শরৎকাল মানেই বাঙালি জীবনে উৎসবের মরশুম শুরু।খাদ্য রসিক
বাঙালির যে কোনও উৎসব অনুষ্ঠানে এলাহী খাবারের আয়োজন থাকা বাঞ্ছনীয়। আনন্দোৎসবের পরিবেশে
লাল মাংসের চাহিদা সব থেকে বেশি হয়।যদিও বর্তমানে বলী বন্ধ হয়ে গেছে, তবুও শাক্ত উপাসনায়
পাঁঠাবলীর নিয়ম থাকায় ভোগ নিবেদনে বহু স্থানেই এখনো পাঁঠার মাংসের ভোগ নিবেদিত হয়ে
থাকে। এই মাংসকে নিরামিষ মাংস রূপেই অভিহিত করা হয়ে থাকে। নিরামিষ মাংস রান্নার পদ্ধতি
বেশ কিছুটা ভিন্ন ধরণের হয়। আজ অন্য কিছু ভিন্ন রন্ধন পদ্ধতির পাঁঠার মাংসের পদ বলব।
নিরামিষ পাঁঠার মাংসঃ
উপকরণ:
- ১ কেজি পাঠার মাংস,
- স্বাদ মতো নুন,
- ২০০গ্রাম সর্ষে তেল,
- ৪টি এলাচ বড়ো,
- ৪টি এলাচ ছোটো,
- ৪টি লবঙ্গ,
- ১টি দারচিনি,
- ২টি তেজপাতা, ২টি শুকনো লঙ্কা,
- ৩টি আলু,
- ২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো,
- ২ চা চামচ ধনে গুঁড়ো,
- ২ চা চামচ জিরে গুঁড়ো,
- ৩ চা চামচ আদা বাটা,
- ৩ চা চামচ লাল লঙ্কার গুঁড়ো,
- ২ চা চামচ কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো,
- ১ চা চামচ গরম মশলার গুঁড়ো,
- ৩ চা চামচ ঘি,
- ১/২ চা চামচ হিং,
- ১ চা চামচ চিনি,
- ১০০ গ্রাম টক দই
প্রণালীঃ
- মাংসটা ধুয়ে টক দই, জিরে গুঁড়ো, ধনে
গুঁড়ো, হলুদ
গুঁড়ো, কাশ্মীরি
লঙ্কার গুঁড়ো, সর্ষে
তেল মাখিয়ে ৩ ঘন্টা মাখিয়ে রাখতে হবে।
- ৩ ঘন্টা বাদে কড়াইতে তেল গরম করে আলু গুলো ভেঁজে তুলে
রাখতে হবে।
- একটা বাটিতে লঙ্কার গুঁড়ো, জিরে
গুঁড়ো, ধনে
গুঁড়ো অল্প জল দিয়ে গুলে রাখতে হবে।
- কড়াইতে আবার তেল গরম করে গোটা মশলা,তেজপাতা,শুকনো
লঙ্কা, হিং
ফোরণ দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতে হবে।সাথে আদা বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ কষতে হবে।
- সুন্দর গন্ধ বেরোলে বাটিতে গুলে রাখা মশলা দিয়ে
নাড়তে হবে ৫ সেকেন্ড।
- তারপর মাখানো মাংস দিয়ে কষতে হবে বেশ কিছুক্ষণ।
- তেল মশলা আলাদা হলে চিনি,নুন,ভেঁজে
রাখা আলু দিয়ে কোষে পরিমান মতো জল দিয়ে ঢাকা দিয়ে সেদ্ধ হতে দিতে
হবে।
আওধি মাটন কালিয়াঃ
গোস্ত কালিয়া প্রথম দিকে হালকা মশলা দিয়ে রান্না করা আছে। কথিত
আছে, আওধের নবাবরা যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের শরীরে অতিরিক্ত শক্তি ও ফুর্তি তৈরি করার
উদ্দেশ্যে এই রান্নায় ঘী -মশলার পরিমান বৃদ্ধি করেন। নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ কলকাতায় থাকাকালীন এই রান্নায় নতুন মাত্রা যোগ
হয়। এককালে নবাবের খানসামা বা রকাবদারেরা নবাবের মন পেতে মাংসের
টুকরোগুলো পাতলা সোনার তবকে মুড়ে ভাসিয়ে দিতেন লাল টকটকে ঝোলে। স্বাদের পাশাপাশি
দেখনদারিতেও সেই রান্না বাজিমাত করত। সোনা অর্থাৎ কুন্দন
বলে নবাব এই রান্নার নাম দেন গোস্ত কুন্দন কালিয়া।এই রান্নার বিশেষত্ব হল এর মধ্যে
‘লজ্জত এ তাম’ নামে এক বিশেষ প্রকারের মশলার
মিশ্রণ যোগ করা হয়।
১০০ গ্রাম “লজ্জত এ তাম” এর উপকরণঃ
- ৫ গ্রাম করে লবঙ্গ, ছোট এলাচ, গোলমরিচ, গোটা ধনে, অল স্পাইস, নারকোল কোরা, জিরা, শা জিরা, চন্দনগুঁড়ো, গোলাপের পাপড়ি, মাখানা, পোস্ত, মৌরি, শা মরিচ।
- ২ গ্রাম করে দারচিনি, জায়ফল, তেজ পাতা।
- ১ চামচ কেওড়া জল আর মিঠা আতর।
- ২ গ্রাম ‘বাওবির’ আর ‘জারাখুশ’ বা শুকনো লেমনগ্রাস।
- কেওড়া জল ও মিঠা আতর বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত উপকরণ একসাথে শুকনো কড়াইতে ভালো করে ভেজে নিয়ে মিহি করে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
এছাড়া অন্যান্য উপকরণ সমুহঃ
- ৫০০ গ্রাম মাটন
- ৪ টে পেয়াঁজ লম্বা সরু কেটে, ঘিয়ে ভাজা বেরেস্তা। সেটার অর্ধেক একটু হালকা বেটে নিতে হবে।
- ১ কাপ ঘি
- ৪ চা চামচ আদা রসুনের রস
- ১/২ কাপ জল ঝরানো টক দই
- ১ কাপ দুধ, এতে এক চুটকি জাফরান ভিজিয়ে রাখা
এবারে
প্রথম মশলাগুঁড়োর জন্যে
- ৩ টে লবঙ্গ
- ১/২ জয়িত্রী
- ৩-৪টে ছোট এলাচ
- ১ টা বড়ো এলাচ
- ১ ইঞ্চি দারচিনি
দ্বিতীয়
মশলাগুঁড়োর জন্যে লাগবে
- ১ বড়ো চামচ ‘লজ্জত এ তাম’ মশলা
- ৩ চা চামচ লাল লঙ্কাগুঁড়ো
- ৩ চা চামচ ধনে গুঁড়ো
- বেরেস্তা ভাজার
কড়াইতেই আরো ঘি দিয়ে প্রায় মিনিট কুড়ি মাংসটা মাঝারি
আঁচে বেশ ভালো করে ভেজে নিতে হবে ।
- তারপর আদা রসুনের রস দিয়ে কষিয়ে, প্রথম মশলার মিশ্রণটা দিয়ে কষাতে হবে।
- তারপর বেরেস্তাসহ
পেস্ট আর দই মিশিয়ে ঢেলে দিতে হবে।
- কষিয়ে নরম আঁচে ১৫
মিনিট ঢেকে রান্না করতে হবে।
- এরপর দ্বিতীয় মশলা মিশ্রণ দিয়ে কষিয়ে আরো কুড়ি মিনিট ঢেকে রান্না হবে যাতে মাংস পুরোপুরি নরম হয় ।
- এর মধ্যে দুধ জাফরান গোলা দিয়ে অল্প ফুটিয়ে, গাঢ় গ্রেভি হলে, শেষে কেওড়ার জল ও মিঠা আতর দিয়ে নামিয়ে নিতে।
কাশ্মীরি হলদী মাটনঃ
দীর্ঘ উপবাস বা অসুস্থতার পর পাঁঠার মাংস খেতে হলে তা মশলাদার
হলে খেতেও অসুবিধা হয় আবার অসুস্থ হবার সম্ভাবনাও থাকে। কাশ্মীরের পণ্ডিতরা আবহাওয়ার
সাথে মানিয়ে অতিরিক্ত তেল মশলা বর্জিত এক ধরণের পাতলা পাঁঠার মাংসের ঝোল রান্না করেন।
যা অনেক সময় রুগির পথ্য রূপেও ব্যবহৃত হয়। লঙ্কা একেবারেই পড়েনা বলে এবং হলুদের পরিমান
সামান্য বেশি হওয়ায় এই মাংসের রঙ হলুদ বর্ণের হয়। তাই এর নাম হলদী গোস্ত বা হলদী মাটন
দেওয়া হয়েছে।
উপকরণঃ
- ৫০০ গ্রাম মাংস
- ১ ১/২ চা চামচ আদাগুঁড়ো
- ১ ১/২ চা চামচ কালোজিরে
- ২ চা চামচ হলুদগুঁড়ো
- ২ টো বড়ো এলাচ থেঁতো করা
- হিং এক চিমটে
- নুন স্বাদমতো
- ১/২ কাপ দুধ
- ৩ চা চামচ মৌরিগুঁড়ো
- ১ চা চামচ শাহী জিরে
- ৪ টে লবঙ্গ
- ৪ টে ছোট এলাচ
- ১ ইঞ্চি দারচিনি
- ২ টো তেজপাতা
- ২ টেবিল চামচ সাদা তেল / সর্ষে তেল
প্রণালীঃ
- বেশি আঁচে জল গরম করে তাতে কালো জিরে, শাহী জিরে, হিং,
দুধ,
আর হলুদ বাদে, সমস্ত কিছু দিয়ে কুকারে বসাতে হবে,।
- ৫ মিনিট রেখে একটা সিটি দিয়ে নরম আঁচে বসিয়ে রাখতে হবে সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত।
- তারপর ঢাকা খুলে দুধে হলুদ গুলে মেশাতে হবে মাংসে। ঢাকা ছাড়াই মিনিট ২ ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে।
- অন্য পাত্রে তেল গরম করে, শাহী জিরে, কালোজিরে, আর হিং ফোড়ন দিয়ে সেটা কুকারে ঢেলে ঢাকা দিয়ে আঁচ বন্ধ করে ৫ মিনিট রেখে দিতে হবে।
- ঢাকা খুলে ঝোল মশলা মাংস সব একবার মিশিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন