বাবার প্রিয় রেডিও - মৃণাল বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়



 - বৌমা, আমার রেডিওটা এখান থেকে কে সরালো? মাথার বালিশের ডান পাশেই তো ছিলতোমরা তো সব্বাই জানো সকালে উঠে প্রত‍্যেকদিন আমি রেডিওতে খবর শুনিএটা আমার দৈনিকের অভ‍্যেস তোমাদের মা-ও রোজ সকালে ইচ্ছে করে রেডিওটা লুকিয়ে রাখতো যাতে করে আমাকে ঠেলে তাড়াতাড়ি বাজারে পাঠানো যায়তখনকার ব‍্যাপারটা অবশ‍্য সম্পূর্ণই আলাদা ছিলতখন না হয় আমার দায় দায়িত্ব ছিল, কিন্তু এখনতো আর আমার সংসারের দায়ভার বলতে কিছু নেইসব দায়িত্ব পালন করা সারা আর প্রতি মুহূর্তে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা- অনেক তো হলো এবার তোমার চরণে ঠাঁই দাও প্রভু


 - ওঃ,সকাল সকাল উঠেই দৈনিকের মতো আবার কেত্তন শুরু করে দিয়েছেন তোআপনার তো আবার আমাদের কোন কিছুই পছন্দ হয়নাসব্বাই বারবার করে বলছে এবার ঐ আদ‍্যিকালের যন্তরটাকে বিসর্জন দিন একটা ঢাউস বাক্স কারোর কোনও কাজে আসেনাশুধু একটা গোটা খাট জুড়ে জায়গা আগলে পরে থাকে লোকে এসে যে খাটের ওপরে একটু পা তুলে আরাম করে বসবে তার জো নেই খাটের ওপর শুধু বুড়ো আর বুড়োর পাশে বুড়ি রেডিওএমন ভাবে প্রোগ্রাম শুনবে দেখে মনে হবে যেন রাধাকৃষ্ণ প্রেম করছে!! 


    -      কিছু বললে?? সেই কখন থেকে ডাকছি, কানে যায়না বুঝি? নাকি বুড়ো হয়েছি বলে অচ্ছেদ্দা? বিষয় আশয় যা ছিল সবই তো ভাগ করে নিয়েছো না?এখন এই বুড়োটা মরল কি বাঁচলো তাতে তোমাদের কি যায় আসে বলো!!

     

    -      তাও ভালো বুড়ো কানে প্রায় কিছুই শুনতে পায়না আর তাতেই কি বচন! শুনতে পেলে তো বচনের চোটে এই বাড়িতে থাকাই যেতনা একসাথেআপনি কি জানেন আজ সরস্বতী পূজা বাড়িতে সকাল থেকে কর্মযজ্ঞ চলছে আর উনি ওনার বুড়িকে চোখে হারাচ্ছেন!! নিজের বড় ছেলেকে বলুন ঐ আরেকটা হয়েছে, পুরো বাপের ফটোকপিএকটা কুড়ের ডিম সকাল থেকে সেই যে পেপার নিয়ে বসেছে কোনও দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই পেপারের বিজ্ঞাপন গুলোকেও দৈনিক বসে বসে মুখস্থ করবে!!

 




    -      কি হলো বৌমা আমার কথা কি এখনো তোমার কানে প্রবেশ করেনি? আমার রেডিওটা কি খুঁজে পেলে??

 

    -      না বাবা আপনার সাথে দাড়িয়ে সাত সকালে গলা সাধার কোনও ইচ্ছেই আমার নেই আমি বরং আপনার গুণধর বড় পুত্রকে ডেকে দিচ্ছি দুজনে মিলে গলা জড়িয়ে আপনার হারিয়ে যাওয়া বউকে খুঁজে বার করুন

 

    -      কি ব‍্যাপার তোমরা দুজনেই সাত সকালে এতো চেল্লামেল্লি করছো কেন? তোমাদের উৎপাতের জ্বালায় একটু শান্তিতে খবরের কাগজটাও পড়ার উপায় নেইকত ইম্পর্টেন্ট নিউজ রয়েছে, কোনো ভালো কিছুতেই তো তোমাদের কোনও আগ্রহ নেইশুধু পরনিন্দা, পরচর্চা আর কুটকাচালি

 

    -      বেশি কথা না বলে তোমার বাবার প্রেমিকাকে খুঁজে বার করো আমার রাজ‍্যের কাজ পরে আছেশুধু পূজার সরঞ্জাম জোগাড় করে এনে দিলেই যেন দায়িত্ব মিটে যায় সবকিছু গুছিয়ে একটা সরস্বতী পূজা তোলা কি মুখের কথা? তার ওপরে আজকের দিনে পুরোহিত কে সময় মতো পাওয়া রীতিমতো ভাগ‍্যের ব‍্যাপার সময়ে না এলেই বেড়োও খুঁজতে ওরে ও পল্টু, বলি ঠাকুর বসানোর বেদী খুঁজে পেলি? আজকালকার ছেলেপুলেদের দিয়ে তো কোন কাজ করানোর জো নেই বলবো এক,আর করবে আর এক আর তাই নিয়ে আরেক অশান্তি

 

    -      আরে কখন বেদী পুরো রঙিন কাগজে মুড়ে সাজিয়ে রেখেছি মা মূর্তিটাকেও বেদীর ওপরে ঠিকঠাক বসিয়ে দিয়েছি বেদীটার রঙিন কাগজের সাথে মূর্তিটা হেব্বি ম‍্যাচিং হয়েছেমোবাইলে কটা ছবি তুলে বন্ধুদের পাঠিয়েও দিয়েছি সবকটা ছবি যা রামচিক এসেছে না!!সবার তাক লেগে যাবে

 

    -      বাবার প্রেমিকা মানে তো ঐ পুরোনো রেডিওটা!!এইরে, ওটাকে এখন কোথায় খুঁজে পাই? হয়ে গেল, আজকের পেপার পড়া মাথায় উঠলো বাবা আটটা অনেকক্ষণ বেজে গেছে খবরের সময় পার হয়ে গেছে আবার সন্ধ্যায় তো হবে? দেখছি তার আগে খুঁজে পাওয়া যায় কিনা পল্টু, তুমি কি দাদুর রেডিওটা দেখেছো?

 

    -      কি আজেবাজে বলছো বাবা, দাদুর রেডিও হারালেই শুধু আমাকেই সন্দেহ করো কেনো?

 

    -      কারণ, প্রতিবারই যে সেই সবশেষে তোমার কাছ থেকেই পাওয়া যায় সোনা মানিক আমার

 

    -      তাই বলে এবারও?? বাবা আমি কিন্তু বড় হয়েছি আমার একটা প্রেস্টিজ আছে তুমি যার তার সামনে যেখানে সেখানে আমাকে এইভাবে ইনসাল্ট করতে পারোনা কিন্তু

 

    -      যার তার সামনে আবার কোথায়? এখানে তো আমরা নিজেরাই আছি

 

    -      পুতুল পিসি তো বাইরের লোক দেখতো কিভাবে হাসছে

 

    -      ও মাগো, কি মিথ‍্যে কথা বলে গো, আমি নাকি হাসছি!! আমার মুখটাই তো সবসময় হাসিহাসি, সব্বাই বলে

 

    -      এই এবার তুই শুরু হলি নাকিতুই ঘর ঝাঁট দিচ্ছিস দে না

 

    -      ঝাঁট দেবো কিভাবে শুনি সবকজন তো এইঘরেই শেধিয়েছোঘর থেকে না বেরোলে ঝাঁট দেওেয়া যায়? পায়ে ঝাঁটা লাগলে তো বলতে ছাড়বে না, চোখের মাথা খেয়েছিস?

 

    -      চল চল ঘর থেকে বেরো সবাই ওকে ভালো ভাবে ঘরটা পরিস্কার করতে দে নাহলে পরে তোর মা কাছে আমাদের বিরুদ্ধে নালিশ করে দেবে যে আমাদের জন‍্যে ঠিকমতো ঝাঁট দিতে পারেনি

 

    -      বলবোই তো, একশ বার বলবো নিজেরাতো বলার সময় ছাড়না

 

    -      আরে এই বড় খোকা তখন থেকে তো শুধু ঝগড়াই করে যাচ্ছিস কাজের কাজতো কিছুই হচ্ছেনা আমার রেডিওটা একটু সবাই মিলে হাত লাগিয়ে খোঁজপুতুল, একটিবার দেখনা মনা খাটের তলায় ভুল করে কেউ রেখে দিয়েছে কিনা আমি তো কোমর ঝুঁকিয়ে দেখতে পারিনা

 

    -      জ্যেঠু, তোমার ঐ পেল্লাই রেডিও খাটের তলায় ঢুকবে নি গোআর যা ওজন!! কে ওটাকে ওঠাবে নামাবে বলো??

 

    -      আমি জানি ওই রেডিও আর পাওয়া যাবেনা সেই কবে সুবোধের দোকান থেকে মহালয়ার আগের দিন আমি আর তোর জ্যেঠি একসাথে গিয়ে পনেরো টাকা বারো আনা দিয়ে কিনে নিয়ে এসেছিলাম খোকার মায়ের খুব প্রিয় ছিল রেডিওটাবুধবারে সন্ধ‍্যা সাড়ে ছটায় যাত্রা শুনতাম দুজনেখোকাও ছোটবেলায় ওর মার সাথে বসে মুখ হাঁ করে শুনতোসকাল সন্ধ‍্যা কখনো,” আমি খবর পড়ছি নিলীমা সান‍্যাল আবার কখনো কখনো,” স্থানীয় সংবাদ, পড়ছি শ্রী দেবদুলাল বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়সে কি ভরাট কন্ঠস্বর!!এক মাইল দূর থেকেও স্পষ্ট শোনা যেত আর শনিবার দুপুরের শ্রুতিনাটক-জগন্ময় আর ঊর্মিমালা বসু কি অসাধারণ বলবার কৌশল মনে হতো যেন স্টেজে অভিনয় করছে

 

    -      প্লিজ দাদু, এবার কাইন্ডলি একটু থামোএই একটা ফালতু আবর্জনা নিয়ে তোমার এই ফ‍্যাচফ‍্যাচানি শুনতে শুনতে কান পচে গেছে আরে এইসব জিনিস কবে সবাই মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দিয়েছেআর তুমিই মাত্র একজন আছো, এখনও সেই আদ‍্যিকালের সেন্টিমেন্ট আঁকড়ে পরে আছ কত ভালো ভালো গ‍্যাজেট বাজারে এসে গেছে বললাম তোমাকে একটা ট‍্যাব কিনে দিক বাবাবেশী দামও নয়,দুনিয়ার সবকিছু হাতের মুঠোয় যখন যেটা খুশি নিজের ইচ্ছে মতো দেখো সাইজেও ছোট যেখানে ইচ্ছা সঙ্গে নিয়ে ঘোরোতা না ওই ঢাউস সেকেলে ব‍্যাক ডেটেট বস্তুটাকেই লাগবে কানেও তো ঠিকমতো শুনতে পাওনাতাহলে এই যন্ত্রটাকে বয়ে বেড়ানোর আর কি দরকার বলো তো?

 

    -      পল্টু, থাক ছেড়ে দাও বয়স হয়েছে, এইসব বলে লাভ হবেনাএর আগেও তো আমরা সবাই কত বুঝিয়েছিলাভ হয়েছে কিছু?এখন পারলে সবাই মিলে চলো রেডিওটা খুঁজে দেখিরেডিওটাই বা সাত সকালে বেমালুম হাওয়া হয়ে গেল কোথায়? একদম তো ছোটখাট জিনিস নয় যে চোখের আড়ালে চলে গেলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না!!

 

    -      তোমরা খোঁজ,আমাকে এর মধ‍্যে জড়িও নাআমার অনেক কাজ আছে একটু বাদেই বন্ধুরা সব ফোন করা শুরু করে দেবেস্কুলের পূজাতেও সাড়ে দশটার মধ‍্যে পৌঁছতে হবে মা আমাকে ঠাকুরের জন‍্যে বেদী বানাতে বলে ছিল, আমি বানিয়ে দিয়েছি ব‍্যাস, আমার দায়িত্ব শেষমা আমার হলুদ পাঞ্জাবিটা গতকাল কেচে দিয়েছিলে তো? ওটা কোথায় রেখেছো? খুঁজে না পেলে একটা রামচিক হবে কিন্তু

 

    -      পল্টু কি বলে গেলো?? সরস্বতী ঠাকুরের মূর্তির নীচে বেদী বানিয়েছে?? হয়েছে রে রেডিও কোথায় আছে বোঝাই যাচ্ছে আর ঐ জন‍্যেই হম্বিতম্বি করে দ্রুত পালিয়ে গেল কিন্তু এখন রেডিওটাকে তো কোনোভাবেই ওখান থেকে সরানো যাবে না মায়ের মূর্তি অলরেডি স্থাপিত হয়ে গেছে সরাতে গেলেই এক্কেবারে দক্ষযজ্ঞ লেগে যাবে তাহলে এখন কি করা উচিত? পল্টুর মা কে সামলাবো, নাকি নিজের বাবাকে সামলাবো?? আমার মনে হয় পরেরটাই তুলনামূলক ভাবে বেশী সহজ হবেতবে এটা প্রায় দিন চারেকের ধাক্কা কি করে উতরানো যায় সেটা সবার আগে ভাবতে হবে কারণ এতদিন বাবাকে থামিয়ে রাখা যাবেনা তাহলে কি একটা নতুন রেডিও দোকানে গিয়ে কিনে আনবো? কিন্তু নতুন রেডিও কি বাবার পছন্দ হবে?? মনে হয়না কারণ এতদিনের একটা বন্ধন আর তাছাড়া চার দিন বাদেই তো আগের রেডিওটাই আবার ফেরত পাওয়া যাবে সেক্ষেত্রে টাকাটা পুরো জলে যাবে পল্টুর মাকে বললে আমার বুদ্ধি নিয়ে যে বিশাল ব‍্যাখ‍্যা শুনতে হবে তার চেয়ে চুপচাপ নিজেকেই কিছু একটা সল্যুশন খুঁজে বার করতে হবে-যাতে করে সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙে

 


সকালটা প্রচুর ব‍্যস্ততার মধ্যে দিয়েই কেটে গেলো পূজোর নিয়ম নির্ঘন্ট সব একেবারে পারফেক্ট কিন্তু যথারীতি,প্রতিবছর যা হয়  এবারেও তাই পুরোহিতের পাত্তা নেই এদিকে পঞ্জিকা মতে দুপুর বারোটা বেয়াল্লিশ পযর্ন্ত পূজার লগ্ন এই বোধহয় চক্রবর্তীর জন‍্যেই সব কেঁচিয়ে যায় এমনিতেই তো ছেলের যা লেখাপড়ার ছিড়ি, দশম শ্রেণির মাধ্যমিক পরীক্ষা আর পনেরো দিনও নেই পাশ করবে বলেতো মনে হয়না আবার লেখাপড়ার ব‍্যাপারে কোনরকম প্রশ্ন করা যাবেনা জিজ্ঞেস করলেই কটা রামচিক এমনভাবে সাজিয়ে বলে দেবে যে আপনার লেখাপড়াই আপনি ভুলে যাবেন তা এই রামচিক বস্তুটি যে কি সেটা আমি আজও উদ্ধার করে উঠতে পারিনি পল্টুর মাকে কত করে বললুম যে শতায়ু চক্রবর্তী কে না পাওয়া যায় তো শ‍্যামল ভট্টাচার্য কে ডাকিনা সেটা হবেনা কোনমতেইকেন?? না উনি নাকি সন্ধ‍্যার পরে কিঞ্চিৎ রঙিন পানিয় সেবন করে থাকেন আর কে বলেছেন জানেন?? ঐ যে একজনই তো আছে পুতুল কুমারী বয়স সেই কবে চল্লিশ ছুঁয়ে ফেলেছে, এখনো নাকি কুমারী!! তা অগত‍্যা পল্টুকে দায়িত্ব অর্পণ করা আর তার উইদিন পনেরো মিনিটের মধ‍্যে চক্রবর্তী চ‍্যাঙদোলা অবস্থায় সোজা মা সরস্বতীর বেদীর সামনে

    

-      মা, এই যে রইলো তোমার গুণধর ঠাকুর মশাই আমি চললাম,তাড়া আছে


    -      বউমা, বলি কি মা বয়স তো হয়েছে এখন এই বয়সে যদি, যাকে বছর কয়েক আগে হাতেখড়ি দিলাম, এইভাবে বস্তার মতো করে তুলে নিয়ে আসে সেক্ষেত্রে হাড়গোড় গুলো যদি স্থানচ‍্যুত হয় তাহলে কে দেখবে বলো মা আমিতো এদিক পানেই রওনা দিয়েছিলাম কিন্তু ঐ যে রামনাথের গুণধর তিন পুত্র পথ আগলে দাঁড়ালো আমি বুড়ো মানুষ কি করতে পারি বলো মা এই নিয়ে সকাল থেকে তিনবার চ‍্যাঙদোলা হতে হলো

 

    -      নিন নিন, চক্রবর্তী মশাই এবার শুরু করে দিন তাও ভালো যে লোকে চ‍্যাঙদোলা হয়ে শ্মশানে যায়, সেখানে আপনি না হয় পূজোর আসরে এসে বসেছেন আপনাকে কষ্ট করে আর সিড়ি ভেঙ্গে দোতলায় উঠে আসতে হলোনা


যাকগে, পূজোর লগ্ন শেষ হতে তখনও মিনিট কুড়ি বাকি ছিল ঠাকুর মশাই শুকনো গলায় হাতে ফুল চন্দন দুব্বো নিয়ে-ওং,সরস্বত‍্যই মহাভাগে বিদ‍্যে কমল লোচনে...শুরু করে দিলেন


এবার অঞ্জলি দেবার ডাক পরলো বাড়ির সবাই এবং আশেপাশের বোস আর রায়দের বাড়ির ও প্রায় জনা আটেক; মোট প্রায় বারো তেরো জন একসাথে অঞ্জলি দেওয়া শুরু হয়ে গেল তিনবার অঞ্জলি মন্ত্র হয়ে  যাওয়ার পর এবার পুস্পাঞ্জলি ফুলদানিতে যত ফুল বেলপাতা জমে ছিল তার সবটাই প্রত‍্যেকের হাতে দিয়ে দেওয়া হলো শুরু হলো মন্ত্রপাঠ-“ ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগ শোভিত মুক্তাহারে, বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।“

ব‍্যাস মন্ত্র পাঠ শেষ সবাই একসাথে শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগের মাধ‍্যমে দেবীর পদমূলে ফুল বেল পাতা রাশি নিক্ষেপ করলো আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে মা সরস্বতী স্বয়ং কথা বলে উঠলেন আজকের বিশেষ বিশেষ খবর হলো যে,


    “… আজ সমগ্র দেশ জুড়ে সমস্ত দেশবাসী মা বাগদেবীর আরাধনায় নিবেদিত পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সর্বত্র মহা আড়ম্বরের সাথে এই পূজা পালিত হচ্ছে সামনেই এবছরের  মাধ্যমিক পরীক্ষা তাই ছাত্রছাত্রীদের মধ‍্যেও এই পূজাকে ঘিরে বিপুল উত্তেজনা রয়েছে সবাই মায়ের কাছে পরীক্ষা যাতে ভালো হয় তার অগ্রীম জন্য আশীর্বাদ চেয়ে নিচ্ছে...।“

সবাই তো প্রথমে পুরোপুরি হতভম্ব কারোর মুখ দিয়েই কোনও কথা সরছে না আমি প্রথমেই যেটা আশঙ্কা করেছিলাম ঠিক তাইপুরোনো রেডিও নবগুলোও একটু নড়বড়ে হয়ে গেছে এবং বাবাও মনে হয়  গতকাল রাত্রে ঠিকমতো রেডিওটা বন্ধ করেননি

আমি আর পল্টুর মা পরস্পরের দিকে অবাক বিস্ময়ে ফ‍্যাল ফ‍্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না

       

গত চারদিন বাবাকে ঠাকুর ঘরেই থাকার ব‍্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে মা সরস্বতী এবং বাবা দুজনেই সকাল সন্ধ‍্যা নিয়ম করে খবর শুনছেন।।

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন