মানবিকতার দাম - দেবাংশু সরকার

  


অনেক কষ্টে চাকরিটা যোগাড় করেছে দীপ। এবার কাগজপত্র জমা দেওয়ার পালা। তারপর সে একটু একটু করে মা বাবার দুঃখ দূর করতে পারবে। পারবে তাদের একটু সুখের মুখ দেখাতে। কিন্তু সমস্যা হল ক্যারেকটার সার্টিফিকেট যোগাড় করতে হবে।

 

অনেক ভেবে চিন্তে দীপ গেল স্থানীয় কাউন্সিলারের অফিসে। সব কথা বললো কাউন্সিলারকে। কাউন্সিলার বললেন - সন্ধ্যার পর এসো। পাঁচশো লাগবে।

- পাঁচশো! একটু কমানো যাবে না?

 

-না। এটাই এখন রেট চলছে।

 

আকাশ ভেঙে পড়লো দীপের মাথায়। এবার সে কি করবে? যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তাদের এক কথায় পাঁচশো টাকা বের করা বেশ কষ্টের ব্যাপার। অনেক কষ্টে যোগাড় করলো টাকাটা।

 

রাতে সে গেল সার্টিফিকেট আনতে। সার্টিফিকেট দিয়ে কাউন্সিলার বললেন - চিন্তা কোরো না। তুমি তো ভালো চাকরি পাবে। এ টাকা উসুল হয়ে যাবে। তাছাড়া এটাকা তো আমি ঘরে নিয়ে যাই না। এদিয়ে আমি সমাজসেবা করি।

 

চাকরিটা পেল দীপ। তিনদিন পর জয়েনিং। হঠাৎ রাতে তার এক বন্ধুর ফোন - তাড়াতাড়ি হসপিটালে আয়। একজনের এবি নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন। 

 

দীপেরও এবি নেগেটিভ রক্ত। খুবই দুর্লভ। সে রক্ত দিল।

 

হসপিটালে আবার দেখা হলো কাউন্সিলারের সঙ্গে। দশহাজার টাকার বান্ডিল দীপকে দিয়ে বললেন - তুমি আমার ছেলেকে বাঁচিয়েছো। তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এটা রাখো।

 

- স্যার, আমি যেটুকু করেছি মানবিকতার জন্য। অমি জানি সব পেশাতেই রেট থাকে। কিন্তু মানবিকতার কোন রেট হয় না। দাম হয় না। তাছাড়া আপনার কাছে কেন, সারা পৃথিবীতে এতো টাকা নেই যা দিয়ে মানবিকতাকে কেনা যায়। অতএব ক্ষমা করবেন। আবার যদি কখনো রক্তের প্রয়োজন হয় নিঃসঙ্কোচে ডাকবেন।

 

সারা জীবনে লাখ লাখ টাকা কামানো কাউন্সিলার ভাবতে থাকেন তার সঞ্চিত টাকার প্রকৃত মূল্য ঠিক কতটা! 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন