প্রকৃতির শোভা - রিজু পাল

  


 আমার তখন বয়স মাত্র পনেরো বছর, নবম শ্রেণীতে পড়ি। আমার পাখি দেখতে খুব ভালো লাগে। আমাদের বাড়ির চারপাশে আমি ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন রকমের পাখি দেখে এসেছি। ছোটবেলায় আমার মা আমাকে বিভিন্ন রকমের পাখির গল্প শোনাতেন। তার মুখে কখনো শুনেছি তিতি, আবার কখনো শুনেছি মাছরাঙার গল্প। আমি যখন বিকেল বেলায় বাইরে খেলাধুলা করতে বের হতাম তখন আমাদের পাড়ার দক্ষিণ দিকের বড় একটা বিরাট বট গাছ ছিল। সেখানে আমি রোজ বিকেলে কতই না বিচিত্র রকমের পাখি দেখতাম। বটগাছের ঠিক মাঝ বরাবর একটা বিরাট ফাঁকা জায়গা ছিল। সেখানে একটা পাখি বাসা বেঁধেছিল। প্রথম দিন যখন আমি সেই দৃশ্যটা লক্ষ্য করি তখন দেখি যে পাখিটা সেখানে দুটো ডিম পেড়ে, উড়ে চলে গেল। তারপর সেই মা পাখি বেশ খানিকক্ষণ সেখানে ছিল না। তারপর আবার খানিকক্ষণের মধ্যে সে তার নিজের বাসা চলে আসে। ডিমের ওপরে বসে সে দিনগুলোতে’তাদিতে শুরু করে।এইসব দৃশ্য মাঝে মাঝেই দেখতে পেতাম। এক অদ্ভুত ভালো লাগায় মন ভরে উঠত।

 

তারপর বেশ কিছুদিন আমি সেই বট গাছের কাছে যাইনি। অনেকদিন সেই পাখিগুলোকে দেখা হয়নি। তাই আমি একদিন বিকেলবেলায় আবার সেই গাছের কাছে গিয়ে দেখি যে, সেই ডিম দুটো ফেটে সুন্দর দুটো পাখির বাচ্চা বেরিয়ে কিচির মিচির করে ডাকাডাকি করছে।মা পাখি সেই বাচ্চা পাখিদের জন্য মুখে করে খাবার এনে তাদের খাওয়াচ্ছে। সেই দৃশ্য খুবই সুন্দর লাগছিল, কতইনা বিচিত্র। আমার মনটা খুশিতে ভরে গেল। কিন্তু আসল ঘটনাটা ঘটলো তারপরে। হঠাৎ একদিন আমি দেখি যে সেই বটগাছ, পাখি ও বাচ্চা কিছুই নেই। দেখি পাশে সেই বট গাছের গুড়ির একটা ভাঙ্গা টুকরো পড়ে আছে। কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা একজন ভদ্রলোককে আমি জিজ্ঞেস করলাম যে,”এই গাছটি কেন কাটা হয়েছে”?

 

তিনি আমাকে বললেন,”এই জমি একজন লোক কিনেছেন”। তিনি আরো বলেন যে’তিন চার দিনের মধ্যেই এখানে বাড়ি তৈরি করার কাজ শুরু হবে'। কথাগুলো শুনে মনের কষ্টে বাড়ি ফিরলাম। বাড়ি ফিরে আমাদের বাড়ির দোতলার ছাদের ওপরে উঠে গেলাম। বিকেলটা ছাদের ওপর কাটিয়ে সন্ধ্যেবেলা ঘরে নেমে এলাম। তারপর অল্প খাবার খেয়ে, বই পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমানোর সময় শুধু ওই পাখি আর বটগাছের কথা মনে পড়ছিল, শুধুই ভাবছিলাম সেই পাখি আর পাখির বাচ্চাগুলো কোথায় বা গেল ? কি অবস্থা হলো তাদের ?

 

এই কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে গেছে ঠিক বুঝতে পারিনি।সকালবেলা পাখির খিচিরমিচির আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙলো। দেখি যে আমাদের ছাদের চিলেকোঠায় একটা সুন্দর দেখতে পাখি বাসা বেঁধেছে। আমার মনটা আনন্দে ভরে গেল।সেই দিন থেকে আবার আমি উৎসাহ নিয়ে পাখীদের দেখাশোনা করতে শুরু করলাম। জানি আবার কচি ছানা হবে। আবার নতুন করে শুরু হবে জীবনের কিচিরমিচির। আর কেউ ওদের বাসা নষ্ট করতে পারবে না। আমার বাড়িতেই প্রকৃতি তার শোভা মেলে ধরবে।

 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন