ক্যানসারের মতো মারণ রোগে আজকাল আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। এই ক্যানসারের মধ্যে মহিলারা যে ক্যানসারের
দ্বারা সর্বাধিক আক্রান্ত হচ্ছেন, তা
হল জরায়ুর ক্যান্সার। ২০২০ সালে জরায়ুর
ক্যানসারের দ্বারা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ। জরায়ুর ক্যানসার দু’প্রকারের হয়- ইউটেরাইন ক্যানসার আর ইউটেরাইন সারকোমা।
জরায়ুর ক্যানসার কি ?
- জরায়ুর মধ্যে যে ক্যানসার দেখা যায় সেটিকে জরায়ুর ক্যানসার বলা হয়।
- এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার দেখা যায় জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরে অর্থাৎ জরায়ুর অভ্যন্তরীণ স্তরে। এইপ্রকার জরায়ুর ক্যানসারের দ্বারা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক।
- ইউটেরাইন সারকোমা দেখা যায় জরায়ুর মায়োমেট্রিয়াম(পেশিবহুল দেওয়ালে) স্তরে। এইপ্রকার ক্যানসার বিরল।
জরায়ুর কাজ কি?
নারীদের জনন তন্ত্রের একটি অঙ্গ হল জরায়ু। এখানে গর্ভাবস্থায় শিশুর জন্ম ও
বিকাশ হয়। জরায়ুর উপরিভাগকে বলে করপাস এবং জরায়ুর গ্রীবাদেশকে বলা হয় সারভিক্স।
জরায়ুর উপরিভাগে যে ক্যানসার হয়, তাকেই জরায়ুর ক্যানসার বলা হয়। জরায়ুর
সারভিক্সে ক্যানসার হলে তাকে সারভাইভাল ক্যানসার বলা হয়। তবে এটি জরায়ুর ক্যানসারের থেকে ভিন্ন
প্রকারের হয়।
জরায়ুর ক্যানসারের লক্ষণগুলি কি
কি ?
জরায়ুর ক্যানসারকে অনেক সময় সাইলেন্ট কিলার বা নিঃশব্দ ঘাতক বলা হয়। কারণ অনেকেই এর প্রাথমিক লক্ষণগুলি দেখে বুঝতে পারেন না। তাই যে লক্ষণগুলি দেখে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সেগুলি হল-
- রজঃস্রাব বন্ধ হওয়ার পরেও যোনি থেকে রক্ত নিঃসরণ
- মেনোপজের পরেও যোনি থেকে রক্ত অস্বাভাবিক হারে নিঃসরণ
- তলপেটে ও শ্রোণীদেশে ব্যাথা হওয়া
- মেনোপজের পরবর্তী দশায় যোনি থেকে সাদা স্রাব নিঃসরণ
- ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ অনুভূত হওয়া এবং প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি
উপরোক্ত লক্ষণগুলি দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ
গ্রহণ করা উচিৎ। এগুলো অন্য কোন রোগের লক্ষণও হতে পারে। তাই
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা আবশ্যক।
জরায়ুর ক্যানসারের বিভিন্ন দশা
জরায়ুর ক্যানসার কোন কারণে হয় সেটা এখনও সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিশেষ কারণে জরায়ুর কোষের ডিএনএর মিউটেশনের ফলে কোষের বিভাজনের হার অনেকগুণ বেড়ে যায়। এরফলে অসংখ্য নতুন কোষের জন্ম হয়, কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে নতুন কোষগুলোর মৃত্যু হয় না। এই অস্বাভাবিকতার কারণে আস্তে আস্তে অনেক কোষ সম্মিলিত হয়ে টিউমারের আকার ধারণ করে। ডাক্তার বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে এটি নির্ধারণ করতে পারেন যে জরায়ুর ক্যানসার কোন স্তর বা স্টেজে রয়েছে-
- প্রথম স্টেজে ক্যানসার জরায়ুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে
- দ্বিতীয় স্টেজে এটি জরায়ুর গ্রীবাদেশে সঞ্চারিত হয়
- তৃতীয় স্টেজে এটি যোনি, ডিম্বাশয় এবং লসিকা গ্রন্থিতে বিস্তারিত হয়ে যায়
- চতুর্থ স্টেজে ক্যানসার জরায়ুর দূরবর্তী অঙ্গ যেমন মূত্রাশয় পর্যন্ত চলে যায়। এই সম্প্রসারণকে মেটাস্ট্যাসাইস বলে
জরায়ুর ক্যানসারের চিকিৎসা
জরায়ুর ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ডাক্তার বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে পারে। তাছাড়া এটি নির্ভর করে ক্যানসারের ধরন এবং এর দশার উপর। এই চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত ধাপগুলি হল-
- অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যানসার টিস্যুকে বাদ দিয়ে দেওয়া
- রেডিয়েশনের মাধ্যমে উচ্চ শক্তিমান রশ্মির সাহায্যে ক্যানসারের বিনাশ করা
- কেমোথেরাপির সাহায্যে ক্যানসারকে বিনাশ করা বা তার বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ করা
প্রাথমিক অবস্থায় এই ক্যানসার ধরা পড়লে অতি সহজেই চিকিৎসা করা সম্ভব। রোগ কখনোই লজ্জা বা কুন্ঠাবোধের জন্য অপেক্ষা করে না। তাই শরীরে আকস্মিক কোন পরিবর্তন দেখা দিলে, শীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন