সাত - আট ঘন্টা লাগবে ঢাকা পৌঁছাতে। অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম। চোখ খুলতেই, হঠাৎ ভদ্র মহিলা দ্রুত আমার মুখ থেকে তার চোখ সরিয়ে নিলেন। মনে হল, আমার দিকে তাকিয়ে দেখছিলেন! চোখে চোখ পড়াতে তিনি বেশ লজ্জা পেয়েছেন। আমার ভিতর বাল্ব জ্বলছে, এইবার বোধহয় কথা শুরু করা যায়! মনে হয় অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন!
“আপা, বাস যে এলাকা থেকে ছেড়েছে সেই এলাকাতেই কি আপনার বাড়ি?" লাজ-লজ্জা ভেঙ্গে বলেই ফেললাম।
"জ্বি। সুতাপুর! আর আপনার বাড়ি?" তিনি জানতে চাইলেন।
সুতাপুর শুনেই বুকের মধ্যে একটা মোচড় দিয়ে উঠল! হাসি মুখ নিয়ে বললাম “আপা আমার বাড়ি এই এলাকায় না হলেও এই এলাকায় আমার মামার বাড়ী। বাল্যকালে এবং ইউনিভার্সিটি পড়ার সময় অনেকবার এসেছি। এলাকাটা আমার খুবই প্রিয়। চলনবিলের তাজা মাছ পাওয়া যায়।
দারুন একটা হাসি দিলেন। নাহ, এবয়সে এমন হাসি দেখা মানায় না! ছিঃ! বাচ্চাকাচ্চা বড় হয়ে গেছে!
"আচ্ছা সুতাপুরের রশিদ সাহেব কে চেনেন? বেশ ধনী, সম্ভ্রান্ত পরিবার।" জিজ্ঞাসা করলাম।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন “না তেমন পরিচয় নেই।”
রশিদ সাহেবের মেয়ে রাতা সম্পর্কে জানার খুবই আগ্রহ হচ্ছে। মামীর আত্নীয়, তাছাড়া হাজার হলেও ওর সঙ্গে আমার বিয়ের কথা হয়েছিল। ওই সময়ে মামা বাড়িতে একবার দুই তিন সপ্তাহ ছিলাম, তখন রাতাও এসেছিল। খুবই ভদ্র মেয়ে। জানতে চাই ছেলে-মেয়ে কয়টি স্বামী কি করে… ইত্যাদি।
“কোন রশিদ সাহেব সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? ওনার ছেলে মেয়ে কয়টি?” ভদ্রমহিলা জানতে চাইলেন।
“বিস্তারিত খুব বলতে পারবনা, তবে আপনার সমবয়সী একটা মেয়ে থাকার কথা”, জানালাম।
“ভাই আমি অনেকদিন ঢাকা থাকি, চিনতে পারছি না। আর হ্যাঁ, ভাই আপনি যখন ঘুমাচ্ছিলেন, তখন কিন্তু নাক ডাকছিল। আর আমার কাঁধের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন।" ভদ্রমহিলা বললেন।
প্রচন্ড লজ্জ্বা পেয়ে বললাম “সরি !”
হেলপারের ডাকে সংবিৎ ফিরে পেলাম। আধা ঘন্টার হোটেল বিরতি। বিরতিতে গেলাম।
পনেরো মিনিট পর আবার সীটে এসে বসলাম। ভদ্রমহিলা ব্যাগ থেকে বাটি বের করে সামনে ধরে বলল “নিন, খান। নিজ হাতে বানানো পরোটা।”
“না, মানে সরি. … এই মাত্র খেয়ে আসলাম, থ্যাংক ইউ। প্লিজ, মনে কিছু করবেন না।“
“ঠিক আছে! বলেই জানলার দিকে মুখ করে ভদ্রমহিলা খেতে থাকলেন। একদম না দেখার অভিনয়!
প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে, কিন্তু ঘুমাতে লজ্জা হচ্ছে। নেটে মগ্ন হলাম। ভদ্রমহিলা ঘুমাচ্ছেন। চুলগুলো উড়ে এসে মুখে পড়ছে। নাহ কিছু বলব না। বরং ভালো লাগছে। সময় যেতে থাকে!
“ওমা ! নামার সময় হয়ে গেছে। চলে এসেছি” ভদ্রমহিলা বললেন।
“ঠিক আছে, অনেক ভালো লাগল।“ আমি উত্তর দিলাম।
হঠাৎ ভদ্রমহিলা বলে উঠলেন, “আজকে পরোটা খেলেন না, কিন্তু বছর পনেরো পূর্বে তো আমার খাওয়া অর্ধেক পরোটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ঠিকই খেয়েছিলেন! মামী দেখে ফেলায় পালিয়েছিলেন!"
“রাতা”? অস্পষ্ট স্বরে বললাম। ততক্ষণে ও নেমে পড়েছে।
যতক্ষণ দেখা গেল তাকিয়ে থাকলাম। একবারও ও পিছন ফিরে তাকাল না। কি নিষ্ঠূর !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন