ফিরে দেখা - হাদী উল ইসলাম



- “ভালো আছ?”

- বিস্মিত হয়ে মাস্ক ঢাঁকা মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, “আপনাকে তো চিনতে পারলাম না!”

 

- “আমি লিটা, চিনতে পারো নাই? আর আমার সঙ্গে এ হল আমার নাতনী…” 


লিটা? লিটা.. লিটা … ওহ্ মনে পড়ছে। 

 

দুই যুগেরও বেশি সময় পর দেখা! 


 

এর আবার নাতনীও হয়েছে? হায় আল্লাহ্ !…. নাতনীটা ওর মতই সুন্দর!

হ্যাঁ, ও নানী হয়ে যেতেই পারে! কোন এক লেখায় পড়েছিলাম বাংলাদেশে অনেক নারী চৌত্রিশ বছর বয়সেই নানী হন!

------------------

আরো মনে পড়ছে....

 

হাই স্কুলে পড়ি। ক্লাস শুরু হওয়ার আগে জাতীয় সঙ্গীত, তারপর শপথ। ছেলে ও মেয়েদের আলাদা লাইন হত, স্যারেরা সামনে দাঁড়িয়ে থাকত!

 

কিন্তু সেকি? আজকে আমাদের ছাত্রদের লাইনে বাট্টু স্যার কেন? তাঁকে আমাদের লাইনে দেখে খুবই আশ্চর্য্য হলাম! স্যারেরা কখনোতো ছাত্রদের লাইনে দাঁড়ায় না। কিন্তু আজ কেন?

 

জাতীয় সঙ্গীত শেষ হতেই ‘বিচারের’ জন্য ডাক পড়ল। বাট্টু স্যার প্রমাণ দিলেন, লিটার অভিযোগ একদম সত্য। আমি জাতীয় সঙ্গীতের “আমি তোমায় ভালোবাসী” শব্দগুলো খুবই জোরে গাই, যা মেয়েদের লাইনের সবাই শুনতে পায়। লিটার অভিযোগ একদম সত্য! স্যার দৃঢ় সাক্ষ্য দিলেন

 

মোস্তারও বিচার হবে, ওর কেস আরো জটিল। রুবাকে চিঠি লিখে পাঠিয়েছিল, কিন্তু সেটি ভুল করে বাংলা স্যারের মেয়ে রুবার কাছে চলে গেছে

 

হেডস্যার জোড়া বেত আনতে হুকুম দিলেন। বাট্টু স্যার আরামে দন্ড কার্যকর করলেন

 

স্কুলে যাবার পথে বিশাল জাম গাছ, তার নীচে দাঁড়িয়ে খেলার ছলে, পাখি দেখার ছলে ‘লিটাকে’ দেখার জন্য কত অপেক্ষা করতাম! আর দাঁড়াই না! নিঃশব্দে স্কুলে যাই, ফিরে আসি। তেমন কথাও কারো সঙ্গে বলিনা। লিটা অবশ্য একদিন কিছুক্ষণ এই গাছের নীচে দাড়িয়ে ছিল। দূর থেকে দেখেছিলাম। কিন্তু আমি পালিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে চলে গেছি

 

মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার পূর্বেই একদিন লিটার চাচা স্কুলে এসে ওকে নিয়ে গেল। সম্ভবত ওটাই ছিল ওর শেষ স্কুলে আসা! মনে পড়ে গেল এরপর ওর বিয়ে হয়ে যায়

---------

 

-      হ্যাঁ আরে লিটা তুমি কেমন আছ? কোথায় যাচ্ছ? ছেলে মেয়ে ক’জন?” একনাগারে প্রশ্নগুলো করে বসলাম

 

-      তুমি কোথায় থাক? ছেলে মেয়ে ক’জন? কোথায় বিয়ে করেছ?” লিটার ফিরতি প্রশ্ন!

 

 

আমরা দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকি!

 

- “জাম গাছটা কেটে ফেলেছে তাই না?”

 

-  হ্যাঁ রোড পাকা ও বড় করার জন্য কেটেছে

 

এখানে কোন বসতি ছিল না। এখন কত বাড়িঘর। বিদ্যু ছিল না, এখন সবার ঘরে বিদ্যু। বাট্টু স্যার মারা গেছে। মোস্তা আর রুবা বিয়ে করে দুই সন্তানের বাবা-মা। লিটা আমাকে জানালো। আহ কত স্মৃতি!

---------------

বছর যাবে, বছর আসবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আসবে-চলে যাবে! তৈরী হবে অসংখ্য স্মৃতি, যা বহন করবে আজীবন! ২০২২ এর ভালো স্মৃতিগুলো হৃদয়ে থাক আজীবন, আর কষ্টগুলো হোক সামনে এগিয়ে যাবার শিখন ও অনুপ্রেরণা। বিদায় ২০২২!

  

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন