ভাবতে ভাবতেই চোখের পুরু চশমাটা খুলে আবার চোখে পড়ে নিল। গত
সাত বছরে দৃষ্টি অনেকটাই কমেছে। হ্যাঁ, রাকেশ ঠিকই
সনাক্ত করেছে। হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া তার প্রেমিকা - সালমা।
আগের থেকে অনেক সুন্দর লাগছে। কিছুটা মোটাসোটা এবং বেশ
লম্বাও। সেই আগের মতই উদ্ভিন্নযৌবনা। কোন প্রসাধনী বা মেকআপ নেই। তবে নীল
চুড়িদারের সাথে হালকা নীল টিপ আর পায়ের
নূপুরটা বেশ মানিয়েছে। বরাবরের মত জানালার দিকের সিটে বসা
অভ্যাস তার।
হাতে একটা কবিতার বই " স্বপ্ন কিরণে দিশানী"।
সম্পূর্ণ ভাবে মনোনিবেশ ওই বইতে। ভুলেও চোখ
তুলে তাকাচ্ছে না একবারও।
সদ্য শ্যাম্পু করা চুলগুলো অনিয়ন্ত্রিত ভাবে মুখের উপর
পড়ছে। যেন হাওয়ার সাথে চুলের সেই আদ্যিকালের প্রেম প্রেম যুগলবন্দী খেলা।
প্রায় সাত বছর ধরে সালমাকে পাগলের মত খুঁজেছে। কিন্তু পায়নি। আগের পুরানো নম্বরটাও পাল্টে গেছে। আজ হঠাৎ তার
হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকাকে দেখে মন খুশিতে ভরে যায়। কী করবে - কীভাবে কথা বলবে -
ভেবে পাচ্ছে না। আনন্দে একদম আত্মহারা।
কাছে যেতেই বাসটা হঠাৎ করে ছেড়ে দিল। কয়েক সেকন্ডে বাসের
গতি এত জোরে বেড়ে গেল যে - রাকেশ কোনো মতেই বাস টাকে ধরতে পারলো না। দৌড়ে গিয়ে
শুধু হাঁফাতে লাগলো।
নিমেষে চোখের পলকে মিলিয়ে গেল সালমাসহ বাসটি। আবারও সেই না
পাওয়ার বেদনা তাকে গ্রাস করতে লাগলো। হারিয়ে যাওয়ার অব্যক্ত ব্যথা আবারও
দ্বিগুণ হল। হতবাক, হতাশ হয়ে
মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেলো রাকেশ।
সবে সূর্যটা অস্তাচলে গিয়েছে। গাঢ় অন্ধকার ধীরে ধীরে
মাথার উপর নামতে থাকলো। গভীর অন্ধকারে তলিয়ে গেল রাকেশ..... একা .... নীরবে। নিঃশব্দে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন