মহামারি ও সমাজ - তন্ময় মান্না



পুরাতন রবি, পরিচিত শশী উদিত মুক্ত গগনে;

চেনা পৃথিবীরে না পারি চিনিতে, ভাবি দেখিতেছি স্বপনে।

স্বপনে নহে, নহে ভ্রমে তাহা, দেখিতেছি সবই নয়নে;

মহামারি রোষে শ্মশান ধরণী, মনুষ্য চিরশয়নে।

দগ্ধ নগর, স্তব্ধ গেরাম, নিথর পড়ে সড়ক;

বিষন্নচিত্তে দেখি সমাজেরে, বুঝি লাগিয়াছে মড়ক।

দেখো দেবালয় হ‌ইল রুদ্ধ কঠিন লৌহদ্বারে;

দেব স্মিত হাসে, চাহিয়া রহে, অন্ত দেখার তরে।

ভাবিত কবি আজ এ দুর্দিনে নিষ্কৃতি তবে কেমনে?

চিন্তনগ্ৰাসে কবি বিনিদ্র, কাটে নিশি দুঃস্বপনে।

শিল্পীকণ্ঠে বিঁধে কণ্টক, বাহির না হয় গান;

রাঙাচক্ষেতে কহে মহামারি, গৃহেই রক্ষে প্রাণ।

করে বিদীর্ণ কর্ণপটহ মায়ের রোদনস্বর;

অবিরাম তালে প্রাণ কেবল‌ই ছাড়িতেছে শত ধড়।

জীবন পতিত সঙ্কটমুখে, গতিহীন গ্ৰহ ত্রস্ত;

বিস্ময়-সহ দেখি রণভূমে নিষ্ক্রিয় যত অস্ত্র।

বিশ্ববক্ষে নাই দ্বন্দ্ব, নাই জয়, নাই হার;

আজ এ যুদ্ধেতে দেখি কেবলই ঐক্যের সমাহার।

ভাঙিছে তন্দ্রা খেচর কূজনে, দেহ-মন অবসন্ন;

কর্ম বিনা ভাবিত মানব, জুটিবে কেমনে অন্ন!

নাই কর্ম, না জোটে অন্ন, মনোবলে ধরে চিড়;

কাঁদিয়া-কাঁদিয়া যায় শুকাইয়া দীনের নয়ননীড়।

তবু বেঁচে থাকা আজ এ আশায়, ঈশ্বরে বড় মানি;

ঘুচে যাবে শোক, মুছে যাবে মারি, নবপ্রভাতের সূর্য আবার‌ও উদিত হ‌ইবে জানি।

 



 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন