শীতে ত্বকের ফেসপ্যাক

 



 বাতাসের গায়ে শীতের ছোঁয়া লাগতে বেশি আর দেরি নেই। রৌদ্রের প্রখরতার হ্রাস পাওয়া, হাওয়ায় শৈত্য অনুভূতির শিরশিরানি, সন্ধ্যেবেলায় হিমের স্পর্শে ঘাসের ভেজাভাব ইঙ্গিত বহন করে আনে শীতকাল এই এলো বলে। তবে শীতের আগমনের জানান যে একমাত্র প্রকৃতিই দেয়, তা কিন্তু নয়। এই খবরের আভাস পাওয়া যায় আমাদের নিজেদের ত্বক থেকেও। শীত আসতে না আসতেই ত্বকে অনুভূত হতে থাকে শুষ্কতা, রুক্ষতা। তাই ত্বকের একেবারে বেহাল দশা হওয়ার আগে থাকতেই তার ঠিকমতো খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরী। তার জন্য খুব বেশি পরিশ্রমের দরকারও পড়ে না। নিয়মিত ক্লেনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিংয়ের সঙ্গে ফেসপ্যাকের ব্যবহার ত্বককে করে তোলে কোমল ও মসৃণ। সেরকমই কিছু ঘরোয়া প্যাকের সন্ধান দেওয়া হলো এখানে।

 

 ১) মধু ও দুধের সর :

 


 এই দু'টো জিনিস সকলের বাড়িতেই থাকে এবং দু'টোই উপকারী। দুধের সর বা মালাই প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্রতার উত্তম যোগানদাতা। অপরদিকে মধুতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ। এই প্যাকটি তৈরি করতে একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ করে দুধের সর এবং মধু নিয়ে ভাল করে মেশাতে হবে। মিশ্রণটিকে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বককে নমনীয় ও উজ্জ্বল করে তুলতে প্যাকটি ভীষণভাবে উপযোগী।

 

২) মধু ও পেঁপে :

 

পাকা পেঁপে খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায়, ত্বকে ব্যবহার করলেও উপকার মেলে। ১ কাপ পাকা পেঁপের সাথে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে এই মিশ্রণটি মুখে অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট রাখতে হবে। এরপর জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন ব্যবহার করলেই ত্বকের শুষ্কভাব অনেকখানি কমে যাবে।

 

৩) বেসন ও টকদই :


 

ত্বক পরিচর্যায় বেসনের ব্যবহার তো আজকের কথা নয়, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ত্বকের উজ্জ্বলতা ও টানটান ভাব ফিরিয়ে আনতে বেসন অনেক উপকারী। ২ টেবিল চামচ বেসনের সাথে ১ টেবিল চামচ টকদই মিশিয়ে মিশ্রণটিকে ভালো করে মুখে লাগিয়ে রেখে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। ত্বক ভেজা থাকতে থাকতে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

 

৪) হলুদ ও বাটার মিল্ক :


 
বেসনের মতোই ত্বক পরিচর্যায় হলুদও বহুল প্রচলিত। ত্বকে ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনতে হলুদের জুড়ি মেলা ভার। ত্বককে কোমল করে তুলতে হলুদের সঙ্গে যোগ করা যায় বাটার মিল্ক। টাটকা বাটার মিল্কের সঙ্গে একচিমটে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রেখে ১০ মিনিট পর ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

 

৫) অলিভ অয়েল ও কলা :


ত্বকে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে কলা অনেকাংশে কার্যকরী। এটি ত্বকের রুক্ষ ও শুষ্কভাব প্রাকৃতিকভাবে দূর করে। একটি পাকা কলার সাথে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করে ২০-৩০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্যাকটি সপ্তাহে দু'-তিন দিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

 

৬) কলা ও দুধ :



ত্বকের যত্নে কলা ও দুধ যে কতখানি উপযোগী তা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। একটি কলার সম্পূর্ণটা একটি বাটিতে নিয়ে চটকে নিয়ে এর সাথে এক টেবিল চামচ দুধ মেশাতে হবে। তারপর মিশ্রণটিকে ত্বকে লাগিয়ে রেখে ২০মিনিট পর রেখে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বক তৈলাক্ত হলে দুধের পরিবর্তে গোলাপ জল ব্যবহার করা যেতে পারে।

৭) দুধ ও কাজুবাদাম :


 

 এই ফেসপ্যাকটি বানানোর জন্য ৮/১০টি কাজুবাদাম জলে ভিজিয়ে রেখে নরম হয়ে যাওয়ার পর ২ টেবিল চামচ দুধের সাথে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এবার এই মিশ্রণটি হালকা হাতে ত্বকে ম্যাসাজ করে খানিকক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বককে কোমল রাখতে এই প্যাকটি ময়েশ্চারাইজারের মতো কাজ করে।

 ৮) কফি, টক দই ও মধু :

 



শীতকালে এককাপ ধোঁয়া ওঠা গরম কফি কার না পছন্দের! এক কফিও কিন্তু ত্বক পরিচর্যায় দিব্যি ব্যবহার করা যায়। কফি দিয়ে বানানো ফেসপ্যাক ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে ত্বককে উজ্জ্বল করতে এবং দাগ ছোপ দূর করতে সাহায্য করে। একটি কাঁচের বাটিতে ২ চামচ কফি, ১ চামচ বেসন, ১ চামচ টক দই, ১ চামচ মধু এবং সামান্য লেবুর রস যোগ করে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি মুখে ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। তারপরের কাজ হলো ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলা। সপ্তাহে কমপক্ষে দু'দিন এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।

 ৯) অ্যালোভেরা ও বাদাম তেল :

 


ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারের কথা সর্বজনবিদিত। অ্যালোভেরা ক্রিম, অ্যালোভেরা লোশন, অ্যালোভেরা জেল, ত্বক পরিচর্যায় এরকমই হাজারো জিনিসে অ্যালোভেরার ব্যবহার অনেকদিন ধরে চলে আসছে। শুষ্ক ত্বকের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী। তার সঙ্গে যদি যোগ করা হয় বাদাম তেল, তাহলে তো আর কথাই নেই। ৮-১০ ফোঁটা বাদাম তেলের সাথে এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল হাতের তালুতে ঘষে ভালো করে মিশিয়ে সেটিকে ত্বকে হালকা হাতে ১৫ মিনিট মতো ম্যাসাজ করতে হবে। এবার মিশ্রণটিকে সারারাত ত্বকে রেখেই ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠে মুখ ধোওয়ার পর ত্বক অনেক কোমল এবং সজীব অনুভূত হবে।

 ১০) অ্যালোভেরা ও শশা :

 


অ্যালোভেরার মতো শশাও ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল নিয়ে ১ টেবিল চামচ শশার পেস্টের সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখার সাথে এই প্যাকটি ত্বকের রোদে পোড়াভাব দূর করতেও সাহায্য করে।


 


কলমে -  শুভ্রা ব্যানার্জী   

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন