বৃষ্টির দিন বিকালবেলা। অঝোর ধারায় অবিরাম বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে।হালকা
ঠাণ্ডা আবহাওয়া। বিকালের জলখাবারে চায়ের সাথে শুধু বিস্কুটে ঠিক মন ভরে না। সাথে যদি
একটু ঝাল ঝাল মুখরোচক কিছু ভাজাভুজি থাকে তবেই সন্ধ্যার শ্রাবণের ধারা মনের মত গান
ধরতে পারে।এমনিতে এই রকম পরিবেশে অধিকাংশ বাঙালি বাড়ীতে ঝালমুড়ি সহযোগে বেগুনী, পেঁয়াজি, শিঙাড়া, আলুর চপ
প্রভৃতি খাওয়ার চল আছে।তবে যুগ বদলের সাথে সাথে ঘটেছে রসনা বদলও। তাই আজকের নতুন যুগ
একটু অন্য কিছু খেতে চায়।রেস্তোরাঁর খাবারের ঝোঁক প্রত্যকের মধ্যেই দিনে দিনে বাড়ছে।
সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্যালোরি সম্পর্কিত হাজার রোগব্যাধিও। অন্য স্বাদের খাবার খেতে
মন চাইলেই তো আর সব সময় রেস্তোরাঁয় হাত পাতা
যায়না।তাই বাড়িতে বানানো স্বাস্থ্যকর খাবারেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। আবার অনেক সময় কি
বানানো যায় যাতে একটু মুখ বদল ঘটে, বাড়ির সবার মুখে হাসি ফোটে এই ভেবে মাথা চিন্তান্বিত
হয়ে যায়। কিন্তু যদি রেস্তোরাঁকেই ঘরে আনা যায় তবে কেমন লাগে? বাড়ির বড় থেকে ছোট সকলেই
তাহলে আহ্লাদে আটখানা হয়ে যাবেন।স্বাস্থ্যও রক্ষা হবে। অথচ ভাঁড়ারে থাকা সামান্য জিনিস
দিয়েই আমরা তৈরি করে ফেলতে পারি লাজবাব চটকদার মুখরোচক সব খাবার। আজ সর্বজয়ার পঞ্চব্যঞ্জনে
এই রকম কয়েকটি মুখোরচক ভাজাভুজির খোঁজ দেওয়া হল খুব সহজে অল্প সময়ে অল্প উপকরণে বানিয়ে
ফেলা যায় আমিষ – নিরামিষ সব রকমের খাবার।
গ্রীন পিস স্কচ এগঃ
উপকরণ:
- ডিম - ৮টি
- কড়াইশুঁটি – ২৫০ গ্রাম
- মৌরি গুঁড়ো - ১ চা চামচ
- চিলি ফ্লেক্স - ১ চা চামচ
- ভাজা জিরে গুঁড়ো - ১ চা চামচ
- আলু সিদ্ধ - ১ কাপ
- মেয়োনিজ - ২ টেবিল চামচ
- ময়দা - ১ কাপ
- বিস্কুটের গুঁড়ো - ১ কাপ
- সাদা তেল – পরিমাণ মত
- নুন - স্বাদ মতো
প্রণালী:
- ৬টি ডিম
সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে।
- মিক্সারে
সিদ্ধ আলু, কড়াইশুঁটি, জিরে, মৌরি, চিলি ফ্লেক্স, মেয়োনিজ ও নুন একসঙ্গে মিহি করে বেটে নিতে হবে।
- মিশ্রণ
সমান ছ’ভাগে ভাগ করে নিয়ে গোলাকার
বলের আকৃতি গড়ে নিতে হবে।
- এ বার
আলু-কড়াইশুঁটির মাঝে ডিম ভরে আবার
গোল করে বল বানিয়ে নিতে হবে।
- একটি
বাটিতে দু’টি ডিম ও নুন ফেটিয়ে নিতে
হবে।
- দুটি পৃথক পাত্রের একটিতে গোলমরিচ মেশানো ময়দা জলে গুলে রাখতে হবে। অন্যটিতে ডিম ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে।
- ডিম ভরা আলু কড়াইশুঁটির বলগুলো
প্রথমে গোলমরিচ মেশানো ময়দা ও পরে ডিমের
গোলা এবং তারপর বিস্কুটের গুঁড়ো দিয়ে
মাখিয়ে নিতে হবে।
- এরপর এগুলো ফ্রিজে অন্তত আধ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে।
- কড়াইয়ে
তেল গরম হলে বলগুলো এক এক করে তার মধ্যে দিয়ে লালচে হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিতে হবে।
- মাঝখান
থেকে কেটে আধা করে
কেটে পরিবেশন করতে হবে।
আলু ও বাঁধাকপির কাটলেটঃ
উপকরণঃ
- আলু – ২০০ গ্রাম
- বাঁধাকপি – ১০০ গ্রাম
- পেঁয়াজ কুচি – ৫০ গ্রাম
- ধনেপাতা কুচি – ২ টেবল চামচ
- লঙ্কা কুচি – ২ চামচ
- ডিম – ২টি
- ময়দা – ৫০ গ্রাম
- নুন – পরিমাণ মত
- গোলমরিচ গুঁড়ো - পরিমাণ মত
- সাদা তেল - পরিমাণ মত
প্রণালীঃ
- আলু ও বাঁধাকপি মিহি করে গ্রেট করে নিয়ে পাতলা সুতির কাপড়ের মধ্যে রেখে চেপে জল ঝরিয়ে নিতে হবে।
- তেল ছাড়া বাকি সব উপকরণ এক সাথে মিশিয়ে ভালো করে চটকে নিতে হবে।
- ফ্রাই প্যানে অল্প তেল দিয়ে মিশ্রণ থেকে অল্প অল্প অংশ নিয়ে কাটলেটের আকারে গড়ে নিয়ে মধ্যম আঁচে ভাজতে হবে।
- এক দিক ভাজা হয়ে গেলে অন্য দিক উল্টে লাল হওয়া অবধি ভাজতে হবে।
চিজ হ্যাশ ব্রাউনঃ
উপকরণঃ
- আলু – ২৫০ গ্রাম
- ধনেপাতা কুচি – ২ চামচ
- সাদা তেল / মাখন – পরিমাণ মত
- ময়দা – ৫০ গ্রাম
- নুন – পরিমাণ মত
- কর্ণ ফ্লাওয়ার – ৫০ গ্রাম
- বাটার পেপার
- চিজ – ২০০ গ্রাম
প্রণালীঃ
- আলুকে মিহি করে গ্রেট করে প্রথমে দুই থেকে তিনবার জলে ভালো করে ধুয়ে যথাসম্ভব স্টার্চ বার করে দিতে হবে।
- ধোয়া আলু পাতলা সুতির কাপড়ের সাহায্যে ছেঁকে সব জল বের করে নিতে হবে।
- কড়াইয়ে তেল বা মাখন গরম করে আলু দিয়ে মধ্যম আঁচে ভাজতে হবে। অল্প নুন দিয়ে আলু নরম হয়ে এলে নামিয়ে দিতে হবে।
- নরম হয়ে আসা আলুর সাথে ময়দা, ধনেপাতা কুচি ও কর্ণ ফ্লাওয়ার মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করে নিতে হবে।
- বাটার পেপারের ওপর রেখে এই মণ্ডকে চৌকো আকারে বেলে নিয়ে ছুরি দিয়ে সমান ভাগে কেটে নিতে হবে।
- একটা টুকরোর ওপর এক টুকরো চিজ রেখে তার ওপর অন্য আরেকটি টুকরো দিয়ে, হাত দিয়ে চারদিক চেপে সম্পূর্ণ চৌকো আকৃতির নিটোল হ্যাশ ব্রাউন তৈরি করতে হবে।
- ফ্রাই প্যানে মাখন গরম করে কম আঁচে খুব সাবধানে এই টুকরোগুলোর দুই দিক বাদামী করে ভেজে নিতে হবে।
চিকেন পপকর্ণঃ
উপকরণঃ
- মুরগীর মাংস – ৩০০ গ্রাম
- রসুন বাটা – ১/২ চামচ
- নুন – পরিমাণ মত
- লঙ্কা গুঁড়ো – পরিমাণ মত
- ভিনিগার – ১ চামচ
- সোয়া সস – ১ চামচ
- গোল মরিচ গুঁড়ো – ১ চামচ
- দুধ – ৫০ মিলি
- ময়দা – ১০০ গ্রাম
- কর্ণ ফ্লাওয়ার – ৫০ গ্রাম
- ডিম – ২ টি
- সাদা তেল – পরিমাণ মত
- বরফ জল – ১০০ মিলি
প্রণালীঃ
- মুরগীর মাংসকে ছোট ছোট চৌকো আকৃতিতে কেটে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- একটা বাটিতে মাংসের সাথে নুন, ভিনিগার, সোয়া সস, লঙ্কা গুঁড়ো, রসুনবাটা ও দুধ মিশিয়ে ১ ঘণ্টা ম্যারিনেট করে রাখতে হবে।
- এক ঘণ্টা পর এর মধ্যে দুটি ডিম ফাটিয়ে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে।
- আলাদা একটা পাত্রে ময়দা, কর্ণফ্লাওয়ার, নুন, লঙ্কাগুঁড়ো ও গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে।
- মাংসের টুকরো গুলো একটা একটা করে তুলে ময়দার মিশ্রণে একবার মাখিয়ে বরফ জলে একবার ডুবিয়ে আবার ময়দার মিশ্রন মাখিয়ে নিতে হবে।
- কড়াইতে তেল গরম হলে ডুবো তেলে টুকরো গুলো মধ্যম আঁচে ভাজতে হবে। হালকা লাল রং হলেই তুলে ঠাণ্ডা করতে হবে।
- ১০ মিনিট পর ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আবার ডুবো তেলে কড়া করে ভেজে পরিবেশন করতে হবে।
চিংড়ি মাছের কাটলেটঃ
- ছোট বা মাঝারি মাপের চিংড়ি মাছ – ২৫০ গ্রাম
- আলু সেদ্ধ – ৫০ গ্রাম
- কাঁচালঙ্কা কুচি – ৪ টি
- সুজি – ২৫ গ্রাম
- ব্রেড – ১ টুকরো
- লাল লঙ্কা গুঁড়ো – ১ চামচ
- নুন – পরিমাণ মত
- হলুদ গুঁড়ো – ১ চামচ
- আদা ও রসুন বাটা – ১ চামচ
- ডিমের কুসুম – ১ টি
- ধনেপাতা কুচি – ২৫ গ্রাম
- পেঁয়াজ পাতা কুচি – ২৫ গ্রাম
- ভাজা পেঁয়াজ – ৫০ গ্রাম
- বিস্কুটের গুঁড়ো – ১০০ গ্রাম
- সাদা তেল – ৫০ মিলি
- লেবুর রস – ১ চামচ
প্রণালীঃ
- চিংড়ি মাছের খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে ছোট টুকরো করে নিতে হবে।
- ব্রেডের টুকরোটি জলে ডুবিয়ে জল চেপে বাদ দিয়ে একটু চটকে নিতে হবে।
- একটা পাত্রে চিংড়ি মাছ, আলু সেদ্ধ, চটকানো ব্রেড, নুন, হলুদ, লঙ্কা কুচি, লঙ্কা গুঁড়ো, আদা ও রসুন বাটা, ডিমের কুসুম, পেঁয়াজ পাতা কুচি, ধনেপাতা কুচি, ভাজা পেঁয়াজ, সুজি একসাথে মিশিয়ে ভালো করে মেখে মণ্ড তৈরি করতে হবে।
- একটা প্লেটে বিস্কুটের গুঁড়ো নিয়ে, মণ্ড থেকে ছোট অংশ নিয়ে কাটলেটের আকারে তৈরি করে বিস্কুটের গুঁড়োতে মাখিয়ে নিতে হবে।
- ফ্রাই প্যানে তেল গরম হলে কাটলেট ভালোভাবে লাল রঙের করে ভেজে নিতে হবে।
- ওপর দিয়ে লেবুর রস মাখিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন