অনন্তের গান - রবীন বসু

 




 

অরুন্ধতী আজকাল আমাকে আর ফোন করে না। হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট, তাও করে না। ফেসবুকে আসে না। ও কেমন দূরের আর অচেনা ফেরিঘাট হয়ে যাচ্ছে। যেখানে পারাপার নেই, লোকজন নেই। নিঃসঙ্গ আর সীমাহীন এক নির্জনতার মধ্যে ডুবে আছে 

আমার হয়েছে যত ঝামেলা। বন্ধুদের মধ্যে ওর সঙ্গেই বোঝাপড়াটা ভালো ছিল। কোনভাবেই যোগাযোগ করতে না পেরে একদিন সাইকেল নিয়ে ওর বাড়ির দরজায় হাজির হলাম। কিন্তু সাহস করে বেল বাজাতে পারলাম না। যা মুডি। যদি রেগে যায়। অসুখ যে করেনি তা নিশ্চিত। তাহলে ফোন না করুক, মেসেজ করে জানাত। ভেবে দেখলাম, এমন কোন খারাপ ব্যবহার তো ওর সঙ্গে করিনি, যে সম্পর্ক নষ্ট করে দেবে। একটা অভিমান নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম

আজকাল কেউ চিঠি লেখে না। তাই লেটারবক্সে ধুলো জমে। মাকড়সারা জাল বোনে। সেই অব্যবহারের লেটারবক্সে সেদিন দেখি একটা চিঠি। মাকড়সার জাল ধুলো সরিয়ে একটা নীল রঙের খাম বের করে আনলাম। সুন্দর সুগন্ধি প্যাডের কাগজে অরুন্ধতী লিখেছে,'আমার ভীষণ মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আলো সহ্য হচ্ছে না একদম। … আমি জলের তলায় শ্যাওলার ঘরে ঘুমাতে চাই। আমি এই আলো-পৃথিবী ছেড়ে, নেটওয়ার্ক সীমানার বাইরে একটা সবুজ ঘাসের জাজিমে নরম পালক হয়ে পড়ে থাকতে চাই!'

তারপর একটু জায়গা ছেড়ে লিখেছে, 'তুই যাবি? আমার সঙ্গে?'

আমি চিঠি হাতে শ্যাওলাপিচ্ছিল সিঁড়ি দিয়ে নিচে জলের গভীরে নেমে যাচ্ছি।… কালো কৌটোয় অরুন্ধতীর প্রাণভোমরা…। চশমার আড়াল থেকে ওর ডাগর ভাসা চোখে আজকাল রূপকথা খুঁজে পাই…হ্যারি পটারের জাদুলণ্ঠন জ্বলে চোখে!

 

আমি অসহায় আর্দ্রতার মধ্যে ওর চিঠি হাতে। নিরুপায়। মনে হল, ও কি পাখি-শরীর নিয়ে এবার অনন্তের গান গাইবে?

  

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন