শীতের হেঁশেলে ফুলকপির বাহার - মালবিকা ঘোষ


 

পটল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়স, এঁচোড় এদের মতো গরমকালের সবজিকে পেছনে ফেলে আমাদের রান্নাঘরে ঠাঁই করে নিয়েছে শীতের সবজিরা। আর শীতকালের মজা এখানেই। নানা রঙের নানারকম সবজির রকমারি রান্নার রঙিন হয়ে ওঠে আমাদের খাওয়ার পাত। বীট, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরর্শুঁটি, বীনস, শিম, মুলো সকলে হইহই করে জমিয়ে দেয় বাড়ির অতি সাধারণ মধ্যাহ্নভোজ অথবা চড়ুইভাতির ভোজপর্ব। শীতের এতোসব সবজির মধ্যে থেকে আজ আমাদের রেসিপির রাণী হলো ফুলকপি। নামটা শুনে সেভাবে আকর্ষণীয় না লাগলেও বিভিন্ন পদের মাধ্যমে ফুলকপি আমাদের স্বাদকোরকের পরিতৃপ্তি ঘটায়। আমিষ হোক কিংবা নিরামিষ, এই সবজিটির বিচরণ সবখানে। গোবিন্দভোগ চালের সঙ্গে ফুলকপি সহযোগে খিচুড়ি আর স্বল্প ঘি – আহা! সে স্বাদ যেন স্বর্গীয়! ঠিক সেভাবেই আলু ও ফুলকপি দিয়ে চিংড়ি মাছের ডালনা, শেষে সামান্য ঘি – সেই স্বাদেরও জবাব নেই। ফুলকপির চিরাচরিত রেসিপির বাইরে এখানে রইলো অন্যরকম কিছু পদের সুলুকসন্ধান

 ১) কিমা ফুলকপি :

 


উপকরণ :

  •  কিমা - ৫০০ গ্রাম
  • ফুলকপি - ২ টি
  • টম্যাটো - ২ টি
  • হলুদ গুঁড়ো - আধ চামচ
  • জিরে গুঁড়ো - ১ চামচ
  • লঙ্কা গুঁড়ো - আধ চামচ 
  • গোটা গরম মশলা - ১ চামচ
  • পেঁয়াজ বাটা - ৩ চামচ
  • আদা ও রসুন বাটা - ২ চামচ
  • নুন ও চিনি - স্বাদমতো
  • তেল
  • ঘি সামান্য

 পদ্ধতি :

  •  প্রথমে কিমা সেদ্ধ করে নিতে হবে এবং সেদ্ধ করা জলটা রেখে দিতে হবে
  • ফুলকপি বড়ো বড়ো করে কেটে ভাপিয়ে রাখার পর ভেজে নিয়ে আলাদা করে রাখতে হবে
  • একটি কড়াইতে ঘি ও তেল মিশিয়ে ওর মধ্যে পেঁয়াজ বাটা এবং আদা ও রসুন বাটা দিয়ে ভাজাভাজি করার পর কিমা যোগ করতে হবে
  • এবার এর মধ্যে দিতে হবে টুকরো করা টম্যাটো, সব মশলার মিশ্রণ, নুন ও চিনি। ভালো করে কষানোর পর কিমা সেদ্ধর জলটা দিতে হবে। প্রয়োজনে সামান্য পরিমাণে আরো জল যোগ করা যায়। ফুটতে শুরু করার পর গরম মশলা থেঁতো করে ওর মধ্যে দিতে হবে
  • কিমা বেশ ঘন ঘন হলে ভেজে রাখা কপিগুলো ওর উপরে রেখে ঢাকা দিয়ে দিতে হবে
  • সবকিছু ভালো করে সেদ্ধ হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে নামিয়ে ফেলতে হবে। পরিবেশনের সময় কিমার উপরে ছড়িয়ে দিতে হবে কাঁচা পেঁয়াজ ও ধনেপাতা কুচি
 ২) ফুলকপির ঘন্টঃ



উপকরণ :

  •  ফুলকপি - ২ টি
  • আলু - ২ টি
  • কাঁচালঙ্কা - ৪/৫ টি
  • তেজপাতা - ২ টি
  • ঘি - ১ চামচ
  • গোটা জিরে - আধ চামচ 
  • গোটা গরম মশলা - ১ চামচ
  • আদা বাটা - ১ চামচ
  • হলুদ গুঁড়ো - আধ চামচ
  • জিরে গুঁড়ো - ১ চামচ
  • ধনে গুঁড়ো - ১ চামচ
  • নুন ও চিনি - স্বাদমতো
  • তেল - পরিমাণমতো
  • গোবিন্দভোগ চাল - ১ কাপ
 পদ্ধতি :

  •  প্রথমে আলু ও ফুলকপি ডুমো ডুমো করে কেটে নিয়ে ভেজে রাখতে হবে
  • এবার কড়াইতে তেল গরম করে তার মধ্যে ঘি দিয়ে গোটা জিরে, গোটা গরম মশলা ও তেজপাতা ফোড়ন হিসাবে দেওয়ার পর আদা বাটা ও চেরা কাঁচালঙ্কা দিতে হবে। 
  • এর মধ্যে গোবিন্দভোগ চাল দিয়ে সামান্য নাড়াচাড়া করে যোগ করে হবে আগে থেকে ভেজে রাখা আলু ও ফুলকপি
  • আরেকটু নেড়েচেড়ে সব মশলা দিয়ে কষানোর পর পরিমাণমতো জল দিয়ে ঢাকা দিতে হবে
  • সুসিদ্ধ হলে সামান্য ঝোল থাকা অবস্থায় নামিয়ে ফেলতে হবে
  

৩) কাশ্মীরি ফুলকপি :

 


 উপকরণঃ 

  • ফুলকপি - ১০ টুকরো
  • ছোট আলু গোটা - ৫ টি
  • টম্যাটো - ১ টি বড় কুচোনো
  • আদা বাটা - ২ চামচ
  • পেঁয়াজ বাটা - ২ চামচ
  • হলুদ গুঁড়ো - ২ চামচ
  • লঙ্কা গুঁড়ো - ২ চামচ
  • গরম মশলা গুঁড়ো - ১ চামচ
  • পোস্ত, নারকেল, কাজু ও কিশমিশ বাটা - ২৫ গ্রাম
  • নুন ও চিনি - স্বাদমতো
  • তেল - পরিমাণমতো
  • ধনেপাতা - ১ আঁটি কুচোনো 

 পদ্ধতিঃ

 

  • প্রথমে আলু ও ফুলকপি লাল করে ভেজে তুলে রাখতে হবে
  • এবার তেলের মধ্যে পেঁয়াজ বাটা ও আদা বাটা দিয়ে ভাজাভাজি করার পর টম্যাটো কুচি, সমস্ত মশলা এবং সামান্য জল যোগ করে ভালো করে কষাতে হবে
  • মশলার কাঁচা গন্ধ চলে গেলে পরিমাণ মতো জল, নুন ও চিনি দিয়ে ঢাকা দিতে হবে
  • সবকিছু সুসিদ্ধ হলে গরম মশলা এবং ধনেপাতা কুচি যোগ করে নামিয়ে ফেলতে হবে

 ৪) পনীর ও ফুলকপির ডালনা :

 


উপকরণ :

  • পনীর - ২০০ গ্রাম
  • মাঝারি সাইজের ফুলকপি - ১ টি
  • আলু - ২ টি
  • টম্যাটো - ২ টি
  • ধনেপাতা - ১ আঁটি
  • কাঁচালঙ্কা - ৪/৫ টি
  • তেজপাতা - ২ টি
  • গোটা জিরে - আধ চামচ 
  • হলুদ গুঁড়ো - আধ চামচ
  • লঙ্কা গুঁড়ো - আধ চামচ
  • জিরে গুঁড়ো - ১ চামচ
  • নুন ও চিনি - স্বাদমতো
  • ঘি সামান্য

 পদ্ধতি :

  •  আলু ও ফুলকপি ডুমো ডুমো করে কেটে সামান্য ভাপিয়ে নিতে হবে
  • পনীর ছোট ছোট টুকরো করে কেটে অল্প ভেজে তুলে রাখতে হবে
  • কড়াইতে তেল গরম হলে গোটা জিরে ও তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে টম্যাটো কুচি এবং চেরা কাঁচালঙ্কা দিয়ে নাড়তে হবে
  • টম্যাটো নরম হয়ে যাওয়ার পর আলু ও ফুলকপি যোগ করে সমস্ত মশলা এবং সামান্য জল দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে
  • মশলার কাঁচা গন্ধ চলে গেলে পরিমাণমতো জল এবং নুন ও চিনি দিয়ে সেদ্ধ হতে দিতে হবে
  • একটু পরে পনীরের টুকরোগুলো যোগ করে মিনিট পাঁচেক ফোটানোর পর ঘি ও ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে
 ৫) ফুলকপির রোস্ট :

 


উপকরণ :

  • ফুলকপি - ১ টি
  • মাখন - ৫০ গ্রাম
  • আদা বাটা - ২ চামচ
  • কাজু বাটা - ৪ চামচ
  • পোস্ত ও নারকেল বাটা - ৪ চামচ
  • লঙ্কা গুঁড়ো - ২ চামচ
  • জায়ফল জয়িত্রী গুঁড়ো - ২ চামচ
  • ছানা - ৪ চামচ
  • টক দই - ২৫ গ্রাম
  • নুন ও চিনি - স্বাদমতো

 পদ্ধতি :

  •  ফুলকপি পাতা কেটে বাদ দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফুটন্ত জলের মধ্যে মিনিট পাঁচেক রেখে নামিয়ে ফেলতে হবে
  • সমস্ত বাটা উপকরণ, মশলা, নুন ও চিনি কপিতে মাখিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে
  • প্রেসার কুকারে মাখন গরম করে মশলামাখা কপিটি যোগ করতে হবে
  • কুকার বন্ধ করে একদম কম আঁচে মিনিট পাঁচেক রেখে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে
  • প্রেসার নিজে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কুকার খুলে দেখতে হবে কপি সেদ্ধ হয়েছে কিনা। ঠিকমতো সেদ্ধ না হলে এবং কুকারের মধ্যে কপি থেকে বেরোনো কোনো জল না থাকলে সামান্য জল দিয়ে আরো পাঁচ মিনিট কম আঁচে রাখতে হবে
  • কপি সুসিদ্ধ হয়ে গেলে কুকার থেকে বার করে নিয়ে কেটে কেটে পরিবেশন করতে হবে


কলমে - মালবিকা ঘোষ

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন