সেই কবে, সেই গোঁফ-না-ওঠা হাইস্কুল আপার ক্লাস। দুষ্টুমি-ভরা দুপুর।
ক্লাসের জানলা গলে দৃষ্টি আছড়ে পড়ত ক্লাস টুয়েলভের ব্যালকনিতে। নীল পাড় সাদা
শাড়ির একঝাঁক প্রজাপতি কার্নিশের আলসেমি-ধরা ভরন্ত যৌবনে বুকের অলিন্দে হাতুড়ি
মারত। সেই কবে, নিস্তরঙ্গ পাড়ার মাটির সোঁদা গন্ধে মিশে থাকত অনাঘ্রাত
যৌবনের কুহুকুজন।
পাড়ার ওই কোণের বাড়িটায় সবে বিয়ে হয়ে এসেছে স্থিতধী।
আধুনিকা। কাঁধ-খোলা চুল। স্লিভলেস ব্লাউজ। আটপৌড়ে পাটভাঙা শাড়িতে স্নান-পরবর্তী
সুষমা। পাড়াময় নিষেধের অদৃশ্য বেড়াজালে ঘুরে ফিরে বেড়ায় তন্বী। সৌপ্তিকও এ
পাড়ারই স্মার্ট, ঝকঝকে, কুড়ি-শেষের হ্যান্ডসাম। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির উঁচু পদ।
বিশাল মাইনে। পেল্লায় বাড়ি। গ্যারাজে দামি গাড়ি। বউ পল্লবীর অবশ্য পার্টি, সোশ্যালাইজিংয়ে
বিশেষ মতি নেই। তবে শোনা যায়, কলেজে পড়ার সময় এমনটা ছিল না। বন্ধু, পার্টি, প্রেম, নাইট
লাইফ সবই ছিল জীবনে। ভরপুর ছিল। কী যেন একটা কেসে ফেঁসে গিয়েই চিত্তির। বাড়ি থেকে
তাই তড়িঘড়ি বিয়ে। সৌপ্তিকের মতো পাত্র,
তাই বিয়েতে বিলম্ব হয়নি। বিয়ের পর থেকে উঠোনের তুলসীমঞ্চ, শ্বেতপাথরে
মোড়া ঠাকুরঘরেই পল্লবীর যত আনাগোনা। নিত্য যাপন। সৌপ্তিক একটু একটু করে বুঝে উঠতে
থাকল, খোলা হাওয়া বারান্দার নৈঋত কোণ দিয়েই বয়ে যায়।
এক বিকেলে সবে ঝড় উঠব উঠব করছে। কার্নিশে কনুই সৌপ্তিকের, এলিয়ে
থাকা শরীর নিস্পলক চেয়ে আকাশনীল বাড়িটার ছাদে। ছাদের নাইলনের দড়িতে বেসামাল
হাওয়ায় উথালপাথাল ভিজে ভিজে জামাকাপড়। হিমশিম স্থিতধী। হলুদ ডোরা শাড়ি উড়ে যেতে
চায় উত্তরে। শরীর জোড়া নরম রং, আলতো অভিপ্রায়ে সৌপ্তিকের চোখে যেন কামিনীর ছায়া...
- হাই, কেমন আছেন?
- দেখুন না, কী দুষ্টু হাওয়া।
- আমি আরও দুষ্টু। সৌপ্তিকের সরস কথায় স্থিতধীর ঠোঁটে খিলখিল
হাসি।
- পল্লবীদি কোথায়?
- যেখানে থাকে, ঠাকুরঘরে। আর আপনার কর্তা?
- অফিস ট্যুরে। আপনার অফিস নেই?
- ছিল। আজ অতীত। জানতাম ঝড় উঠবে, জানতাম
আপনি কাপড় তুলতে আসবেন, জানতাম কথা হবে, জানতাম সব ওলটপালট হয়ে যাবে। জানতাম ঝড় থেমে নতুন ভোর
উঠবে। জানতাম আপনি থেকে তুমি হতে বেশি সময় লাগে না।
- আপনি তো দারুণ কথা বলেন। পল্লবীদি ভেরি লাকি অ্যাজ ইয়োর
ওয়াইফ।
- বাট আই অ্যাম নট লাকি। বাট টুডে অনওয়ার্ডস আই থিঙ্ক মাই
লাকি ডেজ ইজ অন দ্য ডোরস্টেপ অফ মাই লাইফ।
- বুঝলাম না।
- বুঝিয়ে দেব। নিড ইয়োর নাম্বার। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড।
- ওকে।
সেই ঝড়স্নাত দুপুর, সেই আলাপ, সেই পরকীয়ার চৌকাঠে পা রাখা দুই নর-নারী ভিন্নতর প্রেমে
ভেসে যাওয়া। বলাই বাহুল্য। এক পাড়া, গোপন অভিসার, উথাপাথাল জীবনের চোরাবালিতে ঘাই মেরে যাওয়া পরকীয়ার
নিত্যনতুন পাঠে আদ্যন্ত ডুবসাঁতারে খেই হারাত সৌপ্তিক-স্থিতধী। এপার-ওপার
বারান্দায় নিছকই জীবনের আটপৌরে গল্প। আর ফোনে রোম্যান্সিত কথালাপ। শরীরী, অশরীরী, আপামর
আজানু কামনা। পল্লবী জানতেও পারত না সৌপ্তিক কোথায়। অফিসে, নাকি
স্থিতধীর হাত ধরে পার্কের নরম ঘাসে আধশোয়া। নাকি দামি রেস্তোরাঁর আলোআঁধারিতে
মুখোমুখি, চোখাচোখি, আঙুলে আঙুল রেখে হাত ধরায় না-বারণ। নাকি নামেই অফিস ট্যুর, স্থিতধীকে
নিয়ে দুদিনের জন্য ডুয়ার্সে সৌপ্তিক। না জানে পল্লবী, না
জানে তমোনাশ।
কিন্তু আচমকাই, অনেকদিন পর স্থিতধী-সৌপ্তিকের পরকীয়ার গেটে তালা পড়ল। লক
ডাউন। আশ্চর্যের কী! কদমফুলের গায়ে কাঁটা কি দেখেছে কেউ? না
সৌপ্তিক, না স্থিতধী। তাই পৃথিবীর পথে-প্রান্তরে, পরিবহণে
ইয়াব্বড় তালা। এক সিরিয়াল কিলার ছুটে বেড়াচ্ছে দুনিয়াদারির গভীরে ঘাই মেরে। এক
দেশ থেকে আরেক দেশ। যত বড়ই সিরিয়াল কিলার হোক করোনা, অপরাধী
যখন, তখন ক্লু তো রেখে যাবেই। নিজে আদর করে সেধে বাড়িতে না
ঢোকালে এই সিরিয়াল কিলারের ক্ষমতা নেই বাড়িতে ঢোকে। নিঃশব্দে খুন করে দিয়ে পালাতে
পারবে না কিলার-করোনা। তাই লকডাউনে হেড আপ। পরকীয়া ডাউন। সৌপ্তিক যতই স্থিতধীর
বাহুডোরে বাঁধা পড়ুক, যতই মনে মন ঘষাঘষি খাক, লক ডাউনে প্রেমটি নট। পল্লবীর মোবাইল থেকে উড়ে এল
হোয়াটসঅ্যাপ, সৌপ্তিকের মোবাইলে,
First time in history, everywhere in the world, every woman knows where the
husband is.
পরের দিন ফের পল্লবীর হোয়াটসঅ্যাপ, পরকীয়াতে
জল ঢেলে পতিরা এখন আস্তাবলে।
একটা চরিত্র মুখে মুখে মুখোশ হল,
ক্যাপশন জুড়ে ছবিটা মুহূর্ত দিল,
আবেগ পেল পলিথিনের বাড়তি পাঁচআনা হিসেব
আর পরকীয়া প্রেম নিল ক্যাকটাসের
যৌনতার ছেঁকা।
বউয়ের অধিক দু-তিনটে গার্লফ্রেন্ড রাখাটা যে-সৌপ্তিকের
স্ট্যাটাসের মধ্যে পড়ে, সে এখনও প্রেম সেঁকে নিচ্ছে। বিয়ের তিয়াত্তর মাস পরে
পল্লবীতে নতুন করে মজছে। গৃহবন্দি বিকেলে ছেলেবেলায় শোনা নচিকেতার সেই গানটা নতুন
করে মনে পড়ছে,
"বউকে লাগবে ভাল আগের মতন, দৃষ্টিভঙ্গিটা শুধু বদলাও।"
করোনা নামক সিরিয়াল কিলারকে খতম করতে অফিস আর বাহির-প্রেম
ভুলে সৌপ্তিক এখন পল্লবীর আরও বেশি কাছে এসেছে। কাছে টানছে। স্থিতধী এখন তমোনাশের
মনের আরও গহিনে। স্বামী-স্ত্রীর বাঁধন আরও মজবুত হচ্ছে। ঘটি-বাটি ঠোকাঠুকি লাগলেও
আলটিমেট উইনার হ্যাপি ফ্যামিলি। পরকীয়া আপাতত ব্যাকফুটে। সৌজন্যে লকডাউন। দুরন্ত
দাম্পত্য। তবে দাম্পত্য যতই দুরন্ত হোক,
পককীয়ার সঙ্গে ঠোকাঠুকি না লেগে কি থাকতে পারে! করোনার
প্রথম ঢেউ, দ্বিতীয় ঢেউ,
তৃতীয় ঢেউ, চতুর্থ ঢেউ পেরিয়ে পঞ্চমের চৌকাঠে ফের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি।
ব্যস, ফের দুনিয়াজুড়ে লকডাউন। আর এই মাঝের সময়টায় ওই নৈঋত কোণের
বাড়িতে যে রঙিন এক প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ে এসেছে, সে খবর সৌপ্তিকের কান পর্যন্ত
এসে পৌঁছয়নি। কারণ, স্থিতধীর সঙ্গে এখন আর যোগাযোগ নেই বললেই চলে। ফার্স্ট
লকডাউনে সেই যে পরকীয়ার গেটে তালা পড়েছিল,
সে তালা খোলেনি স্থিতধী। কিন্তু লাগাতার চেষ্টা জারি রেখে
গেছে সৌপ্তিক। তার মধ্যেই মেঘ না চাইতে জল। তমোনাশ একদিন ডেকে কাজের কথা পাড়ে
সৌপ্তিকের কাছে। ব্যবসার কাজ জল পায়। তবে সৌপ্তিক-স্থিতধীর পরকীয়ার সেকেন্ড
ইনিংসের পালে খুব একটা হাওয়া ধরেনি। ডিভোর্সের পর বোনের কাছে পাকাপাকিভাবে চলে আসা
পয়ধীকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকত স্থিতধী। দিদিকে সময় দিত। তমোনাশের শালি যেন
ডানাকাটা পরী। স্থিতধীর থেকেও দুবছরের বড় দিদি অনেক বেশি সুন্দরী।
সেদিন ব্যবসার কাজেই দুপুরে সৌপ্তিকের বাড়ি আসে তমোনাশ।
কাজের কথাবার্তা সেরে আড্ডা। নির্জন দুপুর। চিলেকোঠার ছায়াছন্ন ঘরে দামি স্কচে
চুমুক দিতে দিতে আড্ডা জমে ওঠে। স্বামীর মদ্যপানে অবশ্য কোনওদিন বাধা দেয়নি
পল্লবী। তমোনাশ আর সৌপ্তিকের আড্ডায় মাঝে সাঝে ঢুকে পড়ে। কথায় কথায় পয়ধীর কথা ওঠে।
- "পয়ধী বসু? হাজব্যান্ড রক্তিম রায়। সাঁতারের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন।
বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশনেও ইন্ডিয়া রিপ্রেজেন্ট করেছে তো?" , পল্লবীর
প্রশ্নে ঘাড় নাড়ে তমোনাশ।
- "পয়ধী আপনার শালি? ওরা দুজনেই কি এখন আপনার এখানে?"
- "না, রক্তিম আসেনি। পয়ধী একা। অ্যাকচুয়ালি রক্তিমের সঙ্গে ওর
ডিভোর্স হয়ে গেছে। ওর এক ছাত্রীর সঙ্গে নাকি রক্তিমের ফিজিকাল অ্যাটাচমেন্ট তৈরি
হয়। এক বিবাহিত নারীর সঙ্গেও নাকি সম্পর্ক। সেই নিয়ে লাগাতার অশান্তি। শেষে
ডিভোর্স। তারপরেই এখানে চলে আসে পয়ধী। স্থিতধী
দিদিকে খুবই ভালবাসে। এই সময় ওর পাশে থাকাটা দরকার। তাই আমি আর কোনও আপত্তি করিনি।
ওরা দিব্যি আছে। আমি ওদের সম্পর্কের মাঝে ঢুকি না।"
- "বাড়ি গিয়ে পয়ধীকে বলবেন আমার কথা।"
রাতে ডিনার টেবিলে পল্লবীর কথা পাড়ে তমোনাশ।
- "কে? পল্লবী চট্টোপাধ্যায়? জলপাইগুড়ির মেয়ে? উত্তরবঙ্গ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল? তার
হাজব্যান্ড তোমার বিজনেস পার্টনার,
তমোনাশদা? বাট পল্লবীর হাজব্যান্ড তো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি
করে।"
- " ঠিকই বলছো। সৌপ্তিক বড় একটা কোম্পানির সিনিয়র এগজিকিউটিভ। আমার বিজনেসে ইনভেস্ট করেছে। কিন্তু তুমি ওদের কথা কী করে জানলে? মিসেস চ্যাটার্জি অবশ্য তোমার কথা বলল।"
হঠাত্ অতীতে ডুব দিল পয়ধী। একরাশ রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা
বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। কোনওমতে নিজেকে সামলাল। ডিনার টেবিল ছেড়ে উঠে গেল। "তোমরা খেয়ে নাও, আমার শরীরটা খারাপ লাগছে।"
- "পল্লবীর কথা বলতেই এমনভাবে রিঅ্যাক্ট করল কেন দিদি?", ভাবতে
থাকল স্থিতধী।
রাতে দিদির কাছে শুল স্থিতধী। পয়ধী অতীতের পথে পা বাড়াল।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকনমিক্স অনার্সে ২০১১-র ব্যাচ। তিন বন্ধুর কথা মুখে
মুখে ঘোরে। পয়ধী বসু, পল্লবী চ্যাটার্জি আর রক্তিম রায়। গোটা ইউনিভার্সিটি মাতিয়ে
রাখে। সোশ্যাল হোক কিংবা ডিবেট, বা এসে কম্পিটিশন,
গিটার নিয়ে গান,
সবেতেই চৌকস ত্রয়ী। পড়াশোনাতেও ওদের টেক্কা দেয় কার সাধ্য।
সবচেয়ে মেধাবী পল্লবী। একটু ইনট্রোভার্ট। তবে পয়ধী আর রক্তিমের সঙ্গে থাকলে সবচেয়ে
বেশি বকবক করতে থাকে ওইই। রক্তিম শুধু ইউনিভার্সিটি নয়, ততদিনে
জলেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশের সবচেয়ে প্রমিজিং সুইমার। ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন।
দু-দুটো ইন্টারন্যাশনাল মেডেল। রক্তিমের সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য হেদিয়ে মরত
ইউনিভার্সিটির মেয়েরা। জুনিয়র হোক কিংবা সিনিয়র। ইকনমিক্সের প্রফেসর বৈশালী
সেনগুপ্ত কিংবা বাংলার প্রফেসর সায়ন্তিকা দত্তগুপ্ত রক্তিমকে একটু অন্য চোখেই
দেখতেন। মনে মনে বেশ এনজয় করত রক্তিম। তবে ওর রাগ, দুঃখ, হাসি, কান্নার
ভাগীদার একমাত্র পয়ধী আর পল্লবী। কাউকে আলাদা নজরে দেখত না রক্তিম। তবে রক্তিমকে
নিয়ে পয়ধী আর পল্লবীর মধ্যে একটা ঠান্ডা লড়াই ছিল। কেউ কাউকে বুঝতে দিত না বটে।
কিন্তু রক্তিম বেশ বুঝতে পারত। রাতে বিছানায় শুয়ে দুই অভিন্নহৃদয় বান্ধবী যে
রক্তিমকেই ফ্যান্টাসাইজ করত, তা আর কে জানবে!
ইন্টারন্যাশনাল একটা টুর্নামেন্টের জন্য রক্তিম প্রায় পনেরো
দিন ইউনিভার্সিটি আসতে পারেনি। পয়ধী কিংবা পল্লবীর কাছ থেকেই নোটস নিয়ে নেবে
ভেবেছিল। কিন্তু প্রফেসর বৈশালী সেনগুপ্ত রক্তিমকে হোয়াটাসঅ্যাপ করলেন, কাল
আমাদের হস্টেলে এসো, সব নোটস দিয়ে দেব। তোমার চিন্তা নেই। সেদিন ইউনিভার্সিটিতে
বৈশালী সেনগুপ্ত কিংবা রক্তিম রায়,
দুজনের কাউকেই দেখা যায়নি। দুপুরে বৈশালীর রুমে সোফায়
বসেছিল রক্তিম। ভাবছিল, আসাটা কি ঠিক হয়েছে? যদি কেউ জানতে পারে,
সেটা ঠিক হবে না। বিশেষ করে পল্লবী বা পয়ধী। ওকে তো কচুকাটা
করবে। আকাশপাতাল ভাবতে থাকে রক্তিম। হঠাত্্ই অনুভব করে ঠোঁটের ওপর একজোড়া তপ্ত
ঠোঁট। বৈশালীর তাঁতের শাড়ির আঁচল তখন মেঝেয়। টকটকে লাল ব্লাউজ। ভরাট দুই স্তন।
শাড়ির গিঁট নাভির অনেকটা নীচে। রক্তিমের দুই চোখ বিস্ফারিত। ততক্ষণে অত্যন্ত
অভ্যস্ত হাতে ব্লাউজের হুকগুলো খুলে ফেলেছে বৈশালী। লাল ব্রা শরীর থেকে ছিটকে
ফেলতে খুব একটা সময় লাগেনি। চুলের মুঠি ধরে রক্তিমের মাথাটা বুকে চেপে ধরে
ইকনমিক্সের চৌকস প্রফেসর বৈশালী সেনগুপ্ত। শরীরী খেলাতেও যে সে বেশ পারদর্শী, তা
বুঝতে খুব একটা সময় লাগেনি চ্যাম্পিয়ন সাঁতারুর। ক্রমশ অদ্ভুত কোমলতায় ডুবে যেতে
থাকে রক্তিম। মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই বৈশালীর স্তনবৃন্ত তার ঠোঁট দুটো ভরিয়ে দেয়। তীব্র
শরীরী উত্তেজনায় দমবন্ধ হয়ে আসতে থাকে রক্তিমের। তারপর প্রায় এক ঘণ্টা কীভাবে
পেরিয়ে গেল, তা বুঝেই উঠতে পারে না রক্তিম। জলে ঝড় তোলা রক্তিম রায় নয়, বিছানায়
বৈশালীর শরীরী ঝড়ে পরাস্ত হয় রক্তিম।
- "ডোন্ট ওরি, দিস ইজ ইয়োর ফার্স্ট টাইম। নেভার মাইন্ড।", প্রফেসর বৈশালী
সেনগুপ্তর কথায় পৌরুষের কোনও এক কোণে তীব্র আস্ফালনে ঘণ্টা বেজে ওঠে। দুহাতে কোমর
জড়িয়ে বৈশালীকে কোলে তুলে নেয় রক্তিম। সাঁতারটা যে তার থেকে ভাল কেউ পারে না, সে জল
হোক কিংবা বিছানা, বৈশালীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে বুঝিয়ে দেয় রক্তিম। রক্তিম-বৈশালীর
প্যাশনেট রিলেশন পয়ধী কিংবা পল্লবীর কানে আসতে সময় নেয়নি। দুজনেই আর দেরি করেনি। আলাদা
আলাদা করে ডেকে দুজনেই প্রপোজ করে রক্তিমকে। ফাঁপরে পড়ে যায় সে। তার মনে তখন
শ্যাম রাখি না কুল। ওদিকে প্রায় পাঁচ বছরের বড় বৈশালীও বিয়ের প্রস্তাব দেয়
রক্তিমকে। রক্তিম ভেবে কূল পায় না,
তার কী করা উচিত। মাঝপথেই ইউনিভার্সিটি ছাড়ে রক্তিম।
বৈশালীর ফোনের পর ফোন। দেখা করতে বলে। রক্তিম তখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ইউনিভার্সিটি
ছেড়ে সোজা চলে আসে কলকাতা। মাসির বাড়ি। বাড়িতে জানিয়ে দেয়, পড়াশোনা
করতে আর ভাল লাগছে না। সাঁতারটাই মন দিয়ে করবে। নতুন করে মন দেওয়ার কিছু নেই যদিও।
সে তখনই দেশের সফল সুইমার। কলকাতায় চলে আসার পর বৈশালী, পয়ধী, পল্লবী, কারও
ফোনই ধরে না রক্তিম। পল্লবী ওর এক খুড়তুতো বোনের কাছ থেকে জানতে পারে, রক্তিম
কলকাতায়। সেও কলকাতা চলে আসে। সালকিয়ায় রক্তিমের মাসির বাড়ির ঠিকানা খুঁজে বের
করে সটান পৌঁছে যায় সেখানে। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পল্লবী জানতই না, রক্তিমের
মনে পয়ধীর জন্য জায়গাটা পল্লবী কিংবা বৈশালীর চেয়ে বেশি। রক্তিম পল্লবীকে ফিরিয়ে
দেয়। সেই রাতেই সুইসাইড অ্যাটেম্পট করে পল্লবী। যমে-মানুষে টানাটানি। বেঁচে ফেরে
বটে, তবে নার্ভের সমস্যা পাকাপাকি আসন পাতে শরীরে। তাতে
গ্র্যাজুয়েশন বা মাস্টার্স করতে খুব একটা অসুবিধে হয়নি। ততদিনে পয়ধীর সঙ্গত্যাগ
করেছে পল্লবী। আর ওদিকে রক্তিমের সঙ্গে চুটিয়ে ডেটিং করছে পয়ধী। সে খবর পল্লবীর
কানে আসেনি। চঞ্চল মেয়েটা পড়াশোনা আর পুজোআচ্চা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। তারপর
দেখাশোনা করেই সৌপ্তিকের সঙ্গে বিয়ে। বিয়ের আগে অবশ্য পল্লবীর পাস্ট সৌপ্তিকের
বাড়িতে খুলেই বলে পল্লবীর পরিবার। তাতে বিয়ে আটকায়নি। মেধাবী স্টুডেন্ট, ভাল
মেয়ে, সুন্দরী পল্লবীকে বেশ পছন্দ হয় সৌপ্তিকের। বিয়ের পর
সাঁতরাগাছির শ্বশুরবাড়িতে জমিয়ে সংসার। না, বিয়েতে পয়ধীকে ডাকেনি পল্লবী। বাড়িতেও কোনওদিন আসতে বলেনি।
আর যেদিন শুনল রক্তিম পয়ধীকে বিয়ে করেছে,
সেদিন থেকে মনে মনে একটা সঙ্কল্প করে। সৌপ্তিক কোনওদিন
জানতেই পারেনি, ফোনে দিনের পর দিন রক্তিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে
গেছে পল্লবী। এবং একটা সময় তার মনও গলিয়ে ফেলে। পুরনো বন্ধুতা মায় প্রেম মায়
পরকীয়ায় একসময় সাড়া দেয় রক্তিম। পয়ধীকে বিয়ে করার পরেও বহু নারী রক্তিমের
শয্যাসঙ্গী হয়েছে। বেশিরভাগই অবশ্য তার ছাত্রী। তার মধ্যে রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কটা
সবচেয়ে চর্চিত। রিয়া উগ্র আধুনিকা। তীব্র শরীরী আকর্ষণ। বয়ফ্রেন্ড থাকলেও সাঁতারে
উঁচুতে ওঠার বাসনায় নিজের কামনায় আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখে রক্তিম স্যরকে। রক্তিমও
রিয়ার শরীরে ডুবসাঁতার দিতে ভালইবাসে। তার মধ্যে পল্লবীর সঙ্গে পরকীয়া। একটু একটু
করে স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সব সম্পর্কের কথা কানে আসতে থাকে পয়ধীর। কিন্তু যেদিন
জানতে পারে পল্লবীর কথা, সেদিন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। অনেক চেষ্টা করেও
পল্লবীর ফোন নম্বর বা ঠিকানা জোগাড় করতে না পেরে একদিন রক্তিমের ফোনটা ভেঙে দেয়।
শুরু হয় ঝগড়া, অশান্তি। তবুও রক্তিমের মুখ থেকে পল্লবীর কথা বের করতে পারে
না। আর ওদিকে রক্তিম যেদিন জানাল পয়ধীর সঙ্গে ডিভোর্সের কথা, সেদিন
আনন্দে ধেইধেই করে নেচেছে পল্লবী।
তার স্বপ্ন সফল। পয়ধীর থেকে আলাদা করতে পেরেছে রক্তিমকে।
তার পরেই নিজের ফোন নম্বর বদলে ফেলে পল্লবী। রক্তিমের জীবন থেকে ফের হারিয়ে যায়
সে। লকডাউনের কারণে সৌপ্তিক-স্থিতধীর পরকীয়াতেও ভাটা পড়ে। স্বামীকে আরও কাছে টেনে
নেয় পল্লবী। মনে মনে লকডাউন এবং পরকীয়াকে স্যালুট জানিয়ে সেই রাতে প্রথম কন্ডোম
ছাড়া সৌপ্তিকের সঙ্গে সহবাস করে পল্লবী। পয়ধীর গর্ভে রক্তিমের সন্তান কোনওদিন
চায়নি যে, সে নিজের গর্ভে সৌপ্তিকের সন্তান চাইল। সবচেয়ে প্রিয়
বান্ধবীর দাম্পত্য তছনছ করে দিয়ে পল্লবী আজ সত্যিই খুব খুশি।
খুব সুন্দর।
উত্তরমুছুনআমি এই পত্রিকার নতুন পাঠক।
ধন্যবাদ। সাথে থাকুন। 🙏
মুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন