর বা শিশুর জন্ম দেওয়ার পর এই অবস্থাটি দেখা যেতে পারে এর প্রভাবে বৃক্ক এবং যকৃতের নানাবিধ সমস্যার দেখা দিতে পারে। 

অমরার বিচ্ছিন্নকরণ-  শিশুর জন্মের পূর্বে অমরা বা প্লাসেন্টা জরায়ু গাত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এরফলে শিশুর দেহে সঠিকভাবে ‌পুষ্টি পৌঁছাতে পারে না। 

হৃদপিণ্ডের সমস্যা -  এই রোগের প্রভাবে হৃদপিন্ড ভালোভাবে পাম্প করে রক্ত শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারে না

  • দ্রুত এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
  • হাতের কম্পন
  • অত্যধিক ওজন হ্রাস

থাইরয়েডের প্রভাবে শিশুর উপরেও বিভিন্নরকম প্রভাব দেখা যায়- 

  • গর্ভপাত
  • অকাল প্রসব 
  • জন্মের সময় স্বল্প ওজন 
  • হৃদপিণ্ডের বিবিধ সমস্যা 

হাইপোথাইরয়েডিজমের প্রভাব শিশুর উপর   

ইনফ্যান্টাইল মিক্সিডিমা - শিশুর দেহে স্বল্প পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন থাকার ফলে শিশুর মধ্যে বামনতা, বুদ্ধিগত প্রতিবন্ধকতা এবং অনান্য সমস্যা দেখা যায়। 

জন্মের সময় নিম্ন ওজন

মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা- হাইপোথাইরয়ডিসমের প্রভাবে সুষুম্নাকাণ্ড, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে গঠিত হয় না। এরফলে শিশুর চলাফেরা, অনুভব এবং চিন্তা করার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। প্রথম তিন মাসে যদি হাইপোথাইরয়ডিসমকে নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তবে শিশুর বুদ্ধি স্বল্প হয়।

কাদের গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক 

যদি গর্ভাবতী হওয়ার পূর্বে থাইরয়েড রোগাক্রান্ত হয় অথবা পূর্ব থেকেই গয়টার (এই রোগে থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক স্ফীত হয়ে যায়) রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে তাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় থাইরয়েডের অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। 

পরিবারে কোন সদস্যের যদি অটোইমিউন রোগ যেমন গ্রেভস রোগ বা হাসিমোটো রোগ থাকে। তবে গর্ভবতী মায়ের দেহে এই রোগের প্রভাব দেখা যেতে পারে এবং এর প্রভাবে থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য ঘটতে পারে

চিকিৎসা ব্যবস্থা

সাধারণত ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিকতাকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয় । কিন্তু যদি ওষুধের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রিত না হয় তখন অস্ত্রপ্রচারের সাহায্য নেওয়া হয়। তবে শিশুর থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষতি হতে পারে। তাই রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিনের প্রয়োগ গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুপারিশ করা হয় না।

কলমে - সুকৃতি দাস 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন