শিশুর জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত একমাত্র আহার স্তনদুগ্ধ। ছয়মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর যখন শিশুকে নতুন খাবার দেওয়া শুরু করা হয়,তখন পুষ্টির সাথে সাথে খেয়াল রাখা জরুরী হয়ে পড়ে সেই খাবার কতটা শিশুর হজমযোগ্য।যে কোনও নতুন খাবার খাওয়ানো শুরু করার পরেই বহু শিশুর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে থাকে। তাই প্রাথমিকভাবে খাবারের মধ্যে খিচুড়ি অন্যতম জরুরি ও সুরক্ষিত খাবার হিসাবে গণ্য করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য এই সময় থেকেই ব্যালান্স ডায়েট খুব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। ব্যালান্স ডায়েট বলতে বোঝায় যে খাবারে পরিমিত পরিমাণে শর্করা, প্রথম শ্রেণির প্রোটিন, চর্বিসহ অন্যান্য ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে। এসব উপাদান একত্রে পেতে হলে শিশুকে ভাত বা রুটি, মাছ বা মাংস বা ডিম, শাকসবজি, তেল—সব কটি উপাদান একসঙ্গে খাওয়াতে হবে। কিন্তু শিশুরা নতুন খাওয়া শেখার সময় মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, শাকসবজি আলাদা আলাদাভাবে সহজে সক্ষম হয়না। ফলে তাদের পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে খিচুড়ি হতে পারে সহজলভ্য ও সহজপাচ্য খাবার।
মাছ, মাংস,
ডিম— প্রোটিনজাতীয় খাবার। আবার ডালও প্রোটিনজাতীয় খাবার।
তবে মাছ,
মাংস, ডিম প্রথম শ্রেণির প্রোটিন (প্রাণিজ প্রোটিন) বা উন্নত
মানের প্রোটিন হিসেবে বিবেচিত, অন্যদিকে ডাল বা শিমের বিচি দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন
(উদ্ভিজ্জ প্রোটিন) হিসেবে বিবেচিত।
ডালকে দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন বলা হয়,
কারণ ডালের মধ্যে লাইসিন নামক একটি এসেনশিয়াল অ্যামিনো
অ্যাসিড থাকে না। অন্যদিকে, চালের মধ্যে ওই লাইসিন নামক এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড বেশি থাকে। আমরা যখন
চাল আর ডাল একত্রে রান্না করি, তখন চালে অধিক পরিমাণে অবস্থিত লাইসিন অ্যামিনো অ্যাসিড,
ডালের লাইসিন অ্যামিনো অ্যাসিডের ঘাটতি পূরণ করে।
ফলে ডাল তখন প্রথম শ্রেণির প্রোটিনে পরিণত হয়। অর্থাৎ, যদি শিশুকে মাছ, মাংস, ভাত খাওয়ানো হয়,
সেক্ষেত্রে শিশু যে পুষ্টিগুণ পাবে,
ডালের খিচুড়ি খাওয়ালেও সেই একই পুষ্টি পাবে। সঙ্গে উভয়
ক্ষেত্রেই একটু সবজি আর শাকের কচি পাতা যোগ করে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে শিশুর ব্যালান্স ডায়েট।চাল ডালের
খিচুড়ি রোজ খাওয়ালে স্বাদের একঘেয়েমি আসাই স্বাভাবিক। এর ফলে শিশুর খাবার গ্রহণে অনীহা
তৈরি হয়। তাই একটু স্বাদ বদলের জন্য অন্য কিছু খাদ্য উপাদান দিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে শিশুকে
খাওয়ানো অতি উত্তম উপায় হতে পারে। আজ এরকমই কিছু অন্য স্বাদের খিচুড়ি রান্নার পদ্ধতি
জানালাম।
ডালিয়ার খিচুড়ি (Porridge khichdi):
ডালিয়া অর্থাৎ ভাঙা গম সবচেয়ে ভালো খেতে লাগে মুগ ডালের সাথে।
উপকরণ:
•
ঘী / মাখন-
আধ চা-চামচ
•
এক চিমটে হিং, এক চিমটে জিরেগুঁড়ো ( ১
বছরের পর থেকে দেওয়া যাবে)
•
পেঁয়াজ- আধখানা (কুচনো)
•
আধ কাপ কুচনো সবজি (ভালো করে ধোওয়া)
•
মুগ ডাল ভেজানো – ১.৫ টেবিল চামচ
•
ডালিয়া- ১ টেবিল-চামচ
•
এক চিমটে নুন,
এক চিমটে হলুদগুঁড়ো
•
জল- আধ কাপ
পদ্ধতি :
•
প্রেসার কুকারে ঘী / মাখন
গরম করে নিতে হবে।হিং,
জিরে ফোড়ন দিতে হবে।
•
পেঁয়াজ কুচি বাদামি করে ভেজে নিতে
হবে।
•
ডালিয়া দিয়ে ২ মিনিট ভাজতে হবে।
•
সবজি কুচি ও ভেজানো ডাল
মিশিয়ে দিতে হবে। কিছুক্ষণ নাড়তে হবে।
•
নুন, হলুদ,
জল মিশিয়ে প্রেসার কুকার ঢাকা দিন। ৫-৭ মিনিট পর নামিয়ে নিতে হবে।
ডালের খিচুড়ি (Mix dal khichdi):
উপকরণ:
•
মুসুর ডাল, অরহর
ডাল, মুগ ডাল, বিউলি ডাল-
সমপরিমাণে (২ বছরের পর রাজমা, বিন, ছোলা, মটর প্রভৃতি ডালও দেওয়া যাবে)
•
চাল- ১ টেবিল-চামচ
•
জল- ১ কাপ
•
ঘী / মাখন-
আধ চা-চামচ
•
এক চিমটে লবণ, এক চিমটে হলুদগুঁড়ো
•
আদার রস – এক চামচ (১ বছরের পর)
পদ্ধতি:
•ঘী
/ মাখন গরম হলে ভেজানো চাল ও ডাল দিয়ে একটু ভেজে নিতে হবে।
•
প্রেসার কুকারে বাকি সমস্ত উপকরণ দিয়ে ১০ মিনিট রান্না করে নামাতে হবে।
•
ঢাকনা খুলে ঠান্ডা হয়ে গেলে
ঘী / মাখন ছড়িয়ে,
হাতে চটকে বাচ্চাকে খাওয়াতে
হবে।
ওট খিচুড়ি (Oats Khichdi):
স্বাস্থ্যকর ফাইবার আর শর্করার গুণে সমৃদ্ধ ওটস। এর থেকেই
সারাদিনের প্রয়োজনীয় এনার্জি পেয়ে যাবে ছোট্ট শিশু। অন্য সবজির সাথে সেদ্ধ করা,
চটকে নেওয়া মিষ্টি আলুও মেলানো যায়। স্বাদ বাড়বে বই কমবে না!
উপকরণ :
•
ওটস- ১ টেবিল-চামচ
•
মুগ ডাল- ১টেবিল-চামচ
•
কুচনো সবজি- আধ কাপ (ভালো করে ধোওয়া)
•
মিষ্টি আলু- সেদ্ধ করে চটকানো
•
লবণ ও হলুদগুঁড়ো
•
মাখন / ঘী – ১ চামচ
•
জল – ২ কাপ
পদ্ধতি :
•
ওটস, ডাল,
সবজি, লবণ, হলুদগুঁড়ো, জল একসাথে মিশিয়ে প্রেসার কুকারে দিয়ে ১০ মিনিট রান্না
করতে হবে।
•
রান্না হয়ে গেলে ঘী / মাখন মিশিয়ে ঠাণ্ডা করে খাওয়াতে হবে।
দইয়ের খিচুড়ি (Curd khichdi):
বাচ্চার যদি পেট খারাপ হয়, তবে দই-খিচুড়িই ওর জন্য সবচেয়ে ভালো! শুধুই যে স্বাস্থ্যকর তা নয়, খেতেও বেশ ভালোই লাগে দই খিচুড়ি।গরমকালে দই খিচুড়ি শিশুর জন্য অত্যন্ত উপাদেয় খাবার। তবে এই খাবার ১ বছরের পর থেকে শিশুকে দিলে ভালো হয়।
উপকরণ:
•
চাল- ১ টেবিল-চামচ
•
মুগ ডাল- ১ টেবিল-চামচ
•
ঘী- আধ চা-চামচ
•
এক চিমটে লবণ
•
এক চামচ মধু
•
দই- ২
টেবিল-চামচ
•
গোটা জিরে ও কারিপাতা
পদ্ধতি :
•
চাল ও ডাল প্রেসার কুকারে ভালো করে সেদ্ধ করে নিতে হবে।
•
দই ফেটিয়ে চাল – ডাল সেদ্ধর মধ্যে মিশিয়ে দিতে হবে।
•
প্যানে ঘী গরম করে তার মধ্যে জিরে ও কারিপাতা ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন ভাজা হয়ে ঘী সমেত
ফোড়ন ভাত- ডাল সেদ্ধর মধ্যে মিশিয়ে দিতে হবে।
•
কারিপাতা বেছে বাদ দিয়ে বাকি নরম খিচুড়ি শিশুকে খাওয়াতে হবে।
ছবি আন্তরজাল থেকে সংগৃহীত
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন