কথাটা ভদ্রলোকের কানে পৌঁছায়নি। অবশ্য পৌঁছবার কথাও না; যতক্ষণে কথাটা বলেছে মৈনাক, ততক্ষণে তার সহযাত্রীটি ট্রেন থেকে নেমে হাঁটা দিয়েছেন। মাস দুয়েক হলো, এই মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় ওর। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার ব্যান্ডেল - হাওড়া লোকালের প্রত্যেক দিনের যাত্রী এই দুলালবাবুই সেদিন পকেটমারের হাত থেকে বাঁচায় ওকে। উনি সেদিন কাঁধে টোকা মেরে না দেখিয়ে দিলে চুরির ব্যাপারটা বুঝতেই পারতো না মৈনাক। সেই সূত্রেই ওনার সাথে আলাপ।
ভদ্রলোক বেশ মিশুকে। সস্ত্রীক উত্তরপাড়ায় একটি সেকেন্ড হ্যান্ড ফ্ল্যাটে নাকি বাস করেন। রুমালটি পঁচিশতম বিবাহবার্ষিকীতে উপহার দিয়েছেন দুলালবাবুর স্ত্রী। সযত্নে হাতে তৈরী করা, নিখুঁত এমব্রয়ডারির কাজসহ - এই গল্প মৈনাকের অজানা নয়।
রবিবার অনেক কাজ পরে আছে। পুরোনো বইপত্র সব পরিষ্কার করতে হবে ; কয়েকদিন খুব ইঁদুরের উপদ্রব হয়েছে ওর ঘরটায়। ওই বইখাতার স্তুপেই ব্যাটারা আস্তানা গেড়েছে। পরিষ্কার করতে করতে পুরনো ফোন নম্বর লেখা ডাইরিতে তার ছোটবেলার সবচেয়ে কাছের বন্ধু এবং সহকর্মী শুভমের নম্বরটা খুঁজে পায়। ঝটপট ফোন করে ফেলে মৈনাক।
- " চলছে, তুই? "
-" ভালোই আছি। তোর নম্বরটা আগের ফোন থেকে ডিলিট হয়ে গেছিলো। ভাগ্যিস
তুই নম্বর পাল্টাসনি। স্কুলবেলার পুরোনো ডায়রি সত্যিই অনেক কিছু ফিরিয়ে দেয়। চল না কাল দেখা করি।"
- " ওহ্, দেখা করবি! কেনো খারাপ কিছু হয়েছে নাকি?"
- " না রে, এমনিই ! "
- " ওকে দেন, কাল বিকেলে তোর ফ্ল্যাটেই আড্ডা হোক! "
- "ওকে।"
ঘন্টাখানেক কেটে গিয়েছে। মৈনাকের হোয়াটসঅ্যাপে একটা
মেসেজ আসে। লক স্ক্রীনে ফুটে ওঠে একটা টেক্সট মেসেজ, প্রেরক শুভম।
- "সে কি রে , মেসোমশাই মারা গেলেন কবে ?"
- " ওমা, তুই জানিস না? দুলাল মেসো , একবার আমরা দুজন
গেছিলাম ওদের বাড়ি! সেই যে ব্যান্ডেল-হাওড়া লোকালে কাটা পড়েছিল মেসো ! তুই তো
জানতিস। ভুলে গেছিস বোধহয়... এই দেখ..."
একটা ছবি পাঠায় শুভম। ফোনটা হাত থেকে পড়ে যায় মৈনাকের।
পড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক, কারণ ছবিটা তার
খুব চেনা; ছবিটা দুলালবাবুর
..
চিত্র সৌজন্যঃ আন্তরজাল
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন