রাপুনজেল - সন্ময় চক্রবর্তী



মানুষ অনেক কারণে বিখ্যাত হয়। কেউ অভিনয় করে, কেউ গান গেয়ে বা নেচে, কেউ রাজনীতি করে, ফুটবল খেলে বা আজকালকার দিনে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে কতভাবেই তো বিখ্যাত হওয়া যায়। আমাদের নুপুর সেনকেও একটু আধটু বিখ্যাত বলাই যায়। সে একজন মাঝারি গোছের social media influencer। ওই ইনস্টা, ফেবু, ইউটিউবে লাখ দেড়েক অনুগামী, এমনকি প্রসাধন কোম্পানির প্রমোশনও পেয়ে থাকে। তার বন্ধুদের মতে সে আরও সময় দিলে তার বাজারদর আরও চড়চড়িয়ে বাড়বে। তবে তার জো নেই, কারণ সে তার নিজের বেসরকারী ব্যাংক ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের চাকরিটা ছাড়তে চায় না।


নুপুর বিখ্যাত কেন সেটা জানতে চান? কারণটা হল চুল।


চুল?


হ্যাঁ দাদা চুল, আচ্ছা সেই ছোটবেলায় টিভিতে দেখা নানাবিধ কেশ তৈলের বিজ্ঞাপনগুলি মনে করে দেখুন। সেই যে ঘন, কালো চিকুররাশি একরাশ বাদলা মেঘের মত মেয়ের পিঠ বেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যার চুলের জেল্লা দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায় এবং ওইরকম চুল সত্যি হয় কিনা ভেবে দর্শকরা বিপুল দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন… মনে পড়ছে?


হুমম, তা নুপুরের চুল ঠিক সেইরকম!


তাদের পারিবারিক বন্ধু ও পিতৃব্য ডাক্তার মণ্ডল বলেই দিয়েছেন, “না না, ওসব তেলফেল নয়, নুপুরের ওই চুলের কৃতিত্ব তার জিনের। নুপুরের দিদিমার ওরকম চুল ছিল বুঝলেন দাদা, ছেলেবেলায় দেশের বাড়িতে বেলাদির চুলে ইঁট বেধে ঝুলিয়ে আমরা শক্তি পরীক্ষা করেছিলাম, আর তারপর বেদম ঠ্যাঙানিও খেয়েছিলাম। তবে নিয্যস সত্যি কথা দাদা, এক গাছি চুলও ছিঁড়ে পড়েনি!”


নুপুর অবিশ্যি নিজের চুলে কোনদিন ইঁট বাঁধার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না, চুল তার প্রাণ। ছোট্ট থেকে আজ এই আঠাশ বছরের জীবনে এই চুল তাকে সব দিয়েছে। ছোটবেলায় পাড়া ও স্কুলের সব নাটকে প্রধান পার্ট, স্কুলে ও কলেজে একটা আলগা স্টারডম, আত্মীয়স্বজনের সপ্রশংস দৃষ্টি থেকে কিছু মানুষের চোখের প্রচ্ছন্ন ঈর্ষা সবটাই সে উপভোগ করে তারিয়ে তারিয়ে।


আর গত দুই বছর, এই বেঙ্গালুরুতে রুমমেট কেকার জোরাজুরিতে একরকম নিমরাজি হয়েই প্রথমে ইউটিউবের চ্যানেল খোলা। কেকা হেয়ার স্টাইলিস্ট। শহরের নামজাদা এক সেলুনচেনে কাজ করে, তার বয়ফ্রেন্ড শোভন আবার ফোটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফিতে তুখোড় আর তাদের চ্যানেলের যত টেকনিকাল দিক সেই দেখে। তবে সকলেই জানে যে চ্যানেলের ইউএসপি হল নুপুরের চুল।


চ্যানেল কয়েক মাসেই সুপারহিট। লাইক, সাব্স্ক্রাইব ও মন্তব্যের বান ডাকে প্রতিটি ভিডিওতে। এই তো ক'দিন আগে সিল্ভার প্লে বাটনও পেয়েছে তারা। চ্যানেলের নামটিতেও ঘটেছে নুপুরের প্রতিভার প্রতিফলন, কেকাই নামটা রেখেছে Rapunzel! 


ওদিকে কলকাতায় সেনবাড়িতে মেয়ের বিয়ে নিয়ে জগন্নাথ ও ডলি সেন তাদের প্রিয় মণ্ডলদাকে নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছেন। প্রায় সন্ধ্যাবেলাতেই একটা চা-চপ সহকারে জম্পেশ আলোচনা চলছে। মানে মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেয়েছে বছর দুয়েক, আর বয়সও ২৮। এরপরেও দায়িত্বশীল বাপ-মা চুপ করে বসে থাকেন কি করে!


ডলি দেবী তো বলেই বসলেন, “বেঙ্গালুরুতে দুই বছর হয়ে গেছে, আবার চ্যানেলটাও বেশ নাম করেছে। এখন বিয়েটা দিয়ে দিলেই হয়, নাহলে মেয়ে যদি কোন এক পনিটেল মার্কা ইউটিউবার ধরে আনে সেটা কি ভালো হবে?”


জগন্নাথবাবু বলেন, “আহা সেরকম কিছু তো হয়নি আজ অবধি।”


ডলি মুখ বাঁকান, “হতে কতক্ষণ, বলি ওই রুমমেট কেকাকে দেখেছ? কালো নেলপালিশ, কালো লিপস্টিক আর বেগুনী চুল! ওই মেয়ে আবার নাকি নামকরা স্টাইলিস্ট! ওই মেয়ের সাথে থাকলে ওরকমই জামাই জুটবে, হুঁ।”


জগন্নাথবাবু  মণ্ডলদাকে সাক্ষী মানলেন, “আচ্ছা দাদা আপনি কি বলেন?”


মণ্ডল ডাক্তার ডিসপেপটিক, তার ওপর গিন্নির কড়া শাসনে থাকেন। দু’বেলা লিকার চা আর পতঞ্জলির করলা বিস্কুট বরাদ্দ। আজ সন্ধ্যায় হাতের সামনে পেঁয়াজি পেয়ে গোটা তিনেক অলরেডি সাবড়ে দিয়েছেন! হঠাৎ ডাক পড়ায় খানিক ভেবড়ে গিয়ে তেলতেলে হাতটা রুমালের বদলে টাকেই মুছে ফেললেন! তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে খিখি করে হেসে বললেন, “জগুদা আপনি বৌঠানকে আজও চিনতে পারেননি, ভালো পাত্রের খবর উনি হাতে নিয়ে বসে আছেন এবং সম্ভবত দেরি করলে সে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। কি বৌঠান, ঠিক বলিনি?”


ডলি দেবীর মুখে হাসি ফুটল। তিনি বললেন, “তবে আর বলছি কি! আমাদের মর্নিংওয়াক গ্রুপের নিরুদির ছেলে অনিমেষ গেল হপ্তায় দু’বচ্ছর বার্মিংহ্যামে থেকে ফিরেছে, আপাতত এক মাসের ছুটিতে কলকাতায় ও তারপর বেঙ্গালুরুতেই পোস্টিং। জুয়েল ছেলে ডাক্তারদা, দেখতেও কেষ্ট ঠাকুর।  নিরুদি হাপিত্যেশ করে মেয়ে খুঁজছেন। আমার দু’হাত ধরে বললেন ডলি, তোর মেয়ে তো এখন ছোটখাটো সেলিব্রিটি আর আমার ছেলে বলতে নেই হাজারে একটা। দেরি করিসনি, হ্যাঁ করে দে।”

মণ্ডলবাবু চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে উঠে পড়লেন, “তবে আর কি! এখানে থাকতে থাকতেই নুপুরকে একবার ডেকে নিন। দেখা, পাকা কথা সবই হয়ে যাবে। তারপর সামনের শীতে সানাই!”

জগন্নাথ মাথা নেড়ে সায় দিলেন, “ঠিকই তো। শুভস্য শীঘ্রম!”

ডলি নিবিষ্টচিত্তে ফোন হাতে করে বসলেন, বেশ কয়েকটা লম্বা ফোন করতে হবে আজকে।

নুপুর নিজের মায়ের পছন্দের ছেলে কিরকম হবে ভেবে ঘাবড়ে গেসল ঠিকই, তবে ফেসবুকে অনিমেষের প্রোফাইলটা দেখে খুশিই হল। সৌম্যকান্তি, জামাকাপড়ের চয়েসও বেশ ভালো, বিশেষত বন্ধুর বিয়ের স্যুট পরে ছেলেটাকে ড্যাশিংই লাগছে।

ঠিক হল, সামনের শনিবার সকালের ফ্লাইট ধরে সে কলকাতায় যাবে, দেখাটেখা করে সোমবার ফিরবে।

কেকা হয়ত তাদের চ্যানেলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটু সন্দিহান হয়েই তাকে একটু ভয় দেখাচ্ছিল। তবে বিবাহ পরবর্তী বেঙ্গালুরুতেই থাকা হবে শুনে সেও খুশি।

সে বলল, “শোন, শনিবার যে ভিডিওটা ছাড়ার কথা ওটা শুক্রবার সন্ধ্যাতেই শ্যুট করে নেব, তারপর তুই নিশ্চিন্তে মনে বাড়ি যাস। এবারকার কিন্তু শাঁসালো স্পনসর। একটা চাইনিজ প্রসাধন কোম্পানির নতুন হেয়ার টনিকটা বাইরের বাজারে সুপারহিট, কিন্তু ভারতের বাজারে সবে আসতে চলেছে। যদি আমাদের ভিডিওটা মিলিয়ন ভিউ পায় না, তবে ফিরে তাকাতে হবে না, লালে লাল হয়ে যাব নুপস!”

নুপুর বলল, “টনিকটা চুলে লাগালে ক্ষতি হবে না তো?”

“ধুস! কি যে বলিস”, কেকা জিভ কাটল, “ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ড, don’t you worry!”

শনিবার সকালে ফ্লাইটে বসেই নুপুরের ঘুমে চোখ ঢুলে আসছিল। একে রাত অবধি ভিডিও তোলা, তারপর ভোররাতে উঠে ক্যাব আর এয়ারপোর্টের ব্যস্ততা, ঘুমের আর দোষ কি! গলায় নেকপিলোটা এঁটে নিয়ে চোখে সানগ্লাস ও কানে হেডফোন লাগিয়ে সে ঘুমিয়ে পড়ল।

“ম্যাম, প্লিজ স্ট্রেটন ইয়োর সিট, উই আর অ্যাবাউট টু ডিসেন্ড টু কলকাতা।“

কানে বিমানসেবিকার কন্ঠস্বরটা যেতেই ধড়মড়িয়ে জেগে উঠল নুপুর, প্রায় সোয়া দু'ঘন্টা ঘুমিয়েছে সে। মাথাটা সম্মতিসূচক ভঙ্গিতে নেড়ে সে একবার টয়লেট যেতে চাইল। বিমানসেবিকা হেসে বললেন, “বি ক্যুইক প্লিজ।”

মুখটা ধুয়ে মাথায় আলগোছে চিরুনি চালাতে চালাতে নুপুর আয়না দেখছিল, নাহ বেকারই সে টেনশন নিচ্ছে, রাপুনজেলের মত রাজকুমারী না হোক তবে তাকে যে দেখতে সুন্দরী তাতে সন্দেহ নেই। সহসা আঁচড়ানো শেষে চিরুনিটা হাতে নিতেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। তার আঠাশ বছরের জীবনে প্রথমবার তার চিরুনি দাঁড়ায় আটকে অজস্র চুল!


রবিবার সকাল দশটায় সেনবাড়িতে আসার কথা অনিমেষ ও তার পরিবারের। হিসাবমত শনিবার সন্ধ্যাবেলা মায়ের সাথে বসে নুপুরের পরেরদিন কি পরবে তা ঠিক করার কথা ছিল। কিন্তু কোথায় কি, সকলের মুখ গম্ভীর। গত বারো ঘন্টায় নুপুরের মাথা থেকে থোকা থোকা চুল উঠেছে। নুপুর স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে ওই চাইনিজ টনিকটাই তার চুলের সাড়ে সব্বোনাশের কারণ। কেন যে সে মরতে সেটা চুলে লাগিয়েছিল!!


কেঁদে কেঁদে মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে নুপুর, এ অবস্থায় সে কিছুতেই কাউকে মুখ দেখাবে না। ডলি দেবী কি করবেন কিচ্ছু বুঝতে পারছেন না। জগন্নাথের অবস্থাও তথৈবচ। এমন সময় ডাক্তার মণ্ডল ঘরে ঢুকলেন।

জগন্নাথ বললেন, “হেয়ার স্পেশালিস্ট কি বলল মণ্ডল?”

মণ্ডল বাবু চেয়ারে বসে একটা কাষ্ঠহাসি হাসলেন, “ড্যামেজ টেম্পোরারি, নুপুর মায়ের চিন্তার কিছু নেই। ওই বজ্জাত টনিকটার কোন উপাদান থেকে অ্যালার্জি হয়েছে যার জন্যে এই হঠাৎ চুল পড়া। মাস তিন-চারেক বাদে নিজে থেকেই চুল ঠিক আগের মত বেড়ে উঠবে। তবে তোকে কিন্তু আজই চুল ছোট করে ছেঁটে ফেলতে হবে নুপুরমা এবং এরপরে যেন কোন কেমিকেল চুলে আর না যায়, ব্যাস।”


নুপুর চুপচাপ মাথা নাড়ল। তারপর বলল, “মা, তুমি ওঁদের কাল আসতে মানা করে দাও, এরকম অবস্থায় নিয়ে আমি কোন পাত্রের সামনে বসব না।”


ডলি দেবী চোখ মুছে ভারাক্রান্ত মনে উঠে গেলেন।


পরের মঙ্গলবার দুপুরে বেঙ্গালুরুর একটা ক্যাফেতে বসেছিল নুপুর, অফিস যায়নি। সোমবার সকালেই ব্রাঞ্চের দারোয়ান থেকে সহকর্মীরা তাকে দেখে যেরকম হকচকিয়ে গেছিল তাতে সে এমনিতেই দমে যায়। তার ওপর সারাদিন কেবিনে বসে তার সারাক্ষণ মনে হয়েছে যে সবাই তাকে নিয়েই আলোচনা করছে। কি একটা গুজগুজ ফুসফুস। সে কি অস্বস্তি!


কোনমতে দিনটা শেষ করে, কয়েকদিনের ছুটির দরখাস্তের ইমেলটা করে সে বাড়ি ফিরে এসেছে। কেকার সাথে প্রচন্ড একচোট ঝগড়া কাল রাতে হয়ে গেছে নুপুরের। মেয়েটা চুপ করে শুনেছে নুপুরের চিৎকার, ভর্ৎসনা আর অনুযোগ। তারপর সকালেই সুটকেস নিয়ে চলে গেছে, ফিরবে কি না সেটা বলে যায়নি।


খালি ফ্ল্যাটে দম আটকে আসছিল নুপুরের, খানিক বাদে সে বেরিয়ে এসে ইন্দিরানগরের একটা শান্ত ক্যাফেতে বসেছিল।


“হাই নুপুর।”


নুপুরের চটকা ভাঙে। তার সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার দিকে একবার তাকিয়েই তার বুকের মধ্যে ধড়াস করে উঠল, একে  সে চেনে বললে ভুল বলা হবে, বলা ভালো ছবি দেখেছে!


অনিমেষ অনুমতির তোয়াক্কা না করে সামনের সোফাটায় বসে পড়ে। তারপর নুপুরের দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হাসে। নুপুর এত দুঃখের মধ্যেও অনুভব করল যে ছেলেটির হাসিটা সত্যি সরল ও সুন্দর, গালে আবার টোল পড়ে।

অনিমেষ কোমল গলায় বলল, “কাল তোমাদের বাড়ি গেছিলাম। তোমার সাথে যে একটা বিচ্ছিরি ব্যাপার ঘটেছে সেটা কাকিমার কাছে শুনলাম, তারপর আজ সকালে এখানে এসে বন্ধুর বাড়িতে জিনিসপত্র রেখে ওর বাইকটা নিয়ে তোমার অফিসে গিয়ে শুনি তুমি লিভে। অতঃপর তোমার বাড়ির সামনে গিয়ে দেখলাম তুমি বেরোচ্ছ, আমি বাইক নিয়ে তোমার ট্যাক্সির পিছনে পিছনে চলে এলাম। গত দু’ঘন্টা তোমার দু’টো টেবিল পরেই বসেছিলাম, সাহস একত্রিত করছিলাম বলতে পারো।”


নুপুর কিছু বলল না।


অনিমেষ বলে চলল, “তুমি হয়ত ভাববে কি ডেসপো ছেলে! যাকে কোনদিন দেখেনি তার পিছু নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেরাচ্ছে! কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। সত্যি কথা বলতে আমি তোমার ফ্যান, বেশ অনেকদিন ধরেই তোমার ফ্যান। সেই যেবার জাগরণী ক্লাবে এলোচুলে ভারতমাতা সাজলে তখন থেকে। আমি জানি তোমার জীবনে তোমার চুলের মাহাত্ম্য কতখানি। তোমার পাড়ায়, স্কুল কলেজে, সামাজিক মাধ্যমে সবক্ষেত্রেই তোমার সাফল্যের সিংহভাগটাই এই চুলের জন্যে, তাই স্বাভাবিকভাবেই এরকম একটা দুর্ঘটনা তোমায় বিপর্যস্ত করেছে। কিন্তু তাই বলে সাময়িকভাবে চুল কাটতে হয়েছে বলে তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে কেন? তোমার ব্যক্তিত্বের সমস্তটাই কি জাস্ট একগুচ্ছ কেরাটিন?”


নুপুর এতক্ষনে একটু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বললে, “অনিমেষ, আপনি কি সত্যিই সকাল থেকে আমার পিছনে বাইক নিয়ে ঘুরছেন?”


অনি হেসে ফেলে বললে, “অনি, অনি বলবেন। হুমম তা ঘুরছি বটে।”

নুপুরঃ “অনি, আমি কিন্তু চেয়েছিলাম প্রথম আলাপটা অন্যরকমভাবে হোক।”

অনিঃ “উঁহু, তার চেয়ে এটাই ভালো, বেশ একটা শূন্য থেকে শুরু করা গেল। আলাপ হল, এরপর বন্ধুত্ব অবধি যদি গড়ায় তো গড়াক না।”

নুপুরঃ “মোটেও ভালো হয়নি, আপনার তো আর চুল কাটা যায়নি! জানেন আমার বান্ধবীর সাথে প্রচন্ড ঝগড়া হয়ে গেছে এই নিয়ে, চ্যানেলটাও মনে হয় বন্ধ হয়ে যাবে।”

অনিঃ “বান্ধবীকে সরি বলে দেবেন। আপনার কথা ঠিক বুঝবে দেখবেন। আর চ্যানেল বন্ধ করবেন কেন? যে টনিক লাগিয়ে রাপুনজেলকে চুল কাটতে হয় সে জিনিস তো বাজারে ব্যান করা উচিত, আপনি কড়া রিভিউ দেবেন কিন্তু।”

আঁতকে উঠে নুপুর বলল, “এই চুল নিয়ে মোটেও ভিডিও করছি না আমি!”

অনিঃ “আচ্ছা সে যাকগে, তবে আপনাকে একটা গোপন কথা বলি?”

নুপুর ভুরু কুঁচকে বলে, “কি?”

অনি হঠাৎ হাঁ করে মুখের ভিতর থেকে একটা ডেঞ্চার বের করে আনল। নুপুর অবাক বিস্ময়ে দেখল অনির ওপর ও নিচের পাটি মিলিয়ে ছ’টা দাঁত গায়েব হয়ে গিয়ে তার মুখটাকে অন্তত বছর কুড়ি বুড়িয়ে দিয়েছে! অনি ডেঞ্চারটা ফের লাগিয়ে ফেলে নিজের মোহিনীমোহন হাসিটা হাসল। বলল, “বাইক অ্যাক্সিডেন্ট, তা বলে কি হাসা ছেড়ে দেব?”

নুপুর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “দু’টো কফি আর স্যান্ডউইচ অর্ডার করি? জব্বর খিদে পেয়েছে।”


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন