রোজকার অভ্যাসমতো কাকভোরে ঘুম ভাঙল রবীনবাবুর। সুইচ টিপে আলো জ্বালিয়ে বিছানার পাশের টেবিল থেকে মোবাইল ফোনটা হাতে তুলে নিলেন। দীর্ঘদিনের বন্ধু প্রমথর নম্বরটা বার করে ফোন করলেন, “সুপ্রভাত, হাঁটতে বেরোচ্ছ তো?”
কিছুক্ষণ রিং হয়ে যাওয়ার পর ওপ্রান্ত থেকে ঘুম জড়ানো গলায় উত্তর এল, “আমি সৌম্য বলছি জ্যেঠু। কিছু বলবেন?”
প্রমথর ছেলের গলা শুনে অপ্রস্তুত হয়ে রবীনবাবু বললেন, “তোমাকে ভুল করে ফোন করে ফেলেছি। কিছু মনে কোরো না বাবা।”
ফোনটা রেখে দিলেন রবীনবাবু। এত ভোরে সৌম্যকে ফোন করে জাগিয়েছেন বলে তাঁর নিজেরই কেমন লজ্জা করছিল। কী আশ্চর্য, আজও সেই এক ভুল হল কেন! আসলে প্রমথ যে চলে গেছেন সেটা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। গত মাসে এরকমই এক ভোরে হাঁটতে বেরিয়ে আচমকা হার্ট অ্যাটাকে প্রাণ হারিয়েছিলেন বিগত দশ বছরের প্রাতঃভ্রমণের সঙ্গী প্রমথ। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার সুযোগও পাওয়া যায়নি।
প্রমথ না থাকলেও বন্ধুর ফোন নম্বরটা এখনও রবীনবাবুর মোবাইলে রয়ে গেছে। একবার ভেবেছিলেন নম্বরটা মুছে ফেলবেন, কিন্তু কী মনে করে সেটা আর করেননি। তাই অভ্যাসের বসে এই ভুলটা প্রায়ই হয়ে চলেছে। প্রমথর ফোনটা নিশ্চয়ই তার ছেলে এখন ব্যবহার করছে। আর এই অসময়ে ফোন ধরতে হলে তার পক্ষে বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আর দেরী না করে প্রমথর ফোন নম্বরটা নিজের মোবাইল থেকে ডিলিট করে দিলেন রবীনবাবু। যাক নিশ্চিন্ত, এবার থেকে এই ভুলটা অন্তত আর হবে না। তারপর আলো নিভিয়ে আবার শুয়ে পড়লেন। চোখ বুজে শুয়ে থাকতে থাকতে নানা পুরনো দিনের স্মৃতি তাঁর মনে এসে ভিড় করছিল। এই ভোরবেলায় অদ্ভুত এক নস্ট্যালজিয়া আচ্ছন্ন করে ফেলছিল তাঁকে। রবীনবাবু ঠিক করলেন আজ আর হাঁটতে যাবেন না, এতদিনের সযত্নে তৈরি করা অভ্যাসের ব্যতিক্রম করবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন