সুদূর
ফ্রান্স থেকে ভারতভ্রমণের জন্য এসেছে তিরিশজন সদস্যের পর্যটক দল। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত
ঘুরে কলকাতায় এসে উপস্থিত হয় তাঁরা। কলকাতার সুস্বাদু বাঙালি খাবারের ব্যাপারে আগে
থেকেই জেনে আসা কিছু সদস্য বাঙালি খাবার খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। বড় কোনও নাম করা
রেস্তোরাঁতে তাঁদের খাঁটি বাঙালি খাবার খাওয়াতে হবে। ভ্রমণসঙ্গী ট্যুর অপারেটরের ম্যানেজার
তাই তাঁদের কলকাতার নামকরা এক পাঁচতারা রেস্তোরাঁতে নিয়ে গেল। খাবারের নাম দেখে এবং
তাঁর বিস্তারিত বিবরণ জেনে পর্যটক দল খুবই উত্তেজিত। তাঁরা খাবার অর্ডার করতে লাগল।
প্রথমেই
এলো মোচার চপ আর আমপোড়া শরবত। মুখে দিয়েই সবাই বেজায় খুশি। এরপর সাদা ভাত, মুগডাল,
ঝিরিঝিরি আলুভাজা, ভেটকি কাটলেট,কয়েকরকম তরকারি, পোলাও, চিংড়ি মাছের মালাইকারী, ভাপা
মুর্গ, কষা মাংস, মিষ্টি দই, জলভরা, রসগোল্লাসহ সহ কয়েকরকম বিখ্যাত সুস্বাদু মিষ্টি,
মিষ্টি পান।
এত
খাবারের অল্প অংশ অল্প অল্প করে খেতেই সবার পেট ভর্তি হয়ে গেল। প্রচুর খাবার তখনও বাকি।
ছুঁয়ে দেখার অবস্থাও নেই কারো। কিন্তু এত খাবার ফেলে দেওয়াতে কারো সায় ছিল না। তাই
সমস্ত খাবার ওরা পার্সেল করে নিয়ে চলল।
রাতের
কলকাতার সৌন্দর্যই আলাদা। সবাই রাতের কলকাতা দেখার জন্য শহরের আনাচে কানাচে পায়ে হেঁটে
ঘুরতে লাগল। কিছুক্ষণ পর এক জায়গায় সবাই থমকে দাঁড়ালো। সামনে একটা নোংরা আবর্জনার স্তূপ।
দু’টো ছোট ছোট ছেলে সেই নোংরা ময়লা ঘেঁটে খাবার খুঁজছে। যা পাচ্ছে তুলে খাচ্ছে। ভ্রমণরত
পুরো দল হতবাক হয়ে গেল এই দেখে। কারো কারো চোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে এল। হঠাৎ দলের মধ্যে
থেকে একজন মেয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে নিজের সঙ্গে থাকা খাবারের বাক্সটা বাচ্চা দু'টোর হাতে
ধরিয়ে দিল। ছেলে দু'টো বাক্স খুলে খাবার দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে সাথে সাথে খেতে শুরু
করে দিল। দলের অন্যরা ম্যানেজারকে জানতে বলল যে ওরা কোথায় থাকে। ম্যানেজার ওদের থাকার
জায়গা কোথায় জেনে নিতে পুরো দল সেই জায়গার দিকে হাঁটতে শুরু করল। কিছুদুর গিয়ে দেখতে
পেল রাস্তার ধারে, ফুটপাতে সারি সারি লোক ঘুমাচ্ছে। ওরা ধীরে ধীরে ওদের কাছে গিয়ে প্রত্যেকের
মাথার কাছে এক বাক্স করে খাবার রেখে দিয়ে এল। ফিরে চলল নিজেদের গন্তব্যের দিকে, মনে
এক অদ্ভুত শান্তি নিয়ে। অন্তত একদিনের জন্য হলেও ওরা কাউকে একটু আনন্দ দিতে পারবে।
সকালে সবার ঘুম ভাঙলে হাতে পাবে এক বাক্স করে আনন্দ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন