দুর্গা পূজা - রানী সেন

 


       

শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা। গৃহস্থের উঠোনে শিউলি ফুলের আলপনা। নদীর পাড়ে কাশের দোল খাওয়া। ক'দিন পরেই মা আসছেন। ছোট্ট গ্ৰামটি মুসলিম অধ‍্যুষিত, অল্প কয়েক ঘর হিন্দু পরিবার আছে। কিন্তু গ্ৰামে দুর্গাপূজা করার মতো সামর্থ্য এদের নেই । তাই ওরা পুজো দেখতে যায় দুক্রোশ দুরে পাশের গাঁয়ে। 

গ্ৰামের মোড়লের ছেলে হাফিজউদ্দিন চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে বছর পাঁচেকের রেহানা, বাবাকে বলে, ‘আব্বাজান কও দেহি দুগ্গা পূজা কারে কয়? আমিতো দেহি নাই বাপজান এবার আমি নরেশ চাচার মেয়ে ঝিমলির লগে ঠাকুর দেখতা যামুবলে কাঁদতে শুরু করে রেহানা‌। কিন্তু হাফিজের বাবা আশীফ আলী প্রচণ্ড গোঁড়া মুসলমান, একথা শুনলে আর রক্ষে থাকবেনা !

নাতনির এই আবদারের কথা কি করে যেন দাদু আশীফ আলীর কানে পৌঁছে যায়। উনি কাউকে কিছুনা জানিয়ে গ্ৰামের হিন্দু মুসলমান সবাইকে নিয়ে একটা মিটিং ডাকেন। 


বিকেলবেলা সবাই একসাথে মোড়লমশাইয়ের  মিটিংয়ে হাজির হয়মোড়লমশাই নাতনি রেহানাকে কোলে নিয়ে বসে সবাইকে সালাম জানিয়ে বলেন,

-      ভাই, বন্ধু, আমি চিন্তা করছি এই গেরামে আমরা সবাই সবার সুখে দুখে বিপদে আপদে একসাথে আছি, আমাগো মসজিদে আমরা নামাজ পড়ি, ঈদ উপলক্ষে উৎসব করি কিন্তু হিন্দু ভাইদের কুন মন্দির নাই তাই আমি ঠিক করছি এবার আমরা হিন্দু ভাইদের জন্য দুর্গাপূজা করুম। আমাদের মসজিদের পাশের খালি জায়গায় মন্দির হইবো, আপনারা হগ্গলে কি কন্?”

সবাই একসাথে বলে ওঠে -  মোড়লমশাই, আপনের ইচ্ছাই আমাগো ইচ্ছা! 

-      তাইলে কথাডা ফাইনাল। নরেশ তোমরা হগ্গলে মিলা পুরুত মশায়ের লগে কথা কইয়া সব ঠিক কইরা ফালাওটাকা সব আমি দিমুনে।বোঝলানা ভাই আল্লা ঈশ্বর সবই এক, আমরা সবাই তাঁর সন্তান

রেহানাকে কোলে তুলে আদর করতে করতে মোড়ল মশাই হাসতে হাসতে বলেন, ‘কিরে বেটি এইবার খুশি হইছস্ তো’!!

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন