সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল কার না ভালো লাগে! কিন্তু বিভিন্ন কারণে মেয়েদের বহু আকাঙ্ক্ষিত এই জিনিসটি অধিকাংশ সময়ে অধরাই রয়ে যায়। আমাদের চুল মূলত কেরাটিন নামক একটি প্রোটিন ও অ্যামাইনো অ্যাসিডের তন্তু দিয়ে গড়ে ওঠে। বিভিন্ন হেয়ার প্রোডাক্টে থাকা নানারকম রাসায়নিক, কেমিক্যাল স্টাইলিং প্রোডাক্টের ব্যবহার, হিট ট্রিটমেন্ট, রোদের তাপ, দূষণ ইত্যাদি চুলের স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। আবহাওয়ার প্রভাবে, যেমন গ্রীষ্মে ঘামের সঙ্গে ধুলোবালি মিশে চুলকে অপরিষ্কার করে তোলে। ঠিক তেমনভাবে বর্ষাকালে আবহাওয়া গুমোট থাকায় চুলের গোড়া ঘেমে যায় এবং এই ঘাম থেকে খুশকি ও চুল ঝরা শুরু হয়, সঙ্গে থাকে স্ক্যাল্পের অন্যান্য সমস্যা। শীতের সময়ে রুক্ষতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চুলও ক্রমশ রুক্ষ হয়ে পড়ে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, চুলের উপর দিয়ে প্রতিদিন কম ঝড়ঝাপটা যায় না। শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করার পাশাপাশি চুলকে কোমল ও উজ্জ্বল রাখার জন্য ব্যবহার করা যায় চুলের ঘরোয়া কিছু প্যাক। প্যাকগুলির সুবিধা এখানেই যে এগুলো বানানোর জন্য বেশি কিছু উপকরণের প্রয়োজন নেই। সাধারণ ও সহজলভ্য জিনিস দিয়েই চমৎকার প্রস্তুত হয়ে যায়।
১) ডিম, মধু ও হেয়ার অয়েলের প্যাক
:
রুক্ষ চুলের জন্য এটি আদর্শ। প্রচুর
প্রফেশনাল হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টে ডিমের প্রোটিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চুল ঝরা কমাতে
এবং চুলকে মসৃণ ও ঝলমলে করে তুলতে ডিমের প্রোটিন হেয়ার প্যাক অত্যন্ত সহায়তা করে।
উপকরণ:
ডিমের কুসুম - ১ টি
মধু - ১ চা চামচ
আমন্ড অয়েল/ অলিভ অয়েল/ নারকোল
তেল - ২ টেবিল চামচ
পদ্ধতি :
সমস্ত উপকরণগুলি একসঙ্গে ভালো করে
ফেটিয়ে নিতে হবে। মাথায় লাগিয়ে রেখে একঘন্টা অপেক্ষা করার পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে
কন্ডিশনার লাগিয়ে নিতে হবে।
২) দই ও মধুর প্যাক :
এই প্যাকটি শুষ্ক চুলকে কোমল ও ঝলমলে
করতে সাহায্য করে।
উপকরণ :
টক দই - ২ টেবিল চামচ
মধু - ৩ চা চামচ
পদ্ধতি :
উপকরণ দু'টি ভালো করে মিশিয়ে মাথায়
লাগিয়ে রাখতে হবে। আধঘন্টা অপেক্ষা করার পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
৩) অ্যালোভেরা, মধু, নারকেল তেলের প্যাক :
চুলকে নরম করতে এই প্যাকটি অত্যন্ত
উপযোগী।
উপকরণ:
ফ্রেশ অ্যালোভেরা জ্যুস - ২ টেবিলচামচ
এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল - ২
টেবিলচামচ
মধু - ১ চা চামচ
পদ্ধতি :
উপকরণগুলি ভালোভাবে মিশিয়ে চুলের
আগা থেকে গোড়া সমান করে মাখাতে হবে। একঘণ্টা প্যাকটা চুলে লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে
ধুয়ে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিতে হবে।
৪) ডিম ও আমন্ড অয়েলের প্যাক :
চুলের জেল্লা ফেরাতে এই প্যাকটি
সাহায্য করে।
উপকরণ:
ডিম - ১টি
আমন্ড অয়েল - ১ টেবিল চামচ
পদ্ধতি :
এই দু'টি উপকরণ ভালো ভাবে মিশিয়ে
পুরো চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে। ১৫-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলতে
হবে।
৫) মেথি ও আমলকীর প্যাক :
চুলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি
হেয়ার প্যাক। মেথি চুল পরা কমিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং আমলকীও চুলের জন্য
খুবই উপকারী। সপ্তাহে একদিন এই হেয়ার প্যাকটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকরণ:
হালকা রোস্ট করে গুঁড়ো করে নেওয়া
মেথি - ১ কাপ
হালকা রোস্ট করে গুঁড়ো করে নেওয়া
আমলকী - ১ কাপ
পদ্ধতি :
এই দু'টি উপকরণ হালকা গরম জলে পেস্ট
বানিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরেরদিন সকালে স্নানের আধঘণ্টা আগে মাথায় ভালো করে
মাখিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।
৬) ডিম ও দইয়ের প্যাক :
স্বাভাবিক চুলের অধিকারিণীরা গোটা
একটি ডিম ব্যবহার করতে পারেন। তবে চুল তৈলাক্ত হলে কুসুম বাদ দিতে হবে এবং শুষ্ক হলে
সাদা অংশটা।
উপকরণ :
ডিম - ১টি
জল ঝরানো টক দই - ২ টেবিল চামচ
এসেনশিয়াল অয়েল - ২ ফোঁটা
পদ্ধতি:
উপকরণগুলি একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে
মাথায় আধ ঘন্টা লাগিয়ে রাখতে হবে। এই প্যাকে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক
নয়। কিন্তু ডিম ও টক দইয়ের জন্য তীব্র গন্ধ বেরোনোর কারণে এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে
নেওয়া শ্রেয়। আধ ঘন্টা কেটে গেলে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেলতে
হবে।
৭) শিকাকাই ও নারকোল তেলের প্যাক
:
শিকাকাই মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে,
খুশকি দূর করে এবং গভীর থেকে চুলের পুষ্টি যোগায়।
উপকরণ :
শিকাকাই গুঁড়ো - ১ টেবিল চামচ
নারকোল তেল - ১ কাপ
পদ্ধতি :
একটি বোতলের মধ্যে নারকোল তেল ঢেলে
শিকাকাই গুঁড়ো মেশানোর পর ভালো করে ঝাঁকিয়ে দুই সপ্তাহের জন্য সরিয়ে রাখতে হবে। দুই
সপ্তাহের পর এই শিকাকাই তেল ব্যবহারযোগ্য হবে। চুলে ও স্ক্যাল্পে ভালো করে লাগিয়ে
আধ ঘণ্টা রাখার পর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।
৮) কলা ও নারকোলের দুধের প্যাক :
চুল ঝরা কমাতে সহায়ককারী। কলায়
থাকা ফসফরাস এবং নারকোলের দুধে থাকা প্রোটিন চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়। ফলে চুল
শক্ত ও মজবুত হয় এবং চুল ঝরা হ্রাস পায়।
উপকরণ :
পাকা কলা - ১টি
নারকোলের দুধ - আধ কাপ
পদ্ধতি :
এই দুটি উপকরণ ভালো করে মিক্সিতে
পেস্ট করতে হবে যাতে মিশ্রণে কোনোপ্রকার লাম্প না থাকে। তারপর এটিকে চুলে ভালো করে
লাগিয়ে রেখে আধ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।
৯) ওটস ও নারকোল তেলের প্যাক :
ওটস শুধুমাত্র খাওয়ার ক্ষেত্রেই
স্বাস্থ্যকর নয়, চুলের জন্যও সমান উপযোগী। এটি ভিটামিন-বি তে পরিপূর্ণ যা হেয়ার ফলিকলের
অন্তর্বর্তী আর্দ্রতা বজায় রেখে চুলকে প্রাণবন্ত করে তোলে। ওটসের ব্যাকটেরিয়া-বিরোধী
বৈশিষ্ট্য মাথার ত্বক পরিষ্কার করে এবং চুলকানি প্রশমিত করে।
উপকরণ :
ওটস - আধ কাপ
নারকোল তেল - ২ টেবিল চামচ
দুধ - আধ কাপ
পদ্ধতি :
উপকরণগুলি ভালোভাবে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে
ও চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে। কুড়ি মিনিট রাখার পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুল
ধুয়ে ফেলতে হবে।
১০) মেথি, টক দই ও নারকোল তেলের
প্যাক :
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে চুলের
জন্য মেথি খুবই উপকারী। মেথিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে যা চুলের ইলাস্টিসিটি উন্নত
করে এবং চুলের ভাঙ্গন রোধ করে। এছাড়াও এর মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন সি, লৌহ এবং লিকিথিন
হেয়ার ফলিকলে পুষ্টি যোগায় ও শক্তিশালী করে।
উপকরণ :
মেথি বীজ - ২ টেবিল চামচ
টক দই - আধ কাপ
নারকোল তেল - ১ টেবিল চামচ
পদ্ধতি :
এক কাপ জলে সারারাত মেথি ভিজিয়ে
রাখতে হবে। পরেরদিন সকালে সেই মেথির পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে টক দই ও নারকেল
তেল ভালো করে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ও চুলে আধ ঘন্টা লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
কলমে - শুভ্রা ব্যানার্জী
চিত্র সৌজন্যঃ অন্তরজাল
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন