শৈত্যভোজে রকমারি কচুরি - গীতশ্রী ঘোষাল




শীতের সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হবো হবো করছে। বাড়িতে পড়ে গেছে সাজ সাজ রব। বাড়ির সদস্যদের মনমেজাজ অন্যদিনের তুলনায় আজ যেন একটু বেশিই খুশি খুশি। অবশেষে নৈশভোজের সময় এলো। খাবার থালায় পড়লো গরমাগরম কড়াইশুঁটির কচুরি, পাশের বাটিতে ধোঁয়া ওঠা আলুরদম। কচুরির এক ধার ছিঁড়ে একটু আলু ভেঙে আলুরদমের কারিতে আংশিক স্পর্শ করানোর পর মুখের মধ্যে সুপ্রবেশ ঘটানো – এর অনুভূতি যে কতখানি স্বর্গীয় তা প্রত্যেক বাঙালি একযোগে স্বীকার করবে। কড়াইশুঁটির কচুরি যেমন শীতের আবশ্যিক খাদ্যতালিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে থাকে, তেমনি কচুরির কিন্তু আরো কয়েকখানি রেসিপি রয়েছে যেগুলো খেতে ভারি খাসা। মাঝেমধ্যে বানিয়ে ফেলাই যায়।


১) ছানার কচুরি :




ছানা যে শুধু রসগোল্লা আর সন্দেশ বানাতেই ব্যবহার করা হয়, তেমনটা একেবারেই নয়। ছানার ডালনার কথা তো আমরা সকলেই জানি। আজ জেনে নেওয়া যাক ছানার কচুরির রেসিপি।

উপকরণ :

  • ছানা - ২৫০ গ্রাম
  • ময়দা - ৫০০ গ্রাম
  • জোয়ান - ১ চা চামচ
  • কালোজিরে - ১ চা চামচ
  • কাঁচালঙ্কা কুচি - ২ চা চামচ
  • খাবার সোডা - ২ চিমটি
  • আদা বাটা - ১ চা চামচ
  • জিরে গুঁড়ো - ১ চা চামচ
  • নুন ও চিনি - স্বাদমতো
  • সাদা তেল - পরিমাণ মতো

প্রণালী :

  • ময়দায় ময়ান হিসাবে সাদা তেল, নুন, খাবার সোডা, কালোজিরে ও জোয়ান দিয়ে ভালো করে মেখে আধ ঘন্টা রেখে দিতে হবে।
  • ছানাটা বেশ ভালো করে মেখে নিতে হবে।
  • কড়াইতে তেল গরম হয়ে গেলে ওর মধ্যে যোগ করতে হবে আদা বাটা, জিরে গুঁড়ো, নুন, চিনি, সামান্য হলুদ ও কাঁচালঙ্কা কুচি। ওগুলো কষিয়ে নেওয়ার পর ছানাটা দিয়ে ভালো করে নেড়ে পুর তৈরি করে ঠান্ডা হতে দিতে হবে।
  • পুর ঠান্ডা হলে ময়দা থেকে লেচি কেটে পুর ভরে হালকা হাতে বেলে নিতে হবে যাতে পুর বেরিয়ে না যায়।
  • গরম তেলে ভেজে তুলে নিলেই তৈরী সুস্বাদু ছানার কচুরি।


২) আলুর কচুরিঃ



সবথেকে কম ঝামেলার সবজি আলু, সহজলভ্যও বটে। আলুর পরোটার নাম কে না জানে! এবারে জেনে ফেলবো আলুর কচুরি।

উপকরণ :

  • মাঝারি সাইজের আলু - ৮ টি
  • ময়দা - ৫০০ গ্রাম
  • গোটা জিরে - ৪ চামচ
  • আদা বাটা - ১ চামচ
  • শুকনো লঙ্কা - ৫ টি
  • কাঁচালঙ্কা - ৪ টি
  • ধনেপাতা - ১ আঁটি
  • জোয়ান - আধ চামচ
  • খাবার সোডা - ২ চিমটি
  • নুন ও চিনি - স্বাদমতো
  • সাদা তেল - পরিমাণ মতো
প্রণালীঃ

  • ময়দায় ময়ান হিসাবে সাদা তেল, নুন, খাবার সোডা, কালোজিরে ও জোয়ান দিয়ে ভালো করে মেখে আধ ঘন্টা রেখে দিতে হবে।
  • আলু চার টুকরো করে কেটে নিয়ে প্রেসার কুকারে জল দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে।
  • একটি তাওয়ায় গোটা জিরে ও শুকনো লঙ্কা দিয়ে মিনিট দুয়েক নাড়াচাড়া করতে হবে। সুন্দর গন্ধ বেরোলে তাওয়া থেকে নামিয়ে ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
  • সেদ্ধ আলুর মধ্যে এই ভাজা মশলার গুঁড়ো, নুন, কাঁচালঙ্কা কুচি, ধনেপাতা কুচি ও আদা বাটা দিয়ে মেখে নিতে হবে।
  • এবার ময়দা থেকে লেচি কেটে ওর মধ্যে আলুর পুর ভরে হাত দিয়ে যতটা সম্ভব চ্যাপ্টা করে নিতে হবে।
  • কড়াইতে তেল গরম হলে মাঝারি আঁচে ডুবো তেলে হালকা বাদামি করে ভেজে তুললেই আলুর কচুরি প্রস্তুত।

৩) টক ঝাল কচুরি :




অন্যরকম একখানি রেসিপি। স্বাদের দিক থেকে বেশ মুখরোচক।

উপকরণঃ

  • ভেজানো ছোলা - ১ কাপ
  • ময়দা - ৫০০ গ্রাম
  • রসুন - ২ কোয়া
  • ধনেপাতা - ১ আঁটি
  • কাঁচালঙ্কা - ৫ টি
  • পাকা তেঁতুল - আন্দাজ মতো
  • নুন - স্বাদমতো
  • সাদা তেল - পরিমাণ মতো

প্রণালীঃ

  • ময়দা সাদা তেল ও নুন দিয়ে ভালো করে মেখে আধ ঘন্টা রেখে দিতে হবে।
  • ছোলা, ধনেপাতা, কাঁচালঙ্কা ও তেঁতুল একসঙ্গে বেটে নেওয়ার পর কড়াইতে তেল দিয়ে এই মিশ্রণটা সামান্য নুন সহযোগে ভাজা ভাজা করে নিতে হবে। এভাবে পুর তৈরী হলো।
  • পুর ঠান্ডা হলে ময়দা থেকে লেচি কেটে পুর ভরে হালকা হাতে বেলে নিতে হবে।
  • কড়াইতে তেল গরম হওয়ার পর লালচে করে ভেজে তুলে নিতে হবে টক ঝাল কচুরি।

৪) ক্ষীরের কচুরিঃ





কথায় আছে – মধুরেণ সমাপয়েৎ। আমাদের রেসিপি আখ্যানও শেষ করা যাক ক্ষীরের কচুরির সুমিষ্ট স্বাদের সঙ্গে।

উপকরণঃ

  • ঘন দুধ - ৫০০ গ্রাম
  • ময়দা - ২৫০ গ্রাম
  • খোয়াক্ষীর - আধ কাপ
  • চিনি - ২৫০ গ্রাম
  • কিশমিশ - ২৫ গ্রাম
  • নারকোল বাটা - আধ কাপ
  • ভাজার জন্য ঘি - পরিমাণ মতো
প্রণালীঃ

  • ময়দা চিনি ও দুধ দিয়ে মেখে নিতে হবে।
  • কড়াইতে খোয়াক্ষীর ও নারকোল বাটা দিয়ে চিনি ও ঘন দুধ সহযোগে নাড়ানাড়ি করে শুকনো করে নিতে হবে। মেশাতে হবে কিশমিশ। পুর প্রস্তুত হলো।
  • এবারে ময়দা এবং পুর প্রত্যেকটি আটভাগে ভাগ করে নিতে হবে।
  • ময়দা থেকে লেচি কেটে পুর ভরে হালকা হাতে বেলে নিতে হবে।
  • কড়াইতে ঘি গরম হওয়ার পর কচুরি একটা একটা করে ভেজে তুলতে হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন