রুমি বিছানায় শুয়ে রয়েছে। ওর নিষ্পলক, শান্ত দৃষ্টি আমার দিকে স্থির হয়ে আছে। আমি বিছানা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছি। মুখ ঘুরিয়ে ঘরটা একবার দেখলাম। ঘরটার মধ্যিখানে আমার চেয়ার টেবিল উল্টানো। সারি সারি কাগজ, বই সারা ঘর জুড়ে ইতিউতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ঘরের এক কোণে একটা পুড়ে যাওয়া কাগজের স্তুপ। এখনো অল্প ধোঁয়া বেরোচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে রুমি ঘরটা পুরো লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।
_ "রুমি, আমি লেখাতে বাঁচি। লেখালেখি ছাড়া অন্য কোথাও টিকে থাকতে পারি না বেশিদিন। প্রকাশকের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াই। কেউ তাড়িয়ে দেয়, কেউ বা অপেক্ষায় রাখে। যতই হোক, লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত অবহেলাগুলোকেও এখন কেমন যেন ভালোবেসে ফেলেছি! কোন স্থায়ী আয় আমার থাকবে না, অভাব অনটনেই তোমার মত বড়লোকের মেয়েকে আমার কাছে থাকতে হবে - সব জেনেই তো তুমি ভালোবেসেছিলে, বিয়েতে রাজি হয়েছিলে! তবে হঠাৎ এরকম বদলে গেলে কেন? উপন্যাসটার আর দু'টো অধ্যায় বাকি ছিল। তুমি পুরো পান্ডুলিপিটাকে পুড়িয়ে দিলে! এতটা পাষাণ তুমি! আমার ডাইরি, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রগুলোকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিলে! একবারও হাত কাঁপলো না তোমার? কী হল কথা বলছো না কেন?"
আমি রুমির কাছে এসে নীচু হয়ে ওর গাল দুটো ধরে মুখটা একটু নাড়ালাম। ওর মাথার পেছন থেকে ফোঁটা ফোটা রক্ত ওর গাল আর বিছানার বাইরে ঝুলে থাকা চুল বেয়ে মেঝেতে পড়তে থাকল। ওর চোখের মণিদু'টো নীরব, প্রাণহীন।
_ "ও, তুমি তো আর কথা বলার অবস্থায় নেই। শোনো রুমি, লেখালেখিটাই আমার প্রথম ভালোবাসা ছিল আর থাকবে।" আমি আলতো করে রুমির চোখের পাতাদু'টো বন্ধ করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম। বিছানায় ওর পাশে ভারী রক্তমাখা লোহার রডটা পড়ে থাকল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন