মোহনার হিসাব - শান্তনু ঘোষ

 



আজ মাস ছয়েক হোল অনিমেষ অবসর নিয়েছে। শেষবেলায় এসে হিসাবের খাতা নিয়ে বসে, জীবনে কি পেয়েছে, কি হারিয়েছে। প্রায়ই মনে হয় হারিয়ে যাওয়ার পাল্লাটা একটু ভারী।

মোড়ের মাথায় পানের দোকানের সামনে সিগারেটে সবে মাত্র দু'টান দিয়েছে, একটা নতুন ক্রেটা গাড়ি ফুলস্পীডে পেরিয়ে গিয়ে হঠাৎ ব্রেক মেরে দাঁড়ালো। তারপর একটু পিছিয়ে এসে থামলও ঠিক ওর সামনে। গাড়ি থেকে নামলেন এক ভদ্রলোক, পরনে স্যুট, প্যান্ট, টাই। তার পাশে একজন ভদ্রমহিলা, তিনিও নামলেন। তারপর বলাকওয়া নেই ঢুপ করে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো দু'জনে।

কিছু বোঝার আগেই ভদ্রলোক বলে উঠলেন, “আমাকে চিনতে পারলেন না স্যার? আমি মৃন্ময়, আর এ আমার সহধর্মিণী, পিয়ালি। “

অনিমেষের সামনে বহুবছর আগে ঘটে যাওয়া একটা দৃশ্য হঠাৎ উন্মুক্ত হল। মৃন্ময় নতুন কাজে যোগ দিয়েছে। প্রথম থেকেই পারফর্মেন্স খুব ভালো। হঠাৎ একদিন অনিমেষের কাছে খবর এলো, মৃন্ময় কাজে চুরি করেছে আর ভুয়ো রসিদ জমা করে অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছে। অনিমেষ তখন সেলস হেড, সমস্ত প্রমাণ যাচাই করে মৃন্ময়কে ডেকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করল। মৃন্ময় শুধু একটা কথাই বলতে পেরেছিল, “আমার ক্যারিয়ারটাকে আপনি এভাবে শেষ করে দেবেন না স্যার। “

 অনিমেষ নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে বলেছিল, “জীবনে তুমি অনেক চাকরি পাবে মৃন্ময়, কিন্তু এই ঘটনাকে কোনোদিন ভুলে যেও না। “

মৃন্ময়ের কথায় সম্বিত ফিরে পেল অনিমেষ, "জানেন স্যার, আমি সেদিনের কথা আজও ভুলিনি। আমার ছেলেকেও বলেছি, এতটুকু লজ্জা হয়নি। আপনি সেদিনে ওই থাপ্পড়টা না মারলে, আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম না। “ 

বাড়ির ফেরার মধ্যে অনিমেষ নিজের মনেই হেসে ওঠে ওর শেষ বয়েসের হিসেবনিকেশের কথা ভেবে। অনেক কিছু পাওয়া হয়ে যায় যেগুলোর হিসাবের খাতায় জায়গা হয় না।

 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন