শিবের দূতী - অহনা বসু

  


 

গত কয়েকদিন ধরে একঘেয়ে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। শ্রাবণের শেষসপ্তাহ। আর কয়েকদিন পরেই শারদউৎসব। বৃষ্টির পরোয়া পুজো পাগল বাঙালি কোনোদিনও করেনি। ভবিষ্যতেও করবে এমন আশা নেই। কয়েকমাস আগে থেকেই কেনাকাটা, বাড়িঘর পরিষ্কার থেকে শুরু করে বেড়াতে যাওয়ার তোড়জোড় করা, সবকিছুরই হৈ হৈ রৈ রৈ করে সূচনা হয়ে যায়। সাথে শুরু হয় রাস্তাঘাটে জ্যামজট, ভিড়। রাস্তা হাঁটার যোগ্যতা হারায়।রাস্তায় বের হলে পঞ্চইন্দ্রিয়কে চরম বিন্দুতে সজাগ করে, সঙ্গের ব্যাগ – জিনিসপত্রকে সন্তানের ন্যায় আগলে ধরে, পা গুনে গুনে শিশুর পদক্ষেপে হাঁটতে হয়। এর ওপর যদি বৃষ্টি হয় তাহলে সোনায় সোহাগা। উপরি পাওনা হিসাবে জোটে নোংরা জল- কাদার প্যাচপ্যাচানি আর বৃষ্টির জন্য হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যার চাপে বেঁকে যাওয়া বাস-ট্রাম- ট্রেনের ভিতর চিঁড়েচ্যাপ্টা হওয়া ভিড়। 

আজও সকালে ঘুম থেকে উঠেই আকাশের কান্না দেখে আমারও কান্না পেয়ে গেল। আধো খোলা ঘুম চোখেই ভেসে উঠলো কাদাজলে মাখামাখি অফিস পাড়ার রাস্তা ঘাট,ভিড়ে ভর্তি বাদুড় ঝোলা বাসের দরজা। সকালবেলাই আকাশের মতই আমারও মুখ গম্ভীর আর মেজাজ বেতালা হয়ে গেল। ইচ্ছা হল আবার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘরের বাইরে পা রাখার কথা মনে আসতেই যেন তীব্র অস্বস্তি শুরু হল শরীর জুড়ে। তাও চাকরির অপর নাম চাকর-ই। মনে মনে কাকে যেন উদ্দেশ্য করে বিড়বিড় করে রাগ উগড়ে দিয়ে তৈরি হয়ে নিলাম। অন্যান্য দিন বাড়ির কাছের বাস স্ট্যান্ড থেকেই সোজা অফিস যাওয়ার বাসটা পেয়ে যাই। কিন্তু আজ অবধারিতভাবে জানতাম পাবো না। যেমন অন্যান্য বৃষ্টির দিনে হয় আরকি।কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পেয়ে গেলাম বাসটা।সকালে মানসচোখে ভেসে ওঠা চিরপরিচিত দৃশ্যটা চলমান হয়ে সামনে এসে দাঁড়াতে, আর বেশি না ভেবেই লাফ দিয়ে বাসের হাতল ধরে ঝুলে পরলাম। তারপর একটু একটু করে ছুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোনোর নীতি নিয়ে ভিড়ের ভেতর নিজেকে সেঁধিয়ে দিলাম।সবসময়ই আমার পীঠে একটা ঢাউস ব্যাগ থাকে। তার জন্য সবসময়ই আমায় কিছু বাক্যবাণ শুনতে হয়। আজও ব্যতিক্রম হল না। এই বিষয়ে আমি মূক – বধির অবতার ধারণ করি। কারণ ব্যাগে আমার পেশাগত ক্যামেরা ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র থাকে, যা ছাড়া আমার জীবিকা নির্বাহ করা অসম্ভব। আমি একটি মাঝারি মাপের দৈনিকের ততধিক মাঝারি যোগ্যতার চিত্রগ্রাহক। শখের ছবিও তুলে সেসব মাঝে মাঝে অন্যান্য পত্র – পত্রিকায় পাঠাই এবং তা ভালো দামে বিক্রি করে যৎসামান্য অর্থলাভও হয়ে থাকে। যা দিয়ে আমার একার সংসারের নৌকা দিব্যি তড়তড়িয়ে চলে যায়।


এক ঘণ্টার বাসের রাস্তা ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির কারণে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টা লাগিয়ে দিল। বাস থেকে নামার সাথে সাথেই আবার ঝেঁপে বৃষ্টি এল। বাস থেকে নামতে গিয়ে জলে পা পড়ে এক ঝলক কাদাজল ছিটকে এসে প্যান্টটা নোংরা করে দিল। আবার বিরক্তিতে বিড়বিড় করলাম। এইভাবেই নিজের রাগ-বিরক্তি – অসহায়তাকে আমি বরাবর প্রশমিত করে আসি।জলকাদা মাড়িয়ে অফিসে গিয়েও স্বস্তি নেই। ভিজে প্যান্ট আর আধা ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে জামায় বাতানুকূলের হাওয়া মোটেই সুখপ্রদ নয়। সঙ্গের লটবহর নিজের কিউবিকলে রেখে সোজা বাথরুমে গেলাম। হাত মুখ জল দিয়ে ধুয়ে, ভালো করে মুছে শুকিয়ে, অফিসের এক চিলতে রান্নাঘরে রাখা কফি মেশিন থেকে আমার নিজস্ব বিশালাকৃতির মগে কফি ভরছি, পীঠে একটা ধপাস করে থাপ্পড় পড়ল।এবার আর রাগ বিরক্তি আটকাতে পারলাম না। মুখ দিয়ে ‘চ’-কারান্ত শব্দ উচ্চারণের সাথে সাথে মারমুখি হয়ে পেছন ঘুরে তাকিয়ে থতমত খেয়ে গেলাম, প্রসাদদা হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন। 

-কি রে, এত রাগ কিসের? সক্কাল সক্কাল তোর হলোটা কি? এত মেজাজ খারাপ কেন? 

বেকুবের হাসি হেসে চুপ করে গেলাম। আমি এমনিতেও বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা। আর প্রসাদদা আমায় খুবই স্নেহ করেন, ওনার কাছ থেকেই আমার চাকরি জীবনের যাবতীয় শিক্ষণীয় বিষয়ের হাতেখড়ি। আমার গুরুস্থানীয়। খুবই শ্রদ্ধার মানুষ আমার জীবনে। নিজেই লজ্জায় পড়ে গেলাম। কোনোমতে ক্ষমা চেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম। 

প্রসাদদা আমার বিপদগ্রস্ত অবস্থা দেখে হেসে বললেন – একটা ভালো খবর আছে, আমার জন্যও এক কাপ কফি নিয়ে আমার ঘরে আয়।

দু’কাপ কফি নিয়ে প্রসাদদার ঘরে গেলাম। ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকতেই ভিজে জামা কাপড়ে গা শিরশির করে উঠল। চেয়ারে বসে আগে কফিতে পরপর দু’টো লম্বা চুমুক দিলাম।একটু আরাম লাগলো যেন। প্রসাদদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে হেসে বললেন – পুজোতে কোনও কাজ আছে ?বাড়ি যাবি ? 

-না । বলে মাথা নাড়লাম। 

-ভালো তাহলে। আমার সাথে ষষ্টির দিন আমার দেশের বাড়ি যাবি তবে। 

কফির কাপ থেকে মাথা তুলে একটু অবাক হয়ে তাকালাম। 

-অবাক হওয়ার কিছু নেই, আমি তো যাবো। তুইও চল। একা একা পুজোর সময় কি করবি! তাছাড়া অন্য একটা ব্যাপার আছে। 

বলে মন দিয়ে কফিতে চুমুক দিতে লাগলেন। প্রসাদদার এই এক স্বভাব। রহস্য তৈরি করে মানুষজনকে উত্তেজিত করে তোলা। 

আমিও কফি খাওয়া বন্ধ করে আগ্রহের চোটে হাঁ করে তাকালাম। 

প্রসাদদা প্রাণখোলা হাসি হেসে বললেন, আমাদের দেশের বাড়ি যাবো এবার। একটা ঘটনা ঘটে ওখানে, প্রতিবছর। ভাবলাম তোকে নিয়ে যাই, তোর ভালো লাগবে। তাছাড়া কপাল ভালো থাকলে তুই কিছু অসাধারণ ফটোর বিষয় পেয়ে যেতে পারিস। 

-কি বিষয়? কিরকম বিষয়? 

-শিবের দূতী। 

এবার আমার হাঁ বড় হয়ে কপালে ঠেকে গেল। এ আবার কি বিষয়? মানে কি? 

প্রসাদদা আমার মন পড়তে পারেন বহুবছর ধরেই। হাঁ করা মুখ দেখে মুচকি হেসে বললেন, বুঝলি না? জানিস না কে শিবের দূতী ? 

আমি দুদিকে মাথা নেড়ে না বললাম। 

প্রসাদদা লম্বা একটা চুমুকে কফির শেষটুকু খেয়ে উচ্চারণ করলেন – নীলকণ্ঠ রে। নীলকণ্ঠ পাখী। চিনিস তো নাকি? দেখেছিস কখনও? 

আমি আবারও মাথা নেড়ে না বলে বললাম, নাম জানি। কিন্তু দেখিনি কখনও। আজকাল তো এই পাখি পাওয়া যায় না শুনেছি। 

-ঠিকই শুনেছিস। কিন্তু বিলুপ্ত তো নয়। কোথাও কোথাও পাওয়া যায়। যেমন আমাদের দেশের বাড়িতে।    

- আপনাদের দেশের বাড়ি মানে জলপাইগুড়িতে?

- হ্যাঁ, তবে জলপাইগুড়ি থেকে আরও খানিকটা যেতে হয়। মেটেলিহাট বলে একটা জায়গা আছে। সেখানে আমাদের বাড়ি। 

উত্তরবঙ্গ নামটা শুনলেই মন কেমন উদাস হয়ে যায়। চোখের সামনে সবুজ শুধুই সবুজ ঘেরা ধোঁয়ায় ভরা পাহাড়ের রহস্যময় হাতছানি ভেসে ওঠে। ফুল আর ফুল, রঙের বাহার। আমার মুখে বোধহয় খুসির একটু ঝিলিক দেখতে পেয়েছিলেন প্রসাদদা। স্নেহের হাসি হেসে ফোন হাতে তুলে নিলেন,কাউকে বললেন – আমার দু’টো জলপাইগুড়ির টিকিট দরকার, পঞ্চমীর দিন।বাকি দরকারী কথা বলে ফোন রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, চল তাহলে রুদ্র, তোকে তোর দূতীর সাথে দেখা করিয়ে দিই। 

আমিও এবার হেসে ফেললাম, ধন্যবাদ দাদা, এখান থেকে ক’দিনের জন্য একটু মুক্তি পাবো। বড্ড হাঁফ ধরে গেছিল।  


আজ আর বাড়ি ফেরার সময় জল কাদা বাসের ভিড়ে ঘামের দুর্গন্ধ উল্টোপাল্টা বাক্যাবলী, কোনও কিছুই গায়ে লাগলো না। মন উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে বন জঙ্গল ভরা পাহাড়ের আনাচে কানাচে এক অজানা পাখির খোঁজে।শিবের দূতী।মনে পড়ল, পুরাণের গল্পে পড়েছিলাম এই পাখিকে বলা হয় শিবের পোষ্য। দশমীর দেবীভাসানের পর কেউ যদি নীলকণ্ঠ পাখিকে তার মনের কথা বা ইচ্ছার কথা বলে, পাখি কৈলাসে স্বয়ং শিবের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দেয়। তাতে নাকি মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। পুরাণের গল্প অলীক মনে হলেও এই পাখীর অস্তিত্ব অলীক নয়। হিয়ালয়ের তরাই অঞ্চলের বাসিন্দা এই পাখিকে দুর্গা পুজার সাথে জুড়ে দেওয়ার পেছনে আরও অনেক কাহিনী আছে। যেমন  রাবণবধের আগে এই পাখির দর্শন পেয়েছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। আবার অনেকের মতে, নীলকণ্ঠ পাখি পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল রামচন্দ্র ও তাঁর বাহিনীকে। তাই তার দর্শন পাওয়া শুভ বলে ধরা হয়।দশমীর দিন নীলকণ্ঠ পাখি কৈলাসে গিয়ে মহাদেবকে মা দুর্গার সপরিবারে ঘরে ফেরার বার্তা দেয়, তাই বনেদী বাড়িতে দশমীর দিন নির্বিচারে নীলকণ্ঠ ধরে খাঁচাবন্দী করা হত, মাতৃ ভাসানের কিছুক্ষণ আগে তাদের উড়িয়ে দেওয়া হত। কিন্তু বন্দী পাখিরা খাঁচা মুক্ত হয়েই কাক – চিল – শকুনের খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারাত। পক্ষীপ্রেমীদের আবেদনে সাড়া দিয়ে তাই সরকার এই প্রথা আইন করে রদ করে পাখিদের প্রাণ রক্ষা করেছে। মহাদেবের কাছে মায়ের আগমন বার্তা দেওয়ার কাজ করে বলে প্রসাদদা শিবের দূতী বলেছেন।


পঞ্চমীর দিন রাতের ট্রেন। আমি আর প্রসাদদা ট্রেনের সাইড আপার আর সাইড লোয়ার দুটো বার্থ নিয়েছিলাম। প্রসাদদা ইচ্ছা করেই এই দুটো বার্থ নিয়েছেন। ওনার বক্তব্য হল ট্রেনের সব থেকে ঝঞ্ঝাটহীন সিট হল এই দুটো। আরাম করে বসে, রাতের খাবার খেয়ে গল্প জুড়লেন। 

-বুঝলি রুদ্র, আমরা কলকাতায় আলাদা আলাদা ছোট ছোট পরিবারে থাকি ঠিকই, কিন্তু দেশের বাড়িতে আমাদের বিশাল যৌথ পরিবার। হাঁড়ি আলাদা হয়ে গেছে বহু বছর। কিন্তু পুজোর সময় সবাই একসাথে হয়ে যায়। একসাথে রান্না খাওয়া, শোওয়া, পুজোর দোকান – বাজার বা অন্যান্য সব কাজ করা – সমস্ত কিছুই এক পরিবার হয়ে করি। সারা বছর তাই পুজোর অপেক্ষায় থাকি রে। শহরের অনেকে এটাকে আদিখ্যেতা বলে মনে করলেও আমাদের মত দেশ – গাঁয়ের লোকেরা সারা বছরের অক্সিজেন এই কটা দিনেই সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। 

বাড়ির পুজোর আনন্দের সাথে অন্য কোনও আনন্দের তুলনা হয় না। আমাদের বাড়ির মন্দিরে যে দুর্গামূর্তি আছে তার ভাসান হয় না জানিস।একচালা পিতলের দুর্গা। আমাদের কোনও এক পিতৃপুরুষ নাকি স্বপ্নাদেশ পেয়ে ময়নাগুড়ির জঙ্গলের থেকে এই দুর্গামূর্তি ঘরে নিয়ে স্থাপনা করেন। সেই থেকেই পুজো হয়ে আসছে। নিত্যপুজা বলতেও আমাদের এই মূর্তিরই পুজো করা হয়। আমার এক বুড়ী বাল্যবিধবা পিসিঠাকুমা এখনও বেঁচে আছেন।পুজোর যাবতীয় আচার বিধি তাঁর নখদর্পণে।পুজো চলাকালীন হাসিখুশি ঠাকুমার মাঝে মাঝে ভর মত কিছু একটা হয়। আশ্চর্যের কথা সেই সময় ওনার বলা অনেক কথাই পরে সত্যি হয়ে যায়। 

একটু হেসে প্রসাদদা থামলেন, ভাবছিস আমি কুসংস্কারি? ঠাকুর দেবতা ভর – এসব নিয়ে গল্প বানিয়ে বলছি? তা ভাবতেই পারিস। তবে নিজের চোখে দেখবি যখন তখন বুঝবি বুজরুকি নয়। 

-আমি অবশ্য এসব কিছু ভাবিনি প্রসাদদা। কিন্তু তুমি নীলকণ্ঠ পাখি নিয়ে কি আশ্চর্যের কথা বলবে বলছিলে। সেটা কি ঘটনা? 

-ও হ্যাঁ, সেটা অবশ্য খুবই আশ্চর্যের। আমাদের বাড়ির পুজোতে প্রতি বছর নীলকণ্ঠ পাখি আসে। বাকিটা নিজের চোখে দেখিস। এবার ঘুমা। বলেই প্রসাদদা লম্বা একটা হাই তুললেন। বুঝলাম এবার আর কথা বাড়ানো উচিত হবে না।রাত হয়ে গেছিল। আমরা শুয়ে পড়লাম।মনে এক অজানা অলৌকিক কিছু প্রত্যক্ষ করার বাসনা নিয়ে আমি নীলকণ্ঠের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। 


ভোরে প্রসাদদার ডাকে ঘুম ভাঙলো। ট্রেন তখন জলপাইগুড়ি ষ্টেশনে ঢুকছে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম। ট্রেন থেকে নেমে গাড়ি নিতে হল। জলপাইগুড়ি থেকে প্রায় ঘণ্টা খানেকের পথ পেরিয়ে প্রসাদদাদের বাড়ি। রাস্তায় অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে গেলাম। বাড়ি পৌঁছে যা দেখে সব থেকে বেশি আনন্দ হল সেটার কথা প্রসাদদা একবারও উচ্চারণ করেননি। বাড়ির ঠিক গা ঘেঁসে পাহাড়ি নদী বয়ে চলেছে। কান পাতলে তার কুলুকুলু আওয়াজ পাওয়া যায়। আমি খুশি মুখে সেদিকে তাকিয়ে আছি দেখে প্রসাদদা বললেন, “ওটা কুর্তি নদী।“ নুড়ি পাথর বুকে নিয়ে এঁকে বেঁকে চঞ্চল পায়ে দু’পাশের ঘাসজমিতে জল ছেটাতে ছেটাতে নিজের খেয়ালে বয়ে চলেছে। দেখেই মন ভালো হয়ে গেল। মনে হল সারাজীবন এখানেই একটা পাতার কুটির বানিয়ে থেকে যেতে পারি। 


কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে মাথা ঘুরিয়ে তাকালাম, প্রসাদদা। বললেন – “চল ঘরে চল। একটু খেয়ে বিশ্রাম করে নে। তারপর ইচ্ছামত ঘুরে ঘুরে দেখিস।“ খাওয়ার কথা শুনেই যেন খিদের বোধ হল। বুঝলাম বেশ খিদে পেয়ে গেছে। দোতলা বেশ বড় মাপের বাড়ি। পর পর অনেকগুলো বাড়ি জুড়ে একটা প্রায় ছোট খাটো গ্রামের চেহারা নিয়েছে। ভেতরের উঠোনগুলো সব জোড়া। তাই পৃথক বাড়ি হলেও, ভেতর থেকে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যাতায়াতের সুবিধা আছে।এসব দেখে যত না অবাক হলাম, তার থেকেও বেশি অবাক হলাম উঠোনে ধানের গোলা দেখে আর এক কোণে ঢেঁকি দেখে। আজকের যুগেও যে এইসব জিনিসের অস্তিত্ব থাকতে পারে, তা আমার কল্পনার অতীত ছিল। দোতলার এক কোণে আমায় একটা ছোট ঘরে থাকতে দেওয়া হল। ঘরের অবস্থা দেখে বুঝলাম অতিথি সৎকারের ভালো অভ্যাস ও বন্দোবস্ত এই পরিবারের আছে। ঘরের সামনে খোলা ছাদ। ছাদে দাঁড়ালে সামনে বিস্তীর্ণ সবুজ ক্ষেত গিয়ে মিশেছে কোনো এক অজানা পাহাড়ের পাদদেশে। ধূসর দেহের মাঝারি-ছোট পাহাড়গুলোর মাথায় মেঘেরা পালক বুলিয়ে দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। শরতের নীল সাদা পেঁজা তুলো মেঘেদের আনাগোনা দেখেই সময় পেরিয়ে যায়। রোদ্দুর পড়ে পাহাড়ের বুকে জেগে উঠছে তরুনী বনানী। সবুজেরা মাথা ঝাঁকিয়ে সদর্পে যেন ঘোষণা করছে – তারাও আছে, তাদের না-দেখা করা যাবে না। কি অপূর্ব সুন্দর শান্ত প্রকৃতি। আমি ক্যামেরা বন্দী করতে লাগলাম। নিচে থেকে প্রসাদদার ডাক শুনতে পেলাম। খেতে ডাকছেন। 

নিচে খাবার ঘরে আলাপ হল পরিবারের অন্য সব সদস্যদের সঙ্গে।আলাপ হ’ল পিসি ঠাকুমার সাথেও। প্রণাম করতে মাথায় হাত বুলিয়ে থুতনি ধরে আদর করে দিলেন।ফোকলা দাঁতে মিষ্টি হেসে বললেন, মহাদেব তুমি নিজের বাহন দেখতে এসেছ?

আমি হেসে মাথা নিচু করলাম।ষষ্টির দিন ভোর থেকেই পুজোর বিভিন্ন কাজ শুরু হয়ে যায়।দেবীর বোধন আজ। প্রসাদদার কথামত স্নান করে পুজো মণ্ডপে গেলাম। বাড়ির লাগোয়া মন্দির। মন্দিরের অবস্থা জানান দেয় এর প্রাচীনত্বের, যদিও নিয়মিত পরিচর্যার ফলে বয়স ছাপ ফেলতে পারেনি। মন্দিরের থাম, দেওয়ালে বেশ সুন্দর কারুকাজ করা। তিনদিক ঘেরা মন্দিরে পিতলের মাঝারি উচ্চতার একচালা দেবীমূর্তি।মন্দিরের সামনে গোলাকৃতির কালো পাথরের চাতাল।চাতালের বামদিক ঘেঁষে কষ্টিপাথরে বিশাল এক শিবলিঙ্গ।শিবলিঙ্গকে অর্ধাকৃতিতে ঘিরে কিছু ছোট ছোট ফুলের গাছ।গাছের ডালে ঝুলছে মাটির নীলকণ্ঠ। মনে মনে ভাবলাম আসল নীলকণ্ঠ আসে যেখানে সেখানে নকল পাখি কেন? বাহুল্যহীন সাবেকী ব্যবস্থাপনায় পুজার আয়োজন।বাড়ির মহিলারা স্নানস্নিগ্ধ নতুন কাপড়ের খসখসে আওয়াজ তুলে পুজোর কাজে ব্যস্ত। পিসিঠাকুমা পুরহিতের কাছাকাছি বসে সমস্ত বিষয়ে লক্ষ্য রাখছেন। 

আমিও একদিকে বসে পড়লাম। প্রসাদদা একফাঁকে এসে জানিয়ে গেলেন নিজের বাড়ি ভেবে থাকতে। তাঁকে এই ক’দিন ব্যস্ত থাকতে হবে, তাই বিশেষ আতিথেয়তা করতে পারবেন না। আপন ভেবে যা ইচ্ছা আমি করতে পারি। আমি বসে বসে সবার কাজ লক্ষ্য করে গেলাম। লক্ষ্য করলাম লক্ষী বাদে সব দেব দেবীদের পরনের বস্ত্রের রঙ নীল।নজরে এল সমস্ত কিছুতেই অল্প অল্প নীলের ছোঁয়া। তাই হয়ত পরিবেশও নীলাভ হয়ে উঠেছে।আমি ক্যামেরা বার করে ছবি তুলতে শুরু করলাম।        

       

পুজো শেষ হতে প্রসাদদাকে খুঁজে বের করে নীল রঙের কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। প্রসাদদা বললেন, এই অঞ্চলটায় একসময়ে বৌদ্ধ ধর্ম বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। চৌথুপীর সংঘারামে  বিশেষভাবে বজ্রযান ধর্মমত প্রসার লাভ করে। বৌদ্ধরাও পৌত্তলিক, বিশেষ করে মহাযান ও বজ্রযানরা। তাঁদের আরাধ্যা দেবী তারা ও নীল সরস্বতী। আমাদের গ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই দুর্গা পুজোয় বৌদ্ধ ছাপ রয়ে গেছে। এখানে একটা গুপ্তযুগের লুপ্ত বৌদ্ধ বিহারও ছিল, যা এখন মাটির ঢিপিতে পরিনত হয়েছে।

আমি বললাম, তাহলে শিব এল কোথা থেকে? 

উত্তরে প্রসাদদা বললেন, বৌদ্ধদের মূর্তিপুজোর ঐতিহ্য অনুসরণে পরবর্তীকালে হিন্দুযুগে সনাতন শিব, দুর্গা, কার্তিক, গণেশ এসেছে। তারও  পরে লক্ষ্মী ও সরস্বতী এসেছেন।কথিত আছে মহালক্ষ্মীর ধারণা দুর্গার অনেক শতাব্দী আগের। বৌদ্ধরা, বিশেষ করে মহাযান ও বজ্রযানরা তন্ত্রের মাধ্যমে শিব ও শক্তির পুজো করত। হর-গৌরীর যুগল রমনমুদ্রা অর্থাৎ অর্ধ্বশায়িত শিবের ধ্বজায় উপস্থাপিতা দেবী চণ্ডী বা কালীকাই শক্তির উৎস। শিব উত্থিত না হলে সৃষ্টি অনাসৃষ্টি হয়ে যাবে। জমি কর্ষণ সম্ভব হবে না, ফসল ফলবে না। মানুষের এই আর্তিই নীলকণ্ঠ পাখি শিবের কাছে পৌঁছে দেয়।স্থানীয়দের ধারণা তার ফলেই আমাদের ভূমি শস্য শ্যামলা হয়ে থাকে।   

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, নীলকণ্ঠ পাখি কবে আসবে? 

প্রসাদদা বললেন , আসবে আসবে। সময় হলে ঠিক আসবে। 

পুজোর চারদিন নিরামিষ খাবারের আয়োজন। কিন্তু তার যা আয়োজন দেখলাম তাতে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। রাতেও পরেরদিন সপ্তমী পুজোর আয়োজন নিয়ে আলোচনা হতে দেখলাম। তুমুল ব্যস্ততায় বাড়ির কিছু মহিলা পুজোর যোগাড়ে ব্যস্ত। খেতে বসে গল্প হল প্রসাদদার ছেলে নীলাভর সাথে। নীলকণ্ঠ পাখি নিয়ে আমার জিজ্ঞাসা অবশ্য উত্তর খুঁজে পেল না। 

সপ্তমীর নবপত্রিকা স্নান দিয়ে দিন শুরু হল। সারাদিনের ব্যস্ততা আনন্দের মাঝেও আমার চোখ পাখি খুঁজে চলল। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যার সূচনায় একটু ফাঁকা পেয়ে নীলাভকে ধরলাম। 

-প্রসাদদা বলেছিলেন যে নীলকণ্ঠ পাখি আসে। কবে আসে? 

-পুজোর মধ্যেই আসে। বহু বছর ধরে আসে। না এলে সেটাকে অশুভ ধরা হয়। ওদের আসার সাথে আমাদের ফসল উৎপাদন জড়িয়ে আছে বলে এখানের মানুষের বিশ্বাস।

বলতে বলতে হঠাৎ নীলাভ থমকে থেমে গেল। লক্ষ্য করলাম আশপাশ সব কেমন থম্থমে হয়ে গেল। কেউ যেন নড়াচড়াও করছে না। গাছের পাতাও যেন হাওয়ার তালে দোলা বন্ধ করে দিল। 

নীলাভ ফিসফিসিয়ে বলল, সময় হয়ে গেছে। সূর্য আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পশ্চিমাকাশে বিশ্রামে যাবে। লগ্ন উপস্থিত। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পাখির পাল পূজাঙ্গনে নামবে। 

‘পাখির পাল’ শুনে আমি চমকে উঠলাম। এটা তো প্রসাদদা বলেননি। 

চুপ করে বসে রইলাম। নীলাভ ইশারায় বলল ক্যামেরার ফ্ল্যাশ না করতে।বুঝলাম আলোর ঝলকানিতে পাখি ঘাবড়ে যেতে পারে। আমি ক্যামেরা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেললাম।

-চুলোয় যাক আমার ফটো তোলা। আগে পাখির দর্শন করি। 

সময় যেন থমকে গেছে। সমগ্র লৌকিক পরিবেশ এক অলৌকিক – আধি লৌকিক – অপার্থিব মায়ায় ভরে উঠছ। ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষ আসতে লাগলেন। কিন্তু সবই নিঃশব্দে। পাতা ঝরার আওয়াজ পাওয়া যাবার নিস্তব্ধতা চারিদিকে। পুজো প্রাঙ্গণ জুড়ে সবাই বসে আছেন, ধ্যানস্থ, স্থবির।  ধীরে ধীরে প্রায়ান্ধকার আলোর মধ্যে সবাই আকাশের দিকে তাকাল। আসছে, ওরা আসছে। অবশেষে সে এল। একজন। নীলবর্ণ ধারণকারী। ডানা ঝাপটে সোজা এসে বসল শিবলিঙ্গের পাশের গাছে। মাথা ঘুরিয়ে একবার তাকালোসবার দিকে। কর্কশ কণ্ঠে ডেকে উঠল দুবার। যেন জানান দিল সব ঠিক আছে। 

এবার তারা এল। প্রবল স্তব্ধতার মধ্যে যেন নিম্নগামী এক দঙ্গল পাখির ডানার আওয়াজ পাওয়া গেল।এক এক করে এসে গাছ জুড়ে বসল সবাই। ঘাড় কখনও উঁচু করে, কখনও বেঁকিয়ে যেন পর্যবেক্ষণ করল সমবেত প্রতীক্ষমান ভক্তদের। তাঁদের কোনও ভ্রূক্ষেপই নেই। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণের পর তারা আলতো করে উড়ে গেল দেবীমণ্ডপে। আমরা বাইরে অপেক্ষারত।তাঁদের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। কাছে যাওয়ার সাহস কারো নেই।দূর থেকে আবছা অন্ধকারে দেখার চেষ্টা বৃথা।মন বলল দেখার দরকারই বা কি! মহাদেব দূতী মহাদেব সঙ্গিনীর সাথে নিভৃত আলাপচারিতায় মগ্ন। সেখানে সাধারণ মানুষের কি কাজ। কিই বা করব আমরা জেনে সেই গুঢ় আলোচনা ! মন্ত্রমুগ্ধতায় তাকিয়ে রইলাম। দেবী পদতল একরাশ নীল আভায় মাখামাখি হয়ে আছে। যেন সহস্র  ইন্দিবর অর্পণ করা হয়েছে। কয়েক মুহূর্ত মাত্র।  ঠিক সান্ধ্যলগ্নে বেরিয়ে এল তারা, ধিরে ধিরে এক এক করে উড়ে গেল আকাশে। নীলপাখির দল নীল দিগন্তে মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত কানফাটা স্তব্ধতা। সেদিন প্রথম অনুভব করেছিলাম নৈঃশব্দ্যের শব্দ কত প্রখর হয়। লোকচক্ষুর অন্তরালে ওরা উড়ে যাওয়ার পরেই প্রবল উলুধ্বনি ও শাঁখের সাথে সাথে কাঁসর,ঘন্টা আর ঢাকঢোলের আওয়াজে শুরু হল মহাসপ্তমীর আরতি। নিজের অজান্তেই আমার চোখ চলে গেল মাটির পাখিদের দিকে। ডানা নাড়তে দেখলাম কি! ভুল নাকি!হতে পারে। পার্থিব চোখে অপার্থিব দেখে ফেললে ভুল ভাবাই স্বাভাবিক। 

হঠাৎ কেউ গান গেয়ে উঠলেন। চমকে তাকালাম। পিসি ঠাকুমা দেবী মূর্তির সামনে ধ্যানস্থ। দুর্গা স্তব গাইছেন। শরীর দুলছে। নীলাভ বলল ভর হয়েছে।আবারও অপার্থিব এক সময়। সবাই হাত জোড় করে রইলাম।কিছু সময় পরে চোখ খুললেন পিসিমা।সামনে প্রসাদদার দাদাকে দেখে বললেন – এবছর জলের ব্যবস্থা করিস।কুর্তি এবার শুকিয়ে যাবে রে। চুপ করে গেলেন। আরতি শেষ হল।পুজো শেষে প্রসাদ বিতরণও হল। প্রসাদদার থেকে শুনলাম পিসিমার কথার মর্মার্থ। আগামী বছর বৃষ্টি কম হবে। তাই ফসলের জন্য জলের পর্যাপ্ত জলের যোগান রাখার কথা বলেছেন।  

 

পরের দু’দিনও একইভাবে ঠিক একই সময়ে পাখির দল পুজো প্রাঙ্গণে এলো।রোজই মনে হল সংখ্যায় যেন আগের দিনের থেকে বেশি। ছোট্ট পাখিরা এই দু’দিন ডানা ঝাপটিয়ে আওয়াজ করে মণ্ডপ চত্বরে হেঁটে বেরালো।আমিও সুযোগ বুঝে কিছু ফটো তুলে নিলাম। 

দশমীতে কোনও পাখি এলো না। গ্রামের লোকের তাতে বিশেষ চিন্তা দেখলাম না।তিনদিন তারা তাঁদের পার্থিব অপার্থিব সব ইচ্ছেই মন ভরে পাখিদের জানিয়ে দিয়েছে।বিশ্বাস আছে ঠিক মহাদেবের কাছে তাঁদের সেই আর্তি পৌঁছে গেছে।সন্ধ্যায় সারা গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে শোভাযাত্রা সহযোগে দশমীর ঘট বিসর্জন হল কুর্তি নদীতে। কেমন জানি একটা শূন্যতা গ্রাস করল। পরের বছর নীলকণ্ঠ পাখিরা আবার আসবে তো?  মণ্ডপে ফিরে এলাম।দুর্গামূর্তি আবার যথাস্থানে মন্দিরের ভিতরে অবস্থান করছে। মণ্ডপে ঘটের জায়গায় একটা প্রদীপ জ্বলছে।দশমী তিথির পুজো সমাপনের শূন্যতার মাঝে এক টুকরো আশা যেন। এই শূন্যতা অনুভব করার মধ্যে একটা আনন্দও আছে।এই মন খারাপের মধ্যেও থাকে এক অদ্ভুত ভালোলাগা। কিছু কিছু প্রতীক্ষা বড় মধুর হয়। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকার পর অজান্তেই তাকালাম শিবলিঙ্গের পাশের গাছগুলোর দিকে। চমকে উঠলাম। একি! একটা মাটির পাখিও তো নেই! তাহলে কি দেবী ভাসানের সময় পাখিদেরও বিসর্জন দেওয়া হয়! কিন্তু বিসর্জনের সময়ে আমি তো ছিলাম। কেউ তো পাখিগুলোকে জলে ভাসায়নি! 

হঠাৎ মনে পড়ে গেল দ্বিতীয় দিনের কথা। অস্বস্তির কথা। প্রথমদিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন পাখি মন্ডপে নামার পরেই মনে হয়েছিল নীলকণ্ঠের সংখ্যা যেন বেশি। ভেবেছিলাম মনের ভুল। অলৌকিকের মোহে পড়ে গেছি। সব কিছুতেই তাই অলৌকিক দেখছি। তাছাড়া পাখির সংখ্যা তো গোনা ছিল না। 

কিন্তু এখন! একটাও পাখি নেই! বিহ্বল দৃষ্টিতে পাশে বসা প্রসাদদার দিকে তাকালাম। দাদা যেন তৈরিই ছিলেন। রহস্যময় হাসি হেসে বললেন, উড়ে গেছে, মুক্ত বিহঙ্গে কৈলাসে পাড়ি দিয়েছে!প্রতিবছরই এইভাবেই উড়ে যায়। 

আমি স্তব্ধবাক হয়ে ফাঁকা গাছের ডালের দিকে তাকিয়ে বসে রইলাম। শুনতে পেলাম প্রসাদদা গুণগুনিয়ে গাইছেন -  

যাও উড়ে নীলকণ্ঠ পাখি, যাও সেই কৈলাসে,

দাও গো সংবাদ তুমি, উমা বুঝি ওই আসে।'--


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন